সাহসিকতার জন্য যুক্তরাষ্ট্রে পুরস্কৃত বাংলাদেশি কিশোরী শারমিন

বেনার ডেস্ক
2017.03.30
ওয়াশিংটন ডিসি
শারমিন আক্তারের হাতে পুরস্কার তুলে দিচ্ছেন ফার্স্ট লেডি মেলানিয়া ট্রাম্প। শারমিন আক্তারের হাতে পুরস্কার তুলে দিচ্ছেন ফার্স্ট লেডি মেলানিয়া ট্রাম্প। ডিপার্টমেন্ট অব স্টেট, ওয়াশিংটন ডিসি। ২৯ মার্চ ২০১৭।
State Department photo

মাত্র দেড় বছর আগে বাল্য বিবাহের হুমকিতে যার ভবিষ্যৎ অনিশ্চিত ছিল, নিজের সাহসিকতার জন্য আজ সেই কিশোরী আন্তর্জাতিক পর্যায়ে এক সাহসী নারীর প্রতীক। অর্জন করেছেন যুক্তরাষ্ট্রের ইন্টারন্যাশনাল উইমেন অব কারেজ (আইডব্লিউসি) ২০১৭ পুরস্কার।

বাল্য বিবাহ ও জোরপূর্বক বিয়ের বিরুদ্ধে তাঁর উদ্যোগের জন্য বিশ্বের আরো ১২ জন সাহসী নারীর সাথে গতকাল ওয়াশিংটন ডিসির ডিপার্টমেন্ট অব স্টেটএ আনুষ্ঠানিকভাবে তাঁর হাতে এই পুরস্কার তুলে দেন ফার্স্ট লেডি মেলানিয়া ট্রাম্প।

“এই নারীদের প্রত্যেকেরই রয়েছে অবিশ্বাস্য এক সাহসিকতার গল্প, যা সাধারণভাবে অসম্ভব মনে হওয়া বিষয়কে সম্ভব করে তুলতে আমাদেরকে অনুপ্রাণিত করে।”

পুরস্কারপ্রাপ্ত নারীদের সম্পর্কে বলতে গিয়ে এভাবেই নিজের প্রতিক্রিয়া জানান যুক্তরাষ্ট্রের ফার্স্ট লেডি মেলানিয়া ট্রাম্প।

“তাঁরা সংগ্রাম করেছেন নিজের অধিকারের জন্য, সংগ্রাম করেছেন অন্যের অধিকার নিশ্চিত করার জন্য,” যোগ করেন মিস ট্রাম্প।

এই পুরস্কারকে শুধু নিজের নয়, বরং সারা দেশের অর্জন বলে মনে করেন মাত্র ১৭তে পা দেওয়া ঝালকাঠি জেলার রাজাপুরের কিশোরী শারমিন। তিনি চান যেন বাংলাদেশের সকল কিশোরী তাঁরই মতো নিজের বাল্য বিবাহ আটকানোর উদ্যোগ নিজেই গ্রহণ করে।

এক ভিডিও সাক্ষাৎকারে তিনি বলেন, “আমি চাই যে অন্যরা আমার মতো করুক। নিজের বাল্য বিবাহ নিজে আটকাক। যেন দুর্বল না হয়ে পড়ে। নিজের মধ্যে যেন সাহস রাখে।”

মানবাধিকার ও নারী অধিকার নিশ্চিতকরণে উল্লেখযোগ্য অবদানের জন্য সারা বিশ্ব থেকে প্রতি বছর নির্বাচিত নারীদের যুক্তরাষ্ট্রের ‘সেক্রেটারি অব স্টেটস ইন্টারন্যাশনাল উইমেন অব কারেজ (আইডব্লিউসি) পুরস্কারে সম্মানিত করা হয়। ২০০৭ সালে শুরু হওয়ার পর থেকে এখন পর্যন্ত ৬০টির বেশি দেশের শতাধিক নারী এই পুরস্কারে সম্মানিত হয়েছেন।

যুক্তরাষ্ট্র প্রতি বছর আর্ন্তজাতিক নারী দিবস উদযাপনের অংশ হিসেবে এই পুরস্কার অনুষ্ঠানটি আয়োজন করে থাকে।

শারমিনের নিজেকে রক্ষার গল্প

নবম শ্রেণিতে পড়া অবস্থায় শারমিনের মা এক বয়স্ক ব্যক্তির সাথে তার বিয়ে ঠিক করেন। বিয়েতে রাজি না হওয়ায় বন্দি করে মারধোর সহ বিভিন্ন অত্যাচার করা হয় তাঁর ওপর।

শারমিন যখন বুঝতে পারে যে, রাজি না হলেও তাকে জোর করে বিয়ে দেওয়ার পরিকল্পনা হচ্ছে। তখন গত বছরের ১৬ আগস্ট সে পালিয়ে সহপাঠী নাদিরা আক্তারের বাড়ি গিয়ে সব খুলে বলে।

তারপর দুজনে মিলে স্থানীয় সাংবাদিকদের সহায়তায় ওই দিন রাতে রাজাপুর থানায় হাজির হয়।

সব ঘটনা শুনেও থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা প্রথমে মামলা নিতে রাজি হননি। তবে পরে গণমাধ্যম কর্মীদের চাপে মামলা নিতে বাধ্য হন বলে ভিডিও সাক্ষাৎকারে জানান শারমিন।

মা ও কথিত স্বামীর বিরুদ্ধে শারমিন নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আইনে মামলা করেন। পরে পুলিশ শারমিনের মা গোলেনূর বেগম ও কথিত স্বামী স্বপন খলিফাকে গ্রেপ্তার করে।

ঝালকাঠির জেলা নারী ও শিশু নির্যাতন দমন বিশেষ ট্রাইব্যুনাল-১ এর বিচারক মো. শফিকুল করিম তার দাদি দেলোয়ারা বেগমের জিম্মায় শারমিনকে দেন।

শারমিনের বাবা কবির হোসেন গত সাত আট বছর ধরে সৌদি আরব প্রবাসী।

শারমিনের গল্প শুনবে অন্যরা

“আমি লেখাপড়া করে অনেক বড়ো হতে চাই। সবার জন্য কিছু করতে চাই। অসহায় মেয়েদের জন্য কিছু করতে চাই।”

ভিডিও সাক্ষাৎকারে এভাবেই নিজের ভবিষ্যৎ পরিকল্পনার কথা জানান শারমিন। তবে শুধু ভিডিও নয় শারমিনদের মুখ থেকে সরাসরি তাঁদের গল্প শুনবে যুক্তরাষ্ট্রের বিভিন্ন অঞ্চলের মানুষ।

পুরস্কার অনুষ্ঠানের কর্মসূচি থেকে জানা যায়, আগামী ১ এপ্রিল থেকে পুরস্কাপ্রপ্তরা যুক্তরাষ্ট্রের বিভন্ন রাজ্যে ভ্রমণ করে সেখানকার বাসিন্দাদের সাথে নিজেদের অভিজ্ঞতা বিনিময় করবেন। পাশাপাশি, ভবিষ্যতে একসাথে কাজ করার কর্মপরিকল্পনাও করবেন এই নারীরা।

এদিকে আগামী ৬ এপ্রিল শারমিন দেশে ফিরবেন বলে টেলিফোনে বেনারকে জানিয়েছেন শারমিনের ফুফু জরিনা বেগম।

ফার্স্ট লেডি মেলানিয়া ট্রাম্প ও আন্ডার সেক্রেটারি টমাস শ্যাননের সাথে পুরস্কারপ্রাপ্তরা।
ফার্স্ট লেডি মেলানিয়া ট্রাম্প ও আন্ডার সেক্রেটারি টমাস শ্যাননের সাথে পুরস্কারপ্রাপ্তরা।
[State Department photo]
শারমিনের সাথে এ বছর পুরস্কারপ্রাপ্ত অন্য নারীরা হলেন, বৎসোয়ানার মালেবগো মলেফে, কলম্বিয়ার নাতালিয়া পনস ডি লিওন, ডেমক্রেটিক রিপাব্লিক অব কঙ্গোর রেবেকা কাবুগো, ইরাকের জান্নাত আল গেজি, নাইজার-এর মেজর আইচাতু ওসমানে ইসাকা, পাপুয়া নিউ গিনির ভেরোনিকা সিমোগুন, পেরুর সিন্ডি আর্ল কনট্রেরাস বাতিস্তা, শ্রীলংকার সানদিয়া একনেলিগোদা, সিরিয়ার সিস্টার ক্যারলিন তাহহান ফাচাক, তুরস্কের সাদেত ওজকান, ভিয়েতনামের গুইয়েন গত নু কুইয়ান ও ইয়েমেনের ফাদিয়া নাজিব তাবেত।

প্রতিবেদনে তথ্য দিয়ে সহায়তা করেছেন ঢাকা থেকে জেসমিন পাপড়ি

মন্তব্য করুন

নীচের ফর্মে আপনার মন্তব্য যোগ করে টেক্সট লিখুন। একজন মডারেটর মন্তব্য সমূহ এপ্রুভ করে থাকেন এবং সঠিক সংবাদর নীতিমালা অনুসারে এডিট করে থাকেন। সঙ্গে সঙ্গে মন্তব্য প্রকাশ হয় না, প্রকাশিত কোনো মতামতের জন্য সঠিক সংবাদ দায়ী নয়। অন্যের মতামতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল হোন এবং বিষয় বস্তুর প্রতি আবদ্ধ থাকুন।