মিরপুরে পুলিশের অভিযানে জেএমবি’র গুরুত্বপূর্ণ জঙ্গি নিহত,আহত ৩ পুলিশ

ঢাকা থেকে শাহরিয়ার শরীফ
2016.09.02
20160902-JMB-Militant-Killed1000.jpg রাজধানীর রূপনগর আবাসিক এলাকার ৩৩ নম্বর সড়কের একটি বাড়িতে পুলিশের অভিযানে ‘মেজর মুরাদ’ নিহত হয়। সেপ্টেম্বর ২,২০১৬।
ফোকাস বাংলা

এবার পুলিশের অভিযানে ঢাকায় জঙ্গি সন্দেহে আরেকজন নিহত হয়েছে, যাকে নিষিদ্ধ সংগঠন জামাআতুল মুজাহিদীন বাংলাদেশ—জেএমবির শীর্ষ নেতা তামিম চৌধুরীর ‘সেকেন্ড ইন কমান্ড’ বলে দাবি করা হচ্ছে। নিহতের নাম জাহাঙ্গীর আলম মুরাদ ওরফে মেজর মুরাদ (৪০), যদিও সে সেনাবাহিনীর কেউ নয়।

গতকাল শুক্রবার রাতে এ ঘটনায় আহত হয়েছেন রূপনগর থানার ওসি সৈয়দ শহীদ আলম, পরিদর্শক (তদন্ত) শাহীন ফকির এবং পুলিশের উপ পরিদর্শক (এসআই) মো. মোমেনুর রহমান।

এদিকে র‍্যাবের মহাপরিচালক বেনজীর আহমেদ গতকাল সাংবাদিকদের জানিয়েছেন, আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর নানামুখি উদ্যোগ ও অভিযানে জঙ্গিদের শক্তিক্ষয় হচ্ছে।

“জঙ্গিবাদ নির্মূল করার প্রশ্নে কোনো সহানুভূতির জায়গা নেই। বর্তমান সরকার জঙ্গিবাদের বিরুদ্ধে যে ‘জিরো টলারেন্স’নীতি নিয়েছেন, সেটাকে সবার অনুসরণ করতে হবে,” বেনারকে জানান বেসামরিক বিমান পরিবহন ও পর্যটনমন্ত্রী রাশেদ খান মেনন। তিনি বলেন, 'জঙ্গিবাদ মোকাবিলার ক্ষেত্রে এই দরদ দেখিয়ে লাভ আছে বলে আমি মনে করি না।’

শুক্রবার রাতের অভিযানে নিহত ব্যক্তি জেএমবি’র সামরিক প্রশিক্ষক। সংগঠনের মধ্যে সে ‘মেজর মুরাদ’ নামে পরিচিত ছিল।

শুক্রবার রাত সাড়ে ৯টার পর ঢাকার মিরপুরের রূপনগর আবাসিক এলাকার ৩৩ নম্বর সড়কের ওই বাড়িতে অভিযান চালানো হয়। গুলশানের ক্যাফেতে হামলার ‘হোতা’ তামিম চৌধুরী গত ২৭ অগাস্ট নারায়ণগঞ্জে পুলিশি অভিযানে নিহত হয়। এরপর তার ডানহাত মুরাদ রূপনগরের এই বাসায় অবস্থান নিয়েছিল বলে পুলিশের দাবি।

“তালা খুলে ওই বাসায় ঢুকতে গেলে সে পুলিশকে ধারালো অস্ত্র দিয়ে কোপ দেয়। এক পর্যায়ে পালাতে গেলে পুলিশের গুলিতে নিহত হয়,” বেনারকে জানান পুলিশের কাউন্টার টেররিজম ইউনিটের প্রধান মনিরুল ইসলাম।

আহত তিন পুলিশ সদস্যকে প্রথমে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নেওয়া হয়। পরে রাত সাড়ে ১০টার দিকে শহীদ ও শাহীনকে সেখান থেকে একটি বেসরকারি হাসপাতালে নেওয়া হয়।

বোমার প্রস্তুতকারী শনাক্ত

রাজধানীর গুলশানের হলি আর্টিজান বেকারিতে জঙ্গি হামলায় ব্যবহৃত গ্রেনেডের আদলে তৈরি বোমার প্রস্তুতকারীকে শনাক্ত করার কথা জানিয়েছে পুলিশ। তার নাম সোহেল মাহফুজ।

গতকাল শুক্রবার ঢাকা মহানগর পুলিশের (ডিএমপি) মিডিয়া সেন্টারে অনুষ্ঠিত সংবাদ সম্মেলন শেষে সাংবাদিকদের সঙ্গে আলাপকালে ডিএমপির কাউন্টার টেররিজম অ্যান্ড ট্রান্সন্যাশনাল ক্রাইম ইউনিটের প্রধান মনিরুল ইসলাম বলেন, পুরোনো জেএমবি থেকে নতুন জেএমবিতে এসেছে এ রকম এক ব্যক্তি হলেন সোহেল মাহফুজ।

হলি আর্টিজানে জঙ্গি হামলার সঙ্গেও মাহফুজ জড়িত ছিল। পুলিশ তাকে গ্রেপ্তারের চেষ্টা চালাচ্ছে।

২০১০ সালে জেএমবির আমির মাওলানা সাইদুর রহমান গ্রেপ্তার হওয়ার পর সোহেল মাহফুজের নাম আলোচনায় আসে। আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর পক্ষ থেকে তখন জানানো হয়েছিল, জেএমবির আমিরের দায়িত্বে রয়েছে সোহেল। তার গ্রামের বাড়ি কুষ্টিয়ায়।

বোমা তৈরি করতে গিয়ে তার বাঁ হাত বিচ্ছিন্ন হয়ে যায় বলেও আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর কাছে তথ্য রয়েছে। এ জন্য তাকে ‘পঙ্গু সোহেল’ নামেও ডাকা হয়।

২০১০ সালের পর সোহেলের নাম আর আলোচনায় আসেনি। এতোদিন সে ভারতে পালিয়ে ছিল। গুলশান হামলার সঙ্গে সোহেলের জড়িত থাকার কথা গতকাল জানাল পুলিশ।

গত ১ জুলাই হলি আর্টিজান বেকারিতে হত্যাযজ্ঞ চালায় জঙ্গিরা। পরদিন সকালে সেনা নেতৃত্বাধীন সমন্বিত অভিযান শেষে ঘটনাস্থল থেকে ১৭ বিদেশিসহ ২০ জনের লাশ উদ্ধার করা হয়। অভিযানে নিহত হয় পাঁচ জঙ্গিসহ ছয়জন।

এর আগে ১ জুলাই রাত সাড়ে ১০টার দিকে প্রথম দফা অভিযান চালাতে গিয়ে নিহত হন পুলিশের দুই কর্মকর্তা, আহত হন অন্তত ৪০ জন। পরে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা যান সন্দেহভাজন জঙ্গি হিসেবে আটক হলি আর্টিজানের এক কর্মচারী।

সংবাদ প্রকাশে সতর্ক থাকার আহ্বান

জঙ্গি গ্রেপ্তারে সফলতার তথ্য তুলে ধরে র‍্যাব প্রধান বেনজীর আহমেদ জঙ্গিবিষয়ক সংবাদ প্রকাশে ‘সতর্ক’ থাকার আহ্বান জানিয়েছেন। গতকাল শুক্রবার রাজধানীর কমলাপুর রেলস্টেশন পরিদর্শনে গিয়ে সাংবাদিকদের সঙ্গে আলাপকালে তিনি এই আহ্বান জানান।

বেনজীর বলেন, আইনশৃঙ্খলা বাহিনী গুলশানের ঘটনায় এ পর্যন্ত ২৬ জন জঙ্গিকে গ্রেপ্তার করেছে। ফলে জঙ্গিদের শক্তিক্ষয় হয়েছে।

জঙ্গিরা ‘চাপে আছে’ মন্তব্য করে র‍্যাব মহাপরিচালক বলেন, “জেএমবি, আনসারউল্লাহ বাংলা টিম এবং হিযবুত তাহরীর কতটুকু চাপে আছে আমরা তা মূল্যায়ন করার চেষ্টা করছি।”

“এই তিনটা সংগঠনের কার্যক্রমের ওপর আমাদের নজরদারি আছে, সময়সুযোগ মতো তাদের গ্রেপ্তার করে আইনের আওতায় আনা হবে।”

পর্যাপ্ত যাচাই-বাছাইয়ের পর জঙ্গিবিষয়ক সংবাদ প্রকাশের অনুরোধ জানিয়ে বেনজীর আহমেদ বলেন, জাতির আগ্রহের কেন্দ্রবিন্দু এখন জঙ্গিরা। তাদের বিষয়ে তথ্য পাওয়ার পরই তা ছেপে দেওয়া ঠিক হবে না।

 



মন্তব্য করুন

নীচের ফর্মে আপনার মন্তব্য যোগ করে টেক্সট লিখুন। একজন মডারেটর মন্তব্য সমূহ এপ্রুভ করে থাকেন এবং সঠিক সংবাদর নীতিমালা অনুসারে এডিট করে থাকেন। সঙ্গে সঙ্গে মন্তব্য প্রকাশ হয় না, প্রকাশিত কোনো মতামতের জন্য সঠিক সংবাদ দায়ী নয়। অন্যের মতামতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল হোন এবং বিষয় বস্তুর প্রতি আবদ্ধ থাকুন।