আসামের নতুন মুখ্যমন্ত্রীর সীমান্ত বন্ধের ঘোষণায় বাংলাদেশ এখনই চিন্তিত নয়
2016.05.25

পদে আসীন হতে না হতেই বাংলাদেশ সংলগ্ন ভারতের আসাম রাজ্যের নতুন মুখ্যমন্ত্রী সর্বানান্দা সনোয়াল বাংলাদেশিমুক্ত আসাম গড়ার ঘোষণা দিয়েছেন। বাংলাদেশ থেকে অবৈধ অনুপ্রবেশ ঠেকাতে সীমান্ত বন্ধ করার কথাও জানান তিনি।
তবে সীমান্ত বন্ধের বিষয়টি নিয়ে এখনই ভাবতে চায় না বাংলাদেশ। আসামের নতুন মুখ্যমন্ত্রী নিছক রাজনৈতিক প্রেক্ষাপটে এমন বক্তব্য দিয়েছেন বলে মনে করছেন বিশ্লেষকেরা।
তাঁদের মতে, এই বক্তব্য বাস্তবায়ন করতে গেলে আসামের অভ্যন্তরেই অস্থিরতা তৈরি হবে। তা ছাড়া যেখানে ভারতের কেন্দ্রীয় বিজেপি সরকারের সঙ্গে বাংলাদেশের সুসম্পর্ক রয়েছে, সেখানে তাদেরই রাজ্য সরকার পরিস্থিতির অবনতি ঘটাবে, এটা যুক্তিসংগত নয়।
বাংলাদেশি অনুপ্রবেশকারী ঠেকাতে সীমান্ত একেবারেই বন্ধ করা ও অবৈধ অভিবাসীদের ধরতে জাতীয় নাগরিক নিবন্ধন হালনাগাদ করা ছিল এবারের বিধানসভা নির্বাচনে আসাম বিজেপির অন্যতম প্রতিশ্রুতি।
দায়িত্ব নেওয়ার আগে ভারতের বার্তা সংস্থা পিটিআইকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে আসামের মুখ্যমন্ত্রী বলেন, তাঁর সরকার দায়িত্ব নিয়েই আগামী দুই বছরের মধ্যে বাংলাদেশের সঙ্গে আসামের সীমান্ত বন্ধ করার প্রক্রিয়া শুরু করবে।
এদিকে মমতা ব্যানার্জি আবারও পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী নির্বাচিত হওয়ায় দীর্ঘ দিন ধরে অমীমাংসিত তিস্তা চুক্তির সম্ভাবনা বেড়েছে বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা।
‘এখনো প্রিম্যাচিউর’
আসাম মুখ্যমন্ত্রীর এমন কঠিন বক্তব্যের রেশ অবশ্য বাংলাদেশ সরকারের ওপর পড়েনি। বাংলাদেশ বলছে, বিষয়টি নিয়ে ভাবার মতো সময় এখনো হয়নি।
এ বিষয়ে সাংবাদিকদের এক প্রশ্নে বুধবার পররাষ্ট্র মন্ত্রী আবুল হাসান মাহমুদ আলী বলেন, “বিষয়টি এখনো প্রিম্যাচিউর। আমরা দেখব আসামের অভ্যন্তরে কী ঘটে। দেখা যাক কী হয়?”
‘রাজনৈতিক প্রেক্ষাপটে এমন বক্তব্য’
বাংলাদেশি বিতাড়িত করা বা সীমান্ত বন্ধ করার বিষয়ে আসামের মুখ্যমন্ত্রীর বক্তব্য বাস্তবায়নযোগ্য কিনা, সে বিষয়ে প্রশ্ন তুলেছেন কূটনীতি বিশ্লেষকেরা।
এ প্রসঙ্গে সাবেক রাষ্ট্রদূত ও কূটনীতি বিশ্লেষক হুমায়ূন কবির বেনারকে বলেন, “একটি রাজনৈতিক প্রেক্ষাপটে এসব মন্তব্য আসছে।মুখ্যমন্ত্রীর দল বিজেপিসহ জোটের অন্য দলগুলো ‘অনুপ্রবেশ বন্ধ’ প্রতিশ্রুতি দিয়েই নির্বাচন করেছে। জনগণকে বুঝিয়েছে, শেষ মেষ ভোট পেয়ে জয়লাভও করেছে। এখন তিনি যখন মুখ্যমন্ত্রী হয়েছেন, তখন সে কথা তাকে বলতেই হবে।”
ভারতের কেন্দ্রীয় সরকার এতে সম্মত হবে না উল্লেখ করে তিনি আরও বলেন, “ভারতের কেন্দ্রীয় সরকারের আসনে থাকা বিজেপি বাংলাদেশের সঙ্গে সম্পর্কোন্নয়নে আগ্রহী। সেখানে আসামের রাজ্য সরকার বাংলাদেশের সঙ্গে অহেতুক ঝামেলা তৈরি করুক, দিল্লি সেটা যুক্তিসংগত মনে করবে না।”
তবে আসামের অভ্যন্তরীণ পরিস্থিতি কীভাবে আবর্তিত বা বিবর্তিত হয় সে দিকে আমাদের নজর রাখতে হবে উল্লেখ করে হুমায়ূন কবির বলেন, “তারা (আসাম) যদি তাদের এ প্রতিশ্রুতি বাস্তবায়নের দিকে যায়, তবেই বাংলাদেশ তাদের করণীয় নির্ধারণ করবে। দেখতে হবে সেসব (মুখ্যমন্ত্রীর) বক্তব্য আসলে বাস্তবায়নের দিকে যায় কিনা।”
তিস্তার বিষয়ে আশাবাদী
দু’দেশের মধ্যে দীর্ঘদিন ধরে ঝুলে থাকা তিস্তার পানি বণ্টন ইস্যুটি এবার সমাধানের মুখ দেখবে বলে আশা করছে বাংলাদেশ। যে চুক্তিটি সম্পন্ন হওয়ার বিষয়ে একমাত্র প্রতিবন্ধকতা তৈরি করেছিলেন পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী মমতা ব্যানার্জি।
সেই মমতা আবারও ক্ষমতায় এসেছেন।কী হতে পারে তিস্তার ভবিষ্যৎ?—এমন প্রশ্নের জবাবে পররাষ্ট্র মন্ত্রী বলেন, “আমরা চাই এ বিষয়টির সমাধান হোক। আমরা আশাবাদী। ইতিবাচক মন নিয়ে এগিয়ে যাওয়াটাই ভাল।”
বিশ্লেষকরাও মনে করছেন, বিপুল ভোটে জয়ী হওয়ার পর, মমতা এবার তিস্তার বিষয়ে নমনীয় হতে পারেন।
এ প্রসঙ্গে দীর্ঘদিন বাংলাদেশে দায়িত্বপালন করা ভারতের সাবেক হাইকমিশনার পিনাক রঞ্জন চক্রবর্তী বেনারকে বলেন, “তিস্তার বিষয়ে মমতা ব্যানার্জির আপত্তির অন্যতম কারণ ছিল পশ্চিমবঙ্গের বিধান সভা নির্বাচন। তার সে উদ্দেশ্য সফল হয়েছে। তিনি বিপুলভাবে জয়লাভ করেছেন। এখন এ বিষয়ে তিনি নমনীয় হতেই পারেন। তাই আবারও মমতা ব্যানার্জির ক্ষমতায় আসায় তিস্তা চুক্তির সম্ভাবনা বেড়ে গেছে বলতেই হয়।”
আগামী ২৭ মে মমতার শপথ অনুষ্ঠানে যোগ দিতে বাংলাদেশ থেকে যাচ্ছেন শিল্পমন্ত্রী আমির হোসেন আমু।প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে আমন্ত্রণ জানানো হলেও তিনি ওই সময় জাপান সফরে থাকবেন বলে তাঁর পক্ষে শিল্পমন্ত্রী ওই অনুষ্ঠানে যোগ দিচ্ছেন।