সাংসদকে নিয়ে মন্তব্য করায় স্কুলছাত্রকে দেওয়া সাজা বাতিল করেছে উচ্চ আদালত
2016.10.18

ভ্রাম্যমাণ আদালতের মাধ্যমে এক স্কুলছাত্রকে দেওয়া দুই বছরের সাজা বাতিল করে তাকে খালাস দিয়েছে বাংলাদেশের উচ্চ আদালত।
পাশাপাশি ভ্রাম্যমাণ আদালত পরিচালনাকারী ওই উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) এবং সখীপুর থানার ওসিকে প্রত্যাহারের নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।
এ বিষয়ে কিছুদিন আগে স্বতঃপ্রণোদিত হয়ে দেওয়া এক রুলের শুনানি শেষে মঙ্গলবার এই আদেশ দেন উচ্চ আদালতের একটি বেঞ্চ।
আইনের শাসন প্রতিষ্ঠায় এ রায় একটি মাইলফলক বলে মনে করছেন আইনজীবী ও মানবাধিকার কর্মীরা।
টাঙ্গাইল-৮ আসনের সংসদ সদস্য অনুপম শাজাহান জয়কে নিয়ে সামাজিক যোগাযোগের মাধ্যম ফেসবুকে স্ট্যাটাস দেওয়ার অভিযোগ এনে তথ্য প্রযুক্তি আইনে নবম শ্রেণিতে পড়ুয়া এক ছাত্রকে দুই বছর কারাদণ্ড দেয় সেখানকার ভ্রাম্যমাণ আদালত। এ বিষয়ে গত ২০ সেপ্টেম্বর গণমাধ্যমে প্রকাশিত প্রতিবেদন আদালতের নজরে আনেন সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী খুরশিদ আলম খান। সেদিনই ওই কিশোরকে জামিন দিয়ে ইউএনও এবং ওসিকে তলব করে আদালত।
মঙ্গলবার উচ্চ আদালত সখীপুরের উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা ও নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট মোহাম্মদ রফিকুল ইসলাম এবং সখীপুর থানার ওসি মোহাম্মদ মাকছুদুল আলমকে প্রত্যাহার করার প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিতে সরকারের সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষকে আদেশ দিয়েছেন।
এ ছাড়া আদালতে ওই ছাত্রের দেওয়া জবানবন্দির আলোকে বিচার বিভাগীয় তদন্ত করতে সংশ্লিষ্ট জেলার মুখ্য বিচারিক হাকিমকে নির্দেশনাও দিয়েছেন।
এর আগে উচ্চ আদালতে দেওয়া জবানবন্দিতে সাব্বির শিকদার নামে ওই কিশোর জানায়, ঘটনার রাতে তাকে ধরে থানায় ক্রসফায়ারের ভয় দেখিয়ে ফেসবুকে লেখার কথা স্বীকার করিয়ে নেন ওসি মাকছুদুল আলম। এক এক করে ইউএনও এবং ওই সংসদ সদস্যের কাছে নেওয়া হলে তারা তাকে (সাব্বির) মারধর করে। পরে তাকে দুই বছরের জেল দেওয়া হয়।
ওই সংসদ সদস্যকে নিয়ে ফেসবুকে সে কিছু লেখেনি বলেও আদালতকে জানায় সাব্বির।
রায়ের প্রতিক্রিয়ায় আইনজীবী খুরশীদ আলম খান সাংবাদিকদের বলেন, “আইনকানুন পর্যবেক্ষণ করে আদালত ওই কিশোরকে ভ্রাম্যমাণ আদালতের দেওয়া সাজা অবৈধ এবং আইনগত কর্তৃত্ব বহির্ভূত বলে রায় দিয়ে তা সাজা বাতিল করেছে।”
আইনজীবী খুরশীদ আলম জানান, “সখিপুরের সংশ্লিষ্ট ইউএনও ও ওসির বর্তমান কর্মস্থল থেকে প্রত্যাহার করে ঢাকা বিভাগের বাইরে যে কোনো একটা জায়গায় বদলি করে দিতে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়, জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয় এবং পুলিশ মহাপরিদর্শককে আদেশ দিয়েছেন আদালত।”
গণমাধ্যমের প্রতিবেদন অনুযায়ী, একটি ফেসবুক আইডি থেকে হুমকি দেওয়া হয়েছে অভিযোগ এনে গত ১৬ সেপ্টেম্বর রাতে স্থানীয় থানায় সাধারণ ডায়েরি করেন টাঙ্গাইল-৮ (বাসাইল-সখিপুর) আসনের সংসদ সদস্য অনুপম শাহজাহান জয়।
ওই অভিযোগের ভিত্তিতে গত ১৮ সেপ্টেম্বর সাব্বিরকে আটক করে ভ্রাম্যমাণ আদালতে হাজির করে পুলিশ। পরে নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট মোহাম্মদ রফিকুল ইসলাম তাকে দুই বছরের কারাদণ্ড দেন। এরপর দিনই সখিপুরের ওসি মাকছুদুল আলম কিশোর সাব্বিরকে টাঙ্গাইল জেলা কারাগারে পাঠিয়ে দেন।
এর আগে ২৭ সেপ্টেম্বর রুলের শুনানিতে ইউএনওর আইনজীবী নুরুল ইসলাম সুজন সংবাদপত্রের প্রতিবেদনে সঠিক ঘটনা আসেনি বলে দাবি করেন।
আর ওসির আইনজীবী শ ম রেজাউল করিম বলেন, “ওই শিক্ষার্থীর কাছে গাঁজা পাওয়ায় তাকে কারাদণ্ড দেওয়া হয়েছিল। তা ছাড়া সে কিশোরও নয়, কারণ পাসপোর্ট অনুযায়ী তার জন্ম ১৯৯৫ সালে।”
মঙ্গলবার উচ্চ আদালতের রায়ের পর সাব্বিরের বাবা বেনারকে বলেন, “আমার ছেলেকে অন্যায়ভাবে সাজা দেওয়া হয়েছিল। সেটা বাতিল হওয়ায় আমি অত্যন্ত খুশি। তবে আমি এখন আমার ছেলের নিরাপত্তা নিয়ে শঙ্কিত।”
সাব্বির যাতে নিজ এলাকায় নিরাপদে থাকতে পারে এবং পড়ালেখা চালিয়ে যেতে পারে সে বিষয়ে প্রশাসনের দৃষ্টি আকর্ষণ করেন তিনি।
উচ্চ আদালতের এ রায়ের মাধ্যমে আইনের শাসনের জয় হয়েছে জানিয়ে আইনজীবী ও মানবাধিকার কর্মীরা বলছেন, শিশু ও কিশোরদের নিরাপত্তায় এটি একটি মাইলফলক।
এ প্রসঙ্গে শিশু অধিকার নিয়ে কাজ করা চিলড্রেন চ্যারিটি বাংলাদেশ ফাউন্ডেশনের কর্ণধার ব্যারিস্টার আব্দুল হালিম বেনারকে বলেন, “উচ্চ আদালতের এ আদেশ ভবিষ্যতের জন্য মাইলফলক হয়ে থাকবে। শিশুদের সঙ্গে এমন অন্যায় আচরণ কমাতেও সহায়ক হবে এ আদেশ।”
“আইনের ব্যত্যয় ঘটিয়ে একজন কিশোরকে যে সাজা দেওয়া হয়েছিল উচ্চ আদালতে সে সাজা বাতিল করে ন্যায় বিচার প্রতিষ্ঠা করেছেন,” বেনারকে বলেন আইন ও সালিশ কেন্দ্রের ভারপ্রাপ্ত নির্বাহী পরিচালক নুর খান।
বিভাগীয় তদন্তের মাধ্যমে ওই ঘটনার সঙ্গে জড়িতরা উপযুক্ত শাস্তির মুখোমুখি হবে বলে আশা প্রকাশ করেন তিনি।