হজ শুরুর আগেই অসুস্থ হয়ে ৩৩ বাংলাদেশির মৃত্যু

ঢাকা থেকে জেসমিন পাপড়ি
2016.09.09
20160909-BD-pilgrims1000.jpg সৌদি আরবের কিং আব্দুল আজিজ আর্ন্তজাতিক বিমানবন্দরে হজযাত্রীদের প্রথম ফ্লাইট অবতরণ করলে বাংলাদেশ দূতাবাসের কর্মকর্তারা হাজীদের স্বাগত জানান। আগস্ট ৪, ২০১৬।
ধর্ম মন্ত্রণালয়ের ওয়েবসাইট

সৌদি আরবে হজ করতে গিয়ে শুক্রবার দুপুর পর্যন্ত ৩৩ বাংলাদেশির মৃত্যুর খবর দিয়েছে সরকার। অসুস্থ হয়ে হাসপাতালে ভর্তি আছেন আরো ১৭ জন। হজের আনুষ্ঠানিকতা শুরুর আগে বার্ধক্যজনিত অসুস্থতা এবং ভিন্ন আবহাওয়ার কারণে তাঁদের মৃত্যু হয়।

বাংলাদেশের ধর্ম মন্ত্রণালয়ের বুলেটিনে বলা হয়, মৃতদের মধ্যে ২৪ জন পুরুষ, নয় জন নারী। এঁদের ২৪ জন মক্কায়, আটজন মদিনায় এবং একজন জেদ্দায় মারা গেছেন।

গত ৪ আগস্ট বাংলাদেশি হজযাত্রীদের নিয়ে প্রথম ফ্লাইট সৌদি আরবে পৌঁছায়। গত ৭ আগস্ট ধর্ম মন্ত্রণালয়ের প্রথম বুলেটিনে বলা হয়েছে, সৌদি আরবের স্থানীয় সময় বৃহস্পতিবার রাত ১২টা পর্যন্ত ২৯৯টি ফ্লাইটে বাংলাদেশের এক লাখ এক হাজার ৮২৯ জন হজযাত্রী সৌদি আরবে পৌঁছেছেন।

এর মধ্যে সরকারি ব্যবস্থাপনার পাঁচ হাজার ১৮৩ জন এবং বেসরকারি ব্যবস্থাপনার ৯৫ হাজার ৬১৪ জন রয়েছেন। বিশ্বের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে আসা মুসলমানদের সঙ্গে ১১ সেপ্টেম্বর হজ করবেন তাঁরা।

সৌদি সরকারের নির্ধারিত কোটা অনুযায়ী সরকারি ও বেসরকারি ব্যবস্থাপনায় বাংলাদেশ থেকে এবার এক লাখ এক হাজার ৭৫৮ জন ব্যক্তি হজ করার সুযোগ পাচ্ছেন।

প্রতি বছরই বিভিন্ন কারণে হজে যাওয়া ব্যক্তিরা মারা যান। এসব কারণগুলোর মধ্যে উল্লেখযোগ্য হচ্ছে, বেশি বয়সে হজে যাওয়া, সৌদি আরবের আবহাওয়ার সঙ্গে খাপ না খাওয়া এবং মিনায় শয়তানকে পাথর নিক্ষেপ করতে গিয়ে পদদলিত হওয়া।

গত বছর সৌদি আরবের মিনায় হজ পালনকালে পদদলিত হয়ে প্রায় আটশ হাজীর মৃত্যু হয়। আহত হন আরো অনেকে।

ওই বছরই হজ চলাকালে ১১ সেপ্টেম্বর মক্কায় মসজিদুল হারামে নির্মাণকাজে ব্যবহৃত ক্রেন ভেঙে পড়ে নিহন হন ১১১ জন। ওই ঘটনায় প্রায় ৪০০ জন আহত হন, যাঁদের মধ্যে কয়েকজন বাংলাদেশিও ছিলেন।

তবে এবার এখন পর্যন্ত এ ধরনের দুর্ঘটনা ঘটেনি। কিন্তু হজের আগেই এতো মানুষের মৃত্যুর খবরে আতঙ্কিত হয়ে পড়েছেন হজ করতে যাওয়া ব্যক্তিদের পরিবার ও স্বজনেরা।

সাতক্ষীরা থেকে সোহেল নূর বেনারকে বলেন, “আমার বাবা ও মা এবার একসঙ্গে হজে গেছেন। স্বাভাবিক ভাবেই এমন খবর আমাদের উদ্বেগ বাড়িয়ে দিয়েছে। তবে খোঁজ নিয়ে জেনেছি তাঁরা ভাল আছেন।”

সৌদি আরব মুসলমানদের কাছে পবিত্র স্থান হওয়ায় সেখানে মৃত্যুকে অনেকে ভাগ্য বলে মনে করেন। তাই সেখান থেকে লাশ ফেরত আনার কথা ভাবেন না বেশির ভাগ পরিবার। সরকারের পক্ষ থেকেও এমন কোন ব্যবস্থা নেই।

এ বিষয়ে সৌদি আরবে নিযুক্ত বাংলাদেশের রাষ্ট্রদূত গোলাম মসীহ বেনারকে বলেন, “নিয়ম অনুযায়ী মৃত হাজীদের স্থানীয়ভাবে দাফন করা হয়ে থাকে। কারণ মুসলমানদের তীর্থস্থান কাবায় গিয়ে মারা যাওয়াকে সৌভাগ্য বলে মনে করা হয়।”

তিনি বলেন, অসুস্থ্ হয়ে পড়া বাংলাদেশিদের চিকিৎসা সেবার জন্য মক্কা এবং মদীনায় আলাদা আলাদা ক্লিনিক আছে।

টেলিফোনে যোগাযোগ করা হলে গাজীপুরের শ্রীপুর থেকে হজ করতে যাওয়া আকবর হোসেন বেনারকে বলেন, “আল্লাহর অশেষ রহমতে আমি সুস্থ্য আছি। একটু পরেই মিনার উদ্দেশ্যে রওনা হব। পাঁচদিন থাকতে হবে মিনা, আরাফা এবং মুজদালিফায়। এখানকার আবহাওয়া মোটামুটি ভালো আছে।”

হজ শেষে আগামী ১৭ সেপ্টেম্বর থেকে ১৭ অক্টোবরের মধ‌্যে ফিরতি ফ্লাইটে বাংলাদেশি হাজীরা দেশে ফিরবেন। উল্লেখ্য, এবার বিশ্বের বিভিন্ন দেশের ২০ লাখেরও বেশি মুসলমান সৌদি আরবে হজ পালন করছেন।

মন্তব্য করুন

নীচের ফর্মে আপনার মন্তব্য যোগ করে টেক্সট লিখুন। একজন মডারেটর মন্তব্য সমূহ এপ্রুভ করে থাকেন এবং সঠিক সংবাদর নীতিমালা অনুসারে এডিট করে থাকেন। সঙ্গে সঙ্গে মন্তব্য প্রকাশ হয় না, প্রকাশিত কোনো মতামতের জন্য সঠিক সংবাদ দায়ী নয়। অন্যের মতামতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল হোন এবং বিষয় বস্তুর প্রতি আবদ্ধ থাকুন।