নিহত জঙ্গিদের দেহ থেকে ফের নমূনা সংগ্রহ, ঢাকার নিরাপত্তা জোরদার
2016.07.20

গুলশানের হলি আর্টিজান রোস্তোরাঁয় হামলার পর অভিযানে নিহতদের মৃতদেহ থেকে দ্বিতীয় দফায় নমুনা সংগ্রহ করা হয়েছে। হামলাকারী ও সহযোগীতাকারী হিসেবে চিহ্নিত ছয়জনের লাশ এখনো ঢাকার সম্মিলিত সামরিক হাসপাতালের (সিএমএইচ) হিমঘরে রয়েছে।
“নমূনা সংরক্ষণ করে তা পুলিশের কাউন্টার টেররিজম ইউনিটে পাঠিয়ে দেওয়া হবে,” বেনারকে জানান ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের ফরেনিসিক বিভাগের সহকারী অধ্যাপক সোহেল মাহমুদ। প্রতিটি মরদেহ থেকে ২০ মিলিলিটার রক্ত এবং অন্তত ৩০টি করে চুল সংগ্রহ করা হয়েছে বলে জানান তিনি।
অভিযানে নিহত হামলাকারীদের বাবা-মার শরীর থেকেও বুধবার নমুনা সংগ্রহ করেছে অপরাধ তদন্ত বিভাগ—সিআইডি।
“আমাকে ডেকে শরীর থেকে রক্ত নেওয়া হয়েছে,” বেনারকে জানান নিহত জঙ্গি রোহান ইবনে ইমতিয়াজের বাবা ইমতিয়াজ খান বাবুল, যিনি সন্তানের এই কর্মকাণ্ডের জন্য জাতির কাছে দুঃখ প্রকাশ করেছেন।
মামলার তদন্ত তদারকী কর্মকর্তা ও কাউন্টার টেরোরিজম অ্যান্ড ট্রান্স ন্যাশনাল ক্রাইম ইউনিটের ভারপ্রাপ্ত উপ কমিশনার সাইফুল ইসলাম সাংবাদিকদের বলেছেন, রক্ত ও চুলের এসব আলামত শিগগিরই যুক্তরাষ্ট্রে এফবিআই ল্যাবে পাঠানো হবে। হামলার আগে জঙ্গিরা কোনো মাদক গ্রহণ করেছিল কি-না তা নিশ্চিত হওয়া যাবে রক্ত ও চুল পরীক্ষায়।
গত ১ জুলাই গুলশান হামলার পর ইসলামিক স্টেট—আইএস ওই রক্তাক্ত হামলার দায় স্বীকার করে।নিহত পাঁচ জঙ্গি হলো মীর সামেহ মোবাশ্বের, রোহান ইবনে ইমতিয়াজ, নিবরাস ইসলাম, খায়রুল ইসলাম পায়েল ও সফিকুল ইসলাম ওরফে উজ্জ্বল।
তবে আইএস জঙ্গিদের মত গুলশানের এই হামলাকারীরাও বিশেষ ধরনের মাদকে আসক্ত ছিলেন কি না, সে পরীক্ষার জন্য ময়নাতদন্তের সময়ই ছয়জনের রক্ত, দাঁত ও উরুর মাংস সংগ্রহ করা হয়।
আবার মৃতদেহ থেকে নমুনা নেওয়ার কারণ জানতে চাইলে সোহেল মাহমুদ বলেন, “আমরা মৃতদেহ থেকে পাঁচ মিলিলিটার রক্ত নিয়েছিলাম। কিন্তু তদন্তকারী সংস্থা আরো ২০ মিলিলিটার রক্ত ও নমুনা চাওয়ায় এই নমুনা সংগ্রহ করা হয়েছে।”
গত ১ জুলাই গুলশানের হলি আর্টিজান বেকারি নামের রেস্তোরাঁয় সন্ত্রাসী হামলায় ১৭ বিদেশিসহ ২০ জন মারা যান। দুর্বৃত্তদের প্রতিরোধ করতে গিয়ে নিহত হন দুই পুলিশ কর্মকর্তা।
ওই ঘটনায় পাঁচ হামলাকারীসহ ছয়জন নিহত হয়। গুলশান হামলার ঘটনায় পুলিশ যে মামলা করেছে, তার আসামির তালিকায় ওই ছয়জনেরই নাম উল্লেখ করা হয়েছে।
হামলায় নিহত ১৭ বিদেশির মৃতদেহ তাঁদের দেশে পাঠানো হয়েছে। বাংলাদেশি পাঁচজনের মৃতদেহ হস্তান্তর করা হয়েছে পরিবারের কাছে। তবে নিহত জঙ্গিদের লাশ পরিবারও চাইছে না, পুলিশও দিচ্ছে না।
নৃশংস কায়দায় মানুষ হত্যার মাধ্যমে সারা বিশ্বে আতঙ্ক ছড়িয়ে দেওয়া আইএস যোদ্ধারা ‘ক্যাপ্টাগন’ নামের এক মাদকের নেশায় বুঁদ হয়ে দিনের পর দিন যুদ্ধ চালিয়ে যাচ্ছে বলে গোয়েন্দা ও সমর বিশেষজ্ঞদের ধারণা। তাঁরা বলছেন, ক্যাপ্টাগনের এই জাদুকরী প্রভাবই যুদ্ধের ময়দানে জঙ্গিদের জাগিয়ে রাখার পাশাপাশি উগ্র মতবাদ লালনের শক্তি যোগাচ্ছে।
বাংলাদেশেও জঙ্গিরা ওই ওষুধ সেবন করেছিল কিনা, তা জানার চেষ্টা চলছে বলে জানান চিকিৎসকেরা।
ঢাকার নিরাপত্তা জোরদার
এদিকে আরও জঙ্গি হামলার আশংকায় ঢাকার নিরাপত্তা জোরদার করা হয়েছে। বুধবার ঢাকায় অবস্থিত কয়েকটি আন্তর্জাতিক সংস্থার অফিস বন্ধ রাখা হয় এবং ঢাকার বেশকিছু শিক্ষা প্রতিষ্ঠান ছুটি ঘোষণা করে।
রাজধানীর নিউমার্কেট, গাউসিয়া, ইস্টার্ন মল্লিকা, মাল্টিপ্ল্যান সেন্টার, মোতালেব প্লাজা, ইস্টার্ন প্লাজা, বসুন্ধরা সিটিসহ বড় শপিং মলগুলোতে নিরাপত্তারক্ষীরা সতর্ক অবস্থায় রয়েছে। পুলিশি টহল আরও বাড়ানো হয়েছে।
গত কয়েকদিনে মন্ত্রী ও সাংসদের সতর্ক থাকতে পুলিশের অনুরোধ, আরও হামলা হতে পারে মর্মে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার আশংকায় মানুষ সাবধানে চলাফেরা করছে। রাস্তাঘাটে তল্লাশি বাড়ানো হয়েছে।
“সতর্ক করা হচ্ছে, তাই বলে চুপচাপ বসে থাকার সুযোগ নেই। প্রতিদিনই নিজের দায়িত্ব পালন করছি, বিভিন্ন কর্মসূচীতে যাচ্ছি। নইলে জঙ্গিরা ভাববে আমরা বোধহয় চুপ হয়ে গেছি,” বেনারকে জানান শিক্ষামন্ত্রী নুরুল ইসলাম নাহিদ।
তিনি বলেন, যদি সবাই ভয় পায় এবং কাজকর্ম বন্ধ করে দেয়, তাহলে জঙ্গিদেরই জয় হবে। ওরা এটাই চেয়েছিল। তাই এটা হতে দেওয়া যাবে না।
গত কয়েকদিন ধরে গুজব ছিল, ২০ জুলাইয়ের মধ্যে ঢাকায় ‘যমুনা ফিউচার পার্কে’ জঙ্গি হামলা হতে পারে। গতকাল অন্যান্য মার্কেটগুলোতেও লোক সমাগম কম ছিল।
এ প্রসঙ্গে ঢাকার নিউমার্কেটের শাড়ির দোকানের ক্রেতা শারমিন নাহার বলেন, “কয়েকদিন ধরেই তো হামলার গুজব শুনেছি। কিন্তু ঘরে বসে থাকলে তো আর চলবে না।”