আবারও আলোচনায় জেএমবি, বাংলা ভাইয়ের ‘উপদেষ্টা’ আটক

ঢাকা থেকে জেসমিন পাপড়ি
2015.08.06
BD-jmb বৃহস্পতিবার র‌্যাবের হাতে আটক হওয়া নিষিদ্ধ জঙ্গি সংগঠন জামাআতুল মুজাহিদীন বাংলাদেশের (জেএমবি) নেতা লুৎফর রহমান। ৬ আগষ্ট,২০১৫
বেনার নিউজ

নিষিদ্ধ ঘোষিত জঙ্গি সংগঠন জামাআতুল মুজাহিদিন বাংলাদেশের (জেএমবি) এক নেতা লুৎফর রহমানকে বৃহস্প্রতিবার গ্রেফতার করেছে র‌্যাব। তিনি জেএমবির সাবেক দুইনেতা শায়েখ আব্দুর রহমান ও সিদ্দিকুর রহমান বাংলা ভাইয়ের উপদেষ্টা ছিলেন, আট বছর আগে বোমা হামলায় হত্যার দায়ে যাদের ফাঁসি কার্যকর করা হয়।

২০০৪ সালে রাজশাহী অঞ্চলে জেএমবি কর্তৃক চালানো হত্যাযজ্ঞে তার ইন্ধন ছিল এবং সম্প্রতি তার নেতৃত্বে এই জঙ্গি সংগঠনটি আবারও সংগঠিত হচ্ছিল বলে দাবি করেছে র‌্যাব। তাকে আটকের পর জেএমবি আবার আলোচনায় উঠে আসে।

এ বিষয়ে রাজশাহী র‌্যাবের উপ-অধিনায়ক মেজর কামরুজ্জামান বলেন, “২০০৪ সালে জেএমবি সদস্যরা রাজশাহী অঞ্চলে যে তাণ্ডব ও হত্যাযজ্ঞ চালায়, সেসবের পুরো পরিকল্পনায় ছিলেন লুৎফর রহমান। তার বিরুদ্ধে হত্যা ও লুটপাটসহ ১০টি মামলা রয়েছে। এর মধ্যে কয়েকটি মামলায় উচ্চ আদালতের জামিন পেয়ে এলাকায় আসেন তিনি।”

তিনি বলেন, “জামিনে মুক্ত হয়ে লুৎফর রহমান মূলত: রাজশাহী অঞ্চলের জেএমবি সদস্যদের আবারো সংগঠিত করার জন্য এলাকায় এসেছিলেন। সেই তৎপরতাও চালাচ্ছিলেন। খবর পেয়েই অভিযান চালিয়ে তাকে গ্রেফতার করা হয়। তাকে বাগমারা থানায় হস্তান্তর করা হয়েছে।”


যেভাবে শুরু ও বিস্তার লাভ

গ্রেফতার হওয়া ‘জেএমবি নেতা’ লুৎফর রহমান (৫৬) একটি ডিগ্রি কলেজের বাংলা বিভাগের শিক্ষক ছিলেন। শায়খ আবদুর রহমানের নেতৃত্বে গত শতকের শেষ ভাগে জেএমবি নামের জঙ্গি সংগঠনটির কার্যক্রম শুরু হলে তিনি এর সাথে যুক্ত হন। কয়েকজন সহযোগী নিয়ে আফগানিস্তানের যুদ্ধেও অংশ নেন। আফগানিস্তান থেকে ফিরে জেএমবির কার্যক্রমের বিস্তৃতি ঘটাতে থাকেন তিনি।

তবে সংগঠনটি আলোচনায় আসে ২০০৩ সালের শুরুর দিকে। সে বছর আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যরা দিনাজপুর ও চাঁপাইনবাবগঞ্জে গ্রেফতার হওয়া কয়েকজন জঙ্গির কাছে জেএমবি সম্পর্কে তথ্য পায়।

ওই বছরের মাঝামাঝি সময়ে আবদুর রহমানের পরামর্শে জেএমবির শুরা কমিটির প্রধান সিদ্দিকুল ইসলাম ওরফে বাংলা ভাইয়ের নেতৃত্বে জাগ্রত মুসলিম জনতা বাংলাদেশ বা জেএমজেবি গঠিত হয়। পরের বছর (২০০৪ সালে) বেপরোয়া হয়ে ওঠে এই সংগঠনটি।

বাংলা ভাই ও তার সহযোগীরা ২০০৪ সালের ২০ মে নওগাঁ জেলার রানীনগর উপজেলায় ইদ্রিস আলী ওরফে খেঁজুর আলী ও আব্দুল কাইয়ুম বাদশাকে হত্যা করে। শুধু তাই নয় এরপর বাদশার মরদেহ উল্টো করে গাছে ঝুলিয়ে রাখে এবং খেঁজুর আলীর মৃতদেহ টুকরো টুকরো করে মাটিতে পুঁতে ফেলা হয়।

গাছে লাশ ঝুলিয়ে রাখার সেই ছবি গণমাধ্যমে প্রচার হলে দেশজুড়ে রাতারাতি পরিচিত হয়ে ওঠে ‘বাংলা ভাই’ নামটি। তৎকালীন বিএনপি নেতৃত্বাধীন চার দলীয় জোট সরকার শুরুতে জঙ্গি অস্তিত্ব অস্বীকার করলেও ২০০৫ সালের ২১ ফেব্রুয়ারি সেই সরকারই জেএমবি ও জেএমজেবির কার্যক্রম নিষিদ্ধ ঘোষণা করে। এর প্রেক্ষিতে নিজেদের সাংগঠনিক সামর্থ তুলে ধরতে সে বছর ১৭ আগস্ট একযোগে ৬৩ জেলায় বোমা হামলা চালায়।

পরের বছর ২০০৬ সালের ৬ মার্চ ময়মনসিংহের মুক্তাগাছা থেকে বাংলা ভাইকে র‌্যাপিড অ্যাকশন ব্যাটালিয়নের (র‌্যাব) সদস্যরা গ্রেপ্তার করে। এর চারদিন আগে সিলেট থেকে গ্রেপ্তার করা হয় শায়খ রহমানকে।

এরপর ঝালকাঠি জেলার সিনিয়র সহকারী জজ সোহেল আহম্মেদ ও জগন্নাথ পাঁড়ের গাড়িতে বোমা হামলা চালিয়ে তাদের হত্যার দায়ে ২০০৭ সালের ৩০ মার্চ শায়খ আবদুর রহমান ও বাংলাভাই সহ ছয় শীর্ষ জঙ্গির ফাঁসি কার্যকর করা হয়।


জেএমবির অস্ত্বিত্ব নির্মূল হয় নি

দীর্ঘদিন পর নিষিদ্ধ ঘোষিত সংগঠনটি আবারও আলোচনায় আসায় কিছুটা বিস্ময় প্রকাশ করেছেন অনেকে। তবে সংগঠনটির অস্তিত্ব এদেশে থাকাটা স্বাভাবিক বলে জানালেন বিশ্লেষকরা।

বাংলাদেশের সাবেক পররাষ্ট্র সচিব মহিউদ্দিন আহমেদ বেনারকে বলেন, “দেশে জেএমবি সদস্যরা থাকবে এটাই স্বাভাবিক। আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর তৎপরতার মাধ্যমেই তাদের কার্যক্রম বা সংগঠিত হওয়া বন্ধ হবে। তবে কোনো আসামিকে ধরেই তাকে অপরাধী বলা উচিত নয়। আদালতের মাধ্যমে প্রমাণ হওয়ার পরেই তাকে অপরাধী বলে সাব্যস্ত করা উচিত।”

এছাড়া তিনি সরকারের সমালোচনা করে বলেন, “আমাদের দেশের সরকার আসলে ইসলামী মৌলবাদ নির্মূল করতে চায় কিনা সে বিষয়ে আমি সন্দিহান। কারণ, যাদের বিরুদ্ধে তারা অভিযান চালায় তাদেরকেই কিছুদিন পর মদদ দিচ্ছে সরকার। উদাহরণস্বরুপ, যে হেফাজতে ইসলামকে শাপলা চত্বর থেকে উচ্ছেদ করা হয়েছিল সেই সংগঠনটির নেতা শফি হুজুরের দোয়া নিতে দেখা যায় একজন মেজর জেনারেল থেকে শুরু করে চট্টগ্রামের নতুন নির্বাচিত মেয়রকেও। এর অর্থ তাদের যে একটা শক্তি আছে, সরকার সে শক্তিকে স্বীকৃতি দিচ্ছে।”

১১৯ শিবির নেতা-কর্মী আটক

এদিকে খুলনা মহানগরীর সিদ্দিকীয়া কামিল মাদ্রাসার নবীনবরণ অনুষ্ঠান থেকে মহানগর শিবিরের দুই নেতাসহ জামায়াত-শিবির সন্দেহে ১১৯ জনকে গ্রেফতার করেছে সোনাডাঙ্গা থানা পুলিশ। তাদের অধিকাংশ ওই মাদ্রাসার আলিম প্রথম বর্ষের ছাত্র। এ ছাড়া বেশ কয়েকজন অষ্টম ও নবম শ্রেণীর ছাত্রও রয়েছে।

সোনাডাঙ্গা মডেল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মারুফ আহমেদ বলেন, “গ্রেফতারকৃতরা নবীনবরণের আড়ালে দেশ বিরোধী কর্মকাণ্ডসহ নাশকতার পরিকল্পনা করছিলো- এমন খবরের ভিত্তিতে সেখানে অভিযান চালানো হয়। তবে এরা সবাই শিবিরের কর্মী কি না তা যাচাই বাছাই করা হয় নি। এ বিষয়ে তাদের জিজ্ঞাসাবাদ করা হচ্ছে।”

মন্তব্য করুন

নীচের ফর্মে আপনার মন্তব্য যোগ করে টেক্সট লিখুন। একজন মডারেটর মন্তব্য সমূহ এপ্রুভ করে থাকেন এবং সঠিক সংবাদর নীতিমালা অনুসারে এডিট করে থাকেন। সঙ্গে সঙ্গে মন্তব্য প্রকাশ হয় না, প্রকাশিত কোনো মতামতের জন্য সঠিক সংবাদ দায়ী নয়। অন্যের মতামতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল হোন এবং বিষয় বস্তুর প্রতি আবদ্ধ থাকুন।