ডিএনএ পরীক্ষায় প্রমান মিলল হত্যার আগে তনু ধর্ষণের শিকার

ঢাকা থেকে জেসমিন পাপড়ি
2016.05.17
2016-05-17-Tonu-Follow-up620.jpg তনু হত্যার বিচার দাবিতে কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারের সামনে মোমবাতি জ্বালিয়ে সম্মিলিত সাংস্কৃতিক জোটের কর্মসূচী। এপ্রিল ২৩, ২০১৬।
ফোকাস বাংলা

অবশেষে জানা গেলো খুন হওয়ার আগে ধর্ষিত হয়েছিলেন কুমিল্লার কলেজ ছাত্রী সোহাগী জাহান তনু। প্রথম ময়নাতদন্তে বিষয়টি ধামাচাপা দেওয়া হলেও সিআইডির সংগৃহীত আলামতের ডিএনএ পরীক্ষার মাধ্যমে এর প্রমাণ মিলেছে।

তনুর শরীরে পাওয়া ওই নমুনা সন্দেহভাজনদের সঙ্গে মিলিয়ে দেখতে তাদের ডিএনএ সংগ্রহের কাজও শুরু হয়েছে বলে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী সূত্র নিশ্চিত করেছে। বিষয়টি আসামি শনাক্ত করতে সহায়তা করবে বলে মনে করছে পুলিশ।

আইনজীবী ও মানবাধিকার কর্মীদের মতে, এর মাধ্যমে মামলাটি একটি পর্যায়ে পৌঁছালো। জানা গেল, কীভাবে খুন হয়েছিলেন তনু। এর ফলে ন্যায়বিচার পাওয়া সহজ হবে। একইসঙ্গে প্রথম ময়না তদন্তের সঙ্গে সংশ্লিষ্টদের বিচারও দাবি করেছেন তাঁরা।

শুরু থেকেই ধর্ষণের পর তনুকে হত্যা করা হয়েছে, এমন সন্দেহের কথা পরিবারের পক্ষ থেকে বলা হচ্ছিল। হত্যাকাণ্ডের ১৫ দিন পর দেওয়া প্রথম ময়নাতদন্তের প্রতিবেদনে এ ধরনের আলামত না পাওয়ার কথা জানায় কুমিল্লা মেডিকেল কলেজের চিকিৎসক দল। আদালতের আদেশে কবর থেকে লাশ তুলে দ্বিতীয়বার ময়নাতদন্ত করা হলেও সে প্রতিবেদন এখনও পাওয়া যায়নি বলে জানিয়েছে সিআইডি।

তনুর মা আনোয়ারা বেগম বেনারকে বলেন, “সেদিন ঘর থেকে হাসতে হাসতে বের হয়েছিল আমার মেয়ে। কিন্তু ওরা (খুনি) আমার সে হাস্যজ্জল মেয়েটাকে আর বাড়ি ফিরতে দেয়নি।আমি আর কিছুই চাই না।তনু হত্যার বিচার চাই।”

একাধিক পুরুষ ধর্ষণ করেছে

তনুকে একাধিক পুরুষ ধর্ষণ করেছে বলে ডিএনএ পরীক্ষায় প্রমান মিলেছে। সিআইডির বিশেষ সুপার আবদুল কাহহার আকন্দ সাংবাদিকদের বলেন, “সিআইডির ল্যাবে তনুর লাশ থেকে সংগ্রহ করা উপাদানের ডিএনএ পরীক্ষায় ধর্ষণের আলামত পাওয়া গেছে।”

“আর ওই ডিএনএ পরীক্ষায় তিনজন পুরুষের বীর্যের উপস্থিতি পাওয়া গেছে,” জানান সিআইডির কুমিল্লা অঞ্চলের বিশেষ সুপার নাজমুল করিম খান।

থানা পুলিশ ও ডিবি পুলিশের পর তনু হত্যার তদন্তের দায়িত্ব পায় পুলিশের অপরাধ তদন্ত বিভাগ—সিআইডি। কয়েক দফা আলামত সংগ্রহের পর, তা পরীক্ষার জন্য ঢাকায় পাঠানো হয়।

এদিকে প্রায় দুই মাসেও কুমিল্লা ভিক্টোরিয়া কলেজের ছাত্রী তনু হত্যাকান্ডে কাউকে শনাক্ত কিংবা গ্রেপ্তার করতে পারেনি পুলিশ। সেনানিবাসের ভেতরে ঘটা ওই হত্যাকাণ্ডে দুই সেনা সদস্য জড়িত বলে সম্প্রতি দাবি করেছেন তনুর মা আনোয়ারা বেগম। তবে তদন্তে সব ধরনের সহায়তার আশ্বাস দিয়েছে সেনাবাহিনী।

ডিএনএ মেলাতে নমুনা সংগ্রহ

সিআইডি সূত্রে জানা গেছে, তনুর শরীরে পাওয়া নমুনা মিলিয়ে সন্দেহভাজনদের ডিএনএ মিলিয়ে দেখার কাজ শুরু হয়েছে। এক্ষেত্রে তনুর মা যে দুই সেনা সদস্যকে দায়ী করেছেন তাদেরসহ অন্যান্য সন্দেহভাজনদের ডিএনএ নমুনা সংগ্রহ করছে সিআইডি।

কিছুদিন আগে আনোয়ারা বেগম সাংবাদিকদের বলেন, “কুমিল্লা সেনানিবাসের সার্জেন্ট জাহিদ ও সিপাহী জাহিদকে জিজ্ঞাসাবাদ করলেই সব তথ্য বেরিয়ে আসবে।”

পরিবার সন্তুষ্ট

ধর্ষণের আলামত পাওয়ার খবরে সন্তোষ প্রকাশ করেছে তনুর পরিবার। এর মাধ্যমে তাঁরা ন্যায় বিচার পাওয়ার আশাও করছেন।

মঙ্গলবার সাংবাদিকদের কাছে তনুর বাবা ইয়ার হোসেন বলেন, “তদন্তের পর সিআইডি যে ডিএনএ রিপোর্ট প্রকাশ করেছে, তাতে আমরা সন্তুষ্ট। এখন মনে হচ্ছে আমরা ন্যায় বিচার পাবো।”

ইয়ার হোসেন বলেন, সিআইডি’র ডিএনএ রিপোর্টের সঙ্গে আমি একমত। আমি চাই আসামি যেই হোক না কেন, তাদের যেন আইনের আওতায় আনা হয়।”

ময়না তদন্তকারীদের বিচার দাবি

ধর্ষণের আলামত ন্যায়বিচার পাওয়ার ক্ষেত্রে সহায়ক বলে মত দিয়েছেন আইনজীবী ও মানবাধিকার কর্মীরা।

মানবাধিকার কর্মী অ্যাডভোকেট এলিনা খান বেনারকে বলেন, “বিচারের অন্যতম ভিত্তি হচ্ছে ময়না তদন্ত প্রতিবেদন। কিন্তু তনুর প্রথম ময়না তদন্ত রিপোর্টে বলা হয়, কীভাবে মারা গেছে সেটা বোঝা যায়নি।”

তিনি বলেন, “ওই প্রতিবেদনে আলামত বা অন্যান্য বিষয় গোপন করার একটা আভাস পাওয়া যাচ্ছিল। তবে সিআইডির এই প্রতিবেদন সবাইকে আশাবাদি করে তুলেছে।”

যাঁরা প্রথম ময়না তদন্ত প্রতিবেদন তৈরি করেছিলেন, তাঁদের বিচারও দাবি করেন এই মানবাধিকার কর্মী।

এলিনা খান বলেন, “ময়না তদন্ত করে একদল চিকিৎসক। যাঁদের দায়িত্ব ফরেনসিক পরীক্ষার মাধ্যমে মৃত্যুর কারণ নিশ্চিত করা। ধরে নিতে হবে তাঁরা মামলার মোড় ঘুরানোর চেষ্টা করেছেন। অর্থাৎ তাঁরাও অপরাধী।”

এক্ষেত্রে তনুর পরিবার তাঁদের বিরুদ্ধে মামলা করতে পারে কিংবা সিআইডিও তাঁদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়ার সুপারিশ করতে পারে বলে মন্তব্য করেন তিনি।T

মন্তব্য করুন

নীচের ফর্মে আপনার মন্তব্য যোগ করে টেক্সট লিখুন। একজন মডারেটর মন্তব্য সমূহ এপ্রুভ করে থাকেন এবং সঠিক সংবাদর নীতিমালা অনুসারে এডিট করে থাকেন। সঙ্গে সঙ্গে মন্তব্য প্রকাশ হয় না, প্রকাশিত কোনো মতামতের জন্য সঠিক সংবাদ দায়ী নয়। অন্যের মতামতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল হোন এবং বিষয় বস্তুর প্রতি আবদ্ধ থাকুন।