গ্যাটকো দুর্নীতি মামলা থেকেও মুক্তি মিলল না খালেদার, আত্মসমর্পনের নির্দেশ

ঢাকা থেকে জেসমিন পাপড়ি
2015.08.05
BD-khaleda গত সোমবার জিয়া ট্রাস্ট দুর্নীতি মামলার শুনানিতে অংশ নিতে আদালতে হাজির হন বিএনপির চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়া। ৩ আগষ্ট,২০১৫
বেনার নিউজ

বেশ কয়েকটি মামলার চাপে আছেন খালেদা জিয়া, এবার ৭ বছর আগে স্থগিত করা আরেকটি মামলা নতুন করে চালু হলো তার বিরুদ্ধে।

গ্যাটকো দুর্নীতি মামলা থেকে মুক্তি মিলল না বাংলাদেশের সাবেক প্রধানমন্ত্রী ও বর্তমানে প্রধান বিরোধী দল বিএনপি চেয়ারপার্সন বেগম খালেদা জিয়ার। বুধবার এই মামলার বৈধতা চ্যালেঞ্জ করে করা তার দুই আবেদন খারিজ করে বিচারিক আদালতে এর কার্যক্রমের ওপর স্থগিতাদেশ তুলে নিয়েছে হাই কোর্ট।

একইসঙ্গে এই রায়ের অনুলিপি পাওয়ার দুই মাসের মধ্যে সাবেক প্রধানমন্ত্রী খালেদাকে বিচারিক আদালতে আত্মসমর্পণের নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।

২০০৭ সালের ২ সেপ্টেম্বর সেনা সমর্থিত সাবেক তত্ত্বাবধায়ক সরকারের আমলে সাবেক প্রধানমন্ত্রী খালেদা জিয়া, তার ছোট ছেলে আরাফাত রহমান কোকোসহ ১৩ জনের বিরুদ্ধে তেঁজগাও থানায় গ্যাটকো দুর্নীতি মামলা দায়ের করা হয়। বিগত চারদলীয় জোট সরকারের মন্ত্রী খন্দকার মোশাররফ হোসেন, এম শামসুল ইসলাম, এম কে আনোয়ার, আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী, মতিউর রহমান নিজামীও এ মামলার আসামি।

আসামিরা পরস্পর যোগসাজশে ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠান গ্যাটকোকে ঢাকার কমলাপুর আইসিডি ও চট্টগ্রাম বন্দরের কন্টেইনার হ্যান্ডলিংয়ের কাজ পাইয়ে দিয়ে রাষ্ট্রের ১৪ কোটি ৫৬ লাখ ৩৭ হাজার ৬১৬ টাকার ক্ষতি করেছেন বলে অভিযোগপত্রে উল্লেখ করা হয়।

মামলা হওয়ার পরদিন খালেদা জিয়া ও কোকোকে গ্রেপ্তার করা হয়। ১৮ সেপ্টেম্বর মামলাটি জরুরি ক্ষমতা আইনে অন্তর্ভুক্ত করা হয়। পরের বছর ১৩ মে খালেদা জিয়াসহ ২৪ জনের বিরুদ্ধে এ মামলায় অভিযোগপত্র দেওয়া হয়।

মামলাটি জরুরি ক্ষমতা আইনের অন্তর্ভুক্ত করার বৈধতা চ্যালেঞ্জ করে এবং বিচারিক আদালতে মামলার কার্যক্রমের ওপর স্থগিতাদেশ চেয়ে একই বছর ২৭ সেপ্টেম্বর হাই কোর্টে আলাদা দুটি রিট আবেদন করেন খালেদা জিয়া ও আরাফাত রহমান কোকো।

এর তিন দিন পর খালেদা ও কোকোর বিরুদ্ধে মামলার কার্যক্রম স্থগিত করে রুল দেয় হাই কোর্ট। মামলাটি জরুরি ক্ষমতা আইনের অন্তর্ভুক্ত করা কেন ‘বেআইনি ও কর্তৃত্ব বহির্ভূত’ ঘোষণা করা হবে না- তা জানতে চাওয়া হয় ওই রুলে। তবে হাই কোর্টের দেওয়া স্থগিতাদেশ পরে আপিল বিভাগে বাতিল হয়ে যায়।

দুদক আইনে গ্যাটকো মামলা দায়েরের বৈধতা চ্যালেঞ্জ করে ২০০৮ সালে আরেকটি রিট আবেদন করেন খালেদা জিয়া। তার আবেদনে হাই কোর্ট আবারও মামলার কার্যক্রমের ওপর স্থগিতাদেশ দেয়।

এই মামলা চ্যালেঞ্জ করে খালেদার করা আবেদনের প্রেক্ষিতে সাত বছর আগে স্থগিতাদেশ দিয়েছিল হাই কোর্ট। সে সময় জারি করা রুল খারিজ করেই বুধবার বিচারপতি মো. নুরুজ্জামান ও বিচারপতি আবদুর রবের বেঞ্চ এই রায় দেয়। এর ফলে খালেদার বিরুদ্ধে গ্যাটকো দুর্নীতি মামলার বিচার চলতে আর কোনো বাধা থাকল না, জানালেন আইনজীবীরা।

দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) আইনজীবী খুরশীদ আলম খান বলেন, “খালেদা জিয়ার বিরুদ্ধে করা গ্যাটকো দুর্নীতি মামলা চলতে এখন আর কোনো বাধা নেই।”

তিনি বলেন, “এই মামলায় খালেদা জিয়াকে হাইকোর্ট জামিন দিয়েছিলেন, এই রায়ের ফলে তা বাতিল হয়ে গেল। আগামী মাসের মধ্যে খালেদা জিয়াকে আত্মসমর্পণ করতে হবে।”

তবে খালেদা জিয়ার আইনজীবী খন্দকার মাহবুব হোসেন বলেন, “আমরা যে দুটি আবেদন করেছিলাম, আদালত তা খারিজ করে দিয়েছেন। রায়ের কপি পাওয়ার পর আমরা তা পর্যালোচনা করব।”

খালেদা জিয়ার বিরুদ্ধে এই মামলা চলতে পারে না বলেও মনে করেন তার এই আইনজীবী।

তিনি বেনারকে বলেন, “একই ধরনের ঘটনায় বর্তমান প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে মামলা করা হয়েছিল, কিন্তু সেই মামলা বাতিল করা হয়েছে। কিন্তু খালেদা জিয়ার মামলা বাতিল না করে আবেদন খারিজ করে দিয়েছেন আদালত। এ রায়ের বিরুদ্ধে আমরা আপিল করব। আশা করি সেখানে খালেদা জিয়া ন্যায়বিচার পাবেন।”

তবে বিশ্লেষকরা বলছেন, যেকোন ধরনের মামলার বিচার রাজনৈতিক উদ্দেশ্যে নয়, ন্যায়সঙ্গতভাবেই হওয়া উচিত।

এ বিষয়ে ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশের (টিআইবি) নির্বাহী পরিচালক ড. ইফতেখারুজ্জামান বেনারকে বলেন, “যেহেতু আদালত মামলা চলার বিষয়ে অনুমোদন দিয়েছেন সেহেতু মামলাটি চলবে। তবে সঠিক বিচারের বিষয়টি যাতে নিশ্চিত থাকে, সে বিষয়টি লক্ষ্য রাখতে হবে।”

তৎকালীন তত্ত্বাবধায়ক সরকারের সময়ে খালেদার বিরুদ্ধে গ্যাটকোসহ তিনটি মামলা হয়। বাকি দুটি হল নাইকো ও বড়পুকুরিয়া কয়লা খনির দুর্নীতি মামলা। আদালতের স্থগিতাদেশে আটকে যাওয়ার দীর্ঘদিন পর সম্প্রতি মামলাগুলো সচল করার উদ্যোগ নেয় দুদক। এর মধ্যে নাইকো দুর্নীতি মামলা বাতিল চেয়ে করা খালেদা জিয়ার আবেদনও ইতোমধ্যে খারিজ হয়ে গেছে। গত ১৮ জুন ওই রায়েও তাকে বিচারিক আদালতে আত্মসমর্পণ করতে বলা হয়েছে।

এছাড়া বড়পুকুরিয়া কয়লাখনি দুর্নীতি মামলাটি চলবে কিনা সে বিষয়ে খালেদা জিয়ার আবেদনের শুনানি হাইকোর্টে চলছে। গত ৯ এপ্রিল এ মামলাটির কার্যক্রমের স্থগিতাদেশ আরও ছয় মাসের জন্য বৃদ্ধি করে বিচারিক আদালত।

মন্তব্য করুন

নীচের ফর্মে আপনার মন্তব্য যোগ করে টেক্সট লিখুন। একজন মডারেটর মন্তব্য সমূহ এপ্রুভ করে থাকেন এবং সঠিক সংবাদর নীতিমালা অনুসারে এডিট করে থাকেন। সঙ্গে সঙ্গে মন্তব্য প্রকাশ হয় না, প্রকাশিত কোনো মতামতের জন্য সঠিক সংবাদ দায়ী নয়। অন্যের মতামতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল হোন এবং বিষয় বস্তুর প্রতি আবদ্ধ থাকুন।