চট্টগ্রামে কুলখানিতে পদদলিত হয়ে ১০ জনের মৃত্যু

পুলক ঘটক
2017.12.18
ঢাকা
সদ্য প্রয়াত চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশনের সাবেক মেয়র এ বি এম মহিউদ্দিন চৌধুরীর কুলখানিতে পদদলিত হয়ে ১০ জনের মৃত্যুর পর স্বজনদের আহাজারি। সদ্য প্রয়াত চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশনের সাবেক মেয়র এ বি এম মহিউদ্দিন চৌধুরীর কুলখানিতে পদদলিত হয়ে ১০ জনের মৃত্যুর পর স্বজনদের আহাজারি। ১৮ ডিসেম্বর ২০১৭।
ফোকাস বাংলা

সদ্য প্রয়াত চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশনের সাবেক মেয়র এ বি এম মহিউদ্দিন চৌধুরীর কুলখানিতে পদদলিত হয়ে ১০ জনের মৃত্যু হয়েছে। আহত হয়েছেন অর্ধশতাধিক। নিহতের সংখ্যা আরও বাড়তে পারে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে।

সোমবার দুপুরে চট্টগ্রাম নগরের জামাল খান এলাকায় রীমা কমিউনিটি সেন্টারে এই দুর্ঘটনা ঘটে। কুলখানি উপলক্ষে হিন্দু ও বৌদ্ধ সম্প্রদায়ের লোকজনের জন্য এ​ই ভোজের আয়োজন করা হয়।

চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের পুলিশ ফাঁড়ির তত্ত্বাবধায়ক জহিরুল ইসলাম বেনারকে জানিয়েছেন, পদদলনের ঘটনাটি ঘটে কমিউনিটি সেন্টারের প্রবেশপথে। এতে গুরুতরভাবে আহত হয়েছেন ১২ জন। নিহত ১০ জনের সবাই পুরুষ। তাদের মরদেহ চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে রাখা হয়।

ঘটনার পর স্বজনদের কান্না আর আহাজারি হাসপাতালের পরিবেশ ভারাক্রান্ত করে তোলে।

নিহতদের মধ্যে ছয়জনের নাম জানা গেছে। তারা হলেন—কৃষ্ণপদ দাশ (৪০), সুবীর দাশ (৫০), ঝণ্টু দাশ (৪৫), প্রদীপ তালুকদার (৪৫), লিটন দেব (৫৩) ও ঘনা শীল (৬০)।

এ ঘটনার খবর পেয়ে হাসপাতালে ছুটে যান মহিউদ্দিন চৌধুরীর বড় ছেলে আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় সাংগঠনিক সম্পাদক চৌধুরী মহিবুল হাসান নওফেল। সেখানে গিয়ে শোকাহত নওফেল নিজেই অসুস্থ হয়ে পড়লে পরে তাঁকে বাসায় নিয়ে যাওয়া হয়।

কেন এই দুর্ঘটনা?

মহিউদ্দিন চৌধুরীর কুলখানি উপলক্ষে নগরের ১৪টি কমিউনিটি সেন্টারে মেজবানের আয়োজন করা হয়েছিল। সোমবার সকাল থেকেই নির্দিষ্ট পয়েন্টগুলোতে মেজবান খেতে মানুষের ভিড় বাড়তে থাকে। তবে বেলা বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে সে ভিড় অনেকটা জনস্রোতে রূপ নেয়।

মহিলাদের জন্য আয়োজন ছিল বাসায়। হিন্দু ও বৌদ্ধ সম্প্রদায়ের লোকজনের জন্য আয়োজন করা হয় রীমা কমিউনিটি সেন্টারে। খানিকটা খোলা জায়গা ও দুইতলা ভবন নিয়ে এই কমিউনিটি সেন্টার। এর নিচ তলায় গাড়ি পার্কিং এবং দোতলায় খাবারের ব্যবস্থা। সেন্টারটির প্রবেশ পথ নিচের দিকে বেশ খানিকটা ঢালু। সেখানেই ভিড়ের মধ্যে পদদলনের ঘটনা ঘটে। সেন্টারটির ধারণ ক্ষমতা প্রায় চার হাজার। তবে মেজবানে অংশ নিতে আসে প্রায় ১০ হাজার মানুষ।

সেখানে দায়িত্বরত স্বেচ্ছাসেবক অনুপ দাস বলেন, “খাবারের জন্য গেট খুলে দেওয়ার সঙ্গে সঙ্গে কয়েক হাজার মানুষ প্রবেশের চেষ্টা করেন। এতে পেছন থেকে প্রচণ্ড চাপ আসে। যে কারণে সামনের দিকে থাকা অনেকে ঢালু পথের ওপর পড়ে যান। তাতেই ১০ জনের মৃত্যু হয়েছে।”

ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেছেন চট্টগ্রাম মহানগর পুলিশের কমিশনার ইকবাল বাহার। তিনি টেলিফোনে বেনারকে বলেন, “জায়গাটা এমনিতেই ঢালু। কমিউনিটি সেন্টারের প্রবেশ পথটিও প্রশস্ত ছিল না। এ রকম পথে বহু মানুষ হুড়োহুড়ি করে ঢুকতে গেলে সামনের কিছু মানুষ পড়ে গিয়ে পদদলিত হয়।”

শৃঙ্খলা বিধানে পুলিশের কোনো ঘাটতি ছিল কি না জানতে চাইলে ইকবাল বাহার বলেন, “২০ জন পুলিশ সদস্য সেখানে দায়িত্ব পালন করেছে। এটা কোনো মারামারি বা সংঘাতের জায়গা ছিল না। তাই এর চেয়ে অধিক পুলিশ সেখানে মোতায়েন করার প্রয়োজন মনে করা হয়নি।”

তবে ঘটনায় কমিউনিটি সেন্টার কর্তৃপক্ষ বা আয়োজকদের কোনো গাফিলতি ছিল কি-না, সেটা খতিয়ে দেখা হচ্ছে বলে তিনি জানান।

রীমা কমিউনিটি সেন্টারে মেজবানের দেখভালের দায়িত্বে ছিলেন আন্দরকিল্লার ওয়ার্ড কাউন্সিলর জহরলাল হাজারী। তিনি বলেন, “বিশৃঙ্খলা এড়াতে পর্যাপ্ত ব্যবস্থা নেওয়া হলেও হুড়োহুড়ি করতে গিয়ে এ দুর্ঘটনা ঘটেছে।”

এ বি এম মহিউদ্দিন চৌধুরীর ব্যক্তিগত সহকারী ওসমান গণি জানান, নিহত প্রত্যেকের পরিবারকে এক লাখ টাকা এবং শেষকৃত্যের জন্য পাঁচ হাজার টাকা দেবে প্রয়াত মহিউদ্দিনের পরিবার। আহতদের চিকিৎসা ব্যয়ও এই পরিবারের পক্ষ থেকে বহন করা হবে।

ঘটনা সম্পর্কে চট্টগ্রাম দক্ষিণ জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক মফিজুর রহমান বেনারকে বলেন, “এ রকম কোনো দুর্ঘটনার জন্য আমরা প্রস্তুত ছিলাম না। এমনিতেই মহিউদ্দিন চৌধুরীর মৃত্যুতে আমরা শোকাহত। এই মৃত্যুগুলো আমাদের বেদনার ভার আরও বাড়িয়ে দিয়েছে।”

দুর্ঘটনার পর আহতদের চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নেওয়া হয়েছে। সেখানে ১০ জনকে মৃত ঘোষণা করেন হাসপাতালের কর্তব্যরত চিকিৎসক। এ সময় আহতদের স্বজন, আওয়ামী লীগের নেতা-কর্মী এবং উৎসুক জনতার ভিড়ে হাসপাতালের স্বাভাবিক কার্যক্রম ব্যাহত হয়। আহতদের ক্যাজুয়ালটি হলে ভর্তি করা হয়েছে। দুর্ঘটনার পরপরই মেডিকেল কলেজের সকল চিকিৎসককে জরুরি ভিত্তিতে হাসপাতালে ডেকে পাঠানো হয়।

১৫ ডিসেম্বর চট্টগ্রাম নগর আওয়ামী লীগের সভাপতি ও চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশনের সাবেক মেয়র এ বি এম মহিউদ্দিন চৌধুরী (৭৩) মারা যান। ১৯৯৪ সাল থেকে টানা তিনবার তিনি চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশনের মেয়র নির্বাচিত হন।

মন্তব্য করুন

নীচের ফর্মে আপনার মন্তব্য যোগ করে টেক্সট লিখুন। একজন মডারেটর মন্তব্য সমূহ এপ্রুভ করে থাকেন এবং সঠিক সংবাদর নীতিমালা অনুসারে এডিট করে থাকেন। সঙ্গে সঙ্গে মন্তব্য প্রকাশ হয় না, প্রকাশিত কোনো মতামতের জন্য সঠিক সংবাদ দায়ী নয়। অন্যের মতামতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল হোন এবং বিষয় বস্তুর প্রতি আবদ্ধ থাকুন।