মালিতে বিদ্রোহীদের হাতে চার বাংলাদেশি শান্তিরক্ষী নিহত
2018.03.01
ঢাকা
আবারও বিদ্রোহীদের পুঁতে রাখা শক্তিশালী ইম্প্রোভাইজ এক্সপ্লোসিভ ডিভাইস (আইইডি) বিস্ফোরণে পশ্চিম আফ্রিকার দেশ মালিতে প্রাণ গেলো বাংলাদেশি শান্তিরক্ষীর।
বৃহস্পতিবার বাংলাদেশ সময় রাত সাড়ে আটটার দিকে দোয়েঞ্জা নামক স্থানের পুবে চার শান্তিরক্ষী নিহত হন এবং আহত হন আরও চারজন।
নিহতরা হলেন ওয়ারেন্ট অফিসার আবুল কালাম, ল্যান্স কর্পোরাল আকতার, সৈনিক রায়হান ও সৈনিক জামাল। সশস্ত্র বাহিনীর আন্তবাহিনী জনসংযোগ পরিদপ্তর (আইএসপিআর) এ তথ্য নিশ্চিত করেছে।
আইএসপিআর’র পরিচালক মোহাম্মদ রাশিদুল হাসান বৃহস্পতিবার বেনারকে বলেন, “২৮ ফেব্রুয়ারি মালিতে বাংলাদেশ সময় রাত ৮টা ৩০ মিনিট দোয়েঞ্জা নামক স্থানে সন্ত্রাসীদের পুঁতে রাখা শক্তিশালী আইইডির ভয়াবহ বিস্ফোরণে ওই চারজন বাংলাদেশি শান্তিরক্ষী নিহত এবং আরও চারজন আহত হয়েছেন।”
“একটি লজিস্টিক কনভয় এসকর্ট গাঁও নামক স্থান থেকে মপতি যাওয়ার পথে বোনি-দোয়েঞ্জা সড়কে এই দুর্ঘটনাটি ঘটে। শান্তিরক্ষা বাহিনীর সদস্যদের বহনকারী তিনটি আর্মড পারাসোনেল ক্যারিয়ার নিরাপদে চলে যাওয়ার পর চতুর্থটি বিস্ফোরণের কবলে পড়ে,” বলেন তিনি।
রাশিদুল হাসান জানান, আহতদের দ্রুততার সঙ্গে হেলিকপ্টারযোগে উন্নত চিকিৎসার জন্য দুর্ঘটনাস্থল থেকে উদ্ধার করা হয়। বর্তমানে তাঁরা চিকিৎসাধীন রয়েছেন।
আইএসপিআর জানায়, নিহত ওয়ারেন্ট অফিসার আবুল কালামের বাড়ি পিরোজপুর, ল্যান্স কর্পোরাল আকতারের বাড়ি ময়মনসিংহ, সৈনিক রায়হানের বাড়ি পাবনা ও সৈনিক জামালের বাড়ি চাঁপাইনবাবগঞ্জ জেলায়।
আহত শান্তিরক্ষীরা হলেন, কর্পোরাল রাসেল, সৈনিক আকরাম, সৈনিক নিউটন ও সৈনিক রাশেদ।
বিদ্রোহীদের হাতে মালি সেনাবাহিনীর ছয় সদস্য নিহত হওয়ার একদিন পর বাংলাদেশি চার শান্তিরক্ষী নিহত হলেন।
গত বছর ২৭ সেপ্টেম্বর দেশটিতে বিদ্রোহীদের আইইডি হামলায় আরো তিন বাংলাদেশি শান্তিরক্ষী নিহত এবং চারজন আহত হন।
মালিতে নিয়োজিত অন্যান্য বাংলাদেশি শান্তিরক্ষীরা নিরাপদ আছেন বলে আইএসপিআরের এক প্রেস বিবৃতিতে জানান হয়।
নিহত কালামের চাচাতো ভাই মো. সাইফুল্লাহ বেনারকে বলেন, ১৯৯২ সালের সেপ্টেম্বর মাসে সেনাবাহিনীতে যোগদান করে ২০১৭ সালের ২০মে কালাম জাতিসংঘ শান্তিরক্ষা মিশনে যোগদান করে মালিতে যান।
তিনি বলেন, “পরিবারের আর্থিক সচ্ছলতা আনতে শান্তিরক্ষা বাহিনীতে কাজ করতে আগ্রহী হয় আবুল কালাম। সে লাশ হবে কে ভেবেছিল? ভাবলে আমরা তাকে যেতে দিতাম না।”
কালামের মরদেহ দ্রুত পরিবারের কাছে হস্তান্তর ও তার স্ত্রী, সন্তানসহ পরিবারের দায়িত্ব নেওয়ার জন্য সরকারের প্রতি আহ্বান জানান সাইফুল্লাহ।
জাতিসংঘের নিন্দা
এদিকে মালিতে বাংলাদেশি শান্তিরক্ষা বাহিনীর সদস্যদের ওপর আক্রমণের নিন্দা জানিয়েছেন জাতিসংঘ মহাসচিব অ্যান্টনিও গুতারেস।
মহাসচিবের মুখপাত্র স্টিফানি দুজারিস এক বিবৃতিতে বলেন, “জাতিসংঘ শান্তিরক্ষা বাহিনীর সদস্যদের ওপর আক্রমণ যুদ্ধ অপরাধের শামিল এবং অপরাধীদের ধরে বিচার করতে হবে।”
বুধবারের আক্রমণকে ‘কাপুরুষোচিত’ বলে আখ্যা দিয়ে মুখপাত্র বলেন, “বেসামরিক জনগণকে রক্ষা এবং দেশে শান্তি ও স্থিতিশীলতার আনয়নের জন্য মালি সরকার যে প্রচেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে সেই প্রয়াসকে সহায়তার জন্য জাতিসংঘ যে শান্তিরক্ষা মিশন চালিয়ে যাচ্ছে তা বন্ধ হবে না।”
জাতিসংঘের সর্বশেষ তথ্যমতে, শান্তিরক্ষা বাহিনীতে ইথিওপিয়ার সদস্য সর্বোচ্চ। এরপরই অবস্থান বাংলাদেশর। বর্তমানে ৭,০৫৩ জন বাংলাদেশি সেনা, পুলিশ ও স্টাফ বিশ্বের বিভিন্ন দেশে কাজ করছেন।
ঝুঁকি নিয়েই শান্তিরক্ষীদের কাজ
সশস্ত্র বিভাগের আইন অনুযায়ী নিহতরা সবাই ক্ষতিপূরণ পাবেন।
শান্তিরক্ষী প্রসঙ্গে অবসরপ্রাপ্ত মেজর জেনারেল রেজাকুল হায়দার বেনারকে বলেন, “বাংলাদেশি সেনাসদস্যরা বিশ্বের বিভিন্ন দেশে সুনামের সঙ্গে শান্তিরক্ষী হিসেবে কাজ করেছে।”
“ইউরোপীয় রাষ্ট্রগুলো শান্তি মিশনে অবসরপ্রাপ্ত সেনাদের পাঠায়। পক্ষান্তরে বাংলাদেশের শান্তিরক্ষীরা চাকরিরত অবস্থায় সেখানে যায়,” বলেন তিনি।
মেজর জেনারেল হায়দার বলেন, “আমাদের ছেলেরা বেশি ঝুঁকি নিতে পারে। সে কারণে আমাদের দেশ থেকে শান্তিরক্ষা বাহিনীর সদস্য নেওয়ার চাহিদা আছে। শান্তিরক্ষা বাহিনীতে কাজ করলে তারা বেশ মোটা অঙ্কের টাকাও পায়।”
তাঁর মতে, “শান্তিরক্ষীরা যেখানে থাকে সেই অংশটি নিরাপদ। কিন্তু তারা যখন মুভ করে তখন ঝুঁকি থাকেই। আমরা যদি শান্তিরক্ষী পাঠাই তাহলে এই ঝুঁকি নিয়েই পাঠাতে হবে।”
বর্তমানে মালি ও সেন্ট্রাল আফ্রিকান রিপাবলিক জাতিসংঘ শান্তিরক্ষীদের জন্য ঝুঁকিপূর্ণ দেশ বলে মনে করেন মেজর জেনারেল হায়দার।