নারীদের হিজাব, পুরুষদের টাকনুর ওপরে পোশাক পরার নির্দেশ: ক্ষমা চাইলেন জনস্বাস্থ্য ইনস্টিটিউটের পরিচালক
2020.10.29
ঢাকা

কর্মস্থলে মুসলিম পুরুষদের টাকনুর ওপরে এবং নারীদের হিজাবসহ টাকনুর নিচে পোশাক পরার নির্দেশনা জারির ঘটনায় বৃহস্পতিবার ক্ষমা চেয়ে আগের বিজ্ঞপ্তি বাতিল করেছেন জাতীয় জনস্বাস্থ্য ইনস্টিটিউটের পরিচালক ডা. মুহাম্মদ আব্দুর রহিম।
তাঁর ওই নির্দেশনা জারির প্রেক্ষিতে দেশজোড়া সমালোচনা এবং স্বাস্থ্য ও পরিবারকল্যাণ মন্ত্রণালয় থেকে কারণ দর্শানোর নোটিশ জারির পরই ক্ষমা চাইলেন সরকারের এই কর্মকর্তা।
বুধবার এক বিজ্ঞপ্তি জারি করে আব্দুর রহিম বলেন, অফিস চলাকালীন সময়ে মোবাইল বন্ধ রাখতে হবে। এছাড়া ইনস্টিটিউটে কর্মরত মুসলিম পুরুষদের টাকনুর ওপরে এবং মহিলাদের হিজাবসহ টাকনুর নিচে কাপড় পরতে এবং পর্দা মেনে চলতে নির্দেশনা দেন তিনি।
জনস্বাস্থ্য ইনস্টিটিউটের পরিচালকের এই নির্দেশনা ‘সরকারি বিধিমালার পরিপন্থী’ বলে বৃহস্পতিবার বেনারকে জানান স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ মন্ত্রণালয়ের স্বাস্থ্য সেবা বিভাগের সচিব মো. আবদুল মান্নান।
তিনি বলেন, “তিনি (স্বাস্থ্য ইনস্টিটিউটের পরিচালক) এ ধরনের নির্দশনা দিতে পারেন না। এটা সরকারি বিধিমালা পরিপন্থী। এ জন্য তাঁকে শোকজ করা হয়েছে। দেখা যাক তিনি কী জবাব দেন।”
মুসলিম সংখ্যাগরিষ্ঠ বাংলাদেশে হিজাব, বোরকা বা পর্দা নিয়ে নানা আলোচনা থাকলেও তা কারও জন্য কখনো বাধ্যতামূলক করা হয়নি।
এছাড়া শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে ধর্মীয় পোশাক পরতে বাধ্য করা যাবে না বলে সরকারি নির্দেশ জারি করা হয়েছিল ২০১০ সালে। ওই বছর একটি রিট মামলার প্রেক্ষিতে হাইকোর্টের পক্ষ থেকেও শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বা কর্মস্থলে নারীদের বোরকা পরতে বাধ্য না করার নির্দেশ দেওয়া হয়েছিল।
সরকারি কর্মকর্তার এ ধরনের নির্দেশনা জারি সংবিধান পরিপন্থী বলে উল্লেখ করেন উন্নয়নকর্মী খুশি কবির।
তিনি বেনারকে বলেন, “তিনি (জনস্বাস্থ্য ইনস্টিটিউটের পরিচালক) এই বিজ্ঞপ্তি দিয়ে অন্যায় ও বেআইনি কাজ করেছেন। কেউ আইনের আশ্রয় নিলে ওই কর্মকর্তার চাকরি থাকবে না।”
“এ ধরনের মানসিকতার লোকের কারণেই দেশে নারী নির্যাতন বেশি হচ্ছে” বলে মত দেন খুশি কবির।
ক্ষমা চাইলেন পরিচালক
বৃহস্পতিবার নতুন এক বিজ্ঞপ্তির মাধ্যমে বুধবারের দেওয়া নির্দেশ বাতিল করেছেন জনস্বাস্থ্য ইনস্টিটিউটের পরিচালক মুহাম্মদ আব্দুর রহিম।
“সকলের কাছে এই অনিচ্ছাকৃত বিজ্ঞপ্তি প্রকাশের জন্য অন্তরের অন্তস্থল থেকে দুঃখ প্রকাশ করছি,” জানিয়ে বৃহস্পতিবারের বিজ্ঞপ্তিতে আব্দুর রহিম বলেন, “সেই সাথে গোটা জাতির কাছে বিনীতিভাবে ক্ষমা প্রার্থনা করছি এবং এই ধরনের ভুল হবে না বলে প্রতিজ্ঞা করছি।”
অফিসের কর্মচারীদের মধ্যে ধর্মীয় অনুশাসনের চর্চা করতেই বুধবারের নির্দেশনা দেয়া হয়েছিল বলে এর আগে জানিয়েছিলেন আব্দুর রহিম।
সরকারি চাকরিবিধি অনুসারে তিনি এ ধরনের নির্দেশনা দিতে পারেন না স্বীকার করে তিনি জানান, “আমি আমার স্টাফদের সুশৃঙ্খলভাবে এবং রহমতের সঙ্গে চালানোর জন্য এই বিজ্ঞপ্তি দিয়েছি।”
এই বিজ্ঞপ্তি জারি করা নিয়ে সমালোচনা শুরু হলে বৃহস্পতিবার মন্ত্রণালয়ের স্বাস্থ্যসেবা বিভাগের উপসচিব শারমিন আক্তার জাহান স্বাক্ষরিত কারণ দর্শানোর চিঠিতে “বিজ্ঞপ্তিটি কোন বিধিবলে এবং কোন কর্তৃপক্ষের অনুমোদনক্রমে জারি করা হয়েছে” আগামী তিন কার্য দিবসের মধ্যে তার ব্যাখ্যা দিতে জনস্বাস্থ্য ইনিস্টিটিউটের পরিচালককে অনুরোধ করা হয়।
বাংলাদেশ জনস্বাস্থ্য ইন্সটিটিউটের প্রধান কাজ হচ্ছে রোগ প্রতিরোধ বিষয়ে গবেষণা ও প্রশিক্ষণ।
প্রতিষ্ঠানটি চিকেন পক্স, কলেরা, টাইফয়েড সহ নানা ধরনের রোগের ভ্যাকসিন উৎপাদন করে। একই সঙ্গে তারা বায়োলজিক্যাল রি-এজেন্ট উৎপাদন ও বায়লজিক্যাল পণ্যগুলোর মান নিয়ন্ত্রণসহ বিভিন্ন কাজের সঙ্গে যুক্ত।