দেশের ফুল বিদেশে রপ্তানি হচ্ছে, ৮০০ কোটি টাকার বাজার

ঢাকা থেকে শাহরিয়ার শরীফ
2016.03.11
BD-flower সরকারি, বেসরকারি জাতীয় অনুষ্ঠানসহ বিয়ে, জন্মদিন, বিয়ে বার্ষিকী, পুজো পার্বণ, সভা, সেমিনার ও বিভিন্ন ছোটখাটো সামাজিক অনুষ্ঠানেও ফুলের ব্যবহার বেড়েছে।
ফোকাস বাংলা

ব্যবসায়ীদের হিসেবে, বছরে ফুলের বাজার এখন প্রায় ৮০০ কোটি টাকা। দেশে উৎপাদিত ফুল নিজস্ব চাহিদা মিটিয়ে বিদেশেও যেতে শুরু করেছে।

বাংলাদেশ ফ্লাওয়ার সোসাইটির হিসাব অনুযায়ী, প্রায় ২০ লাখ মানুষ এই খাতের সঙ্গে প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষভাবে জড়িত।

সরকারি হিসাবে, দেশের ৬৪ জেলার মধ্যে ২৩ জেলায় ফুলের চাষ হচ্ছে। এসব জেলার প্রায় ১০ হাজার হেক্টর জমিতে ১৫ থেকে ১৬ হাজার কৃষক সরাসরি বিভিন্ন জাতের ফুল উৎপাদন করছেন।

সোসাইটির তথ্য অনুযায়ী, ১৯৮৩ সাল থেকে ৩০ শতক জমিতে রজনীগন্ধা ফুল চাষের মধ্য দিয়ে বাংলাদেশে বাণিজ্যিকভাবে ফুল উৎপাদন শুরু হয়েছিল।

“এক সময় ফুলের উৎপাদন ছিল বাড়ির উঠোন কিংবা ছাদের কোনায় টবের মধ্যে সীমাবদ্ধ। কিন্তু বর্তমানে শৌখিন উৎপাদকের গণ্ডি পেরিয়ে ফুলের ব্যাপক চাষাবাদ হচ্ছে। হাজার হাজার শিক্ষিত বেকার ফুল চাষ ও ফুল ব্যবসা করছে,” বেনারকে জানান বাংলাদেশ ফ্লাওয়ার সোসাইটির সভাপতি আব্দুর রহিম।

সরকারি, বেসরকারি জাতীয় অনুষ্ঠানসহ বিয়ে, জন্মদিন, বিয়ে বার্ষিকী, পুজো পার্বণ, সভা, সেমিনার ও বিভিন্ন ছোটখাটো সামাজিক অনুষ্ঠানেও ফুলের ব্যবহার বেড়েছে।

“ফুলের ক্রেতাদের মধ্যে তরুণ–তরুণীদের সংখ্যাই বেশি। জন্মদিনসহ যে কোনো ব্যক্তি ও পারিবারিক অনুষ্ঠানেও মানুষ ছুটে আসে শাহবাগে,”  বেনারকে জানান রাজধানীর শাহবাগে ফুলের দোকানের মালিক এম এ রফিক।

শাহবাগ ছাড়াও কাঁটাবন, গুলশান, নিউমার্কেটসহ শহরজুড়ে বিভিন্ন এলাকায় গড়ে উঠেছে ফুলের দোকান। শহরের ফুটপাতেও কেনাবেচা হচ্ছে ফুল। শহরের বিভিন্ন মোড়ে ট্রাফিক সিগন্যালে গাড়ি থামলে ফুল হাতে এগিয়ে যায় বিক্রেতারা।

“গত একুশে ফেব্রুয়ারি আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবসে সারা দেশে প্রায় ২৮ থেকে ৩০ কোটি টাকার ফুল বিক্রি হয়েছে। এর মধ্যে রাজধানীতে প্রায় ১৫ কোটি টাকার ফুল বিক্রি হয়েছে,” জানান আব্দুর রহিম।

তিনি জানান, ফুলের উৎপাদন, ব্যবসা ও ব্যবহার—সবকিছুই বাড়ছে। এখন ফুলের বাজর প্রায় ৮০০ কোটি টাকা।

বর্তমানে যশোর, ঝিনাইদহ, চুয়াডাঙ্গা, চট্টগ্রামের হাটহাজারী এবং সাভার এলাকায় বাণিজ্যিক ভিত্তিতে বিভিন্ন ফুলের চাষ হয়। এগুলোর মধ্যে আছে রজনীগন্ধা, গাঁদা, জারবেরা, কেলোনজরা, চন্দ্রমল্লিকা, লাল ও সাদা গোলাপ, ভুট্টা, বেলি, কামিনী, সূর্যমুখী, ডায়মন্ড, গরম ফেনিয়া, রতপুসুটি, টুনটুনি, জিপসি, স্টার কলি, ডালিয়াসহ বিভিন্ন ধরনের ফুল ।

চাষিরা বলছেন, সারা বছরই ফুল উৎপাদন হয়। তবে নভেম্বর থেকে মার্চ পর্যন্ত সময়কে ফুল উৎপাদনের প্রধান মৌসুম ধরা হয়।

“দেশের মানুষ এখন ফুল প্রচুর ব্যবহার করছে সে কারণে আমাদের দেশের ফুল চাষ, ফুলের বাজার দিন দিন সম্প্রসারিত হচ্ছে,” জানান আবদুর রহিম।

তিনি বলেন, বর্তমানে বাংলাদেশে ফুল অর্থকারী ফসল হিসাবে বাণিজ্যিকভাবে উৎপাদন ও বিপণন হচ্ছে। এমনকি ফুল এখন রপ্তানিও হচ্ছে। যদিও এই রপ্তানির পরিমাণ এখনো উল্লেখযোগ্য নয়।

বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের তথ্য অনুযায়ী, ২০১২–১৩ অর্থবছরে বাংলাদেশ ৪০ কোটি টাকার ফুল রপ্তানি করেছে। দেশের উৎপাদিত ফুল বর্তমানে সীমিত আকারে দুবাই,  সোদি আরব ও  কাতারে রপ্তানি হচ্ছে।   

এদিকে দেশীয় ও আন্তর্জাতিক বাজার সম্প্রসারণের লক্ষ্যে বাংলাদেশ ফ্লাওয়ার সোসাইটি (বিএফএস) আগামী ২৯ ও ৩০ মার্চ “বাংলাদেশ ফ্লাওয়ার ফেষ্ট-২০১৬” নামে দুই দিনব্যাপী একটি মেলার আয়োজন করতে যাচ্ছে। খামার বাড়ি কৃষিবিদ ইনস্টিটিউট এর কনভেনশন সেন্টারে দেশে উৎপাদিত ফুল নিয়ে প্রথমবারের মতো এই মেলা অনুষ্ঠিত হবে।

উদ্যোক্তারা জানান, দেশি ফুলের বৈচিত্র্যের সঙ্গে মানুষের পরিচয় আরও বাড়ানো এবং ফুলের সামগ্রিক ব্যবহার বৃদ্ধি করতে এই মেলা আয়োজন করা হয়েছে।

ফুল উৎপাদক, ফুল ব্যবসায়ী (পাইকারি ও খুচরা), ফুল সেক্টরের সংশ্লিষ্ট সংগঠন, সাজসজ্জা বাস্তবায়নকারী প্রতিষ্ঠান (ইভেন্ট ম্যানেজমেন্ট) এই মেলায় অংশ নেবে।

“ফুল সেক্টরকে টেকসই, শক্তিশালীকরণ ও রপ্তানিযোগ্য করতে হলে অন্যান্য দেশের মতো আমাদের দেশে প্যাকেজিং ফুল ব্যবহারের অভ্যাস গড়ে তুলতে হবে,” বেনারকে জানান মেলায় অংশগ্রহণকারী ফুলস্টপ নামে একটি সংগঠনের কর্মকর্তা মো. মাহবুবুর রহমান, যিনি  ফ্লাওয়ার সোসাইটিরও একজন নেতা।

মন্তব্য করুন

নীচের ফর্মে আপনার মন্তব্য যোগ করে টেক্সট লিখুন। একজন মডারেটর মন্তব্য সমূহ এপ্রুভ করে থাকেন এবং সঠিক সংবাদর নীতিমালা অনুসারে এডিট করে থাকেন। সঙ্গে সঙ্গে মন্তব্য প্রকাশ হয় না, প্রকাশিত কোনো মতামতের জন্য সঠিক সংবাদ দায়ী নয়। অন্যের মতামতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল হোন এবং বিষয় বস্তুর প্রতি আবদ্ধ থাকুন।