প্রধানমন্ত্রী পুত্রকে অপহরণ ষড়যন্ত্রের মামলায় সাংবাদিক শফিক রেহমানের জামিন
2016.08.31

আটক হওয়ার প্রায় সাড়ে চারমাস পর ‘শর্ত সাপেক্ষে’ আপিল বিভাগ থেকে জামিন পেয়েছেন প্রবীণ সাংবাদিক শফিক রেহমান। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ছেলে সজীব ওয়াজেদ জয়কে ‘অপহরণ ও হত্যার পরিকল্পনা’ মামলায় আটক করা হয় বিএনপি ঘনিষ্ঠ বলে পরিচিত এই সাংবাদিককে।
গতকাল বুধবার সর্বোচ্চ আদালত এ রায় দিলেও পুরো প্রক্রিয়া শেষ করে কারাগার থেকে মুক্তি পেতে তাঁর আরও কয়েকদিন লাগতে পারে বলে জানিয়েছেন আইনজীবীরা।
সর্বোচ্চ আদালত জানিয়েছে, পাসপোর্ট জমা দেওয়ার শর্তে তিন মাসের জন্য অথবা ওই মামলায় পুলিশ প্রতিবেদন হওয়া পর্যন্ত তিনি জামিনে থাকতে পারবেন।
এর আগে গত ৭ জুন জামিনের আবেদন করেন শফিক রেহমান। তবে হাইকোর্টে তা খারিজ হয়। পরে হাইকোর্টের আদেশের বিরুদ্ধে শফিক রেহমান লিভ টু আপিল করেন।
গতকাল ওই আপিলের শুনানি শেষে তাঁর জামিনের আদেশ দেন প্রধান বিচারপতি এস কে সিনহার নেতৃত্বাধীন পাঁচ বিচারকের বেঞ্চ।
আদালতে শফিক রেহমানের পক্ষে শুনানি করেন এ জে মোহাম্মদ আলী। রাষ্ট্রপক্ষে ছিলেন অ্যাটর্নি জেনারেল মাহবুবে আলম।
আদেশের বিষয়ে এ জে মোহাম্মদ আলী বেনারকে বলেন, “শফিক রেহমানকে তিন মাসের জামিন দেওয়া হয়েছে। শর্ত হিসেবে তাকে পাসপোর্ট জমা দিতে হবে।”
এদিকে শফিক রেহমানের অপর অ্যাডভোকেট আসাদুজ্জামান জানান, “আদালত পাসপোর্ট জমা দেওয়ার কথা বলেছেন। তবে ইতোমধ্যেই পাসপোর্টটি আইন শৃঙ্খলা বাহিনী জব্দ করেছে।”
জামিন হলেও মুক্তি পাওয়ার বিষয়ে অ্যাডভোকেট মোহাম্মদ আলী বেনারকে বলেন, “শফিক রেহমানের বিরুদ্ধে আর কোনো মামলা না থাকায় এখন তাঁর মুক্তিতে আর বাঁধা নেই। তবে আপিল বিভাগের রায়ের কপি নিয়ে পুরো প্রক্রিয়া শেষ হতে কয়েকদিন সময় লেগে যাবে।”
বাংলাদেশের অন্যতম প্রধান রাজনৈতিক দল বিএনপির সঙ্গে শফিক রেহমানের ঘনিষ্ঠতা রয়েছে। দলের কোন পদ-পদবীতে না থাকলেও, বিএনপি’র নীতিনির্ধারণী পর্যায়ে তাঁর বেশ প্রভাব রয়েছে।
যে কারণে গ্রেপ্তার
প্রধানমন্ত্রী পুত্র সজিব ওয়াজেদ জয়কে অপহরনের লক্ষ্যে তাঁর সম্পর্কে তথ্য যোগাড় করতে যুক্তরাষ্ট্রের এফবিআইয়ের এক এজেন্টকে ঘুষ দেওয়ার অভিযোগে গত বছর এক প্রবাসী বিএনপি নেতার ছেলেকে কারাদণ্ড দেয় মার্কিন আদালত। ওই ঘটনায় বাংলাদেশের পল্টন থানায় একটি মামলা দায়ের করা হয়।
ওই মামলার সঙ্গে সংশ্লিষ্টতার প্রমাণ পাওয়ায় চলতি বছর ১৬ এপ্রিল জাতীয় দৈনিক যায়যায়দিনের সাবেক সম্পাদক শফিক রেহমানকে তাঁর রাজধানীর ইস্কাটনের বাসা থেকে গ্রেপ্তার করে পুলিশ।
এরপর দুই দফায় ১০দিন রিমান্ডে নিয়ে তাঁকে জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়। তাঁর বাসায় তল্লাশি চালিয়ে প্রধানমন্ত্রীর উপদেষ্টা জয়ের বিষয়ে কিছু তথ্য ও গোপনীয় নথিপত্র পায় গোয়েন্দা পুলিশ।
তবে সে সময় এ বিষয়ে শফিক রেহমানের স্ত্রী তালেয়া রেহমান বেনারকে বলেছিলেন, “তিনি পেশায় একজন সাংবাদিক। এ বিষয়ে অনুসন্ধানী নিবন্ধ লিখতেই ওইসব তথ্য সংগ্রহ করেছিলেন বলে আমি জানি।”
এসময় রিমান্ডে নিয়ে তাঁর ওপর নির্যাতনের অভিযোগও তোলেন তালেয়া রহমান, যিনি বেসরকারি সংস্থা ডেমোক্রেসি ওয়াচের নির্বাহী পরিচালক।
যদিও সরকারের পক্ষ থেকে সে অভিযোগ প্রত্যাখান করা হয়।
নাম প্রকাশ না করার শর্তে সরকারের একজন মন্ত্রী বেনারকে বলেন, “আইনী প্রক্রিয়ায় শফিক রেহমান জামিন পেয়েছেন। জামিন পাওয়াটা যে কোনও নাগরিকের অধিকার। তাই এ বিষয়ে কোনও মন্তব্য না করাই শ্রেয়।”