রামপাল বিদ্যুৎকেন্দ্রর যৌক্তিকতা নিয়ে প্রধানমন্ত্রীর সংবাদ সম্মেলন শনিবার
2016.08.26

ভারতের সহযোগিতায় বাগেরহাটের রামপালে কয়লাভিত্তিক বিদ্যুৎকেন্দ্র নির্মাণ নিয়ে পক্ষে–বিপক্ষে চলমান বিতর্কের মধ্যে শনিবার সংবাদ সম্মেলন ডেকেছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। পরিবেশবাদী ও বামপন্থী বিভিন্ন সংগঠন শুরু থেকেই সুন্দরবনের কাছে এই বিদ্যুৎকেন্দ্র স্থাপনের বিরোধিতা করে আসছে।
সর্বশেষ গত বুধবার বিএনপির চেয়ারপার্সন খালেদা জিয়া সংবাদ সম্মেলন করে এ প্রকল্পকে ‘দেশবিরোধী’ বলে আখ্যা দিয়ে সুন্দরবনের স্বার্থে প্রকল্পটি বন্ধ করার দাবি জানান।
এর দুদিন পর শনিবার প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এ বিষয়ে সংবাদ সম্মেলন ডেকেছেন। প্রধানমন্ত্রীর সরকারি বাসভবন গণভবনে শনিবার বিকেল ৪টায় এই সংবাদ সম্মেলন অনুষ্ঠিত হবে।
“রামপাল বিদ্যুৎকেন্দ্র নিয়ে খালেদা জিয়া যেসব তথ্য-উপাত্ত দিয়েছেন, প্রধানমন্ত্রী তা খণ্ডাতে পারেন এবং এই বিদ্যুৎকেন্দ্র নির্মাণের যৌক্তিকতা তুলে ধরবেন,” বেনারকে জানান প্রধানমন্ত্রীর উপ–প্রেসসচিব আসিফ কবীর।
ভারতের সঙ্গে যৌথ উদ্যোগে রামপালে যে তাপ বিদ্যুৎকেন্দ্র হচ্ছে, তা বিশ্ব ঐতিহ্য সুন্দরবনের পরিবেশ ও প্রতিবেশ হুমকির মুখে ঠেলে দেবে বলে আশঙ্কা পরিবেশবাদীদের একাংশ ও বাম দলগুলোর। ওই প্রকল্প বাতিলের দাবিতে তাঁরা আন্দোলনও চালিয়ে আসছেন।
গত বুধবার এক সংবাদ সম্মেলনে বিএনপি চেয়ারপার্সন খালেদা জিয়া রামপাল প্রকল্পটিকে ‘দেশবিরোধী’ আখ্যা দিয়ে সুন্দরবনের কাছ থেকে তা অন্যত্র সরিয়ে নিতে সরকারের প্রতি আহ্বান জানান।
রামপাল বিদ্যুৎকেন্দ্র বাতিলের দাবিতে বাম দলগুলোর সমর্থনে আন্দোলনরত তেল-গ্যাস রক্ষা কমিটির ‘চল চল ঢাকা চল’ ও ‘মহাসমাবেশ’ কর্মসূচিতে এরই মধ্যে সমর্থন জানিয়েছে বিএনপি।
“সুন্দরবন রক্ষায় রামপাল প্রকল্পবিরোধী আন্দোলন এগিয়ে নিতে হবে।এখান থেকে পেছনে ফেরার সুযোগ নেই,” বেনারকে জানান তেল-গ্যাস-খনিজ সম্পদ ও বিদ্যুৎ-বন্দর রক্ষা জাতীয় কমিটির আহ্বায়ক মো. শহীদুল্লাহ।
তিনি বলেন, “ন্যায্য আন্দোলন কখনো বিফল হয় না। ফুলবাড়ীতে সেটা প্রমাণিত হয়েছে। সেখান থেকে শিক্ষা নিয়ে আমরা পরিবেশ ধ্বংসকারী বিদ্যুৎকেন্দ্র স্থাপনের অপচেষ্টা রুখতে এগিয়ে যাব।”
উল্লেখ্য,২০০৬ সালের ২৬ আগস্ট দিনাজপুরের ফুলবাড়ীতে উন্মুক্ত পদ্ধতিতে কয়লা খনির বিরুদ্ধে স্থানীয় জনগণের করা আন্দোলনে পুলিশ-বিডিআরের গুলিতে তিন যুবক নিহত হন। পরিবেশ রক্ষার আন্দোলনের প্রতীক হিসেবে ফুলবাড়ীর কথা অনেকেই উল্লেখ করে থাকেন।
“ফুলবাড়ী আন্দোলনের শিক্ষা কাজে লাগানো গেলে সুন্দরবন আন্দোলনও সফল হবে,” বেনারকে জানান ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক এম এম আকাশ।
তিনি বলেন, এখন পর্যন্ত সুন্দরবন আন্দোলনের ঘাটতি হচ্ছে, স্থানীয় জনগণকে উদ্বুদ্ধ করা যায়নি।কিন্তু স্থানীয় জনগণ ফুলবাড়ী আন্দোলনে ব্যাপকভাবে অংশ নিয়েছিলেন।
বিদ্যুৎ ও জ্বালানি মন্ত্রণালয়ের অধীনে ভারতের সঙ্গে যৌথ উদ্যোগে রামপালে ১৩২০ মেগাওয়াট ক্ষমতার কয়লাভিত্তিক বিদ্যুৎ কেন্দ্র নির্মাণ করতে চলেছে সরকার।
তবে বিদ্যুৎকেন্দ্র নিয়ে শঙ্কার জবাবে সরকার বলছে, সর্বাধুনিক প্রযুক্তি ব্যাবহার করে দূষণের মাত্রা ন্যূনতম রেখেই এই তাপ বিদ্যুৎ কেন্দ্রটি নির্মাণ হতে যাচ্ছে, যা সুন্দরবনের প্রাকৃতিক পরিবেশ ক্ষতিগ্রস্ত করবে না।
‘মৈত্রী সুপার থার্মাল’ নামের এই বিদ্যুৎ কেন্দ্রটি সুন্দরবনের ইউনেসকো ঘোষিত হেরিটেজ অংশ থেকে ৬৯ কিলোমিটার এবং সুন্দরবনের প্রান্তসীমা থেকে মাত্র ১৪ কিলোমিটার দূরে অবস্থিত ।
বিদ্যুৎকেন্দ্রটি নির্মাণে ২০১১ সালের অক্টোবরে বাংলাদেশের বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ড এবং ভারতের ন্যাশনাল থার্মাল পাওয়ার কর্পোরেশন লিমিটেডের (এনটিপিসি) সমান অংশীদারিত্বে গঠিত বাংলাদেশ-ভারত ফ্রেন্ডশিপ পাওয়ার কোম্পানি লিমিটেড প্রকল্পটি ২০১৮ সালের মধ্যে বাস্তবায়নের কথা রয়েছে।
২০১৩ সালের সেপ্টেম্বরে সরকার প্রেসনোট দিয়ে এই বিদ্যুৎকেন্দ্রের বিষয়ে সরকারের অবস্থান তুলে ধরে। কিন্তু ধীরে ধীরে ওই আন্দোলন জোরদার হচ্ছে, সর্বশেষ চলমান আন্দোলনের প্রতি ‘বিএনপি’ সমর্থন দেওয়ায় সরকার কিছুটা চাপের মধ্যে পড়েছে বলে ধারণা করা হচ্ছে।
সরকারের ওই প্রেসনোটে তখন বলা হয়, বাগেরহাটের রামপালে কয়লাভিত্তিক বিদ্যুৎকেন্দ্র প্রকল্প নিয়ে কিছু ব্যক্তি ও সংগঠন জনমনে বিভ্রান্তি ছড়ানোর জন্য অপপ্রচার চালাচ্ছে। সরকার মনে করে, এটি স্থাপিত হলে সুন্দরবনের পরিবেশের ওপর কোনো প্রভাব পড়বে না।
প্রেসনোটে বলা হয়, বর্তমানে গ্যাসের স্বল্পতা ও গ্যাসের মজুত ক্রমান্বয়ে হ্রাস পাওয়ার ফলে বিদ্যুৎ উৎপাদনে বিকল্প জ্বালানির বিষয়টি বিবেচনা করতে হচ্ছে। উন্নত ও উন্নয়নশীল দেশে স্বল্প খরচে উৎপাদনে বিকল্প জ্বালানি হিসেবে কয়লাকেই প্রাধান্য দেওয়া হয়।
প্রেসনোটে আরও বলা হয়, প্রকল্পটি সুন্দরবন থেকে নিরাপদ দূরত্বে (১৪ কিলোমিটার) এবং ইউনেসকোর স্বীকৃত ন্যাশনাল হেরিটেজ সাইট থেকে ৭২ কিলোমিটার দূরে অবস্থিত। এই বিদ্যুৎকেন্দ্র অত্যাধুনিক প্রযুক্তিনির্ভর সুপার ক্রিটিক্যাল টেকনোলজি ও উন্নতমানের আমদানিনির্ভর কয়লা ব্যবহারের মাধ্যমে পরিচালিত হবে।
এতে কার্বন, সালফার, ফ্লাই অ্যাশ ও অন্যান্য বায়ুদূষণের পরিমাণ ন্যূনতম পর্যায়ে থাকবে। এটা পরিবেশের ওপর কোনোরূপ বিরূপ প্রভাব ফেলবে না।
উল্লেখ্য, পরিবেশবাদীদের সমালোচনা সত্ত্বেও ২০০ কোটি ডলার অর্থায়নে রামপাল কয়লা বিদ্যুৎ কেন্দ্র নির্মাণের চুক্তিতে আনুষ্ঠানিকভাবে সই করে বাংলাদেশ ও ভারত। এই কেন্দ্র নির্মাণে ৭০ শতাংশ ঋণ দেবে ভারতীয় এক্সিম ব্যাংক। বাকি টাকা দেবে বাংলাদেশ।