পশ্চিমবঙ্গের বসিরহাটে সাম্প্রদায়িক সংঘর্ষ থামাতে বিএসএফ নামিয়েছে সরকার

পরিতোষ পাল
2017.07.05
কলকাতা
আগুন জ্বালিয়ে ও কাঠের গুঁড়ি ফেলে পথ অবরোধ আগুন জ্বালিয়ে ও কাঠের গুঁড়ি ফেলে পথ অবরোধ। ৪ জুলাই, ২০১৭।
পরিতোষ পাল/বেনারনিউজ

ভারতের পশ্চিমবঙ্গের উত্তর ২৪ পরগণা জেলার বসিরহাটে চলমান সাম্প্রদায়িক সংঘর্ষ নিয়ন্ত্রণে সংশ্লিষ্ট এলাকায় ইন্টারনেট বন্ধ ও ৫ জনের বেশি মানুষের জমায়েত নিষিদ্ধ করার পাশপাশি বুধবার আধা সামরিক বাহিনী নামিয়েছে কর্তৃপক্ষ।

গত শুক্রবার এক তরুণের একটি ফেসবুক পোস্টকে ইসলাম ধর্মের জন্য অবমাননাকর আখ্যায়িত করে সোমবার থেকে শুরু হওয়া দাঙ্গায় এখন পর্যন্ত পুলিশসহ অন্তত ৪০জন আহত হয়েছেন বলে পুলিশ ও স্থানীয় সাংবাদিক সূত্রে জানা গেছে।

“একটি আপত্তিকর ফেসবুক পোস্টকে কেন্দ্র করে বসিরহাট মহকুমার বাদুড়িয়ায় দুই সম্প্রদায়ের মানুষের মধ্যে সংঘর্ষ হয়েছে,” মঙ্গলবার সাংবাদিকদের বলেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়।

বুধবার এই সংঘর্ষের তৃতীয় দিনে বাংলাদেশ সংলগ্ন জেলা উত্তর ২৪ পরগণার বসিরহাট মহকুমার বিস্তীর্ণ এলাকার ঘরবাড়িতে আগুন লাগানো হয়েছে। কেটে দেওয়া হয়েছে রাস্তাঘাট।

বুধবার রাতে জেলা প্রশাসন সূত্র জানায়, “বাদুড়িয়ার সাম্প্রদায়িক পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে আধা সামরিক বাহিনী বিএসএফকে নামানো হয়েছে। প্রশাসন ও পুলিশ তাদেরকে সহায়তা করবে।”

“বাদুড়িয়াসহ কয়েকটি অঞ্চলে ৫ জন বা তার বেশি মানুষের জমায়েতে (ভারতীয় ফৌজদারি বিধির ১৪৪ ধারা) নিষেধাজ্ঞা জারি করা হয়েছে। সোশ্যাল মিডিয়ার মাধ্যমে যাতে আর উত্তেজনা ছড়াতে না পারে সে জন্য মঙ্গলবার থেকেই বসিরহাট মহকুমা ও সংলগ্ন অঞ্চলে ইন্টারনেট বন্ধ রাখা হয়েছে,” সাংবাদিকদের জানান উত্তর ২৪ পরগণার জেলা শাসক অন্তরা আচার্য।

মুখ্যমন্ত্রীর দপ্তর নবান্ন’র সূত্র বলছে, বসিরহাটের সংঘর্ষ সম্পর্কে বুধবার মুখ্যমন্ত্রীর কাছ থেকে খোঁজ নিয়েছেন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী রাজনাথ সিং।

বাদুড়িয়ায় উপদ্রুত অঞ্চলে টহল দিচ্ছে বিএসএফ জওয়ানরা। ৫ জুলাই ২০১৭।
বাদুড়িয়ায় উপদ্রুত অঞ্চলে টহল দিচ্ছে বিএসএফ জওয়ানরা। ৫ জুলাই ২০১৭।
পরিতোষ পাল/ বেনারনিউজ

ফেসবুকেই সূত্রপাত

সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে একটি আপত্তিকর পোস্টকে কেন্দ্র করে অশান্তির সূত্রপাত কলকাতা থেকে ৫৮ কিলোমিটার দূরে উত্তর ২৪ পরগণার বসিরহাট মহকুমার বাদুড়িয়া ব্লকের রুদ্রপুর এলাকায়।

বাদুড়িয়া থানার এক পুলিশ কর্মকর্তা নাম না জানানোর শর্তে বেনারকে জানিয়েছেন, সৌরভ সরকার নামে দ্বাদশ শ্রেণির এক ছাত্র শুক্রবার ফেসবুকে মুসলমানদের পবিত্র ধর্মস্থান ‘কাবাঘর’কে নিয়ে একটি আপত্তিকর ছবি পোস্ট করে। এতে বলা হয়, কাবাঘর আসলে হিন্দুদের পবিত্র শিব মন্দির। সেই পোস্টটিই মুসলমানদের ধর্মানুভূতিতে আঘাত করেছে।

পুলিশ সোমবার ছাত্রটিকে গ্রেপ্তার করেছে বলে বাদুড়িয়া থানার সূত্রে বেনারকে জানানো হয়।

“ফেসবুকে হিন্দু ছাত্রটির আপত্তিকর পোস্টটি প্রকাশের পর থেকেই দুই সম্প্রদায়ের মানুষ অংশ নিয়ে নানা বিরূপ মন্তব্য করেছিল। তাই আপাতত ইন্টারনেট বন্ধ রাখা হয়েছে। অবশ্য এতে নানা অসুবিধার সম্মুখীন হতে হচ্ছে,” বেনারকে জানান বারাসাতের কলেজ ছাত্র অরূপ বসু।

ওই পোস্টের পরে সোমবার বিকেল থেকে মুসলিম সম্প্রদায়ের মানুষ ধর্মে আঘাত দেওয়া হয়েছে এই অভিযোগে পথে নেমে পড়ে। এদের একটি দল অভিযুক্ত ছাত্রটিকে তাদের হাতে তুলে দেওয়ার জন্য থানাতে অভিযান চালায়।

বাদুড়িয়ায় শুরু হলেও মঙ্গল ও বুধবার হিংসার আগুনে পুড়েছে বসিরহাট শহরের বিভিন্ন এলাকা। মঙ্গলবার অনেক জায়গাতে হিন্দু সম্প্রদায়ের মানুষ পাল্টা আক্রমণ শুরু করলে সংঘর্ষ ভয়াবহ রূপ নেয়। শুরু হয় দুই গোষ্ঠীর মধ্যে বিক্ষিপ্ত সংঘর্ষ। রাস্তা কেটে, গাছের গুঁড়ি ফেলে, গার্ড রেলে আগুন লাগিয়ে, গাড়ি উল্টে দিয়ে অবরোধ করে রাখা হয়।

পুলিশসহ আহত অন্তত ৪০

পুলিশ সূত্র জানায়, তিন দিনে বিক্ষোভকারীদের আক্রমণে উত্তর ২৪ পরগণার পুলিশ সুপার ও সহ-পুলিশ সুপারসহ ২০ জন পুলিশ কর্মী আহত হয়েছেন। পুড়েছে পুলিশের ১৫টি গাড়িও।

সরকারিভাবে সাম্প্রদায়িক সংঘর্ষে হতাহতের কোনো খবর জানানো না হলেও স্থানীয় সাংবাদিকেরা জানিয়েছেন, নিহত না হলেও এখন পর্যন্ত প্রায় ২০-২৫ জন আহত হয়েছেন। সংকটজনক অবস্থায় কয়েকজনকে কলকাতার হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে।

মুখ্যমন্ত্রী বনাম গভর্নর

এই সাম্প্রদায়িক সহিংসতার ইস্যুতে পশ্চিমবঙ্গ রাজ্যের সাংবিধানিক প্রধান গভর্নর কেশরী নাথ ত্রিপাঠির সঙ্গে মুখ্যমন্ত্রীর সংঘাত চরম আকার ধারণ করেছে।

নজিরবিহীনভাবে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় মঙ্গলবার বিকেলে রাজ্য সচিবালয় নবান্নে এক সাংবাদিক বৈঠকে ফোন করে তাঁকে হুমকি দেওয়ার চাঞ্চল্যকর অভিযোগ করেছেন গভর্নরের বিরুদ্ধে।

মুখ্যমন্ত্রীর সাংবাদিক বৈঠকের প্রতিক্রিয়ায় রাজভবন থেকে মঙ্গলবার রাতেই প্রচারিত এক বিবৃতিতে বলা হয়েছে, “সাংবাদিক বৈঠকে মুখ্যমন্ত্রীর ভাষা ও ভঙ্গিতে গভর্নর হতবাক। মুখ্যমন্ত্রী ও গভর্নরের কথোপকথন গোপনীয় বিষয়, তা প্রকাশ্যে না আসাই প্রত্যাশিত ছিল।”

মন্তব্য করুন

নীচের ফর্মে আপনার মন্তব্য যোগ করে টেক্সট লিখুন। একজন মডারেটর মন্তব্য সমূহ এপ্রুভ করে থাকেন এবং সঠিক সংবাদর নীতিমালা অনুসারে এডিট করে থাকেন। সঙ্গে সঙ্গে মন্তব্য প্রকাশ হয় না, প্রকাশিত কোনো মতামতের জন্য সঠিক সংবাদ দায়ী নয়। অন্যের মতামতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল হোন এবং বিষয় বস্তুর প্রতি আবদ্ধ থাকুন।