অলিম্পিক লরেল অ্যাওয়ার্ডে ভূষিত হলেন নোবেলজয়ী ড. ইউনূস

আহম্মদ ফয়েজ
2021.07.23
ঢাকা
অলিম্পিক লরেল অ্যাওয়ার্ডে ভূষিত হলেন নোবেলজয়ী ড. ইউনূস পুরস্কার হাতে অলিম্পিক লরেল অ্যাওয়ার্ডে ভূষিত অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূস । জুলাই ২৩, ২০২১।
ছবি: ইউনুস সেন্টার

এ বছর অলিম্পিক লরেল অ্যাওয়ার্ডে ভূষিত হয়েছেন শান্তিতে নোবেলজয়ী অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূস। শুক্রবার টোকিও অলিম্পিক ২০২০ এর উদ্বোধনী অনুষ্ঠানের সময় পুরস্কারটি গ্রহণ করেন বাংলাদেশী সামাজিক উদ্যোক্তা ও অর্থনীতিবিদ ড. ইউনূস।

ইন্টারন্যাশনাল অলিম্পিক কমিটির (আইওসি) ওয়েবসাইট ও ইউনূস সেন্টার সূত্রে জানা গেছে, তিনি অলিম্পিক লরেল প্রাপ্ত দ্বিতীয় ব্যাক্তি এবং প্রথম বাংলাদেশি।

জাপানের টোকিওতে অলিম্পিকের উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে শুক্রবার ঢাকা থেকে ভার্চুয়ালি যোগ দেন তিনি। এই পুরস্কার প্রাপ্তির প্রতিক্রিয়ায় ড. ইউনূস তার ভেরিফাইউ ফেসবুক পেইজে লিখেছেন, “অলিম্পিক লরেল অ্যাওয়ার্ডে ভূষিত হয়ে আমি প্রবলভাবে সম্মানিত বোধ করছি এবং এ জন্য দুঃখ অনুভব করছি আমি সেখানে উপস্থিত নেই বলে।”

“খেলাধুলার সামাজিক দিকটিকে খুবই গুরুত্ব সহকারে বিবেচনা করছে আইওসি। ক্রীড়াবিদরা খেলাধুলার মাধ্যমে বৈশ্বিক যে পরিবর্তন, তাতে নেতৃত্ব দিতে পারেন,” বলেন ড. ইউনূস। তিনি ক্রীড়াবিদদের প্রতি কার্বন নিঃসরণ, দারিদ্র এবং বেকারত্ব শূন্যের কোঠায় নামিয়ে আনতে ভূমিকা রাখার আহবান জানান।

“বিশ্বের তিনটি বিষয় শূন্যের কোঠায় নামিয়ে আনতে কাজ করতে পারেন আপনারা। কার্বন নিঃসরণ শূন্যের কোঠায় নামিয়ে আনতে পারেন; দারিদ্র্যের অবসান ঘটাতে সম্পদ পুঞ্জীভূত করা শূন্যে নামিয়ে আনতে পারেন এবং সবার মধ্যে উদ্যোক্তার শক্তি ছড়িয়ে দিয়ে বেকারত্বের হার শূন্যে নামিয়ে আনতে পারেন,” বলেন এই অর্থনীতিবিদ।

প্রথমবারের মতো একজন বাংলাদেশী অলিম্পিক লরেল অ্যাওয়ার্ড প্রাপ্তির বিষয়ে জানতে চাইলে বাংলাদেশ অলিম্পিক অ্যাসোসিয়েশন (বিওএ) উপমহাসচিব আসাদুজ্জামান কোহিনুর বেনারকে বলেন, একজন বাংলাদেশি হিসেবে প্রফেসর ইউনূসের এই অ্যাওয়ার্ড প্রাপ্তি খুবই গৌরবের।

“ওনার এই অর্জন জাতি হিসেবে আমাদের মুখ উজ্জ্বল করে। এই প্রাপ্তি দেশের ক্রীড়া অঙ্গনে ভূমিকা রাখতে জনাব ইউনূসকে উৎসাহ জোগাবে বলেও আমরা বিশ্বাস করি।”

এদিকে ইউনুস সেন্টারের অফিসিয়াল ফেসবুক পেইজে থেকে অ্যাওয়ার্ড হাতে প্রফেসর ইউনুসের একটি হাস্যোজ্জল ছবি প্রকাশ করে তাকে উষ্ণ অভিনন্দন ও প্রানঢালা শুভেচ্ছা জানানো হয়।

খেলাধুলার মাধ্যমে শিক্ষা, সংস্কৃতি, উন্নয়ন ও শান্তিতে অসামান্য অবদান রেখেছেন এমন ব্যাক্তিদের স্বীকৃতি জানানো হয় অলিম্পিক লরেল অ্যাওয়ার্ডের মাধ্যমে। আইওসি ২০১৬ সালে এই অ্যাওয়ার্ড প্রবর্তন করে। প্রথমবার এই পুস্কার পেয়েছিলেন কেনিয়ার সাবেক তারকা কিপশোগে কেইনো, যিনি কেনিয়ার শিশুদের জন্য স্কুল ও নিরাপদ আবাসনের ব্যবস্থা করেছিলেন, তাদের খেলাধুলার প্রশিক্ষণ দিয়েছিলেন।

প্রফেসর ইউনূসই যে এ বছর অলিম্পিক লরেল অ্যাওয়ার্ডের পাচ্ছেন তা গত ১৫ জুলাই নিজেদের ওয়েব সাইটে প্রকাশ করেছিলো আইওসি। ওই ঘোষণায় বলা হয়, প্রায়শই দরিদ্রদের বিশ্ব ব্যাংকার হিসেবে প্রশংসিত হন তিনি। ক্রীড়ার উন্নয়নে বিস্তৃত কাজের জন্য তাঁকে সম্মানিত করা হয়েছে বলে জানায় আইওসি।

“তিনি আইওসি ইয়াং লিডারস প্রোগ্রাম, ‘ইমাজিন’ পিস ইউথ ক্যাম্প এবং অ্যাথলেট ৩৬৫ বিজনেস অ্যাক্সলেটরসহ আইওসির বেশ কিছু প্রকল্পে সহযোগী হিসেবে কাজ করেছেন,” ঘোষনায় উল্লেখ করা হয়।

আইওসি সভাপতি টমাস বাচ বলেন, “অলিম্পিক লরেলের সঙ্গে আমরা আধুনিক অলিম্পিকের প্রতিষ্ঠাতা পিয়ের ডি কবরটিনের চিন্তা ভাবনা এবং খেলা ও শান্তির মাধ্যমে মানব উন্নয়নকে আলোকপাত করার চেষ্টা করেছি।“

“প্রফেসর ইউনূসের কাজ এই আদর্শ ও মূল্যবোধের জন্য সত্যিই অনুকরণীয়। তিনি ক্রীড়াবিদ ও অলিম্পিক কমিউনিটির মধ্যে তার জ্ঞানের প্রখরতা শেয়ার করেছেন। তিনি আমাদের সকলের জন্য অনুপ্রেরণার উৎস,” বলেন টমাস বাচ।

বিশেষত, ২০২৪ সালে প্যারিসে অনুষ্ঠেয় অলিম্পিকের একটি নতুন মডেল তৈরিতে তিনি এমন অবদান রেখেছেন যাতে ধরিত্রির জন্য নূন্যতম প্রভাবের মাধ্যমে আয়োজক দেশের সর্বোত্তম উপকার নিশ্চিত হয়, বলেন আইওসি সভাপতি।

২০২০ সালের অলিম্পিক লরেল অ্যাওয়ার্ড প্রদানের জন্য পাঁচটি মহাদেশের প্রতিনিধিত্বের মাধ্যমে আইওসি সভাপতি টমাস বাচের নেতৃত্বে একটি বিচারক প্যানেল গঠন করা হয়।

আইওসির ওয়েবসাইটে প্রকাশিত ঘোষণায় প্রফেসর ইউনূস বলেন, “অলিম্পিক গেমস এবং অন্যান্য খেলাধুলার সর্বোচ্চ সম্মিলন ক্ষমতা রয়েছে। অলিম্পিক পুরো পৃথিবীকে একটি শান্তিপূর্ণ প্রতিযোগীতায় মিলিত করে এবং নানা সংস্কৃতির ঐক্যের সুযোগ তৈরী করে দেয়।”

“২০১৮ সালে পিয়ংচ্যাঙ শীতকালীন অলিম্পিকের প্যারেড অব ন্যাশনসে উত্তর ও দক্ষিণ কোরিয়ার অ্যাথলেটসরা একসঙ্গে মার্চ করেছে, যা খেলার মাধ্যমে শান্তি প্রতিষ্ঠার এক অপরূপ সুন্দরের প্রকাশ ঘটায়,” বলেন প্রফেসর ইউনূস।

“খেলাধুলার এই শক্তিকে আমরা পৃথিবী বদলে দেয়ার শক্তিশালী উপায় হিসেবে ব্যবহার করতে পারি। স্যোশাল বিজনেস হতে পারে এই শক্তিকে উন্মোচনের জন্য সবচেয়ে প্রভাবক মাধ্যম,” যোগ করেন তিনি।

প্রফেসর ইউনূস ১৯৪০ সালে চট্টগ্রামে জন্ম গ্রহন করেন। তিনি এবং তার প্রতিষ্ঠিত গ্রামীণ ব্যাংক যৌথভাবে ২০০৬ সালে নোবেল শান্তি পুরস্কার লাভ করেন।

মন্তব্য করুন

নীচের ফর্মে আপনার মন্তব্য যোগ করে টেক্সট লিখুন। একজন মডারেটর মন্তব্য সমূহ এপ্রুভ করে থাকেন এবং সঠিক সংবাদর নীতিমালা অনুসারে এডিট করে থাকেন। সঙ্গে সঙ্গে মন্তব্য প্রকাশ হয় না, প্রকাশিত কোনো মতামতের জন্য সঠিক সংবাদ দায়ী নয়। অন্যের মতামতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল হোন এবং বিষয় বস্তুর প্রতি আবদ্ধ থাকুন।