তনুর দ্বিতীয় দফায় ময়নাতদন্তকারী চিকিৎসককে হত্যার হুমকি
2016.05.24

একটি উড়ো চিঠিতে সপরিবারে হত্যার হুমকি পেয়েছেন সোহাগী জাহান তনুর দ্বিতীয় ময়নাতদন্তকারী বোর্ডের প্রধান ও কুমিল্লা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের ফরেনসিক মেডিসিন বিভাগের প্রধান ডা. কামদা প্রসাদ সাহা। ওই চিঠি পেয়ে তিনি জীবনহানির শঙ্কায় ভুগছেন বলে জানান।
মঙ্গলবার দুপুরে কুমিল্লা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে সাংবাদিকদের সঙ্গে কথা বলেন ওই চিকিৎসক। হুমকির বিষয়ে সিআইডি ও অতিরিক্ত পুলিশ সুপারকে টেলিফোনে জানান তিনি। তাঁদের পরামর্শে স্থানীয় থানায় সাধারণ ডায়েরি করেছেন তিনি।
গত ২০ মার্চ কুমিল্লা সেনানিবাস এলাকার ভেতরের একটি জঙ্গল থেকে উদ্ধার করা হয় কুমিল্লা ভিক্টোরিয়া কলেজের ছাত্রী ও নাট্যকর্মী সোহাগী জাহান তনুর লাশ। প্রায় ১৫ দিন পর তনুর প্রথম ময়নাতদন্ত প্রতিবেদন পাওয়া যায়।
এতে ধর্ষণ এমনকি হত্যার আলামত পাওয়া যায়নি বলে উল্লেখ করা হয়। কুমিল্লা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে ফরেনসিক বিভাগের প্রভাষক ডা. শারমিন সুলতানার নেতৃত্বে প্রথম ময়না তদন্ত সম্পন্ন হয়।
দাফনের নয় দিন পর গোয়েন্দা পুলিশের আবেদনের প্রেক্ষিতে গত ৩০ মার্চ কবর থেকে তনুর মরদেহ তোলা হয়। তিন সদস্যের মেডিক্যাল বোর্ড দ্বিতীয় দফায় ময়নাতদন্ত ও ডিএনএ আলামত সংগ্রহ করে। গত ১৬ মে সিআইডির গবেষণাগারে করা ডিএনএ প্রতিবেদনে তনুকে ধর্ষণের আলামত পাওয়া যায়।
চিঠিতে যা আছে
ডাকযোগে পাঠানো চিঠিটি মঙ্গলবার সকালে অফিসে গিয়ে হাতে পান বলে বেনারকে জানান তনুর দ্বিতীয় ময়নাতদন্তকারী বোর্ডের প্রধান ডা.কামদা প্রসাদ।
হাতে লেখা ওই দুই পৃষ্ঠার চিঠিতে ডা. সাহাকে বলা হয়েছে, “তনু হত্যা মামলা নিয়ে আপনি ধূম্রজাল সৃষ্টি করছেন। এটা আপনার জন্য ভয়াবহ হয়ে দাঁড়াচ্ছে।”
মামলাটিকে ‘সহজ’ উল্লেখ করে এটাকে ‘পেঁচিয়ে পেঁচিয়ে জটিল’ না করার পরামর্শও দেওয়া হয়।
চিঠিতে আরও বলা হয়েছে, তনুর মা যে বিবৃতি দিয়েছেন, সেই মোতাবেক কাজ করে যান। অর্থাৎ সার্জেন্ট জাহিদ ও সিপাহি জাহিদ তনুকে বাসা থেকে ডেকে নিয়ে যায়। তাদের গ্রেপ্তার না করে টালবাহানা করবেন না। সরকারের আজ্ঞাবহ হয়ে কাজ করবেন না।
এই মামলায় সেনাবাহিনীর সদস্যদের জড়ানো প্রসঙ্গে কামদা প্রসাদ সাহাকে বলা হয়, “আপনার পরিবার ও ছেলে মেয়ে ধ্বংস হয়ে যাক, আপনি কি তা চান? ব্যক্তি বিশেষের পক্ষ নিয়ে নিজের জীবনকে ধ্বংস কেন করছেন?”
সাধারণ ডায়েরি
“হঠাৎ এমন হুমকি পেয়ে শঙ্কা বোধ করছি। সেই শঙ্কা থেকেই সিআইডি ও অতিরিক্ত পুলিশ সুপারের পরামর্শে কুমিল্লা কোতোয়ালি মডেল থানায় অফিস সহকারীর মাধ্যমে জিডির (সাধারণ ডায়েরি) একটি আবেদন পাঠিয়েছি,” বেনারকে বলেন ডা. কামদা প্রসাদ সাহা।
“জীবন শঙ্কায় ভোগা একজন সাধারণ নাগরিকের মত আমিও পুলিশের কাছে এই বিষয়ে সাহায্য চাই। তবে সকল অবস্থাতেই সঠিকভাবেই আমি আমার দায়িত্ব (ময়না তদন্ত) পালন করে যাব,” জানান ওই চিকিৎসক।
এদিকে কোতোয়ালি থানার তদন্তকারী কর্মকর্তা শামুসজ্জামান জানিয়েছেন, ‘ডা. কামদা প্রসাদ সাহাকে হুমকি কিংবা তার করা সাধারণ ডায়েরি করার বিষয়ে আমি কিছু জানি না।’
ডিএনএ রিপোর্টের জন্য অপেক্ষা
মঙ্গলবার সকালেও দ্বিতীয় ময়নাতদন্তে গঠিত মেডিক্যাল বোর্ডের একটি সভা অনুষ্ঠিত হয়। দফায় দফায় বৈঠকের পরেও প্রতিবেদন দিতে দেরি হওয়া প্রসঙ্গে কামদা প্রসাদ সারা বলেন, “তনুর ডিএনএ রিপোর্ট আমাদের হাতে এসে পৌঁছায়নি। এ জন্যই ময়না তদন্ত প্রতিবেদন প্রস্তুতে দেরি হচ্ছে।”
বোর্ডের বৈঠকে সিদ্ধান্ত হয়েছে, কুমিল্লা মেডিক্যাল কলেজের অধ্যক্ষ ও আইনজীবীদের সঙ্গে পরামর্শ করে ডিএনএ রিপোর্ট পাওয়ার জন্য আদালতে আবেদন করা হবে। ওই রিপোর্ট পাওয়া সাপেক্ষে দ্বিতীয় ময়নাতদন্ত প্রতিবেদন দেওয়া হবে।
নিরাপত্তা দেওয়া উচিত
এদিকে হুমকি ময়না তদন্তকারী চিকিৎসক কামদা প্রসাদকে নিরাপত্তা দেওয়া রাষ্ট্রের দায়িত্ব বলে মনে করছেন মানবাধিকার কর্মীরা।
এ প্রসঙ্গে মানবাধিকার কর্মী অ্যাডভোকেট এলিনা খান বেনারকে বলেন, “এমন হুমকি পাওয়ার বিষয়টি আমার কাছে খুব বেশি গুরুত্বপূর্ণ মনে হচ্ছে না। তবে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর উচিত ওই চিকিৎসককে নিরাপত্তা দেওয়া।”
তিনি বলেন, এ মামলার জন্য তিনি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তি। ময়না তদন্তকারী হিসেবে তিনি তনু হত্যা মামলার সাক্ষী হবেন।”