বাংলাদেশের জঙ্গি ফারুককে নিয়ে বিপাকে ভারতের পুলিশ ও গোয়েন্দারা
2016.10.13

পশ্চিমবঙ্গের কলকাতায় আটক জামায়াতুল মুজাহিদিন অব বাংলাদেশ—জেএমবির পশ্চিমবঙ্গ শাখার প্রধান আনোয়ার হোসেন ফারুককে ভারতের জাতীয় তদন্ত সংস্থা (এনআইএ) হেফাজতে নিতে চায়। টাইমস অব ইন্ডিয়ার এক প্রতিবেদনে এ কথা বলা হয়েছে।
ওই খবরে বলা হয়, বাংলাদেশের ত্রিশালে পুলিশের ওপর হামলার পর ফারুক শাহাদত-ই-আল হিকমার সাহায্যে মুর্শিদাবাদের সীমান্ত পাড়ি দিয়ে বীরভূমের নানুর এলাকায় যায়। সেখানে সে ‘এনাম’ নামে বসবাস করছিল।
কলকাতা পুলিশের একটি স্পেশাল টাস্কফোর্স গত ২৪ ও ২৫ সেপ্টেম্বর ভারতের বিভিন্ন স্থান থেকে ফারুকসহ ছয়জনকে গ্রেপ্তার করে। এই ফারুককে ধরার জন্য এর আগে বাংলাদেশ পুলিশ ৩০ লাখ টাকা পুরস্কার ঘোষণা করেছিল।
এসটিএফের হাতে ফারুক ছাড়া গ্রেপ্তারকৃতদের মধ্যে রয়েছে; ইউসুফ গাজি, জহিদুল ইসলাম, রুবেল মিয়াঁ, শহিদুল ইসলাম ও আবদুল কালাম। এদের মধ্যে জহিদুল ও রুবেল বাংলাদেশি।
বাংলাদেশ পুলিশের একটি সূত্র জানায়, এই ফারুকের পরিকল্পনা ও নেতৃত্বে ২০১৪ সালের ২৩ ফেব্রুয়ারি ময়মনসিংহের ত্রিশালে প্রিজন ভ্যান থেকে তিন জঙ্গি; জেএমবির শুরা সদস্য রাকিবুল হাসান ও সালাউদ্দিন সালেহীন ওরফে সানি (৩৮) এবং বোমা বিশেষজ্ঞ মিজানকে (৩৫) ছিনিয়ে নেয়।
জঙ্গি ফারুক ওরফে জামাই ফারুকের এলোপাতাড়ি গুলি ও বোমা হামলায় ওই ঘটনায় এক পুলিশ নিহত ও তিন পুলিশ গুরুতর আহত হন। জেএমবি নেতা ফারুক ওই হামলার পরিকল্পনাকারী ছিল বলে জানান বাংলাদেশের স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল।
স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী গত ২৭ সেপ্টেম্বর সচিবালয়ে নিজ কার্যালয়ে সাংবাদিকদের বলেন, “যদি এই ফারুকই সেই ফারুক হয় তাহলে তাকে দেশে ফিরিয়ে আনা কঠিন হবে না। কারণ ভারতের সঙ্গে আমাদের বন্দী বিনিময় চুক্তি আছে।”
তবে ফারুককে দেশে ফিরিয়ে আনা হবে, না বাংলাদেশ থেকে পুলিশ ভারতে গিয়ে ফারুককে জিজ্ঞাসাবাদ করবে—তা নিয়ে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত হয়নি।
গতকাল বৃহস্পতিবার আনন্দবাজারের খবরে বলা হয়েছে, ফারুকসহ ওই তিন বাংলাদেশির সঙ্গে কথা বলতে বাংলাদেশ থেকে পুলিশ ও গোয়েন্দাদের টিম শিগগিরই কলকাতায় যাবে।
এ প্রসঙ্গে জানতে চাইলে বাংলাদেশ পুলিশের সহকারি মহাপরিদর্শক মোহাম্মদ মনিরুজ্জামান বেনারকে বলেন, “সেই সম্ভাবনা আছে। তবে দিনক্ষণ চূড়ান্ত হয়নি।”
তিনি জানান, ফারুককে অনেকদিন ধরে খোঁজা হচ্ছিল। এক পর্যায়ে জানা যায় যে, সে ভারতে পালিয়ে গেছে।
এদিকে গোয়েন্দাদের বরাত দিয়ে বৃহস্পতিবার আনন্দবাজার জানিয়েছে, “বাংলাদেশের যুবকটি ছিল পশ্চিমবঙ্গে জেএমবির (জামায়াতুল মুজাহিদিন বাংলাদেশ) মাথা। অথচ দেখা যাচ্ছে, খাগড়াগড় বিস্ফোরণ মামলার অভিযুক্ত-তালিকায় তার নামই নেই! এ দিকে দু’বছর আগে বর্ধমানের উপকণ্ঠে ওই বিস্ফোরণ যে জেহাদি জঙ্গি সংগঠন জেএমবির’ই ষড়যন্ত্রের ফসল, সেটা মোটামুটি প্রতিষ্ঠিত।”
ওই প্রতিবেদনে বলা হয়, পশ্চিমবঙ্গ তথা ভারতে জেএমবি’র বিরুদ্ধে এ পর্যন্ত রুজু হওয়া মামলা বলতে এক খাগড়াগড়ই। আর তাতে ফারুকের নাম না-থাকায় বিস্তর সমস্যায় পড়েছে এনআইএ। সংস্থাটি খাগড়াগড়-মামলার তদন্ত করছে।
এ প্রসঙ্গে আনন্দবাজার প্রশ্ন তুলেছে, দু’বছর তদন্ত চালিয়েও এনআইএ ফারুকের নাম জানতে পারল না কেন? খাগড়াগড় মামলা যে ফারুক ছাড়া অসম্পূর্ণ থেকে যাবে, এনআইএ-কর্তারা তা স্বীকার করছেন। এ নিয়ে এক তদন্তকারীর ব্যাখ্যা, ‘‘কোনও নথিতে ফারুকের নাম মেলেনি। ধৃতদেরও কারও মুখেও শোনা যায়নি। তাই মামলায় সে অভিযুক্ত নয়।’’
এদিকে টাইমস অব ইন্ডিয়ার প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ফারুক বাংলাদেশে নিষিদ্ধ একটি গোষ্ঠীর হয়ে দক্ষিণ এশিয়ার বিভিন্ন জঙ্গি সংগঠনের জন্য সদস্য সংগ্রহ করে তাদের প্রশিক্ষণ দিচ্ছে, এমন ধারণা পাওয়ার পর এনআইএ তাকে হেফাজতে নেওয়ার চেষ্টা করছে।
এনআইএর এক কর্মকর্তার বরাত দিয়ে টাইমস অব ইন্ডিয়া আরও বলছে, ভারত ও বাংলাদেশের বেশিরভাগ জঙ্গিকেই দলে ভিড়িয়ে প্রশিক্ষণ দিয়েছে শাহাদাত-ই-আল হিকমা। বাংলাদেশের স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় এর আগে শাহাদাত-ই-আল হিকমা নামে ওই সংগঠনটির কার্যক্রম নিষিদ্ধ করে।
বনগাঁ থেকে গ্রেপ্তারের পর ফারুক ও তার সহযোগী ইউসুফ কলকাতা পুলিশের জিজ্ঞাসাবাদে জানান, শাহাদাত-ই-আল হিকমা জঙ্গি দলের নতুন সদস্যদের কেবল অস্ত্র প্রশিক্ষণই দেয় না; একইসঙ্গে অর্থ ও নানা সাহায্য করে থাকে।
২০১৪ সালে বর্ধমানের খাগড়াগড়ে বিস্ফোরণের তদন্তে সংগঠনটির অস্তিত্ব সম্বন্ধে ধারণা পাওয়া গেলেও গত মাসে ছয় জঙ্গিকে গ্রেপ্তারের আগে এর কার্যক্রম সম্পর্কে জানতে পারেনি তদন্ত সংস্থা। ওই তদন্তে পশ্চিমবঙ্গ ও আসামে জেএমবির বিস্তৃত নেটওয়ার্ক খুঁজে পায় তদন্ত সংস্থা।
এদিকে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের তথ্যের বরাত দিয়ে বাংলাদেশের অনলাইন সংবাদপত্র বিডিনিউজ২৪ডটকম বলেছে, দাউদ ইব্রাহিমের অর্থায়নে ২০০৩ সালের ফেব্রুয়ারি রাজশাহীতে কাউসার আহমেদ সিদ্দিকী শাহাদত-ই-আল হিকমা প্রতিষ্ঠা করেন। কয়েক মাস পর সংগঠনটিকে নিষিদ্ধ করে বাংলাদেশ সরকার।
খাগড়াগড়ে বিস্ফোরণের কয়েক মাস আগে ২০১৪ সালে জাকির খন্দকার নামে এক ব্যক্তির হাতে পুনর্গঠিত হয় জঙ্গি সংগঠনটির। ফারুক নিজেও চট্টগ্রামে শাহাদাত-ই-আল হিকমার প্রশিক্ষণ নেওয়ার কথা জিজ্ঞাসাবাদে স্বীকার করেছে বলে বিডিনিউজের ওই খবরে বলা হয়।