সিরিজ বোমা হামলার ঘটনায় আরো চার জেএমবি’র আজীবন কারাদণ্ড

ঢাকা থেকে জেসমিন পাপড়ি
2016.03.10
BD-jmb ২০০৫ সালের ১৭ অগাস্ট ৬৩টি জেলায় একযোগে বোমা হামলা চালায় জেএমবি। সারা দেশে প্রায় ৬৩৪টি স্থানে বোমা ফাটিয়ে আতঙ্ক তৈরি করে জঙ্গি সংগঠনটি।
অনলাইন

বাংলাদেশে প্রায় এক দশক আগে সিরিজ বোমা হামলার মামলায় চার জনকে আজীবন কারাদণ্ড দিয়েছে আদালত। এদের সকলেই নিষিদ্ধ ঘোষিত জঙ্গি সংগঠন জামায়াতুল মুজাহিদিন বাংলাদেশের (জেএমবি) সদস্য। আর্থিকভাবেও দণ্ডিত হয়েছেন তারা।

বৃহস্পতিবার ঢাকার দ্রুত বিচার ট্রাইব্যুনাল-২ এর বিচারক মমতাজ বেগম এ আদেশ দেন। এর আগে গত বছরের ২৯ অক্টোবর এই আদালতই একই ঘটনায় গোপালগঞ্জ আদালত চত্বরে বোমা হামলার দায়ে জেএমবির পাঁচ সদস্যকে ১০ বছরের কারাদণ্ড দিয়েছিলো।

দণ্ডপ্রাপ্ত চারজনের মধ্যে আশরাফ বাদে বাকি তিনজন আদালতে উপস্থিত ছিলেন।  খালাসপ্রাপ্তদের সবাই পলাতক। এদের মধ্যে আসামি সালাউদ্দিনকে ২০১৪ সালের ২৩ ফেব্রুয়ারি গাজীপুরের কাশিমপুর কারাগার থেকে ময়মনসিংহ আদালতে নেওয়ার পথে ঢাকা-ময়মনসিংহ মহাসড়ক এলাকায় পুলিশের প্রিজনভ্যানে হামলা করে ছিনিয়ে নেওয়া হয়। তিনি অন্য মামলায় মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত আসামি।

ওই ঘটনায় জঙ্গি নেতা মৃত্যুদন্ডপ্রাপ্ত আরেক জঙ্গি  রাকিব হাসান ও যাবজ্জীবন সাজাপ্রাপ্ত আসামি বোমারু মিজান ওরফে সাজিদকেও ছিনিয়ে নেওয়া হয়।

সারাদেশে আতঙ্ক ছড়ানো সে ঘটনায় নিষিদ্ধঘোষিত জঙ্গি সংগঠনের সদস্যদের এ দণ্ডাদেশকে স্বস্তির খবর বললেও, মামলার দীর্ঘসূত্রিতা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন অনেকেই।


চারজনের দণ্ড, আটজন খালাস

এক দশকেরও আগে ঘটে যাওয়া বোমা হামলার ঘটনার সঙ্গে সম্পৃক্ততা প্রমাণ হওয়ায় চার জেএমবি সদস্যকে আজীবন কারাদণ্ড দিয়েছে আদালত। তবে অভিযোগ প্রমাণিত না হওয়ায় মামলার আসামি অপর আট জঙ্গিকে খালাস দেওয়া হয়েছে।

আমৃত্যু কারাদণ্ডপ্রাপ্ত ব্যক্তিরা হলেন কাওসার আলম সুমন, ইউনুস মিয়া ওরফে কাওসার, মেহেদি হাবিব ওরফে রফিক ও আশরাফুল ইসলাম ওরফে শরিফ। এদের মধ্যে কাওসার আলম সুমন ও আশরাফুল ইসলাম ওরফে শরিফ  ময়মনসিংহের বাসিন্দা।

খালাসপ্রাপ্ত ব্যক্তিরা হলেন জেএমবির শীর্ষ নেতা সালাহউদ্দিন ওরফে সালেহীন, জাকারিয়া আলম, আল মাসুম, হাবিবুল্লাহ, জায়েদুল্লাহ, রফিকুল ইসলাম, আজিজুল হক ও আমানুল্লাহ।


‘জেল আপিল’ করবে  আর্থিকভাবে অস্বচ্ছল আসামি পক্ষ

রায়ে অসন্তুষ্ট আসামি পক্ষ উচ্চ আদালতে আপিল করার আগ্রহ প্রকাশ করেছে। তবে তারা আর্থিকভাবে দূর্বল হওয়ায় জেল কর্তৃপক্ষের মাধ্যমে আপিল করবে বলে জানা গেছে।

এ বিষয়ে আসামিপক্ষের আইনজীবী ফারুক আহমেদ বেনারকে বলেন, “দণ্ডপ্রাপ্ত আসামিরা এ রায়ের বিরুদ্ধে উচ্চ আদালতে আপিল করবে। তবে তারা আর্থিকভাবে অত্যন্ত অস্বচ্ছল। নিয়ম অনুযায়ী আজ (বৃহস্পতিবার) রাতেই জেল কর্তৃপক্ষ তাদের সিদ্ধান্ত জানতে চাইবে। তারা তখন আপিল করার জন্য জেল কর্তৃপক্ষের সহায়তা কামনা করবে। সাধারণত: এ ধরনের পরিস্থিতিতে আপিল করার জন্য জেল কর্তৃপক্ষই আসামিদের আইনগত সহায়তা দিয়ে থাকে। এক্ষেত্রেও তেমনটিই আশা করছি।”

উপযুক্ত সাক্ষী ও প্রমাণ ছাড়াই তাদেরকে কারাদণ্ড দেওয়ায় উচ্চ আদালতে তারা খালাস পাবেন বলে আশা প্রকাশ করেন তিনি।

অ্যাডভোকেট ফারুক আরও বলেন, “কারাদণ্ডপ্রাপ্ত আসামিদের ‘বোমা হামলায়’ যে ব্যক্তি আহত হয়েছিলেন বলে অভিযোগ করা হয়, সেই ভিকটিমই  সাক্ষী দিতে আদালতে আসেনি। তাহলে কীভাবে প্রমাণ হলো তিনি আদৌ আহত হয়েছিলেন কিনা।”


ফিরে দেখা

২০০৫ সালের ১৭ অগাস্ট মুন্সিগঞ্জ জেলা ছাড়া দেশের বাকি ৬৩টি জেলায় একযোগে বোমা হামলা চালায় জেএমবি। সারা দেশে প্রায় ৬৩৪টি স্থানে বোমা ফাটিয়ে আতঙ্ক তৈরি করে জঙ্গি সংগঠনটি।

মামলার সংক্ষিপ্ত বিবরণী থেকে যায়, ওই একইদিন (২০০৫ সালের ১৭ আগস্ট) ময়মনসিংহের আদালত প্রাঙ্গণ, আইনজীবী সমিতির কার্যালয়, প্রেসক্লাব ও বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের টিএসসি সংলগ্ন ক্যানটিনের পাশে সিরিজ বোমা বিস্ফোরিত হয়। ওই ঘটনায় বিস্ফোরক দ্রব্য নিয়ন্ত্রণ আইনে এই আসামিদের বিরুদ্ধে মামলা করেন ময়মনসিংহের কোতোয়ালি থানার এসআই সজীব দত্ত। সে বছর ৩০ নভেম্বর তদন্ত শেষে আদালতে অভিযোগপত্র দাখিল করেন  মামলার তদন্ত কর্মকর্তা পুলিশ পরিদর্শক রবিউল হক। আদালত মামলার সাক্ষ্যগ্রহণ শেষে আজ এ মামলার রায় দেন।

এ মামলার রায়ের প্রতিক্রিয়ায় একাত্তরের ঘাতক দালাল নির্মূল কমিটির ভারপ্রাপ্ত সভাপতি শাহরিয়ার কবীর বেনারকে বলেন, “আদালতের নাম দ্রুত বিচার ট্রাইব্যুনাল। অথচ মামলার রায় হতে পেরিয়ে গেলে ১১টি বছর। মামলার এই দীর্ঘসূত্রিতা জঙ্গি দমনসহ যেকোন অপরাধ দমনে অন্যতম একটি দূর্বলতা।”

তিনি বলেন, “সরকার নানা প্রচেষ্টাতেও সারা দেশের মামলা জট কমাতে পারেনি। এক্ষেত্রে জঙ্গি সংশ্লিষ্ট মামলাগুলো বিচারের জন্য সন্ত্রাস দমন আইনে নতুন আদালত গঠন করার সুযোগ রয়েছে। জঙ্গি বিষয়টি অত্যন্ত স্পর্শকাতর। যা রাষ্ট্রীয় নিরাপত্তার পাশাপাশি আঞ্চলিক ও  বৈশ্বিক নিরাপত্তার সঙ্গে জড়িত। যাতে বিচারের দীর্ঘসূত্রিতার সুযোগ নিয়ে অপরাধীরা প্রশ্রয় না পায়, বা নুতন করে নামে বেনামে অপরাধে জড়িয়ে না যায় সে ব্যবস্থা করতে হবে। উপযুক্ত শাস্তি নিশ্চিত করে সমাজে দৃষ্টান্ত স্থাপন করতে হবে।”

মন্তব্য করুন

নীচের ফর্মে আপনার মন্তব্য যোগ করে টেক্সট লিখুন। একজন মডারেটর মন্তব্য সমূহ এপ্রুভ করে থাকেন এবং সঠিক সংবাদর নীতিমালা অনুসারে এডিট করে থাকেন। সঙ্গে সঙ্গে মন্তব্য প্রকাশ হয় না, প্রকাশিত কোনো মতামতের জন্য সঠিক সংবাদ দায়ী নয়। অন্যের মতামতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল হোন এবং বিষয় বস্তুর প্রতি আবদ্ধ থাকুন।