ঢাকায় বস্তিতে আবার আগুন, দুই হাজারের বেশি ঘর পুড়ে ছাই

কামরান রেজা চৌধুরী
2020.03.11
ঢাকা
200311_Rupnagar_Slum_Fire_1000.JPG ঢাকার মিরপুরের রূপনগর এলাকার শিয়ালবাড়ি বস্তিতে লাগা আগুন নেভানোর চেষ্টা করছেন দমকল বাহিনীর সদস্যরা। ১১ মার্চ ২০২০।
[বেনারনিউজ]

সাত মাসের ব্যবধানে আবার আগুনে পুড়েছে ঢাকার মিরপুরের রূপনগর এলাকার শিয়ালবাড়ি বস্তি। দুই হাজারের বেশি বাঁশ-টিনের ঘর ভস্মীভূত হয়েছে। তবে হতাহতের ঘটনা ঘটেনি।

এর আগে গত ফেব্রুয়ারিতে শিয়ালবাড়ি বস্তি লাগোয়া চলন্তিকা এবং গত বছরের আগস্টে রূপনগর ঝিলপাড় বস্তিতে ভয়াবহ আগুন লাগে।

প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, বুধবার সকাল পৌনে দশটার দিকে হঠাৎ আগুন লাগে বস্তিতে। তবে সকালের দিকে আগুন লাগায় হতাহতের ঘটনা ঘটেনি।

ক্ষতিগ্রস্ত এলাকা পরিদর্শন করে প্রধান বিরোধী দল বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর অভিযোগ করেছেন, অগ্নিকাণ্ডের পেছনে প্রভাবশালী মহল জড়িত।

রূপনগর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (তদন্ত) দীপক কুমার দাস বেনারকে বলেন, “রূপনগর বস্তিতে প্রায় আড়াই হাজার ঘর ছিল। আগুনে প্রায় সব ঘর পুড়ে গেছে। প্রায় সাড়ে তিন ঘণ্টা ধরে আগুন জ্বলে। মানুষগুলো রাস্তার ধারে খোলা আকাশের নিচে অবস্থান করছে।”

তিনি বলেন, চলন্তিকা বস্তি নামে পরিচিত বস্তিতে কয়েক হাজার নিম্ন আয়ের মানুষ, যেমন রিকশাওয়ালা, গৃহকর্মী, তৈরি পোশাক কারখানার কর্মীরা বসবাস করতেন।

দীপক কুমার বলেন, বুধবার সকাল পৌনে ১০টার দিকে আগুনের সূত্রপাত হয়। আর সাড়ে তিন ঘণ্টা চেষ্টার পর আগুন নিয়ন্ত্রণ আনেন দমকল বাহিনীর সদস্যরা।

তিনি বলেন, আগুনের সূত্রপাত কীভাবে তা এখনো বের করা যায়নি। আমরা একটি তদন্ত কমিটি গঠন করেছি। তদন্ত শেষে জানা যাবে কীভাবে আগুন লেগেছিল।

দমকল বাহিনীর কর্মকর্তা রাসেল শিকদার সাংবাদিকদের বলেন, আগুন নিয়ন্ত্রণে তাঁদের ২৫টি ইউনিট কাজ করেছে।

এখন কোথায় যাব?

আগুনে গৃহকর্মী মমতা বেগম তার সংসারের সবকিছু হারিয়েছেন। তিনি বেনারকে বলেন, “আমি হঠাৎ দেখি আমার ঘরের উল্টো দিক থেকে ধোঁয়া বের হচ্ছে। এর মধ্যেই মানুষজন আগুন আগুন বলে চিৎকার শুরু করে। হাতের কাছে যে যা পেরেছে নিয়ে প্রাণ বাঁচিয়েছে।”

তিন সন্তানের জননী মমতা বলেন, “স্বামী ঠেলাগাড়ি চালায়। আমি মানুষের বাসায় কাজ করি। সারা জীবনে যা করছিলাম সব পুড়ে গেছে। এখন কোথায় যাব? কী খাব? কে আশ্রয় দেবে?”

তৈরি পোশাক কর্মী মলি বেনারকে বলেন, “আমি সকাল আটটায় কারখানায় গেছি। আগুন লাগার পর আমার এক প্রতিবেশী আমাকে মোবাইল করে জানায় ঘরে আগুন লেগেছে। দৌড়ে এসে দেখি সব শেষ। আগুন আমাদের নিঃস্ব করে দিয়েছে। আগামীকাল সকালে কী গায়ে দিয়ে কাজে যাব জানি না।”

মিরপুর ছয় নম্বর এলাকার মাংস বিক্রেতা জাকির বেনারকে বলেন, “এখানকার বস্তির মানুষ খুব সকালে কাজে চলে যায়। আর সেকারণে কোনো মানুষ মারা যায়নি। মহিলারা যারা বাসায় রান্না করছিলেন তারা চিৎকার শুনে দ্রুত বস্তি থেকে বের হতে পেরেছেন।”

তিনি বলেন, “রাতে আগুন লাগলে অনেক মানুষ মারা যেত।”

মিরপুর এলাকার সাংসদ ইলিয়াস উদ্দিন মোল্লা উপদ্রুত এলাকা পরিদর্শন করে সাংবাদিকদের বলেন, “প্রধানমন্ত্রী নির্দেশ দিয়েছেন, ক্ষতিগ্রস্ত মানুষদের কাছে থাকতে হবে। তাদের থাকা খাওয়ার কোনও অসুবিধা হবে না। একটি মানুষও খোলা আকাশের নিচে থাকবে না।”

নিরপেক্ষ তদন্ত দাবি বিএনপির

দুপুরে বস্তি পরিদর্শন করেন বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। তিনি ক্ষতিগ্রস্ত মানুষের সাথে কথা বলেন।

তিনি সাংবাদিকদের বলেন, “আমরা এই রূপনগরে বারবার দেখছি অগ্নিকাণ্ড হচ্ছে। কিছুদিন আগে সিটি করপোরেশন নির্বাচনের পূর্বেও আমরা এখানে এসেছিলাম। এখানকার বাসিন্দাদের অভিযোগ, কোনো একটা প্রভাশালী মহল ক্ষমতাসীনদের প্রশ্রয়ে বস্তি উচ্ছেদ করে দিয়ে এখানে বিভিন্ন রকমের হাউজিং বা প্লট নির্মাণ করতে প্রচেষ্টা চালাচ্ছে।”

তিনি এ ঘটনার নিরপেক্ষ তদন্ত দাবি করেছেন।

মির্জা ফখরুল বলেন, “প্রভাবশালী মহল দ্বারা প্রভাবিত হয়ে তদন্ত যাতে না হয়, সে জন্য নিরপেক্ষ তদন্ত হতে হবে।”

তিনি আরও বলেন, “বিত্তশালীদের জন্য নতুন নতুন গৃহায়ণ প্রকল্প গ্রহণ করা হচ্ছে। বস্তিবাসীদের জন্য কোনো বিকল্প ব্যবস্থা নেই, গৃহায়ণের ব্যবস্থা নেই।”

বিএনপি মহাসচিব বলেন, “বস্তিতে যারা বাস করে সবাই নিম্ন আয়ের মানুষ। এই বস্তি পুড়ে যাওয়ায় তারা একেবারেই নিঃস্ব হয়ে গেছে। বারবার এগুলো ঘটার পরেও যারা কর্তৃপক্ষ আছেন, তাঁরা সেইভাবে বিশেষ কোনো ব্যবস্থা নিচ্ছে না।”

স্থানীয় বাসিন্দারা জানান, ১৯৭২-৭৩ সালের দিকে ঢাকা জেলা প্রশাসন শিয়ালবাড়ি ‘ট’ ব্লকের সাত একর নিচু জমি অধিগ্রহণ করে জাতীয় গৃহায়ণ কর্তৃপক্ষকে বরাদ্দ দেয়। পরের বছর থেকে নিচু জমি ভরাট করে অবৈধ বস্তিঘর গড়ে উঠতে শুরু করে। বস্তিতে ঢোকার মুখে এখন গৃহায়ণ কর্তৃপক্ষের সাইনবোর্ড রয়েছে।

মন্তব্য করুন

নীচের ফর্মে আপনার মন্তব্য যোগ করে টেক্সট লিখুন। একজন মডারেটর মন্তব্য সমূহ এপ্রুভ করে থাকেন এবং সঠিক সংবাদর নীতিমালা অনুসারে এডিট করে থাকেন। সঙ্গে সঙ্গে মন্তব্য প্রকাশ হয় না, প্রকাশিত কোনো মতামতের জন্য সঠিক সংবাদ দায়ী নয়। অন্যের মতামতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল হোন এবং বিষয় বস্তুর প্রতি আবদ্ধ থাকুন।