নেপাল বিমান দুর্ঘটনা: নিজ পরিচয়ে সমাহিত ফয়সাল ও নাজিয়া

জেসমিন পাপড়ি
2018.04.06
ঢাকা
নেপাল বিমান দুর্ঘটনায় নিহতদের মরদেহ গ্রহণের জন্য ঢাকার আর্মি স্টেডিয়ামে স্বজনদের ভিড়। নেপাল বিমান দুর্ঘটনায় নিহতদের মরদেহ গ্রহণের জন্য ঢাকার আর্মি স্টেডিয়ামে স্বজনদের ভিড়। ১৯ মার্চ ২০১৮।
মনিরুল আলম/বেনারনিউজ

আদালতের নির্দেশে নেপালে বিমান দুর্ঘটনায় নিহত সাংবাদিক ফয়সাল আহমেদ ও সরকারি কর্মকর্তা নাজিয়া আফরিন চৌধুরীর মরদেহ দাফনের ভুল শুধরে নেওয়া হয়েছে। শুক্রবার তাঁদের মরদেহ দুই সপ্তাহের বেশি সময় পরে কবর থেকে তুলে নিজ ঠিকানায় দাফন করা হয়।

শরীয়তপুরের ডামুড্যা থানার পরিদর্শক (তদন্ত) মিন্টু চন্দ্র মণ্ডল বেনারকে জানান, “গত বৃহস্পতিবার ভোর পাঁচটার দিকে ডামুড্যায় সিধুলকুড়া গ্রামে সাংবাদিক ফয়সালের বাড়ির সামনে কবর থেকে নাজিয়ার লাশ তোলা হয়। এরপর সেটি হস্তান্তর করা হয় নাজিয়ার বড় ভাই আলী আহমেদ চৌধুরীর কাছে।”

“একই সঙ্গে ঢাকার বনানী কবরস্থান থেকে ফয়সালের লাশ তাঁর গ্রামের বাড়িতে নেওয়া হয়। আগে যে কবরে নাজিয়ার মরদেহ রাখা হয়েছিল সেখানেই রাখা হয় ফয়সালের মরদেহ। আর নাজিয়ার মরদেহ ঢাকায় আনা হয়,” জানান পুলিশ পরিদর্শক।

নাজিয়া আফরিন চৌধুরী (বামে) ও ফয়সাল আহমেদ। ফাইল ফটো।
নাজিয়া আফরিন চৌধুরী (বামে) ও ফয়সাল আহমেদ। ফাইল ফটো।
বেনারনিউজ
ফয়সাল আহমেদ ছিলেন বেসরকারি বৈশাখী টেলিভিশনের প্রতিবেদক। আর নাজিয়া আফরিন চৌধুরী ছিলেন সরকারের পরিকল্পনা কমিশনের সাধারণ অর্থনীতি বিভাগের জ্যেষ্ঠ সহকারী প্রধান।

ইউএস-বাংলার একটি ফ্লাইট গত ১২ মার্চ কাঠমান্ডুর ত্রিভুবন বিমানবন্দরে বিধ্বস্ত হলে ৫০ জনের মৃত্যু হয়, যাদের মধ্যে ২৭ জন ছিলেন বাংলাদেশি। নিহতদের মধ্যে ছিলেন ফয়সাল ও নাজিয়া।

গত ১৯ মার্চ বনানীর আর্মি স্টেডিয়াম থেকে স্বজনদের কাছে লাশ হস্তান্তরের সময় আহমেদ ফয়সালের লাশের পরিবর্তে ঢাকার নাজিয়া আফরিনের লাশ শরীয়তপুরের ডামুড্যায় ফয়সালের বাড়িতে নেওয়া হয়। পরে ফয়সালের লাশ নাজিয়া ভেবে বনানী কবরস্থানে ও নাজিয়ার লাশ ফয়সাল ভেবে ডামুড্যায় ফয়সালের বাড়ির আঙ্গিনায় দাফন করা হয়।

ফয়সালের লাশ দাফনের সময় তাঁর স্বজনেরা পলিথিনে মোড়ানো লাশের গায়ে নাজিয়া আফরিন লেখা দেখেন। ফয়সালের লাশ ওটা ছিল না-এটা নিশ্চিত হয়েও বিরূপ প্রতিক্রিয়া এড়াতে স্বজনেরা নাজিয়ার লাশই দাফন করে।

একইভাবে ঢাকার সূত্রাপুরের টিপু সুলতান রোডের মৃত আলী আকবর চৌধূরীর মেয়ে নাজিয়া আফরিন চৌধুরী মনে করে ফয়সালের লাশ দাফন করেন নাজিয়ার স্বজনেরা।

পরে উভয় পরিবার ফের লাশ উত্তোলন করে নির্ধারিত স্থানে নতুন করে দাফনের জন্য আদালতের কাছে অনুমতি প্রার্থনা করে পৃথক আবেদন করে। আদালতে হলফনামা জমা দেন নিহত ফয়সালের ভাই সাইফুল ইসলাম ও নাজিয়ার ভাই আলী আহাদ চৌধুরী।

ফয়সালের ভাই সাইফুল বেনারকে বলেন, “২০ মার্চ আমার ভাইয়ের লাশ গ্রহণ করেন আমাদের মামা কায়কোবাদ। শরীয়তপুরে জানাজা শেষে কফিন থেকে লাশ বের করার পর দেখতে পাই, এটি আমার ভাইয়ের লাশ নয়। পলিথিনে মোড়ানো লাশে লেখা ছিল নাজিয়া আফরিন চৌধুরী। কিন্তু আত্মীয়–স্বজন ও এলাকাবাসীর মধ্যে বিরূপ প্রতিক্রিয়া সৃষ্টির আশঙ্কায় নাজিয়ার লাশই আমরা তাৎ​ক্ষণিক দাফন করেছিলাম।”

এদিকে গত বুধবার ঢাকার মহানগর হাকিম শেখ হাফিজুর রহমান লাশ তুলে যার যার ঠিকানায় দাফনের অনুমতি দেন। এ বিষয়ে ঢাকার নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেটকে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিতে বলা হয়।

সিঙ্গাপুরে অসুস্থদের দেখতে মন্ত্রী

সরকারি বার্তা সংস্থা বাসস গতকাল জানায়, বেসামরিক বিমান পরিবহন ও পর্যটনমন্ত্রী এ কে এম শাজাহান কামাল গতকাল সিঙ্গাপুর জেনারেল হাসপাতালে চিকিৎ​সাধীন বিমান দুর্ঘটনায় আহত তিন যাত্রীকে দেখতে যান। এই তিন যাত্রী হলেন ডা. রেজাউল হক শাওন, ইমরানা কবীর হাসি ও কবীর হোসেন।

ওই খবরে বলা হয়, এই তিন যাত্রীকে সিঙ্গাপুরে নিয়ে চিকিৎ​সা করানোর জন্য মন্ত্রী ইউএস-বাংলা কর্তৃপক্ষকে ধন্যবাদ জানিয়েছেন।

মন্তব্য করুন

নীচের ফর্মে আপনার মন্তব্য যোগ করে টেক্সট লিখুন। একজন মডারেটর মন্তব্য সমূহ এপ্রুভ করে থাকেন এবং সঠিক সংবাদর নীতিমালা অনুসারে এডিট করে থাকেন। সঙ্গে সঙ্গে মন্তব্য প্রকাশ হয় না, প্রকাশিত কোনো মতামতের জন্য সঠিক সংবাদ দায়ী নয়। অন্যের মতামতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল হোন এবং বিষয় বস্তুর প্রতি আবদ্ধ থাকুন।