বাস চালকের অবহেলায় প্রাণ গেল ২৫ যাত্রীর
2015.04.09

মহাসড়কের পাশে থাকা গাছের সঙ্গে বাসের ধাক্কায় ২৫ যাত্রীর মর্মান্তিক মৃত্যু হয়েছে। ৮ এপ্রিল দিবাগত রাত সোয়া একটার দিকে ফরিদপুরের ভাঙ্গা পৌরসভার কৈডুবি এলাকায় ঢাকা-বরিশাল মহাসড়কে এ দুর্ঘটনা ঘটে।
দুর্ঘটনার শিকার বাসটির নাম ‘সোনার তরী পরিবহন’। বাসটি ওই দিন রাত আটটার দিকে ঢাকার গাবতলী থেকে রওনা দিয়ে পটুয়াখালীর খেপুপাড়া যাচ্ছিল।
“গভীর রাতে প্রচণ্ড শব্দ শুনে বাড়ি থেকে বের হই। দুর্ঘটনাস্থলে গিয়ে দুমড়েমুচড়ে যাওয়া বাস ও হতাহত যাত্রীদের দেখতে পাই,” বেনারকে টেলিফোনে জানান ঘটনাস্থল এলাকার বাসিন্দা ও মুদি দোকানদার সোনা মিয়া।
নিহতদের মধ্যে ২০ জন পুরুষ ও পাঁচজন নারী। এ ছাড়া আহত ১৮ জনকে ভাঙ্গা উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স এবং ফরিদপুর মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে।
“গাবতলী থেকে ছাড়ার পর থেকেই বাসটি অত্যন্ত দ্রুত গতিতে চালাচ্ছিলেন চালক। যাত্রীরা সতর্ক করলেও তিনি শোনেননি,” বেনারকে জানান ভাঙ্গা উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে চিকিৎসাধীন আহত যাত্রী রুবি আক্তার।
এ ঘটনায় রাষ্ট্রপতি আবদুল হামিদ ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা শোক জানিয়েছেন। ঘটনা তদন্তে সড়ক পরিবহন ও সেতু মন্ত্রণালয় এবং স্থানীয় জেলা প্রশাসন পৃথক দুটি তদন্ত কমিটি করেছে।
শোক প্রকাশ করার পাশাপাশি সড়ক দুর্ঘটনায় মানুষের প্রাণহানি ঘটতে থাকলেও এর কারণ বের করে কার্যকর পদক্ষেপ নিতে সরকার ‘পুরোপুরি ব্যর্থ’ হয়েছে বলে অভিযোগ করেছেন বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া।“জনগণের প্রতি সরকারের দায়িত্ববোধ না থাকার কারণে মানুষের নিরাপত্তার বিষয়টি বার বার উপেক্ষিত থাকছে। একের পর এক দুর্ঘটনায় পুনরাবৃত্তিতে ব্যাপক জানমালের ক্ষয়ক্ষতিতেও সরকার কোনো কার্যকর পদক্ষেপ গ্রহণ করছে না,” বৃহস্পতিবার এক বিবৃতিতে জানান খালেদা জিয়া।
ঘটনা তদন্তে ফরিদপুরের অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক আব্দুর রশিদকে প্রধান করে তিন সদস্যের এবং সড়ক পরিবহন ও সেতু মন্ত্রণালয় ফরিদপুরের অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিস্ট্রেটের নেতৃত্বে পাঁচ সদস্যের দুটি পৃথক তদন্ত কমিটি করেছে।
তবে প্রাথমিকভাবে ধারণা করা হচ্ছে, চালকের অবহেলায় এই দুর্ঘটনা ঘটেছে।
“বাসের চালক ঘুমিয়ে পড়ায় এ দুর্ঘটনা ঘটেছে বলে যাত্রীদের সঙ্গে কথা বলে ধারণা পাওয়া গেছে,”
সাংবাদিকদের জানান হাইওয়ে পুলিশের মাদারীপুর অঞ্চলের সহকারী সুপার বেলাল হোসেন।
ওই ঘটনার পরপরই এলাকার লোকজন ও পার্শ্ববর্তী একটি আনসার ক্যাম্পের সদস্যরা গিয়ে উদ্ধার কাজ শুরু করেন। পরে ভাঙ্গা ও ফরিদপুর ফায়ার সার্ভিসের সদস্যরাও যোগ দেন।
“নিহতদের মরদেহ সারি দিয়ে রাখা হলে শোকাবহ ও হৃদয়বিদায়ক পরিবেশ সৃষ্টি হয়। শতশত মানুষ দুর্ঘটনাস্থল ও স্থানীয় চিকিৎসাকেন্দ্রে জড়ো হন,” বেনারকে জানান দুর্ঘটনা কভার করতে যাওয়া ফোকাস বাংলার ফটো সাংবাদিক মাহবুব হোসেন।
ফরিদপুরের জেলা প্রশাসক সরদার সরাফত আলী ঘটনাস্থলে গিয়ে নিহতদের দাফনের জন্য প্রত্যেকের পরিবারকে ১০ হাজার করে টাকা দেওয়ার ঘোষণা দেন। আহতদের চিকিৎসার ব্যয়ভার জেলা প্রশাসন বহন করবে বলেও জানান তিনি।