নয় বিদেশিসহ ১০ জন গ্রেপ্তার,বিপুল জাল টাকা উদ্ধার
2016.08.08

বিপুল পরিমাণ দেশি-বিদেশি জাল নোটসহ দশজনকে গ্রেপ্তার করেছে বাংলাদেশের আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী, যাদের নয়জনই বিদেশি নাগরিক। এসময় তাদের কাছ থেকে জাল নোট তৈরির বেশ কিছু সরঞ্জামও জব্দ করা হয়।
বাংলাদেশের আইনে মুদ্রা জালের দায়ে কোনো ব্যক্তিকে ১৪ বছর কারাদণ্ড থেকে সর্বোচ্চ শাস্তি মৃত্যুদণ্ডের বিধান রয়েছে। সংশ্লিষ্টরা জানিয়েছেন, দেশের বাজারে জাল নোটের প্রবেশ ঠেকাতে সক্রিয় রয়েছে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী।
গত রোববার রাতে রাজধানীর বসুন্ধরা আবাসিক এলাকায় অভিযান চালিয়ে ওই দশজনকে আটক করে র্যাব।
গ্রেপ্তারকৃতরা হল; জিয়ান ক্লডি (৪০), আবদু নাসারা (৩৫), কাম্বিয়া ডিউ নিদোর্ত (৪৩), গোনু ডিসায়ার (৩৭), তিয়াদিউ বার্নার্ড (৩৪), জঙ্গা দিয়াদোনামা মার্লিন (৪১), মোগুয়েম সোলো (৪২), মিম্বা সার্গেস (৩৭), মুতম্ব জালি ইউসুফ (৪৪) এবং বাংলাদেশি নাগরিক মেরি ময়না পরী (২৬)।
এ বিষয়ে র্যাব-২ এর অধিনায়ক মো. মহিউদ্দিন বেনারকে জানান, “এরা অনেক দিন ধরেই বসুন্ধরা আবাসিক এলাকায় বাসা ভাড়া নিয়ে জাল টাকা তৈরি ও বিক্রি করে আসছিলেন। গোপন সংবাদের ভিত্তিতে অভিযান চালিয়ে ১০জনকে জাল নোট ও নোট তৈরির সরঞ্জামসহ আটক করা হয়।”
তিনি জানান, আটকৃত নয় বিদেশি আফ্রিকার দেশ ক্যামেরুন, কঙ্গো ও লেসেথোর নাগরিক। বিদেশি নাগরিক হলেও তাদের কারোরই ভিসার মেয়াদ নেই। তাদের কাছে বেশ কয়েকটি অবৈধ মোবাইল সিমও পাওয়া গেছে।
ওই র্যাব কর্মকর্তা সাংবাদিকদের জানান, প্রথমে ই–মেইলে বাংলাদেশিদের সঙ্গে যোগাযোগ করে ডলারের ব্যবসা করার প্রস্তাব দেয় চক্রটি। পরে কৌশলে জাল ডলার দিয়ে প্রতারণা করে আসছিল তারা।
আইনজীবীরা বলছেন, মুদ্রা যেকোনো দেশের জন্য খুবই গুরুত্বপূর্ণ। বাংলাদেশের আইনেও মুদ্রা বা নোট জালের কঠিন শাস্তির বিধান রয়েছে।
এ প্রসঙ্গ ঢাকা জজ কোর্টের আইনজীবী সুরাইয়া জান্নাত বেনারকে বলেন, “বিশেষ ক্ষমতা আইন অনুযায়ী মুদ্রা জাল করা অপরাধী ব্যক্তি মৃত্যুদণ্ডে বা যাবজ্জীবন কারাদণ্ডে বা ১৪ বৎসর পর্যন্ত সশ্রম কারাদণ্ডে এবং অর্থ দণ্ডে দণ্ডিত হবে”।
সক্রিয় রয়েছে টাস্কফোর্স
সংশ্লিষ্টরা জানিয়েছেন, দেশের বাজারে জাল নোট প্রতিরোধে নানা উদ্যোগ নিয়েছে সরকার। সক্রিয় রয়েছে এ বিষয়ক সেন্ট্রাল টাস্কফোর্সও। তা ছাড়া বাংলাদেশ ব্যাংকও জাল নোট শনাক্ত করার বিষয়ে প্রচারণা অব্যাহত রেখেছে।
বাংলাদেশ ব্যাংকের মুখপাত্র শুভংকর সাহা এ প্রসঙ্গে বেনারকে বলেন, দেশের বাজারে জাল টাকার প্রবেশ অর্থনীতিকে মারাত্মকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত করে। তাই জাল নোট প্রতিরোধে স্বরাষ্ট্র, আইন মন্ত্রণালয় ও বাংলাদেশ ব্যাংকের সমন্বয়ে গঠিত একটি টাস্কফোর্স রয়েছে।
এ ছাড়া পোস্টার টানানো, লিফলেট বিতরণ, ভিডিও ক্লিপ দেখানো, টিভি বিজ্ঞাপণসহ বিভিন্ন মাধ্যমে জাল টাকা শনাক্ত করার বিষয়ে বাংলাদেশ ব্যাংকের পক্ষ থেকে নিয়মিত প্রচারণা চালানো হচ্ছে।
তাঁর মতে, ঈদকে কেন্দ্র করে জাল নোটের চক্রগুলো সক্রিয় হয়ে ওঠে। তাই এসময় জাল টাকা শনাক্তকরণের মেশিন বিতরণ করা হয় এবং সবাইকে সতর্ক করা হয়।
বাংলাদেশ ব্যাংক সূত্র জানায়, বিভিন্ন ব্যাংক, বিপণিবিতান, আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীসহ সারা দেশের বিভিন্ন স্থানে গত বছর প্রায় ৪শ জাল টাকা শনাক্তকরণের মেশিন বিতরণ করা হয়েছে।