মিতু হত্যা মামলার মূল আসামি নিখোঁজ,দুই সন্দেহভাজন নিহত
2016.07.05
আলোচিত পুলিশ সুপার (এসপি) বাবুল আক্তারের স্ত্রী মাহমুদা খানম মিতু হত্যা মামলার সন্দেহভাজন দুই আসামি মো. রাশেদ (২৭) ও নূর নবী (২৮)পুলিশের সঙ্গে কথিত বন্দুকযুদ্ধে নিহত হয়েছেন।
পুলিশ বন্দুকযুদ্ধে মারা যাওয়ার কথা বললেও রাশেদের পরিবার দাবি করেছে, নিহত দুজনকে কয়েকদিন আগে একসঙ্গে ধরে নেয় পুলিশ। গতকাল বুধবার তাদের লাশ পাওয়া যায়।
রাশেদের বাবা আহাম্মদ হোসেন সাংবাদিকদের জানান, গত ২৩ জুন তাঁর ছেলেকে নগর গোয়েন্দা পুলিশ চট্টগ্রামের বোয়ালখালী উপজেলার মিলিটারি পুল এলাকার এক আত্মীয়ের বাসা থেকে ধরে নিয়ে যায়। এ সময় তার সঙ্গে নূর নবীও ছিল। এরপর থেকে তাদের খোঁজ পাওয়া যাচ্ছিল না।
“বন্ধুকযুদ্ধ নয়, আমার ভাইকে মেরে ফেলা হয়েছে,” মুঠোফোনে বেনারকে জানান নিহত রাশেদের বোন রহিমা আক্তার।
তবে পুলিশ হত্যা বা আগে আটক করে রাখার কথা অস্বীকার করেছে।
মামলার তদন্ত কর্মকর্তা ও চট্টগ্রাম নগর গোয়েন্দা পুলিশের সহকারী কমিশনার মো. কামরুজ্জামান বেনারকে বলেন, “গোপন তথ্যের ভিত্তিতে পুলিশ জানতে পারে যে, মাহমুদা হত্যা মামলার আসামিরা রাঙ্গুনিয়ার ঠান্ডাছড়ি এলাকায় অবস্থান করছে। খবর পেয়ে পুলিশ সেখানে অভিযান চালায়। এ সময় পলাতক আসামিরা পুলিশকে লক্ষ্য করে গুলি ছুড়ে। এতে পুলিশের এক উপপরিদর্শক (এসআই) ও দুই সহকারী উপপরিদর্শক (এএসআই) আহত হন। তাঁদের প্রাথমিক চিকিৎসা দেওয়া হয়েছে।” তাঁর দাবি, আসামিদের নিজেদের ছোড়া গুলিতেই রাশেদ ও নবী নিহত হয়েছে।
গত ৫ জুন ভোরে শিশুপূত্রকে স্কুলবাসে তুলে দিতে যাওয়ার সময় চট্টগ্রামের জিইসি এলাকায় খুন হন মাহমুদা। হত্যাকাণ্ডের পর তাঁর স্বামী বাবুল আক্তার বাদী হয়ে অজ্ঞাতপরিচয় তিন ব্যক্তিকে আসামি করে মামলা করেন।
এ ঘটনায় বাবুল সম্পৃক্ত কিনা, সেই প্রশ্নও ওঠে জোরেসোরে। গোয়েন্দা পুলিশ টানা প্রায় ১৫ ঘণ্টা বাবুলকে জিজ্ঞাসাবাদ করে। এ বিষয়ে বাবুল প্রকাশ্যে কিছু না বললেও বিভিন্ন মহল থেকে দাবি ওঠে হত্যাকারীদের পাশাপাশি নির্দেশদাতাকেও যেন খুঁজে বের করা হয়।
ইতিমধ্যে বাবুল চাকরি থেকে অব্যহতি চেয়ে সরকারের কাছে আবেদন করেছেন। তাঁর বিরুদ্ধে স্ত্রীকে খুন করার সন্দেহ ওঠায় সরকারও বিব্রত হয়। কারণ ওই হত্যার পর দেশে সপ্তাহব্যাপি জঙ্গিবিরোধী অভিযান চলে। প্রায় ১৫ হাজার মানুষ গ্রেপ্তার হয়। কথিত বন্দুকযুদ্ধে মারা যায় কমপক্ষে ১০ জন।
গতকাল ওই হত্যা মামলার আসামি রাশেদ ও নবী নিহত হলেও মূল আসামি কামরুল শিকদার ওরফে মুছা নিখোঁজ রয়েছে। মুছাকে পুলিশের দুই কর্মকর্তা গত ২২ জুন সকাল সাতটায় চট্টগ্রাম নগরের বন্দর এলাকার একটি বাসা থেকে ধরে নিয়ে গেছে বলে দাবি করেছেন তার স্ত্রী পান্না আক্তার।
পুলিশ জানায়, হত্যাকাণ্ডে অংশ নেন মুছা, নবী, ওয়াসিম, কালু, রাশেদ, শাহজাহান, আনোয়ারসহ সাত-আটজন। গ্রেপ্তার আনোয়ার ও ওয়াসিম জবানবন্দিতে বলেছেন, মাহমুদা হত্যার পুরো বিষয়টির সমন্বয় করে মুছা।
মাহমুদা হত্যা মামলার দুই আসামি গতকাল বন্ধুকযুদ্ধে নিহত হওয়ার পর মুছার স্ত্রী পান্না আক্তার তাঁর স্বামীকে জীবিত ফেরত দেওয়ার আবেদন জানান। মুছা বেঁচে আছেন না মারা গেছে, তা নিয়েও প্রশ্ন জেগেছে।
মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা কামরুজ্জামান বলেন, এ মামলায় গ্রেপ্তার করা হয়েছে পাঁচজনকে। তাঁদের মধ্যে হত্যাকাণ্ডে সরাসরি অংশ নেওয়া দুজন স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দিয়েছেচ। পলাতক রয়েছেন মুছা ও কালু।
কামরুজ্জামান বলেন, রাশেদের বিরুদ্ধে হত্যা, অস্ত্রসহ চারটি মামলা ছিল। আর নবীর বিরুদ্ধে কয়টি মামলা রয়েছে তা খতিয়ে দেখা হচ্ছে।