শোলাকিয়া ঘটনায় আহত জঙ্গি শফিউলসহ ‘বন্দুকযুদ্ধে’ নিহত ২
2016.08.05

বিচারবহির্ভূত হত্যা নিয়ে কঠোর সমালোচনার মধ্যে আবারও জঙ্গি সন্দেহে দুই যুবক পুলিশের সঙ্গে কথিত ‘বন্দুকযুদ্ধে’ নিহত হয়েছে। এদের একজন শোলাকিয়ায় জঙ্গি হামলার ঘটনায় আহত অবস্থায় আটক শফিউল ইসলাম, অপরজনের পরিচয় নিশ্চিত হওয়া যায়নি।
মানবাধিকার সংগঠনগুলোর হিসাবে, গত প্রায় দুমাসে বন্দুকযুদ্ধে অন্তত ২০ জঙ্গি নিহত হয়েছে। মানবাধিকার কর্মীরা বিচারের মাধ্যমেই শাস্তির পক্ষে মত দিচ্ছেন।
আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর দাবি, একদল দুর্বৃত্ত র্যাবের কাছ থেকে নিহত জঙ্গি শফিউলকে ছিনিয়ে নেওয়ার চেষ্টা করলে দুপক্ষের মধ্যে গোলাগুলিতে ওই দুজন নিহত হয়।
তবে পুলিশের এই বক্তব্যের ওপর অনাস্থা জানিয়ে মানবাধিকার কর্মীরা বলছেন, এভাবে বিনা বিচারে জঙ্গিদের হত্যার মাধ্যমে তথ্যের উৎস যেমন নষ্ট হচ্ছে, তেমনি সমাজে বিচারহীনতার সংস্কৃতিও বাড়ছে।
বিচারবহির্ভূত হত্যাকাণ্ডের সমালোচনায় সরব হয়েছে বিরোধী রাজনৈতিক দল বিএনপিও।
গত বৃহস্পতিবার রাত সোয়া ১১টার দিকে ময়মনসিংহ-কিশোরগঞ্জ মহাসড়কের নান্দাইল উপজেলার একটি পরিত্যক্ত ইটভাটার কাছে বন্দুকযুদ্ধের ঘটনা ঘটে। ঘটনাস্থল থেকে তিনটি আধুনিক পিস্তল, দুটি চাপাতি, অবিস্ফোরিত একটি ককটেল ও নিবন্ধনবিহীন দুটি মোটরসাইকেল উদ্ধার করে পুলিশ।
শুক্রবার র্যাব-১৪ এর ময়মনসিংহ ক্যাম্পের অধিনায়ক লেফটেন্যান্ট কর্নেল মো. শরীফুল ইসলাম জানান, “বৃহস্পতিবার রাতে জঙ্গি শফিউলকে ময়মনসিংহে চিকিৎসা শেষে কিশোরগঞ্জে ফিরিয়ে নেওয়ার পথে পাঁচ-ছয় জনের একটি জঙ্গি দল র্যাবের গাড়িবহরে হামলা চালায়। দুটি মোটরসাইকেলসহ আগে থেকে অবস্থান নেওয়া দলটি গুলি ছোড়ে ও কয়েকটি ককটেল বিস্ফোরিত করে। এসময় র্যাবও পাল্টা গুলি ছোড়ে।”
তিনি জানান, এ ঘটনায় র্যাবের মাইক্রোবাসে থাকা শফিউল ও অজ্ঞাতনামা এক হামলাকারী গুলিবিদ্ধ হয়। পরে তাদের স্থানীয় উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নেওয়া হলে কর্তব্যরত চিকিৎসক দুজনকে মৃত ঘোষণা করেন। তবে ঘটনাস্থল থেকে অন্য কোনো জঙ্গিকে আটক করতে পারেনি র্যাব।
কে এই শফিউল?
গুলশানের হলি আর্টিজান রেস্তোরাঁয় মর্মান্তিক জঙ্গি হামলার এক সপ্তাহ না যেতেই গত ৭ জুলাই ঈদের দিন সকালে আরেকটি ভয়াবহ জঙ্গি হামলার ঘটনা ঘটে কিশোরগঞ্জের শোলাকিয়ায় ঈদগাহের পাশে।
সেখানে পুলিশের চেকপোস্টে হামলা চালায় একদল জঙ্গি। অতর্কিত ওই হামলায় প্রাণ হারায় দুই পুলিশ। পরে পুলিশের সঙ্গে জঙ্গিদের গোলাগুলিতে এক হামলাকারী এবং জানালা দিয়ে গুলি ঢুকে নিজগৃহে মারা যান স্থানীয় একজন গৃহবধূ।
শোলাকিয়ার সেই ঘটনাস্থল থেকে গুলিবিদ্ধ অবস্থায় শফিউল ইসলাম ওরফে শরীফুল ইসলাম ওরফে সাইফুল ইসলাম ওরফে আবু মোকাদ্দেল ওরফে সোহানকে গ্রেপ্তার করে র্যাব। দিনাজপুরের এই মাদ্রাসা ছাত্রকে র্যাব হেফাজতে ময়মনসিংহ মেডিকেলে চিকিৎসা দেওয়া হয়। সেখান থেকেই পুলিশে হস্তান্তরের জন্য তাকে কিশোরগঞ্জ নেওয়া হচ্ছিল বলে দাবি করেছে র্যাব।
পঞ্চগড়ের দেবীগঞ্জে একটি মঠের অধ্যক্ষ যজ্ঞেশ্বর রায় হত্যাকাণ্ডে পুলিশের দেওয়া অভিযোগপত্রে জেএমবি সদস্য হিসেবে নাম রয়েছে এই শফিউলের। গত ২৮ জুন পঞ্চগড় পুলিশ এ অভিযোগ পত্র জমা দেয়।
দিনাজপুর জেলার ঘোড়াঘাটে নিহত শফিউলের বাড়ি। তিনি দিনাজপুরের বিরামপুর উপজেলার বিজুল দারুল হুদা কামিল মাদ্রাসার ছাত্র ছিল বলে জানা যায়। তার মা এই লাশ নিতে আগ্রহ প্রকাশ করেছেন।
সমালোচনা অব্যাহত
এদিকে এভাবে একের পর এক জঙ্গি আটক হলেও বিচারবহির্ভূতভাবে হত্যার মাধ্যমে সরকার তথ্যের উৎস নষ্ট করছে বলে অভিযোগ এনেছে প্রধান বিরোধী দল বিএনপি। গত মঙ্গলবার এক সংবাদ সম্মেলনে এ বিষয়ে সরকারের কড়া সমালোচনা করেন বিএনপির স্থায়ী কমিটির নজরুল ইসলাম খান।
তিনি বলেন, “তাদের হত্যা করে তথ্যের উৎস নষ্ট করছে সরকার। এর মধ্য দিয়ে জঙ্গিদের শেকড় সন্ধানের কাজটি দুরূহ করে তোলা হচ্ছে। জঙ্গিদের হত্যা না করে উগ্রবাদের নাটের গুরুদের খুঁজে বের করতে সচেষ্ট হতে হবে।”
এ প্রসঙ্গে মানবাধিকার কর্মী অ্যাডভোকেট এলিনা খান বেনারকে বলেন, “যত বড় অপরাধীই হোক না কেন, বিচার বহির্ভূত হত্যাকাণ্ড কোনোভাবেই সমর্থনযোগ্য হতে পারে না।”
তাঁর মতে, কোনো রকম আইনের তোয়াক্কা না করে বিচার ছাড়াই এ ধরনের হত্যা বিচারহীনতার সংস্কৃতি তৈরি করছে।