ঢাকায় ও রাজশাহীতে জেএমবির তিন সদস্য ‘বন্দুকযুদ্ধে’ নিহত

ঢাকা থেকে শাহরিয়ার শরীফ
2016.06.07
2016-06-07-JMB-Killed620.jpg পরিকল্পিত হত্যা বেড়ে যাওয়ায় রাজধানীতে মোটরসাইকেল আরোহীদের ওপর পুলিশের নজরদারি বেড়েছে। জুন ৭, ২০১৬।
ফোকাস বাংলা

দুর্বৃত্তদের গুপ্ত ও পরিকল্পিত হত্যাকাণ্ড চলার মধ্যে গতকাল মঙ্গলবার পুলিশের সঙ্গে ‘বন্দুকযুদ্ধে’ ঢাকায় দুজন এবং রাজশাহীতে একজন নিহত হয়েছে। এই তিনজনই নিষিদ্ধঘোষিত জঙ্গি সংগঠন জামাআতুল মুজাহিদীন বাংলাদেশের (জেএমবি) সদস্য বলে পুলিশ দাবি করেছে।

চট্টগ্রামের পুলিশ সুপার বাবুল আক্তারের স্ত্রী মাহমুদা আক্তার গত রোববার সকালে দুর্বৃত্তদের হাতে খুন হওয়ার ৪৮ ঘণ্টারও কম সময়ের মধ্যে এই ‘বন্দুকযুদ্ধ’ ঘটল। যদিও ওই হত্যাকাণ্ডের তদন্ত বা আসামিদের গ্রেপ্তারে দৃশ্যমান অগ্রগতি নেই।

গতকাল ঢাকায় নিহতরা নিহতরা হচ্ছে; তারেক হোসেন মিলু ওরফে ইলিয়াস ওরফে ওসমান ও সুলতান মাহমুদ ওরফে রানা ওরফে কামাল। তারেকের বাড়ি জয়পুরহাটে এবং সুলতানের বাড়ি দিনাজপুরে।

এই দুজনের মধ্যে তারেক রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের ইংরেজি বিভাগের অধ্যাপক রেজাউল করিম সিদ্দিকীর খুনীদের একজন বলে পুলিশের দাবি। মাসখানেক আগে ওই অধ্যাপককে দুর্বৃত্তরা কুপিয়ে হত্যা করে।

মঙ্গলবার ঢাকা মহানগর পুলিশের (ডিএমপি) মিডিয়া সেন্টারে ডিএমপির কাউন্টার টেরোরিজম অ্যান্ড ট্রান্স ন্যাশনাল ক্রাইম ইউনিট সংবাদ সম্মেলনে বলেছে, জঙ্গিদের ঢাকায় ঢোকার খবর পেয়ে ডিবি পুলিশের একটি দল কালশীতে যায়। সেখানে লোহার ব্রিজ এলাকায় ভোর সাড়ে চারটায় জঙ্গিরা ডিবিকে লক্ষ্য করে গুলি করে। ডিবি পাল্টা গুলি চালায়।

দুই পক্ষের ‘বন্দুকযুদ্ধে’ তারেক ও সুলতান গুরুতর আহত হয়, অন্যরা পালিয়ে যায়। আহত দুজনকে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নেওয়া হয়। পরে কর্তব্যরত চিকিৎসক তাদের মৃত ঘোষণা করেন।

নিহত দুজনের কাছ থেকে একটি পিস্তল, তিনটি বুলেট ও তিনটি বোমা উদ্ধার করা হয়।

ঢাকা মেডিকেল কলেজের মর্গ সূত্র জানায়, ভোর ছয়টায় পল্লবী থানার উপপরিদর্শক (এসআই) ফারুক হোসাইন দুজনের লাশ রেখে গেছেন। তবে তাদের কারও নাম-পরিচয় বলা হয়নি।

জানতে চাইলে উপপরিদর্শক ফারুক হোসাইন বেনারকে বলেন, কালশীর নতুনবাজার এলাকায় তিনি মোবাইল টিমের দায়িত্বে ছিলেন। এ সময় ওয়্যারলেসে জানতে পারেন, লোহার ব্রিজ-সংলগ্ন স্থানে পুলিশের সঙ্গে দুর্বৃত্তদের গোলাগুলি হচ্ছে।

“টিম নিয়ে ১০ মিনিটের মধ্যে সেখানে পৌঁছাই। দেখতে পাই রাস্তার পাশে দুজনের গুলিবিদ্ধ দেহ পড়ে আছে। ঘটনাস্থলে ডিবির ৮-১০ জন সদস্য ছিলেন। হাসপাতালে নিয়ে গেলে কর্তব্যরত চিকিৎসক ওই দুজনকে মৃত ঘোষণা করেন,” জানান ফারুক।

গতকাল সংবাদ সম্মেলনে কাউন্টার টেররিজম অ্যান্ড ট্রান্স ন্যাশনাল ক্রাইম ইউনিটের প্রধান ও ডিএমপির অতিরিক্ত কমিশনার মনিরুল ইসলাম বলেন, তারেক রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক রেজাউল করিম সিদ্দিকীকে কুপিয়ে হত্যা করে। এ ছাড়া দিনাজপুরের কাহারোলের হামলার সঙ্গে তার সম্পৃক্ততা ছিল।

মনিরুল দাবি করেন, রেজাউল করিমকে হত্যার ঘটনায় যারা গ্রেপ্তার হয়েছিলেন, তারাও স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দিতে তার নাম বলেছে। তারেক উত্তরাঞ্চলে জেএমবির একজন প্রভাবশালী নেতা। আর সুলতান মধ্যম সারির একজন নেতা।

সংবাদ সম্মেলনে বলা হয়, হোসেনি দালান ও পুলিশ সদস্যদের ওপর হামলার পর জেএমবির সদস্যদের অনেকেই ঢাকা ছেড়েছিল। দেশের বিভিন্ন জায়গায় হামলা চালানোর পর জেএমবির সদস্যরা আবারও ঢাকায় ঢোকার চেষ্টা করছে বলে পুলিশের কাছে তথ্য আছে।

এরই অংশ হিসেবে বড় কোনো নাশকতার পরিকল্পনা নিয়ে এই দুজন ঢাকায় ঢোকার চেষ্টা করছিল।

সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে ডিএমপির অতিরিক্ত কমিশনার মনিরুল বলেন, একটি পক্ষ দেখাতে চায়, সরকার সংখ্যালঘু ও ভিন্ন মতাবলম্বীদের সুরক্ষা দিতে পারছে না। যুদ্ধাপরাধের বিচার যারা চায় না, তাদের যোগসূত্র নেই, এমন বলারও অবকাশ নেই।

রাজশাহীতে বন্দুকযুদ্ধে নিহত এক

রাজশাহীর বাগমারা উপজেলার সৈয়দপুর চকপাড়া গ্রামের আহমদিয়া মুসলিম সম্প্রদায়ের মসজিদে বোমা বিস্ফোরণে নিহত যুবকের পরিচয় মিলেছে। নাম তারেক আজিজ(২২)। পুলিশ বলছে নিহত যুবকই বোমা বহনকারী ছিল।

তারেকের সহযোগী জামাল উদ্দিন(২৫) গত সোমবার দিবাগত রাতে রাজশাহীর গোদাগাড়ীতে পুলিশের সঙ্গে বন্দুকযুদ্ধে নিহত হয়েছে। তাদের বাড়ি চাঁপাইনবাবগঞ্জের শিবগঞ্জ উপজেলায়।

গত ২৫ ডিসেম্বর রাজশাহীর বাগমারা উপজেলার সৈয়দপুর চকপাড়া গ্রামে আহমদিয়া সম্প্রদায়ের একটি মসজিদে জুমার নামাজের সময় বোমা বিস্ফোরণের ঘটনা ঘটে। এতে বোম বহনকারী ওই যুবক নিহত হয়। মসজিদের শিশুসহ তিনজন গুরুতর আহত হন।

গতকাল মঙ্গলবার দুপুরে রাজশাহী পুলিশ সুপার নিরাশরুল আরিফ তাঁর কার্যালয়ে সংবাদ সম্মেলন করে জানান, বোমা বিস্ফোরণে নিহত যুবক তারেক আজিজ চাঁপাইনবাবগঞ্জের একটি পলিটেকনিক ইনস্টিটিউটের ছাত্র ছিল। তার বাড়ি শিবগঞ্জ উপজেলার রূপনগর গ্রামে। তার বাবার নাম আবু সালেক (৫৫)। তিনি সাবেক সেনা সদস্য।

এদিকে গতকাল বন্দুকযুদ্ধে নিহত জামাল উদ্দিনের বাবার নাম তাবজুল হক। তার বাড়ি শিবগঞ্জের কালিনগর-লক্ষ্মীপুর গ্রামে।

পুলিশের দাবি, জামাল উদ্দিনকে সঙ্গে নিয়ে পুলিশ গত সোমবার দিবাগত রাতেই তারেক আজিজের বাড়ি যায়। জামালের মাধ্যমে তারেকের পরিচয় শনাক্ত করে। তারপর তাকে সঙ্গে নিয়ে তৃতীয় সহযোগীকে ধরার জন্য গোদাগাড়ীর ফরাদপুরে যায় পুলিশ।

পুলিশের তথ্য হচ্ছে, তাদের উপস্থিতি টের পেয়ে জামালের সহযোগীরা গুলি ও ককটেল হামলা করে। এসময় ‘বন্দুকযুদ্ধে’ জামাল উদ্দিন আহত হয়। পরে রাজশাহী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নেওয়া হলে কর্তব্যরত চিকিৎসক তাকে মৃত ঘোষণা করেন।

মন্তব্য করুন

নীচের ফর্মে আপনার মন্তব্য যোগ করে টেক্সট লিখুন। একজন মডারেটর মন্তব্য সমূহ এপ্রুভ করে থাকেন এবং সঠিক সংবাদর নীতিমালা অনুসারে এডিট করে থাকেন। সঙ্গে সঙ্গে মন্তব্য প্রকাশ হয় না, প্রকাশিত কোনো মতামতের জন্য সঠিক সংবাদ দায়ী নয়। অন্যের মতামতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল হোন এবং বিষয় বস্তুর প্রতি আবদ্ধ থাকুন।