ইউপি নির্বাচনের চতুর্থ দফায় কঠোর হল নির্বাচন কমিশন

ঢাকা থেকে শাহরিয়ার শরীফ
2016.05.06
UNO-attackedstory620.jpg সিলেটের দক্ষিণ সুরমা উপজেলা পরিষদ ভবনের সামনে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যরা জড়ো হয়েছেন নির্বাচনের দায়িত্ব পালনের জন্য। মে ৬, ২০১৬।
ফোকাস বাংলা

হঠাৎ​ করে নড়েচড়ে উঠেছে নির্বাচন কমিশন(ইসি)। স্থানীয় সরকার নির্বাচনে প্রথম তিন ধাপে ব্যাপকভাবে সমালোচিত হওয়ার পর চতুর্থ ধাপে শক্ত অবস্থান নিয়েছে ইসি।

ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচন সুষ্ঠু না হওয়ার জন্য সরকারের চেয়ে নির্বাচন কমিশনের ব্যর্থতাকে দায়ী করা হচ্ছে বিভিন্ন মহল থেকে। যদিও নির্বাচন কমিশন মনে করে, রাজনৈতিক দল ও প্রশাসনের সহযোগিতা ছাড়া নির্বাচন কমিশনের পক্ষে সুষ্ঠু নির্বাচন করা সম্ভব নয়।

তবে প্রশ্ন ওঠে—যে ক্ষমতা নির্বাচন কমিশনের আছে তার সঠিক প্রয়োগ হচ্ছে কিনা। গণমাধ্যম ও রাজনৈতিক দলগুলো গত কয়েক মাস ধরে ইসির ব্যাপক সমালোচনা করে আসছে।

এর মধ্যে গাজীপুরের পুলিশ সুপার (এসপি) হারুন অর রশীদকে পুনর্বহালের ঘটনায় কড়া অবস্থান নিল নির্বাচন কমিশন। গতকাল শুক্রবার স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে সতর্কতামূলক চিঠি পাঠিয়ে বলা হয়েছে, নির্বাচন চলার সময় সরকারি কর্মকর্তাদের বদলি করতে হলে কমিশনের অনুমতি নেওয়ার বাধ্যবাধকতা আছে।

এ ছাড়া আচরণবিধি লঙ্ঘনের অভিযোগে জাতীয় সংসদের হুইপ ও সরকারি দলের সাংসদ আতিউর রহমান আতিককে তাঁর শেরপুর-১ নির্বাচনী এলাকা ছাড়ার নির্দেশ দিয়েছে নির্বাচন কমিশন।

কমিশনের এই দুটি পদক্ষেপ এমন এক সময় এল, যখন সারা দেশে চতুর্থ ধাপে ইউনিয়ন পরিষদের ভোট গ্রহণে শেষ মুহূর্তের প্রস্তুতি চলছে।

শনিবার দেশের ৭০৩টি ইউনিয়নে ভোট গ্রহন হবে। সহিংসতার আশঙ্কায় এরই মধ্যে দুই দিনে ১৮টি ইউনিয়নের ভোটা গ্রহন স্থগিত করা হয়েছে।

হুইপকে এলাকা ছাড়ার নির্দেশ

হুইপ আতিউর রহমান আতিককে শেরপুরে নিজের সংসদীয় এলাকা ছাড়ার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে শনিবারের ইউপি নির্বাচন সামনে রেখে। ইসির উপসচিব ফরহাদ আহম্মদ খান চিঠির মাধ্যমে এই নিষেধাজ্ঞার কথা জানান।

তাঁর বিরুদ্ধে অভিযোগ, তিনি এলাকায় দলীয় প্রার্থীর পক্ষে প্রচারণা চালাচ্ছিলেন। নির্বাচনী আচরণবিধি অনুযায়ী, মন্ত্রী ও প্রতিমন্ত্রীরা নির্বাচনী প্রচারে অংশ নিতে পারেন না।

“কমিশনের নির্দেশনা পেয়ে এরই মধ্যে এলাকা ছেড়ে ঢাকায় চলে এসেছি,” টেলিফোনে বেনারকে জানান হুইপ আতিউর রহমান। তিনি নির্বাচনী আচরণবিধি লঙ্ঘন করেননি বলেও জানান।

পুলিশের বিষয়ে কঠোর ইসি

নির্বাচনী আচরণবিধি লঙ্ঘনের কারণে গত ২০ এপ্রিল কমিশন গাজীপুরের এসপি হারুন অর রশীদকে প্রত্যাহারের জন্য স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়কে চিঠি দেয়। মন্ত্রণালয় পরের দিন এসপি হারুনকে প্রত্যাহার করে পুলিশ সদর দপ্তরে সংযুক্ত করে।

একই দিন দায়িত্বে অবহেলার কারণে কমিশনের নির্দেশে গাজীপুরের কাপাসিয়া থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) রকিবুল হক ও শ্রীপুরের ওসি আসাদুল হককেও প্রত্যাহার করা হয়।

এ ঘটনার ১৩ দিনের মাথায় ৩ মে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় হারুনের প্রত্যাহার আদেশ প্রত্যাহার করে প্রজ্ঞাপন জারি করে। এতে অবশ্য বলা হয়েছে, গাজীপুর জেলায় যেসব ইউনিয়নে নির্বাচন হচ্ছে, সেগুলো সব শেষ হওয়ার পর এই আদেশ কার্যকর হবে।

স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের এই সিদ্ধান্তের প্রেক্ষাপটে নির্বাচন কমিশন গত বৃহস্পতিবার বৈঠকে বসে। বৈঠকে প্রধান নির্বাচন কমিশনার (সিইসি) ও চারজন কমিশনার স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সিদ্ধান্তে হতাশা ও ক্ষোভ প্রকাশ করেন।

কমিশন সচিবালয় থেকে বৈঠকে জানানো হয়, আগামী ৪ জুন শেষ ধাপের নির্বাচনের মধ্য দিয়ে গাজীপুরে ইউপি নির্বাচন শেষ হবে। আইন অনুযায়ী, অন্তত ১৯ জুনের আগ পর্যন্ত সেখানকার কাউকে বদলি করতে হলে নির্বাচন কমিশনের অনুমতি নিতে হবে।

গতকাল দুপুরের দিকে কমিশন সচিবালয়ের উপসচিব ফরহাদ আহম্মদ খানের সই করা নির্বাচনী আইনকানুনের ব্যাখ্যাসংবলিত একটি চিঠি স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের জ্যেষ্ঠ সচিব মোজাম্মেল হক খান বরাবরে পাঠানো হয়। কমিশন সচিবালয়ের সচিব সিরাজুল ইসলাম সাংবাদিকদের বলেন, নির্বাচনের সময়ে সরকারি কর্মকর্তাদের বদলি করতে হলে সরকারকে কিছু নিয়মকানুন মানতে হয়। সেটা মনে করিয়ে দেওয়ার জন্যই এই চিঠি।

“নির্বাচনের সময়ে বদলির ক্ষেত্রে সরকারের সব মন্ত্রণালয়কে নির্বাচন কমিশনের অনুমতি নিতে হয়। এ ক্ষেত্রে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় আইন অমান্য করেছে,” বেনারকে জানান নির্বাচন কমিশনার মো. শাহনেওয়াজ।

আজ ৭০৩ ইউপিতে নির্বাচন

আজ সকাল আটটা থেকে বিকেল চারটা পর্যন্ত ৭০৩ ইউপিতে ভোট গ্রহণ অনুষ্ঠিত হবে।

সহিংসতার আশঙ্কায় বৃহস্পতিবার রাজশাহীর বাগমারা উপজেলার ১৬টি ইউনিয়নের নির্বাচন স্থগিত করা হয়। গতকাল শুক্রবার আরও দুটি ইউপির ভোট গ্রহণ স্থগিত করা হয়েছে।

কমিশন সচিবালয়ের তথ্য অনুযায়ী, এ ধাপের নির্বাচনে চেয়ারম্যান পদে প্রার্থীর সংখ্যা আনুমানিক ৩ হাজার ২০০। এঁদের মধ্যে বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় জয়ী হওয়ার পথে আছেন ৩৩ জন। এঁরা সবাই ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ মনোনীত। ৮৬টিতে চেয়ারম্যান পদে বিএনপির কোনো প্রার্থী নেই।

প্রশ্নের মুখে ইসি

২০১৩ সালে এই কমিশন গঠন হওয়ার পর প্রথমদিকে দুই দুফায় পাঁচটি সিটি করপোরেশন নির্বাচন সুষ্ঠু ছিল। সেই থেকে এ পর্যন্ত সবগুলো নির্বাচন নিয়ে কমবেশি প্রশ্ন উঠেছে। ইউপি নির্বাচন শেষ হলে বর্তমান কমিশনের মেয়াদে নারায়নগঞ্জ সিটি করপোরেশন নির্বাচন করার সুযোগ আছে।

আটটি স্থানীয় ও জাতীয় নির্বাচন করে বর্তমান নির্বাচন কমিশন বিদায় হবে আগামী বছরের ফেব্রুয়ারিতে। পাঁচটি সিটি করপোরেশন নির্বাচন সুষ্ঠুভাবে সম্পন্ন করে বর্তমান কমিশন যে ইতিবাচক ভাবমূর্তি প্রতিষ্ঠা করেছিল পর্যায়ক্রমে ক্ষয় হতে হতে এখন তা শূন্যের কোটায়।

বিরোধীদল বিএনপি এবারের নির্বাচনকে ইতিহাসের নিকৃষ্টতম স্থানীয় সরকার নির্বাচন বলে আখ্যা দিয়ে বলেছে, নির্বাচন কমিশনের ব্যর্থতায় এই পরিস্থিতি সৃষ্টি হয়েছে।“নির্বাচন কমিশনের ভাবমূর্তি এখন শূন্যের কোটায়। এটা ‘ঠুটো জগন্নাথে’ পরিণত হওয়ায় সাংবিধানিক ওই প্রতিষ্ঠানটি নিজের ক্ষমতা প্রয়োগ করতে পারেনি,” বেনারকে জানান বিএনপির যুগ্ম মহাসচিব মো. শাহজাহান।

তিনি বলেন, নির্বাচন চলাকালে স্থানীয় প্রশাসন ও আইনশৃঙ্খলা বাহিনী কমিশনের আদেশে চলার কথা। কিন্তু বাস্তবে মন্ত্রী–সাংসদদের অনেকের নির্দেশে চলেছে স্থানীয় প্রশাসন ও আইনশৃঙ্খলা বাহিনী।

মন্তব্য করুন

নীচের ফর্মে আপনার মন্তব্য যোগ করে টেক্সট লিখুন। একজন মডারেটর মন্তব্য সমূহ এপ্রুভ করে থাকেন এবং সঠিক সংবাদর নীতিমালা অনুসারে এডিট করে থাকেন। সঙ্গে সঙ্গে মন্তব্য প্রকাশ হয় না, প্রকাশিত কোনো মতামতের জন্য সঠিক সংবাদ দায়ী নয়। অন্যের মতামতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল হোন এবং বিষয় বস্তুর প্রতি আবদ্ধ থাকুন।