ঢাকায় #মি-টু আন্দোলন: অভিযুক্ত বিভিন্ন পেশার মানুষজন
2018.11.16
ঢাকা
ভারতের পর এবার বাংলাদেশে যৌন নিপীড়ন বিরোধী #মি-টু আন্দোলনের সাথে সংহতি প্রকাশ করে শুক্রবার নারী সাংবাদিকেরা রাস্তায় নামেন।
জাতীয় প্রেসক্লাবের সামনে অনুষ্ঠিত সংহতি সমাবেশে অংশগ্রহণকারী দুই নারী প্রকাশ্যে বলেছেন তাঁদের ওপর ঘটে যাওয়া যৌন নিপীড়নের কথা। এদের একজন দশ বছর বয়সে গ্রামে এক আত্মীয়ের দ্বারা নিপীড়নের শিকার হয়েছিলেন। অন্য নারী ১৮ বছর বয়সে এক অধ্যাপকের নিপীড়নে বাধ্য হয়েছিলেন বিশ্ববিদ্যালয় ছাড়তে।
সকল শ্রেণির মানুষ রাস্তায় দাঁড়িয়ে শুনেছেন বহু বছর ধরে গোপন থাকা সেই নিপীড়নের নির্মম কাহিনী। ঢাকায় কর্মরত নারী সাংবাদিকদের একটি বড় অংশের উদ্যোগে এই সমাবেশ আয়োজন করা হয়। এতে নারী–পুরুষ মিলিয়ে অংশগ্রহণকারীর সংখ্যা ছিল প্রায় একশ।
সমাবেশ থেকে ঘোষণা দেয়া হয়, আগামী রোববার জাতীয় প্রেসক্লাবের সামনে সকল পেশাজীবী নারীরা যৌন নিপীড়নের বিরুদ্ধে মানববন্ধন করবেন। ভবিষ্যতে আরো বড় কর্মসূচি দেওয়া হবে বলে জানানো হয়।
গত কয়েকদিন ধরে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে নির্যাতিত নারী ও পুরুষ তাঁদের ওপর ঘটে যাওয়া যৌন নির্যাতন ও নিপীড়নের কথা প্রকাশ করে আসছেন। অভিযোগ এসেছে, সাংবাদিক, লেখক, নাট্যকারসহ বিভিন্ন শ্রেণি ও পেশার অন্তত নয়জনের বিরুদ্ধে।
আন্দোলনে অংশ নেওয়া একাধিক নারী নাম প্রকাশ না করার শর্তে বেনারকে বলেন, #মি–টু আন্দোলনের বড় ঝুঁকি হচ্ছে, প্রকৃত যৌন হয়রানির পাশাপাশি ব্যক্তিগত, পারিবারিক বা পেশাগত কারণে স্পর্শকাতর এই অভিযোগ তোলা। এমন ঘটনা শুরু হলে আন্দোলন দ্রুত গ্রহণযোগ্যতা হারাবে।
নারী সাংবাদিক কেন্দ্রের সভাপতি নাসিমুন আরা হক মিনু সমাবেশে বলেন, ভারতে একজন প্রতিমন্ত্রীর বিরুদ্ধে #মি-টু আন্দোলনের ফলে যৌন নিপীড়নের অভিযোগ ওঠার পর তিনি পদত্যাগ করেছেন।
বাংলাদেশে এখন পর্যন্ত নয়জন নারী ও একজন পুরুষ ফেসবুকে তাঁদের ওপর ঘটে যাওয়া যৌন নির্যাতন ও নিপীড়নের ঘটনার ব্যাপারে প্রকাশ্যে মুখ খুলেছেন।
তিনি একটি ইংরেজি দৈনিকের নাম উল্লেখ করে বলেন, ওই সংবাদপত্রের এক সাবেক নারী সাংবাদিক সেই প্রতিষ্ঠানের দুই সিনিয়র সাংবাদিকের বিরুদ্ধে যৌন হয়রানির অভিযোগ করার পর পত্রিকাটি সে বিষয়ে তদন্ত শুরু করেছে।
এর আগে একটি বেসরকারি টেলিভিশন চ্যানেলের একজন সিনিয়র সাংবাদিকের বিরুদ্ধে তাঁর সাবেক নারী সহকর্মী যৌন নিপীড়নের অভিযোগ তোলেন। এরপর ওই প্রতিষ্ঠানও ঘটনাটি তদন্ত করার জন্য কমিটি করেছে।
অন্যান্য প্রতিষ্ঠানগুলোও অভিযোগের ঘটনাগুলো তদন্ত করে দেখবে বলে আশাবাদ ব্যক্ত করেন মিনু।
তিনি বলেন, শুধু সাংবাদিক নয়, সকল পেশাজীবী নারী-পুরুষ নিয়ে আগামী ১৮ নভেম্বর জাতীয় প্রেসক্লাবের সামনে যৌন নিপীড়নের বিরুদ্ধে মানববন্ধন অনুষ্ঠিত হবে।
সমাবেশের অন্যতম আয়োজক ও বাংলাদেশ সংবাদ সংস্থার সিনিয়র সাব-এডিটর রোকসানা ইয়াসমিন বেনারকে বলেন, “শুধু নারীরা নন। ছেলেরাও যৌন নিপীড়নের শিকার হয়। আমরা সব ধরনের যৌন নিপীড়ন, হয়রানির বিরুদ্ধে।”
বেসরকারি টেলিভিশন চ্যানেল বাংলাভিশনের বার্তা সম্পাদক শারমিন রিনভী বেনারকে বলেন, “যারা মি-টু আন্দোলনের একাত্মতা ঘোষণা করে তাঁদের যৌন নির্যাতনের কথা কথা জানিয়েছেন, আমরা তাঁদের অভিবাদন জানাই।”
তিনি বলেন, #মি-টু আন্দোলন কোনো পুরুষের বিরুদ্ধে নয়। এটি যৌন নিপীড়ক ও নিপীড়নের বিরুদ্ধে।
রিনভী বলেন, নারীরা কর্মস্থলে বাসার চাইতে কম সময় ব্যয় করেন না। সেই কর্মস্থলে যদি যৌন নিপীড়নের ভয় থাকে তাহলে তাঁরা কাজ করবে কীভাবে? #মি-টু আন্দোলনের সাথে সংহতি প্রকাশ করে আজকের সভা করার উদ্দেশ্য হলো, ভবিষ্যতে নারীদের জন্য কর্মস্থল নিরাপদ করা।
একাত্তর টেলিভিশনের সাংবাদিক ও সাংবাদ পাঠিকা নাজনীন মুন্নী বেনারকে বলেন, বাংলাদেশসহ দক্ষিণ এশিয়ার সমাজে নারী যৌন নির্যাতনের শিকার হলে নীরবে সহ্য করে যায়। তারা নির্যাতনের কথা বলতে গেলে উল্টো তাদের দোষারোপ করা হয়। কাজেই নারীরা এই নির্যাতন নিপীড়নের কথা গোপন করে যান।
“শুরু হওয়া #মি-টু আন্দোলন নারীদের নীরবতা ভেঙ্গে দিতে সাহায্য করেছে। যৌন নিপীড়নের কথা নারীদের বলতে হবে, যাতে যৌন নিপীড়কদের প্রকৃত চেহারা উন্মোচিত হয়,” জানান নাজনীন।