রপ্তানিকারকেরা লিবিয়ায় জনশক্তি পাঠাতে চায়, সরকার রাজি নয়

ঢাকা থেকে জেসমিন পাপড়ি
2016.03.31
160331-BD-libya-620.jpg আনোয়ার ও হেলালউদ্দিন নামের দুই বাংলাদেশি গত ২৪ মার্চ লিবিয়ার জঙ্গিদের জিম্মিদশা থেকে মুক্তি পান। তাঁদের বেঁচে থাকার খবর পেয়ে দুজনেরই পরিবারে স্বস্তি ফিরে এসেছে। ছবিঃ লিবিয়ার আল-ঘানি তেল খনি। ২৩ মার্চ,২০১৩
এএফপি

সরকার রাজি না হলেও বাংলাদেশের রিক্রুটিং এজেন্সিগুলো লিবিয়ায় জনশক্তি পাঠাতে চায়। এ নিয়ে দুই পক্ষের মধ্যে মনস্তাত্ত্বিক দ্বন্দ্ব শুরু হলেও সরকার জননিরাপত্তাকেই বেশি গুরুত্ব দিচ্ছে।

লিবিয়ার অভ্যন্তরীণ সংঘাত ও আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির অবনতির কারণে গত বছরের অক্টোবর থেকে দেশটিতে শ্রমিক পাঠানো বন্ধ রেখেছে বাংলাদেশ সরকার। তবে এখনকার পরিস্থিতি ‘স্বাভাবিক’ দাবি করে আবারও শ্রমিক পাঠানোর অনুমতি চায় জনশক্তি রপ্তানিকারকরা।

সম্প্রতি লিবিয়ায় কয়েকজন বিদেশি গুলিতে নিহত হয়েছেন। এমন অবস্থায় দেশটিতে কোনোভাবেই শ্রমিক পাঠানোর অনুমতি দিতে রাজি নয় সরকার, যা নিয়ে অসন্তোষ রয়েছে রিক্রুটিং এজেন্সিগুলোর মধ্যে। তবে সবকিছুর আগে শ্রমিকদের নিরাপত্তার কথা ভাবার পরামর্শ বিশ্লেষকদের।

এখনো মৃত্যুপুরী লিবিয়া

গৃহযুদ্ধের কারণে এখনো প্রায় মৃত্যুপুরী লিবিয়া। হঠাৎ কামানের গোলাবর্ষণে কেঁপে ওঠে দেশটির বিভিন্ন এলাকা। গত ২৭ মার্চ লিবিয়ার বেনগাজিতে দুই পক্ষের গোলাগুলিতে ৪ জন বিদেশি নাগরিক নিহত হয়েছেন, যাদের তিনজন বাংলাদেশি ও একজন পাকিস্তানি। এর আগে গভীর রাতে কাজ থেকে ফেরার পথে আটক হয় দুজন বাংলাদেশি। অবশ্য পরে তারা ছাড়া পান।

লিবিয়ায় বাংলাদেশের রাষ্ট্রদূত মেজর জেনারেল (অব.) শহিদুল হক জানান, নিহত তিনজন বাংলাদেশি হলেন; রাজবাড়ীর আবদুর রহিম, ময়মনসিংহের হ‌ুমায়ূন কবির ও যশোরের মো. হাসান।

রেড ক্রস ও রেড ক্রিসেন্ট কর্মীদের সহায়তায় মরদেহগুলো উদ্ধার করে বেনগাজি মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের মর্গে রাখা হয়েছে। শিগগিরই তাদের মৃতদেহ দেশে ফেরত পাঠানো হবে।

পরিস্থিতি ‘স্বাভাবিক’ দাবি বায়রার

বাংলাদেশিসহ কয়েকজন বিদেশি নাগরিক গুলিতে নিহত হওয়ার ঘটনাকে ‘বিচ্ছিন্ন ঘটনা’ দাবি করে দেশটির পরিস্থিতি এখন স্বাভাবিক বলে দাবি করছে জনশক্তি রপ্তানিকারকদের সংগঠন বায়রা।

সংগঠনটি বলছে, লিবিয়ার ১৭১ কোম্পানি থেকে প্রায় ৫২ হাজার শ্রমিকের চাহিদা রয়েছে। অসংখ্য পাসপোর্টে ভিসাও লেগেছে। এ বাজারটি আবারও চাঙা করতে জনশক্তি রপ্তানিকারকরা ক্রমাগত সরকারের ওপর চাপ সৃষ্টি করছে।

গত রোববার এক সংবাদ সম্মেলনে বায়রা সভাপতি মো. আবুল বাশার বলেন, বেশ কিছুদিন আগে লিবিয়ার ১৭১টি নিয়োগকারী প্রতিষ্ঠান প্রায় ৫২ হাজার কর্মীর চাহিদাপত্র বাংলাদেশের রিক্রুটিং এজেন্সিগুলোকে পাঠায়। এর পরিপ্রেক্ষিতে বাংলাদেশে লিবিয়ার দূতাবাস কর্মীদের চাকরির নিশ্চয়তা যাচাইপূর্বক প্রায় চার হাজার ভিসা ইস্যু করে। ইতিমধ্যে ওই সব ভিসার মেয়াদ উত্তীর্ণ হয়েছে।

আবুল বাশার বলেন, “নিষেধাজ্ঞার কারণে ওই চার হাজারসহ ৫২ হাজার নতুন কর্মী যাওয়া স্থগিত রয়েছে। এদিকে ভারত, পাকিস্তান, ফিলিপাইন ছাড়াও অন্য দেশ থেকে লিবিয়া কর্মী নেওয়া শুরু করেছে। এখন কর্মী পাঠাতে না পারলে লিবিয়ার জনশক্তি আমদানিকারকরা বাংলাদেশ থেকে কর্মী নেওয়া বন্ধ করে দেওয়ার কথা জানিয়েছে।”

‘পরিস্থিতি স্বাভাবিক নয়’

পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় জানিয়েছে, লিবিয়ার বাংলাদেশ দূতাবাস তিউনিসিয়ায় সরিয়ে নেওয়া হলেও বর্তমানে কর্মকর্তারা আবারও ত্রিপোলিতে ফিরেছেন। তাদের দেওয়া প্রকৃত তথ্যের ভিত্তিতেই সিদ্ধান্ত নেওয়া হচ্ছে।

লিবিয়ায় বাংলাদেশ দূতাবাসের পলিটিক্যাল কাউন্সিলর মোজাম্মেল হক বেনারকে বলেন, “বলতে গেলে গত দুই বছর ধরে লিবিয়ায় গৃহযুদ্ধ চলছে। বর্তমানে সেখানে তিনটি সরকার বিদ্যমান। কোনো শহরকেই ঠিক স্বাভাবিক বা স্থিতিশীল বলা যায় না।”

বর্তমানে লিবিয়ায় ৪০ হাজার বাংলাদেশি থাকার কথাও অস্বীকার করে তিনি বলেন, দেশটিতে এখন ২০-২৫ হাজার বাংলাদেশি আছেন।

এ ছাড়া বাংলাদেশিদের বিভিন্ন অসুবিধার কথা তুলে ধরে সরকারের কাছে প্রতিবেদন পাঠিয়েছেন রাষ্ট্রদূত শহীদুল হক। যাতে বলা হয়, ২০১১ সাল থেকে দেশটিতে যুদ্ধাবস্থা বিরাজমান থাকায় বর্তমানে অনেক প্রতিষ্ঠান বন্ধ হয়ে গেছে। সরকারি প্রকল্পগুলোতেও স্থিতাবস্থা চলছে। কমে এসেছে কাজের সুযোগ।

এতে আরও বলা হয়, সেখানকার অল্পসংখ্যক কোম্পানিতে যে বাংলাদেশিরা কর্মরত, তারাও মাসের পর মাস বেতন পাচ্ছেন না। এখানে শ্রমিকদের নিরাপত্তা নিয়েও উদ্বেগ রয়েছে। এত অসুবিধার পরও যারা কাজ করছেন এবং কিছু আয় করছেন, তারা দেশে টাকা পাঠাতে পারছেন না।

অনুমতি দেওয়া সম্ভব নয়: সরকার

লিবিয়ায় শ্রমিক পাঠানোর অনুমতি চেয়ে বায়রার পক্ষ থেকে প্রবাসী কল্যাণ মন্ত্রণালয়েও কয়েক দফা চিঠি পাঠানো হয়। তবে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের পরামর্শ অনুযায়ী পরিস্থিতি স্বাভাবিক হওয়ার আগে কোনোভাবেই লিবিয়ায় শ্রমিক পাঠানোর অনুমতি দেওয়া সম্ভব নয় বলে জানান প্রবাসী কল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয়ের সচিব বেগম শামছুন্নাহার।

তিনি বেনারকে বলেন, “পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের পরামর্শেই লিবিয়ায় শ্রমিক পাঠানো বন্ধ রয়েছে। পরিস্থিতি স্বাভাবিক হলে আবারও শ্রমিক পাঠানো শুরু হবে। শ্রমিক পাঠানোর চেয়ে তাদের নিরাপত্তার কথা ভাবাটা জরুরি।”

এদিকে তিন বাংলাদেশি গুলিতে নিহত হওয়ার পর দেশটিতে অবস্থানরত সকল বাংলাদেশিদের সতর্কভাবে চলাফেরার নির্দেশনা দিয়েছে বাংলাদেশ দূতাবাস।

লিবিয়ায় অবস্থানরত বাংলাদেশিদের সার্বক্ষণিক পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণ ও সমন্বয়ের জন্য একটি হট লাইন চালু করার করেছে লিবিয়ার বাংলাদেশ দূতাবাস। হটলাইন নম্বর: (+218944642154)।

মন্তব্য করুন

নীচের ফর্মে আপনার মন্তব্য যোগ করে টেক্সট লিখুন। একজন মডারেটর মন্তব্য সমূহ এপ্রুভ করে থাকেন এবং সঠিক সংবাদর নীতিমালা অনুসারে এডিট করে থাকেন। সঙ্গে সঙ্গে মন্তব্য প্রকাশ হয় না, প্রকাশিত কোনো মতামতের জন্য সঠিক সংবাদ দায়ী নয়। অন্যের মতামতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল হোন এবং বিষয় বস্তুর প্রতি আবদ্ধ থাকুন।