ঢাকায় ট্রাফিক শৃঙ্খলা আনতে ‘শক্ত’ হবে পুলিশ
2018.09.04
ঢাকা

বাংলাদেশের রাজধানী ঢাকার রাস্তায় শৃঙ্খলা ফিরিয়ে আনতে বিশেষ কার্যক্রম গ্রহণ করেছে ঢাকা মহানগর পুলিশ (ডিএমপি)। এর অংশ হিসেবে যত দিন শৃঙ্খলা ফিরে না আসবে, তত দিন পুলিশ নানা উদ্যোগ চালিয়ে যাবে বলে ঘোষণা দিয়েছেন ডিএমপি কমিশনার মো. আছাদুজ্জামান মিয়া।
মঙ্গলবার বেলা ১১টায় রাজধানীর মিন্টো রোডে ডিএমপি মিডিয়া সেন্টারে এক সংবাদ সম্মেলনে ট্রাফিক নিয়ন্ত্রণে ডিএমপির বিভিন্ন কার্যক্রমের কথা তুলে ধরেন ডিএমপি কমিশনার। ট্রাফিক আইন অমান্যকারীদের বিরুদ্ধে সেপ্টেম্বর মাসব্যাপী ট্রাফিক আইন প্রয়োগ ও ট্রাফিক সচেতনতামূলক কর্মসূচির কথা জানান তিনি।
এ ছাড়া ঢাকার প্রধান সড়কগুলোয় লেগুনা চলাচল বন্ধ, মোটরসাইকেলে তিনজন চড়া নিষিদ্ধ ও হেলমেট না পরলে মোটরসাইকেল আরোহীদের পেট্রল পাম্প থেকে জ্বালানি না দেওয়ার পদক্ষেপের কথাও উল্লেখ করেন আছাদুজ্জামান মিয়া।
এদিকে সংসদের পরবর্তী ২২তম অধিবেশনেই (৯ সেপ্টেম্বর শুরু হবে) ‘সড়ক পরিবহন আইন-২০১৮’ পাস হবে বলে জানিয়েছেন সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের। সড়ক পরিবহন মন্ত্রণালয়ের সভাকক্ষে সড়কে শৃঙ্খলা ফেরানোর বিষয়ে বিশেষজ্ঞ এবং সংশ্লিষ্টদের সঙ্গে মতবিনিময় সভা শেষে মঙ্গলবার সাংবাদিকদের তিনি একথা বলেন।
অবশ্য ওই সভায় বিশেষজ্ঞরা বলেন, গত দুই বছরে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এবং সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী যেসব নির্দেশনা দিয়েছেন সেগুলো কেন বাস্তবায়ন হয়নি, কারা বাধা দিয়েছেন—এক সপ্তাহের মধ্যে বসে তা চিহ্নিত করে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিতে হবে।
পুলিশের এই উদ্যোগ প্রসঙ্গে ওয়ার্ক ফর এ বেটার বাংলাদেশ-ডব্লিউবিবি ট্রাস্টের প্রোগ্রাম ম্যানেজার ও পরিবহন বিশেষজ্ঞ মারুফ হোসেন বলেন, “এরকম উদ্যোগ আসলে সাময়িক চেষ্টা; দীর্ঘ মেয়াদে সমস্যার কোনো সমাধান করবে না।”
“আমার মনে হয়; সিদ্ধান্তগুলো স্টেকহোল্ডারদের নিয়ে একসাথে বসে কমিটি করে বিচার বিশ্লেষণ করে নেয়া দরকার। রাস্তায় দেখে হুট করে কিছু একটা করলে তা ফেইল করবে,” বলেন তিনি।
এই উদ্যোগকে স্বাগত জানিয়ে উত্তরার বাসিন্দা জনি বলেন, “সড়কে নিয়ম শৃংখলা অবশ্যই দরকার। তবে উদ্যোগগুলো চলমান রাখতে হবে।”
বিদ্যমান গণপরিবহন ব্যবস্থা নিয়ে ক্ষোভ প্রকাশ করে এই বেসরকারি চাকুরে বলেন, “ঢাকার রাস্তায় সিটিং সার্ভিস ছাড়া আর যেন কিছুই নেই। যাদের স্টপেজ আগে তারাই শুধু বাসে উঠতে পারে। ভাড়া রাখা হচ্ছে ইচ্ছেমতো। কারওয়ান বাজার থেকে শাহবাগ যাব কিন্তু ভাড়া রাখলো গুলিস্তানের। যেখানেই নামেন গুলিস্তানের ভাড়াই দিতে হবে। এসব বিষয় পুলিশের নজর দেয়া উচিত। আবার অভিযান চালালে বাসই পাওয়া যায় না। এ সব ভোগান্তির অবসান চাই আমরা।”
গত ২৯ জুলাই সড়ক দুর্ঘটনায় শহীদ রমিজ উদ্দিন ক্যান্টনমেন্ট কলেজের দুই শিক্ষার্থী নিহত হলে সড়কে শৃঙ্খলা ফিরিয়ে আনার দাবিতে আন্দোলন শুরু করে স্কুল কলেজের শিক্ষার্থীরা। টানা ছয়দিন তারা দাবি আদায়ে রাস্তায় অবস্থান করে। এ সময় তারা নিজেরাই গাড়ি চালকের লাইসেন্স চেক করে, গাড়ির লেন নির্ধারণ করে দেয় এবং ট্রাফিক আইন অমান্যকারিদের আটক করে ট্রাফিক পুলিশের কাছে দেয়।
শিক্ষার্থীদের আন্দোলনের মুখে সরকার ও পুলিশের পক্ষ থেকে নানা উদ্যোগ নেওয়া হয়। তবে প্রতিদিনই সড়ক দুর্ঘটনায় প্রাণহানি ঘটছে।
মঙ্গলবারের সংবাদ সম্মেলনে ডিএমপি কমিশনার মো. আছাদুজ্জামান মিয়া বলেন, “সড়কের এই সমস্যা একদিনের নয়। এটা বহু দিন থেকে চলতে চলতে অনিয়ম যেন নিয়মে রূপ নিয়েছে। আমাদের সবচেয়ে বড় সমস্যা আইন না মানার প্রবণতা। আইন না মানলে ট্রাফিক শৃঙ্খলা ফেরানো সম্ভব হবে না।”
চলতি মাসে বিভিন্ন উদ্যোগের কথা তুলে ধরে ডিএমপি কমিশনার বলেন, “মাসব্যাপী চলমান ট্রাফিক কর্মসূচিতে প্রতিটি পালায় পুলিশের সাথে ৩২২ জন রোভার স্কাউটের সদস্য কাজ করবে।”
তিনি আরোও জানান, নির্ধারিত বাস স্টপেজ ছাড়া অন্য কোথাও বাস দাঁড়াবে না এবং যাত্রী ওঠা-নামা করাবে না। আইন অমান্য করলে কঠোর ব্যবস্থা নেওয়া হবে। এক স্টপেজ থেকে অন্য স্টপেজ পর্যন্ত বাসের দরজা বন্ধ থাকবে।
গাড়ি চালানোর সময় অবশ্যই ড্রাইভিং লাইসেন্স সঙ্গে রাখতে হবে। এ ছাড়া রাস্তা পারাপারে জেব্রা ক্রসিং, ফুটওভার ব্রিজ ও আন্ডারপাস ব্যবহার না করলে ভ্রাম্যমাণ আদালতের মাধ্যমে সাজা দেওয়া হবে বলেও উল্লেখ করেন তিনি।
ট্রাফিক আইন না মানায় গত এক বছরে মোট ছয় লাখ ২৫ হাজার ৯৪৫ টি মামলা হয়েছে বলে সংবাদ সম্মেলনে জানান ডিএমপি কমিশনার। এছাড়া ট্রাফিক আইন ভঙ্গের নানান অভিযোগে ৫ কোটি ৬৭ লাখ ১৫ হাজার ৩০ টাকা জরিমানা আদায় করা হয়েছে বলেও জানান তিনি।
আইন পাশ আগামী অধিবেশনে
সড়ক পরিবহন মন্ত্রণালয়ের সভাকক্ষে সড়কে শৃঙ্খলা ফেরানোর বিষয়ে বিশেষজ্ঞ এবং সংশ্লিষ্টদের সঙ্গে মতবিনিময় সভা শেষে সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের সাংবাদিকদের বলেন, সড়ক পরিবহন আইনটি এরই মধ্যে মন্ত্রিপরিষদের বৈঠকে অনুমোদন পেয়েছে। সংসদে পাস হওয়ার আগে এটি আরও যাচাই-বাছাই করার সুযোগ রয়েছে। সংসদে উপস্থাপনের পরেও সংসদীয় স্থায়ী কমিটির বৈঠকে আরও যাচাই-বাছাই হবে।
তিনি বলেন, “কোমলমতি শিক্ষার্থীদের আমি স্যালুট করি, যে তারা এই বিষয়টি নিয়ে রাস্তায় নেমেছিল। যে কারণে আইনটি আলোর মুখ দেখেছে।”
সাংবাদিকদের এক প্রশ্নের জবাবে ওবায়দুল কাদের বলেন, “সংসদের ২২তম অধিবেশনই হবে ১০ম জাতীয় সংসদের শেষ অধিবেশন। এরপর সংসদের আর কোনো অধিবেশন বসবে না। এই অধিবেশনেই আইনটি পাশ হবে।”
বৈঠকে দুর্ঘটনারোধে অতীতে নেওয়া সিদ্ধান্ত ও আইনকানুন বাস্তবায়ন, প্রস্তাবিত আইনে শাস্তি আরও বাড়ানো এবং গণপরিবহনের জন্য সমন্বিতভাবে উদ্যোগ নেওয়ার সুপারিশ করা হয়।
মতবিনিময় সভায় অংশ নিয়ে লেখক ও গবেষক সৈয়দ আবুল মকসুদ সাংবাদিকদের বলেন, “সমস্যা কী তা সবাই জানে। তিনি বলেন, অতীতের সব নির্দেশনাই ভালো, কিন্তু বাস্তবায়ন হচ্ছে না।”