ব্রেক্সিট-পরবর্তী পরিস্থিতিতে ঢাকার প্রস্তাব চায় লন্ডন
2017.03.28
ঢাকা

ইউরোপীয় ইউনিয়ন থেকে আনুষ্ঠানিকভাবে বের হয়ে যাওয়ার পর বাংলাদেশকে শুল্ক ও কোটামুক্ত সুবিধা দেওয়ার বিষয়টি বিবেচনা করবে যুক্তরাজ্য। তবে ব্রেক্সিট-পরবর্তী পরিস্থিতিতে যুক্তরাজ্যের বাজারে কী ধরনের অগ্রাধিকারমূলক বাজার সুবিধা পাওয়া উচিত, তা নিয়ে বাংলাদেশকেই সুনির্দিষ্ট প্রস্তাব দিতে হবে।
দুই দেশের মধ্যকার প্রথম অংশীদারত্ব সংলাপ থেকে এমন সিদ্ধান্ত এসেছে। এ ছাড়া বাংলাদেশিদের জন্য ভিসা প্রক্রিয়া সহজীকরণ, বিমানবন্দর নিরাপত্তাসহ দ্বিপাক্ষিক বিভিন্ন বিষয় আলোচনায় গুরুত্ব পেয়েছে।
গতকাল মঙ্গলবার রাষ্ট্রীয় অতিথি ভবন মেঘনায় এ বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়। আলোচনায় বাংলাদেশের পররাষ্ট্রসচিব মো. শহীদুল হক এবং যুক্তরাজ্যের পররাষ্ট্র ও কমনওয়েলথ দপ্তরের স্থায়ী আন্ডার সেক্রেটারি সায়মন ম্যাকডোনাল্ড নিজ নিজ দেশের নেতৃত্ব দেন।
যুক্তরাজ্য বাংলাদেশের অন্যতম ব্যবসায়িক অংশীদার হওয়ায় ব্রেক্সিট পরবর্তীকালেও দুদেশের মধ্যে একই ধরনের বাণিজ্যিক সম্পর্ক অব্যাহত থাকার পক্ষে মত দিয়েছেন বিশ্লেষকেরা।
প্রসঙ্গত, ইউরোপের বাজারে অস্ত্র ছাড়া সবকিছুতে শুল্ক ও কোটামুক্ত সুবিধা পায় বাংলাদেশ। যুক্তরাজ্য ইউরোপীয় ইউনিয়ন (ইইউ) থেকে বের হয়ে গেলে বাংলাদেশ আর এই সুবিধা পাবে না। ফলে অগ্রাধিকারমূলক বাজার সুবিধা পেতে বাংলাদেশকে যুক্তরাজ্যের সঙ্গে নতুন বাণিজ্য ব্যবস্থায় যেতে হবে। আর এ বিষয়টিই প্রথম অংশিদারিত্ব সংলাপে অধিক গুরুত্ব পেয়েছে বলে জানিয়েছে কূটনৈতিক সূত্র।
এ বিষয়ে সংলাপ শুরুর আগে এক প্রশ্নের জবাবে সায়মন ম্যাকডোনাল্ড সাংবাদিকদের বলেন, “আমার এখানে আসাটা কাকতালীয় নয়। ইউরোপকে ছাড়িয়ে বাংলাদেশ-যুক্তরাজ্যের মধ্যকার ঐতিহাসিক সম্পর্ক নিয়ে আমরা অনেক বেশি সচেতন। আমরা জানি, বাংলাদেশ এখন যে সুবিধা পাচ্ছে, আগামীতে তা পেতে আগ্রহী।”
দ্বিপাক্ষিক সম্পর্কের আলোচনায় এটি একটি গুরুত্বপূর্ণ অংশ জানিয়ে তিনি বলেন, “আমি নিশ্চিত করতে পারি যে, সামনের দিনগুলোতে ইইউ’র বাইরে বাংলাদেশের সঙ্গে আরো ভালো সম্পর্ক চায় যুক্তরাজ্য।”
দুদেশের মধ্যকার বাণিজ্যিক সম্পর্ক আরো দৃঢ় করতে বাংলাদেশকে এখনই সুচিন্তিত প্রস্তাব দিতে হবে বলে মত দিয়েছেন বিশ্লেষকেরা।
এ প্রসঙ্গে সেন্টার ফর পলিসি ডায়লগের অতিরিক্ত গবেষণা পরিচালক গোলাম মোয়াজ্জেম বেনারকে বলেন, “যুক্তরাজ্য বাংলাদেশের অন্যতম বাণিজ্য পার্টনার। ব্রেক্সিট পরবর্তী সময়ে এ সম্পর্ক যাতে শুল্ক মুক্ত সুবিধা অব্যাহত থাকে এবং ইউরোপীয় ইউনিয়নভুক্ত সময়ের চেয়েও যাতে সম্পর্ক বৃদ্ধি পায় সে বিষয়টির ওপর সর্বাধিক গুরুত্ব দিতে হবে।”
তাঁর মতে, ইইউ সদস্য থাকাকালে যে সুবিধাগুলো বাংলাদেশ পেয়েছে, ব্রেক্সিট পরবর্তী সময়েও যাতে সেগুলো অব্যাহত থাকে সেই চেষ্টা করতে হবে।
“কোনোভাবেই যাতে জিএসপি প্লাস সুবিধা পাওয়ার মতো শর্ত চাপানো না হয়, যুক্তরাজ্যের প্রতি সে অনুরোধ করতে হবে বাংলাদেশকে,” বলেন গোলাম মোয়াজ্জেম।
দুই দেশের যৌথ বিবৃতি
বৈঠক শেষে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় ও ঢাকায় ব্রিটিশ হাইকমিশন মঙ্গলবার রাতে যৌথ বিবৃতি প্রচার করেছে। এতে ব্রেক্সিটের পরও বাইরের বিশ্বের সঙ্গে সহযোগিতা বাড়ানো এবং মুক্ত বাণিজ্যের ক্ষেত্রে যুক্তরাজ্য অগ্রণী ভূমিকা পালনে প্রত্যয় পুনর্ব্যক্ত করেছেন বিট্রিশ আন্ডার সেক্রেটারি সায়মন ম্যাকডোনাল্ড। বাংলাদেশের মতো দীর্ঘদিনের বন্ধু দেশের সঙ্গে সম্পর্ক জোরদারে প্রত্যয়ের কথা জানান তিনি।
এ ছাড়া বাংলাদেশের নাগরিকদের জন্য ভিসা প্রক্রিয়া সহজ করতে সম্মত হয়েছে যুক্তরাজ্য। যৌথ বিবৃতিতে বলা হয়, চলতি বছরের জুন থেকে বাংলাদেশের নাগরিকদের জন্য অগ্রাধিকার ভিত্তিতে ৩-৫ দিনের মধ্যে ভিসা ব্যবস্থা চালু করতে যুক্তরাজ্য রাজি হয়েছে। ভিসার বিষয়ে যুক্তরাজ্য বলছে, মূলত: ভিসা দেওয়ার সিদ্ধান্ত যুক্তরাজ্যের কর্মকর্তাদের।
বর্তমানে দিল্লী থেকে বাংলাদেশের নাগরিকদের সেটেলমেন্ট ভিসা দেওয়া হয়। তবে দিল্লির পরিবর্তে সেটেলমেন্ট ভিসা দেওয়ার এই প্রক্রিয়া যুক্তরাজ্যে এখন নেওয়া হয়েছে বলে জানিয়েছে ব্রিটিশ সরকার।
এদিকে বৈঠকে বাংলাদেশ থেকে উড়োজাহাজে করে যুক্তরাজ্যে পণ্য পরিবহনে নিষেধাজ্ঞা প্রত্যাহার নিয়ে দু’পক্ষের মধ্যে আলোচনা হয়েছে।
এ প্রসঙ্গে যৌথ বিবৃতিতে বলা হয়, যুক্তরাজ্য শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের নিরাপত্তা বাড়াতে অঙ্গীকার পুনর্ব্যক্ত করেছে। বিমানবন্দরের নিরাপত্তায় যৌথভাবে করণীয় মূল্যায়নের পর একটি কর্মপরিকল্পনা তৈরির সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে বৈঠকে। নিরাপত্তার ক্ষেত্রে প্রয়োজনীয় উন্নতির পরেই উড়োজাহাজে করে ঢাকা থেকে যুক্তরাজ্যে সরাসরি পণ্য পরিবহনে নিষেধাজ্ঞা তুলে নেওয়া হবে বলে আশ্বাস দিয়েছে দেশটি।
এ ছাড়া মিয়ানমারের রাখাইন রাজ্যের মুসলিম জনগোষ্ঠীর সমস্যার সমাধানে দুই দেশ একসঙ্গে কাজ করতে রাজি হয়েছে বলে বিবৃতিতে বলা হয়।
সংলাপ প্রসঙ্গে পররাষ্ট্রসচিব মো. শহীদুল হক বেনারকে বলেন, “দুই দেশ নিয়মিত অংশীদারত্ব সংলাপ অনুষ্ঠান করার বিষয়ে এমওইউ স্বাক্ষর করেছে। এর আওতায় দ্বিপক্ষীয়, আঞ্চলিক এবং অভিন্ন স্বার্থের বৈশ্বিক বিষয়ে নিয়মিত আলোচনার মাধ্যমে দু’দেশের ভবিষ্যতের সম্পর্কের রূপরেখা নির্ধারণ করা যাবে।”