প্রবীণ সাংবাদিক রিমান্ডে, প্রধানমন্ত্রীর পূত্রকে হত্যার চেষ্টা
2016.04.18

‘লাল গোলাপ’ খ্যাত প্রবীণ সাংবাদিক শফিক রেহমানকে গ্রেপ্তারের কারণ নিয়ে ধূম্রজাল সৃষ্টি হয়েছে।প্রধানমন্ত্রীর পুত্র এবং তাঁর উপদেষ্টা সজীব ওয়াজেদ জয়কে অপহরণ করে হত্যার ষড়যন্ত্রের অভিযোগে পুলিশ গত বছরের আগস্টে পল্টন থানায় একটি সাধারণ ডায়েরি (জিডি) করে, যা পরে মামলায় রূপান্তরিত হয়।
কিন্তু যুক্তরাষ্ট্রের ডিপার্টমেন্ট অব জাস্টিসের বক্তব্য অনুযায়ী, বাংলাদেশের একজন প্রখ্যাত রাজনীতিবিদের সম্পর্কে গোপনীয় তথ্য সংগ্রহে ঘুষ লেনদেনের অভিযোগে ফেডারেল ব্যুরো অব ইন্টেলিজেন্সের (এফবিআই) একজন সাবেক এজেন্টকে পাঁচ বছর জেল দেওয়া হয়েছে। গত বছরের ১৪ সেপ্টেম্বর ডিপার্টমেন্ট অব জাস্টিসের পক্ষ থেকে প্রকাশ করা দলিলে হত্যা বা অপহরণের কোনো তথ্য ছিল না।
অথচ যুক্তরাষ্ট্রের ওই ঘুষ লেনদেনের ঘটনায় হত্যা ও অপহরণের প্রসঙ্গ টেনে দায়ের হওয়া মামলায় শফিক রেহমানকে গ্রেপ্তার দেখানো হয়েছে।গ্রেপ্তারের পর তাঁকে পাঁচ দিনের রিমান্ডে নেওয়া হয়।জনপ্রিয় এই সাংবাদিক দীর্ঘদিন ধরে একটি বেসরকারি টেলিভিশনে ‘লাল গোলাপ’ শিরোনামে একটি অনুষ্ঠান উপস্থাপনা করেন।
গত শনিবার সকালে শফিক রেহমানকে তাঁর ইস্কাটনের বাসা থেকে আটক করে মহানগর গোয়েন্দা পুলিশ (ডিবি)।মামলার ভিত্তি গত বছরের ৯ মার্চ জয়ের ফেসবুকে দেওয়া স্ট্যাটাস।এতে তিনি বলেন যে, বিএনপি তাঁকে যুক্তরাষ্ট্রে অপহরণের পর হত্যার পরিকল্পনা করেছিল।
গত বছরের ৩১ মে পুলিশের সাধারণ ডায়েরিতে অভিযোগ করা হয়, সন্দেহ করা হচ্ছে যে, যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্য, বাংলাদেশসহ বিশ্বের যে কোনো দেশে বিএনপির উচ্চ পর্যায়ের নেতৃত্ব সজীব ওয়াজেদ জয়ের জীবননাশসহ যে কোনো ধরনের ক্ষতির ষড়যন্ত্রে লিপ্ত আছে।
যুক্তরাষ্ট্রের ওই মামলার ইতিবৃত্ত
যুক্তরাষ্ট্রের ডিপার্টমেন্ট অব জাস্টিসের দলিলে বলা হয়, সেখানে বাংলাদেশের একজন গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তির সম্পর্কে তথ্য ও অভ্যন্তরীণ আইন–শৃঙ্খলা সংক্রান্ত দলিল সংগ্রহের জন্য ঘুষের ঘটনায় এফবিআইয়ের একজন সাবেক প্রতিনিধিসহ তিনজনকে অভিযুক্ত করা হয়েছে। এঁরা হলেন এফবিআইয়ের স্পেশাল এজেন্ট রবার্ট লাষ্টিক, তাঁর বন্ধু জোহান্স থ্যালার এবং জোহান্স থ্যালারের পরিচিত রিজভী আহমেদ সিজার।
রিজভীর বাবা মোহাম্মদ উল্লাহ বাংলাদেশে বিরোধী দল বিএনপি সমর্থিত সাংস্কৃতিক সংগঠন জাতীয়তাবাদি সাংস্কৃতিক সংগঠনের (জিসাস) সহ–সভাপতি। রিজভীকে ৪২ মাস এবং থ্যালারকে ৩০ মাস সাজা দেওয়া হয়েছে। লষ্টিক অন্য মামলায় গ্রেপ্তার হয়ে আটক আছে।
বিএনপির ধারণা অন্য কারণে এই গ্রেপ্তার
নেতাদের কেউ কেউ মনে করছেন, কূটনৈতিক পর্যায়ে তাঁর যোগাযোগ বিশেষ করে যুক্তরাজ্য ও যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে সম্পর্ক তাঁকে গ্রেপ্তারের কারণ হিসেবে কাজ করেছে। কেউবা মনে করছেন, বিএনপিপন্থী বুদ্ধিজীবীদের চাপে রাখতে শফিক রেহমানকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে।
প্রধানমন্ত্রীর ছেলে সজীব ওয়াজেদকে অপহরণ ও হত্যার পরিকল্পনায় নাম আসায় শফিক রেহমান গ্রেপ্তার হয়েছেন, এটা আওয়ামী লীগের নেতা-কর্মীরা বিশ্বাস করেন। আবার তাঁর মতো প্রবীণ সাংবাদিক এমন কাজ করতে পারেন কিনা, তা নিয়ে সন্দেহ-সংশয়ও আছে অনেকের মধ্যে।
তবে সরকারের দুজন মন্ত্রী আনিসুল হক এবং হাসানুল হক ইনু গত রোববার পৃথক অনুষ্ঠানে বলেছেন, সুনির্দিষ্ট মামলায় এবং পুলিশের প্রাথমিক তদন্তের ভিত্তিতে শফিক রেহমানকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। নির্দোষ প্রমাণ হলে তিনি ছাড়া পাবেন।
“যারাই সরকারের বিরোধী মত পোষণ করে, সরকার কোনো না কোনোভাবে তাদের গ্রেপ্তার করছে,” সাংবাদিকদের জানিয়েছেন বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর।
জয়–ইমরানের বাকযুদ্ধ
শফিক রেহমানকে গ্রেপ্তারের পর গণজাগরণ মঞ্চের মুখপত্র ইমরান এইচ সরকার ফেসবুকে স্ট্যাটাস দেন যে, তাঁর মতো প্রবীণ সাংবাদিককে এভাবে গ্রেপ্তার করা ঠিক হয়নি। পাল্টা স্ট্যাটাস দিয়ে ফেইসবুকের বন্ধু তালিকা থেকে ইমরানকে বাদ দিতে ভক্ত-অনুসারীদের প্রতি সজীব ওয়াজেদ জয় আহ্বান জানান। ‘বিএনপির কাছ থেকে টাকা নিয়ে’ ইমরান ওই সাংবাদিকের পক্ষ নিয়েছেন কি না, তা নিয়েও সন্দেহ প্রকাশ করেন জয় ।
জয়ের এই আহবানকে নিজের মত প্রকাশের স্বাধীনতায় ‘হুমকি’ হিসাবে দেখছেন গণজাগরণ মঞ্চের মুখপাত্র ইমরান এইচ সরকার।
জয়ের ফেইসবুক স্ট্যাটাসের জবাবে সোমবার তিনি লিখেছেন, “মত প্রকাশের স্বাধীনতা আর ভিন্নমতের প্রতি শ্রদ্ধার কথা বলতে গিয়ে সম্ভবত আমার নিজের মত প্রকাশের স্বাধীনতাই আজ হুমকির মুখে । কি ভয়াবহ ব্যাপার!”
ইমরান এসব অভিযোগের জবাবে বলেন, “আমি শফিক রেহমানের রাজনৈতিক আদর্শের সাথে একমত নই । এমনকি আমি স্ট্যাটাসের কোথাও তার মুক্তির কথাও বলিনি। তাতেই যেভাবে আক্রমণ হচ্ছে, খুব সহজেই অনুমান করা যায় ভিন্নমতের প্রতি সমাজে কতটুকু শ্রদ্ধা বিদ্যমান।”
প্রধানমন্ত্রী ক্ষুব্ধ
ছেলে সজীব ওয়াজেদ জয়কে অপহরণ চক্রান্তের মামলায় সাংবাদিক শফিক রেহমানকে গ্রেপ্তারের পর নানামুখী সমালোচনা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ।
সোমবার ঢাকায় এক আলোচনা সভায় শেখ হাসিনা বলেন, “তারা একজন সাংবাদিক দেখল, কিন্তু তার অপকর্মটা দেখল না।” শফিক রেহমানকে পেশাগত কাজের কারণে গ্রেপ্তার করা হয়নি বলে জানান প্রধানমন্ত্রী ।