উচ্চ আদালতও বায়োমেট্রিক পদ্ধতিতে সিম নিবন্ধনের পক্ষে
2016.04.12

বায়োমেট্রিক পদ্ধতিতে সিম নিবন্ধন করা বৈধ বলে রায় দিয়েছে বাংলাদেশের হাইকোর্ট। এর ফলে দেশের সকল মোবাইল ফোন ব্যবহারকারীকেই আঙুলের ছাপ দিয়ে সিম নিবন্ধন করতে হবে।
নানা সমালোচনার পর এই গত ৯ মার্চ এ পদ্ধতিতে সিম নিবন্ধনের বৈধতা চ্যালেঞ্জ করে একটি রিট আবেদন করেন আইনজীবী এসএম এনামুল হক।
মঙ্গলবার আবেদনটির চূড়ান্ত নিষ্পত্তি করে বিচারপতি সৈয়দ মোহাম্মদ দস্তগীর হোসেন ও বিচারপতি এ কে এম সাহিদুল হকের সমন্বয়ে গঠিত হাইকোর্ট বেঞ্চ বায়োমেট্রিক পদ্ধতিতে নিবন্ধনের পক্ষে রায় দেন।
রায়ে সিম নিবন্ধনে বাংলাদেশ টেলিযোগাযোগ নিয়ন্ত্রণ কমিশনের (বিটিআরসি) বেঁধে দেওয়া নিয়ম সঠিকভাবে অনুসরণ করতে মোবাইল অপারেটরগুলোকে নির্দেশ দেওয়া হয়।
এ ছাড়া নাগরিকদের ব্যক্তিগত তথ্য অতি নিরাপত্তার সঙ্গে সংরক্ষণ ও তা যাতে কোনোভাবে অপব্যবহৃত না হয়; কর্তৃপক্ষকে সেদিকে বিশেষ দৃষ্টি রাখতে বলেছে।
এদিকে শুরুর পর থেকে গত প্রায় পাঁচ মাস হওয়ার পরেও এখনও অর্ধেকেরও বেশি সিম বায়োমেট্রিক পদ্ধতিতে পুনঃ নিবন্ধিত হয়নি বলে জানিয়েছে সরকার। তবে আদালতের রায়ের পর শীঘ্রই বাকি সিমগুলোও নিবন্ধিত হবে বলে আশা প্রকাশ করেছেন সংশ্লিষ্টরা।
‘শক্তিশালী পাসওয়ার্ড’ ব্যবহারের নির্দেশ
এ পদ্ধতিতে গ্রাহকদের গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তিগত তথ্য ব্যবহার করায় এসব তথ্য নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন অনেকেই। আদালত সেসব ব্যক্তিগত তথ্য সংরক্ষণে কর্তৃপক্ষকে শক্তিশালী পাসওয়ার্ড ব্যবহারের নির্দেশ দিয়েছে।
এ বিষয়ে বিটিআরসি পক্ষে শুনানিতে অংশ নেওয়া আইনজীবী ও অতিরিক্ত অ্যাটর্নি জেনারেল মুরাদ রেজা সংবাদ মাধ্যমকে বলেন, “আদালত বায়েমোট্রিক পদ্ধতির ব্যাপারে অপারেটরদের বিটিআরসি সকল নির্দেশনা অক্ষরে অক্ষরে মেনে চলার নির্দেশনা দিয়েছেন। এ ছাড়া যেখানে জাতীয় পরিচয়পত্র আছে, সেখানে আঙুলের ছাপ; শক্তিশালী পাসওয়ার্ড দিয়ে যেন সংরক্ষণ করার নির্দেশনা দিয়েছেন।”
“তথ্য সংগ্রহ পদ্ধতি বর্তমানের চেয়ে আরও সুরক্ষিত ও সতর্কতার সঙ্গে করা, তথ্যের গোপনীয়তা রক্ষা এবং এর অপব্যবহার না হওয়ার বিষয়টি নিশ্চিত করার বিষয়টি বিটিআরসিকে তদারকি করার কথা বলেছেন আদালত,” বেনারকে জানান রিট আবেদনকারীর আইনজীবী ব্যারিস্টার অনীক আর হক।
নিরাপত্তার স্বার্থে এবং নিবন্ধনবিহীন সিম কিনে বিভিন্ন অপরাধে ব্যবহারের অভিযোগ বাড়ার প্রেক্ষিতে গ্রাহকদের তথ্য যাচাই ও বায়োমেট্রিক পদ্ধতিতে সিম নিবন্ধনের উদ্যোগ নেয় সরকার। গত ১৬ ডিসেম্বর থেকে এ পদ্ধতিতে নতুন সিম কেনা ও পুনঃ নিবন্ধন শুরু হয়। আগামী এপ্রিলের মধ্যে পুনঃ নিবন্ধন না করালে চালু সিম বন্ধ হওয়ার ঘোষণাও দিয়েছে সরকার।
নিবন্ধন বাকি অর্ধেকের বেশি সিমের
গত রোববার ডাক ও টেলিযোগাযোগ প্রতিমন্ত্রী তারানা হালিম জানান, শুরুর পর থেকে এখন পর্যন্ত পাঁচ কোটি ৪৫ লাখ সিম বায়োমেট্রিক পদ্ধতিতে পুনঃ নিবন্ধিত হয়েছে।
এই সংখ্যা এ দেশের মানুষের হাতে থাকা মোট ১৩ কোটি ১০ লাখ সিমের প্রায় ৪২ শতাংশ। তবে অপারেটরদের ধারণা বর্তমানে মোট সিমের আট কোটি সক্রিয় রয়েছে।
সরকারের পরিকল্পনা অনুযায়ী আগামী ৩০ এপ্রিলের মধ্যে বায়োমেট্রিক পদ্ধতিতে সিম নিবন্ধন শেষ করার কথাও বলেন তারানা হালিম।
কঠোর বার্তা দিয়ে তিনি বলেন, “এ সময়ের মধ্যে যেসব সিম নিবন্ধন হবে না, সেগুলোর গ্রাহককে নিবন্ধনে বাধ্য করতে কয়েক ঘণ্টা করে সিম বন্ধ ও এসএমএস দিয়ে সতর্ক করা হবে। এরপরও নিবন্ধন না করলে ওই সব সিম বন্ধ করে দেওয়া হবে।”
নিবন্ধনের আগ্রহ বাড়ছে
নানা আলোচনা ও সমালোচনার মধ্যে অনেকেই বায়োমেট্রিক পদ্ধতিতে সিম নিবন্ধন নিয়ে দ্বিধা-দ্বন্দ্বে ভুগছিলেন। তবে আদালতের রায়ে সে দ্বিধা কাটিয়ে সবাই সিম নিবন্ধন করাবে বলে আশা করছে কর্তৃপক্ষ। রায়ের পর এ বিষয়ে সাধারণ মানুষের মধ্যেও আগ্রহ লক্ষ্য করা গেছে।
এ বিষয়ে বেসরকারি ব্যাংক কর্মকর্তা আশরাফ হোসেন বেনারকে বলেন, “বায়োমেট্রিক পদ্ধতি সিম নিবন্ধন প্রক্রিয়ায় নিরাপত্তা ঝুঁকি রয়েছে—সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমসহ পত্রপত্রিকায় এমন খবর পড়ার পর এটা নিয়ে বেশ দ্বিধায় ছিলাম।”
“তবে এখন যেহেতু আদালত রায় দিয়েছেন এবং আগামী ৩০ এপ্রিলের মধ্যে সিম নিবন্ধন বাধ্যতামূলক বলা হচ্ছে, সেহেতু আর দেরি না করে শীঘ্রই কাজটি সেরে ফেলব,” বলেন আশরাফ।