এটিএম কার্ড জালিয়াতি: ঢাকায় তুরস্কের নাগরিক গ্রেপ্তার
2022.01.19
ঢাকা

বেসরকারি ইস্টার্ন ব্যাংকের ঢাকার বিভিন্ন বুথ থেকে এটিএম কার্ড দিয়ে তিন দিনে অন্তত ৮৪ বার টাকা তোলার চেষ্টায় জড়িত বাংলাদেশি সহযোগীসহ তুরস্কের এক নাগরিকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ।
গ্রেপ্তার তুরস্কের নাগরিক হাকান যানবুরকান (৫৫) ও তাঁর বাংলাদেশি সহযোগী মো. মফিউল ইসলাম এটিএম কার্ড জালিয়াতির আন্তর্জাতিক চক্রের সদস্য বলে জানিয়েছে পুলিশ।
“রাজধানীর গুলশান এক নম্বর এলাকা থেকে মঙ্গলবার তাঁদের গ্রেপ্তার করা হয়েছে,” বুধবার সংবাদ সম্মেলনে জানান পুলিশের কাউন্টার টেররিজম অ্যান্ড ট্রান্সন্যাশনাল ক্রাইম (সিটিটিসি) ইউনিটের অতিরিক্ত পুলিশ কমিশনার মো. আসাদুজ্জামান।
“গত ২ থেকে ৪ জানুয়ারি ইস্টার্ন ব্যাংকের বিভিন্ন এটিএম বুথে গিয়ে হাকান বিভিন্ন দেশের একাধিক ক্লোন কার্ড ব্যবহার করে ৮৪ বার টাকা উত্তোলনের চেষ্টা করলেও সফল হতে পারেনি,” জানান আসাদুজ্জামান।
ইস্টার্ন ব্যাংক লিমিটেডের (ইবিএল) ব্যবস্থাপনা পরিচালক আলী রেজা ইফতেখার বুধবার রাতে বেনারকে বলেন, “আমাদের সিকিউরিটি সিস্টেম এতো স্ট্রং এবং আধুনিক যে, চক্রটি এক টাকাও তুলতে পারেনি।”
সিটিটিসির অতিরিক্ত পুলিশ কমিশনার জানান, “ব্যাংকটি অ্যান্টি স্ক্যামিং টেকনোলজি ব্যবহার করায় অ্যালার্ম সিস্টেমের মাধ্যমে বিষয়টি নজরে আসে এবং স্ক্যামিংয়ে বাধা দিতে সক্ষম হয়।”
পুলিশের তথ্য অনুযায়ী, তুরস্কের নাগরিক হাকান আন্তর্জাতিক এটিএম কার্ড ক্লোনিং এবং স্ক্যামিং চক্রের অন্যতম পরিকল্পনাকারী। গত ৩১ ডিসেম্বর বাংলাদেশে এসে তিনি পল্টন এলাকার একটি হোটেলে ওঠেন।
গ্রেপ্তার দুজনের কাছ থেকে বিভিন্ন মডেলের পাঁচটি মোবাইল ফোন, একটি ল্যাপটপ, ১৫টি ক্লোন কার্ডসহ মোট ১৭টি কার্ড উদ্ধার করার তথ্য জানিয়েছে পুলিশ।
“অস্ট্রেলিয়া, নিউজিল্যান্ড, ইউএসএ, ভারত, তুরস্ক, সৌদি আরব, অস্ট্রিয়া, জার্মানি, ভিয়েতনাম, যুক্তরাজ্য, কানাডা, বলিভিয়া, স্পেন, ফিনল্যান্ড, নরওয়েসহ প্রায় ৪০টি দেশের নাগরিকদের ক্রেডিট কার্ড ক্লোন করে ওই আসামি টাকা তোলার চেষ্টা চালিয়েছে,” সাংবাদিকদের জানান আসাদুজ্জামান।
গ্রেপ্তার দুজনের বিরুদ্ধে রাজধানীর পল্টন থানায় ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনে মামলা দায়ের করা হয়েছে বলে জানায় সিটিটিসি।
বুধবার আসামিদের প্রত্যেককে ১০ দিনের রিমান্ড চেয়ে আদালতে পাঠানো হলে, প্রত্যেকর পাঁচ দিন করে রিমান্ড মঞ্জুর হয়েছে বলে বেনারকে জানান সিটিটিসির উপ-পুলিশ কমিশনার (ডিসি) মাহফুজুল ইসলাম।
ভারতেও গ্রেপ্তার হয়েছিলেন হাকান
সিটিটিসি জানায়, গ্রেপ্তারকৃতদের মধ্যে হাকান এটিএম কার্ড জালিয়াতির ঘটনায় দুই বছর আগে একবার ভারতে গ্রেপ্তারের পর পালিয়েছিলেন।
“হাকান ২০১৯ সালে ভারতের আসাম রাজ্যের পল্টন বাজার পুলিশ স্টেশনের এটিএম বুথ স্ক্যামিং মামলায় তুরস্কের আরেক নাগরিক এবং দুই বাংলাদেশিসহ গ্রেপ্তার হয়েছিল। সেই ঘটনায় গ্রেপ্তারকৃতরা ভারতের বিভিন্ন এটিএম বুথ থেকে কার্ড ক্লোনিং করে প্রায় ১০ লাখ রুপি আত্মসাৎ করে,” বলেন আসাদুজ্জামান।
তিনি বলেন, ভারতে প্রায় ২০ মাস জেলে থাকার সময় হাকান “আগরতলার ‘গোবিন্দ বল্লভ পন্থ’ হাসপাতালে পুলিশ হেফাজতে চিকিৎসাধীন থাকা অবস্থায় পালিয়ে যায়।”
“পরবর্তীতে সে এক ভারতীয় নাগরিকের সহায়তায় দুই লাখ রুপির বিনিময়ে সিকিম হয়ে নেপালে পৌঁছায়। সেখান থেকে ট্রাভেল ডকুমেন্ট সংগ্রহ করে নিজ দেশ তুরস্কে ফিরে যায় এবং নতুন পাসপোর্ট তৈরি করে,” সংবাদ সম্মেলনে জানানো হয়।
আন্তর্জাতিক এই চক্রে একাধিক বাংলাদেশিসহ তুরস্ক, বুলগেরিয়া, মেক্সিকো, ভারত ছাড়াও বিভিন্ন দেশের নাগরিক জড়িত আছে জানিয়ে সংবাদ সম্মেলনে বলা হয়, তাদের আইনের আওতায় আনতে ইন্টারপোলের সহায়তা চাইবে বাংলাদেশ পুলিশ।
এর আগে এটিএম বুথে জালিয়াতির ঘটনায় ২০১৯ সালের জুনে ইউক্রেনের ছয় নাগরিককে গ্রেপ্তার করে পুলিশ।
এ ছাড়া ডাচ-বাংলা ব্যাংকের এটিএম ইলেকট্রিক জার্নাল পরিবর্তন করে জালিয়াতির মাধ্যমে ২ কোটি ৫৭ লাখ টাকা আত্মসাতের ঘটনায় ৪ জন বাংলাদেশি নাগরিককে গত বছরের জুনে গ্রেপ্তার করেছিল পুলিশ।