জঙ্গি সন্দেহে গ্রেপ্তার ছয়,১৮ জনের ব্যাংক হিসাব জব্দ

ঢাকা থেকে শাহরিয়ার শরীফ
2016.08.10
20160810-JMB-Militants1000.jpg রাজধানীর বিভিন্ন এলাকায় অভিযান চালিয়ে গত মঙ্গলবার ও বুধবার জঙ্গি সন্দেহে ছয়জনকে আটক করে র‍্যাব। আগস্ট ১০, ২০১৬।
ফোকাস বাংলা

রাজধানীর কয়েকটি এলাকায় অভিযান চালিয়ে গত মঙ্গলবার ও বুধবার জঙ্গি সন্দেহে ছয়জনকে আটক করেছে র‍্যাব। তারা জেএমবির দাওলাতুল ইসলামের ব্যানারে গুলশানে হলি আর্টিজান রেস্তোরাঁ ও মাদারীপুরে শিক্ষকসহ ১১টি হামলা চালায় বলে র‍্যাব তথ্য পেয়েছে।

এদিকে সেনাবাহিনী থেকে বহিষ্কৃত মেজর সৈয়দ মো. জিয়াউল হক ও তামিম চৌধুরীসহ মোট ১৮ জনের ব্যাংক হিসাব জব্দের নির্দেশ দিয়েছে বাংলাদেশ ব্যাংক। এ ছাড়া জঙ্গিবাদে অর্থায়ন ঠেকাতে জঙ্গিদের আত্মীয়–স্বজনদের ব্যাংক হিসাবের ওপরও নজরদারি বাড়ানো হয়েছে।

ছয় জঙ্গি গ্রেপ্তার

র‍্যাব বলেছে, গ্রেপ্তার হওয়া ছয় যুবক জেএমবি ও আনসারুল্লাহ বাংলা টিমের সদস্য। তারা রাজধানীসহ বিভিন্ন স্থানে আত্মঘাতী হামলার পরিকল্পনা করেছিল।

তাদের কাছ থেকে পিস্তল, গুলি, ডেটোনেটর, সার্কিট, চাপাতি, চাকু, করাত, হ্যান্ড গ্রেনেড, চকলেট বোমা, বারুদ, পাওয়ার জেল, গানপাউডার প্রভৃতি উদ্ধার করা হয়েছে।

আটক ছয়জনের মধ্যে রয়েছে; জাহিদ আনোয়ার ওরফে পরাগ (২২), তাজুল ইসলাম (২৯), জাহিদ হাসান ওরফে মাঈন (২১), মোস্তাফিজুর রহমান ওরফে সিফাত (২৭), জিয়াবুল হক ওরফে জিয়া (২৪) ও নয়ন হোসেন (২১)। আটক মোস্তাফিজুর রহমান জঙ্গি ওয়েবসাইট আত-তামকীনের অ্যাডমিন বলে জানা যায়।

গতকাল র‍্যাব সদর দপ্তরে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে র‍্যাবের আইন ও গণমাধ্যম শাখার পরিচালক কমান্ডার মুফতি মাহমুদ খান বলেন, প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে আটককৃতরা নিজেদের জেএমবি ও আনসারুল্লাহ বাংলা টিমের সদস্যের পাশাপাশি দাওলাতুল ইসলাম বাংলাদেশ নামে একটি জঙ্গি সংগঠনের সদস্য বলেও দাবি করেন।

র‍্যাবের গোয়েন্দারা জানতে পারেন, সামাজিক যোগাযোগের মাধ্যম বিশেষ করে ফেসবুক, ইমো ছাড়াও টেলিগ্রাম, থ্রিমার মাধ্যমে তারা পরস্পরের সঙ্গে যোগাযোগ করত। তাদের সম্পর্কে প্রাপ্ত তথ্যের ভিত্তিতে রাজধানীর বিমানবন্দর রেলস্টেশন ও গাবতলীতে অভিযান চালানো হয়। আটক ছয়জনকে জিজ্ঞাসাবাদ করা হচ্ছে।

মুফতি মাহমুদ বলেন, জেএমবির এই সদস্যরা জঙ্গি হামলার পর তা আত-তামকীন নামক ওয়েবসাইটের মাধ্যমে নিজেদের আইএস (ইসলামিক স্টেট) হিসেবে প্রচার করে। জঙ্গি হামলার পর আন্তর্জাতিক জঙ্গি সংগঠন আইএসের ব্যানারে প্রকাশ করার মূল উদ্দেশ্য জঙ্গি হামলাকে আলোচনার কেন্দ্রবিন্দুতে আনা।

“দেশের এসব জঙ্গি সংগঠনের সঙ্গে আন্তর্জাতিক জঙ্গি সংগঠনের সরাসরি যোগাযোগের প্রমাণ এখনো পাওয়া যায়নি,” দাবি করেন মাহমুদ।

ব্যাংক লেনদেনে নজরদারি বেড়েছে

ব্যাংকিং চ্যানেল ব্যবহার করে যাতে জঙ্গি কর্মকাণ্ডের অর্থ স্থানান্তরিত না হয়, সে জন্য ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালকদের সজাগ থাকার নির্দেশ দিয়েছে বাংলাদেশ ব্যাংক। পাশাপাশি সন্দেহজনক সব লেনদেনের তথ্য কেন্দ্রীয় ব্যাংকে পাঠাতে বলা হয়েছে।

সাম্প্রতিক সময়ে গুলশান, শোলাকিয়া ও কল্যাণপুরে নিহত ১৬ জঙ্গি এবং জঙ্গি হামলার মাস্টারমাইন্ড হিসেবে সন্দেহভাজন সেনাবাহিনী থেকে বহিষ্কৃত মেজর সৈয়দ মো. জিয়াউল হক ও তামিম চৌধুরীসহ মোট ১৮ জনের ব্যাংক হিসাব জব্দের নির্দেশ দিয়েছে বাংলাদেশ ব্যাংক। এ ছাড়া জঙ্গিদের আত্মীয়ের ব্যাংক লেনদেনও খতিয়ে দেখছে কেন্দ্রীয় ব্যাংক।

গত বুধবার দেশের সব ব্যাংকের প্রধান নির্বাহীকে এই নির্দেশনা পাঠানো হয়েছে। বাংলাদেশ ব্যাংকের আর্থিক গোয়েন্দা শাখা বা বাংলাদেশ ফিন্যান্সিয়াল ইন্টেলিজেন্স ইউনিট (বিএফআইইউ) থেকে এই নির্দেশনা পাঠানো হয়।

এ প্রসঙ্গে বিএফআইইউ’র মহাব্যবস্থাপক দেবপ্রসাদ দেবনাথ বলেন, “যে সব জঙ্গির খবর গণমাধ্যমে এসেছে, সেই সব জঙ্গির সব হিসাব জব্দ করার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে ব্যাংকগুলোকে।”

এর আগে জঙ্গি অর্থায়ন বন্ধে গত ১৯ ও ২০ জুলাই সব বাণিজ্যিক ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালকদের নিয়ে বৈঠক করে বাংলাদেশ ব্যাংক। ব্যাংকিং চ্যানেল ব্যবহারের মাধ্যমে সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ডের অর্থ স্থানান্তর ঠেকাতে ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালকদের সজাগ থাকার নির্দেশ দেওয়া হয় ওই বৈঠকে।

“জঙ্গিরা যাতে ব্যাংকিং চ্যানেল ব্যবহার করতে না পারে, সে জন্য ব্যাংকগুলোকে সজাগ থাকার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। যারা জঙ্গি কর্মকাণ্ড চালাচ্ছে, তাদের আত্মীয়দের ব্যাংক লেনদেনও খতিয়ে দেখা হচ্ছে,” বেনারকে বলেন বাংলাদেশ ব্যাংকের ডেপুটি গভর্নর এস কে সুর চৌধুরী।

তিনি বলেন, রেমিট্যান্সের অর্থ জঙ্গি অর্থায়নে ব্যয়িত হচ্ছে কিনা, তাও খতিয়ে দেখতে ব্যাংকগুলোকে নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে।

মন্তব্য করুন

নীচের ফর্মে আপনার মন্তব্য যোগ করে টেক্সট লিখুন। একজন মডারেটর মন্তব্য সমূহ এপ্রুভ করে থাকেন এবং সঠিক সংবাদর নীতিমালা অনুসারে এডিট করে থাকেন। সঙ্গে সঙ্গে মন্তব্য প্রকাশ হয় না, প্রকাশিত কোনো মতামতের জন্য সঠিক সংবাদ দায়ী নয়। অন্যের মতামতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল হোন এবং বিষয় বস্তুর প্রতি আবদ্ধ থাকুন।