মহাসড়কে ধীর গতির যান চলাচল বন্ধ করায় নৈরাজ্য
2015.08.05

সড়ক দূর্ঘটনায় অসংখ্য প্রাণহানী কমাতে বন্ধ করে দেয়া হয়েছে ধীর গতির যান। এর প্রতিবাদে মালিক-চালকরা নেমেছে রাস্তায়। প্রশ্ন উঠেছে, বিকল্প সড়কের ব্যবস্থা ছাড়া ত্রিচক্রযানগুলো যাবে কোথায়?
জাতীয় মহাসড়কে অটোরিকশাসহ ধীর গতির তিন চাকার যান চলতে না দেওয়ার সিদ্ধান্তের ফলে সৃষ্ট নৈরাজ্য ৫ম দিনেও অব্যাহত রয়েছে। ১ আগস্ট থেকে সরকার মহাসড়কে ধীর গতির এসব যান বন্ধ করে দেওয়ার পর থেকে বিভিন্ন জেলায় চালক-মালিকেরা সড়ক অবরোধ, বিক্ষোভ ও ভাঙচুর করছেন।
ঈদের আগে ও পরে সড়ক দুর্ঘটনায় ব্যাপক হতাহতের পর সমালোচনার মুখে সরকার এই সিদ্ধান্ত নেয়। ওই সময়ে ১০ দিনে প্রায় আড়াই শ মানুষ প্রাণ হারান। প্রাণহানির এই সংখ্যা গত কয়েক বছরের মধ্যে সর্বোচ্চ বলে প্রথম আলো এক প্রতিবেদনে উল্লেখ করে।
গণমাধ্যমে সমালোকচকদের পর্যালোচনায় মহাসড়কে ধীর গতির যান চলাচল এই অস্বাভাবিক দূর্ঘটনার অন্যতম কারণ হিসেবে চিহ্নিত হয়। সরকার অবশেষে ব্যাপক সমালোচনার মুখে এইসব ত্রিচক্রযান বন্ধের সিদ্ধান্ত নেয়।
এদিকে সরকারের সিদ্ধান্ত কার্যকর করতে বিভিন্ন স্থানে অভিযান চালাচ্ছে ভ্রাম্যমাণ আদালত। পুলিশও মহাসড়কে আটক করছে এসব যান।
বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন কর্তৃপক্ষ (বিআরটিএ) ও পরিবহন মালিক-শ্রমিক সংগঠনের সূত্র অনুযায়ী, সারা দেশে তিন চাকার ধীর গতির অটোরিকশা, টেম্পো, নছিমন, করিমন, ভটভটি ও ইজিবাইক আছে ১৩ লাখের বেশি।
এসব যান চলাচলে পুলিশের বাধা এবং চালক-মালিকদের পাল্টা কর্মসূচির কারণে গত কয়েক দিন ধরে মহাসড়কগুলোতে সাধারণ মানুষের স্বাভাবিক চলাচল ব্যাহত হচ্ছে।
“মহাসড়ক থেকে ধীর গতির যান উচ্ছেদের সিদ্ধান্ত থেকে সরকার সরে আসবে না। কারণ এই সিদ্ধান্ত বাস্তবায়ন শুরু হওয়ার পর দুর্ঘটনা কমেছে। সরকারের সিদ্ধান্তে জনগণ লাভবান হচ্ছে, আবার অটোরিকশাচালকদেরও জীবন বেঁচে যাচ্ছে,” বেনারকে জানান সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের।
এদিকে চালক ও শ্রমিকেরা অভিযোগ করছেন, এসব যান বন্ধ হওয়ায় তাদের নিত্যদিনের জীবিকা বন্ধ হয়েছে।
“হঠাৎ এমন সিদ্ধান্ত নিয়ে আমাদের ঘরে বসানো হয়েছে। বিকল্প ব্যবস্থা করেই এই সিদ্ধান্ত নেওয়া উচিত ছিল। তা ছাড়া আমাদের গ্যাস আনতে হলেও তো মহাসড়কে যেতে হবে। তখন আমরা হয়রানির মুখে পড়ব,” বেনারকে জানান নারায়ণগঞ্জের ফতুল্লা এলাকার অটোরিকশাচালক মো. রাশেদ।
তবে সড়কমন্ত্রী বলেছেন, “আগে জীবন, পরে জীবিকা।” মহাসড়ক চার লেনে উন্নীত করলে ছোট যানবাহনের জন্য আলাদা রাস্তা করার আশ্বাস দিয়ে তিনি বলেন, ভবিষ্যতে যে রাস্তাগুলো করা হবে, সেখানে বাইলেন থাকবে।
সড়ক পরিবহন মন্ত্রণালয়ের হিসেবে, দেশে তিন হাজার কিলোমিটার মহাসড়ক রয়েছে। আর পাকা রাস্তা আছে সাড়ে ১৮ হাজার কিলোমিটার।
মন্ত্রী বলেন, মহাসড়কে অটোরিকশা চলাচল না করলেও অন্য রাস্তায় সেগুলো চলাচল করতে পারবে। এই যানগুলো চলাচল বন্ধের মাধ্যমে সড়কে শৃঙ্খলা ফিরিয়ে আনার কাজ শুরু হয়েছে বলে জানান তিনি।
মহাসড়কে তিন চাকার যানের মতো ছোট যানবাহনগুলোকে ‘মরণ ফাঁদ’ মন্তব্য করে সুশাসনের জন্য নাগরিক–সুজনের সম্পাদক বদিউল আলম মজুমদার বেনারকে বলেন, “অনেক আগেই এমন সিদ্ধান্ত নেওয়া উচিত ছিল।”
তাঁর মতে, মহাসড়কে দ্রুতগতির যান এবং ধীর গতির যান এক সাথে এক রাস্তায় চলার নজির বিশ্বের কোথাও নেই। মহাসড়কে গরুর গাড়ি, ঠেলাগাড়ি চলার নজির সম্ভবত এই দেশেই আছে।
“ধীর গতির যানের বিরুদ্ধে চালানো অভিযানের কারণে যে ভোগান্তির সৃষ্টি হচ্ছে, তা লাঘবে বিকল্প গণপরিবহন নামাতে হবে,” বেনারকে জানান যাত্রী কল্যাণ সমিতির মহাসচিব মোজাম্মেল হক চৌধুরী।
তাঁর মতে, সারা দেশের মহাসড়কে একসঙ্গে অভিযান না চালিয়ে জেলাভিত্তিক উচ্ছেদ অভিযান চালালে দুর্ভোগ কম হবে। তা ছাড়া যাত্রীদের জন্য বিকল্প ব্যবস্থাও নেওয়া সহজ হবে।