চলন্ত বাসে ধর্ষণের ঘটনায় এক নার্সের মৃত্যু
2019.05.07
ঢাকা
কিশোরগঞ্জে চলন্ত বাসে ধর্ষণের পর রাস্তায় ফেলে দিয়ে এক নারীকে হত্যার অভিযোগ পাওয়া গেছে। সোমবার রাত আনুমানিক সাড়ে নয়টার দিকে কিশোরগঞ্জ-ভৈরব সড়কের গজারিয়া বিলপাড় এলাকায় ঢাকা-কটিয়াদী রুটে চলাচলকারী স্বর্ণলতা পরিবহনে এই ঘটনাটি ঘটে বলে জানান পুলিশ কর্মকর্তারা।
নিহত শাহিনুর আকতার তানিয়া (২৩) ঢাকার কল্যাণপুরে অবস্থিত ইবনে সিনা হাসপাতালে নার্স হিসাবে কাজ করতেন বলে বেনারকে জানান কিশোরগঞ্জ জেলার পুলিশ সুপার মাশরুকুর রহমান খালেদ।
তানিয়া কটিয়াদী উপজেলার লোহাজুরী ইউনিয়নের বাহেরচর গ্রামের গিয়াস উদ্দিনের মেয়ে।
ঘটনার সাথে সংশ্লিষ্টতার অভিযোগে বাসের চালক কাপাশিয়ার নূরুজ্জামান (৩৯) ও হেলপার লালন মিয়াকে (৩৩) গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ। তবে আটককৃতরা পুলিশের কাছে ধর্ষণের অভিযোগ অস্বীকার করেছেন।
তিনি বলেন, বাসটি বাজিতপুরের পিরিজপুর ইউনিয়নের গজারিয়া বিলপাড় এলাকায় পৌঁছালে তাকে কয়েকজন মিলে ধর্ষণ করে। এরপর হত্যার চেষ্টা করে। তাকে রক্তাক্ত অবস্থায় রাস্তায় ফেলে বাস নিয়ে পালিয়ে যায় তারা।”
নাসিরুদ্দিন বলেন, স্থানীয়রা রাতে তানিয়াকে মুমূর্ষু অবস্থায় উদ্ধার করে কটিয়াদী হাসপাতালে নিয়ে গেলে কর্তব্যরত চিকিৎসক তাঁকে মৃত ঘোষণা করেন।
পুলিশ প্রাথমিক তদন্তের তথ্যে বলছে, বাসটি থেকে রাত সাড়ে নয়টার দিকে তানিয়া ও অন্য দুই যাত্রী ছাড়া সবাই নেমে যায়।
উজানচর এলাকায় ওই দুই যাত্রীও নেমে গেলে বাসে একমাত্র যাত্রী ছিলেন তানিয়া।
বাসটি গজারিয়া এলাকায় পৌছানোর পর গাড়ির চালক ও সহকারী তাঁকে প্রথমে ধর্ষণ ও পরে হত্যা করে রাস্তায় ফেলে দিয়ে পালিয়ে যায়।
সেখান থেকে এলাকাবাসী তাঁকে কটিয়াদী উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নিয়ে গেলে চিকিৎসক মৃত ঘোষণা করেন।
তানিয়ার বড় ভাই বাদল মিয়ার অভিযোগ, ধর্ষণের পর গলায় ওড়না পেঁচিয়ে শ্বাস রোধ করে তাঁর বোনকে হত্যা করা হয়েছে।
কিশোরগঞ্জ জেলার পুলিশ সুপার মাশরুকুর রহমান খালেদ বেনারকে বলেন, মেয়েটির পরিবারের পক্ষ থেকে বলা হয়েছে শাহিনুর আকতার তানিয়া সোমবার বিকালে ঢাকা থেকে স্বর্ণলতা বাসে করে গাজীপুরের কাপাসিয়া হয়ে কটিয়াদী যাচ্ছিল।
তিনি জানান, বাসটি শেষ স্টপ আসার আগে রাতে তানিয়াই বাসের একমাত্র যাত্রী ছিলেন।
মাশরুকুর রহমান বলেন, “তাঁর বাবা অভিযোগ করেছেন, একা পেয়ে গাড়ির চালক এবং হেলপার তাকে রাস্তায় ফেলে দিয়ে হত্যা করেছে।”
তিনি বলেন, “আমরা গাড়ির চালক এবং সহযোগীর কাছে ঘটনা জানতে চাইলে তারা বলেছে মেয়েটি চলন্ত অবস্থায় হঠাৎ বাস থেকে লাফ দেয়। তবে মেয়েটি কেন লাফ দিয়েছে সে ব্যাপারে কোনো সদুত্তর দিতে পারেনি ড্রাইভার ও হেলপার।”
পুলিশ সুপার বলেন, আমরা ড্রাইভার এবং হেলপারকে গ্রেপ্তার করেছি।
তিনি জানান, “ড্রাইভার বলেছে, মেয়েটি লাফ দেওয়ার পর সে এবং হেলপার তাকে হাসপাতালে নেওয়ার চেষ্টা করেছিল। তারা পালানোর চেষ্টা করেনি। আমরা সহজেই তাদের গ্রেপ্তার করতে পেরেছি।”
মাশরুকুর জানান, “মেয়েটিকে ধর্ষণ করা হয়েছে কি না সে ব্যাপারে নিশ্চিত হওয়ার জন্য লাশের ময়নাতদন্ত করা হচ্ছে। ময়নাতদন্ত রিপোর্ট পাওয়ার পর বোঝা যাবে।”
তবে কটিয়াদি থানার ওসি (তদন্ত ) শফিকুল ইসলাম সাংবাদিকদের বলেন, জিজ্ঞাসাবাদে ড্রাইভার ও হেলপার ধর্ষণের কথা অস্বীকার করেছে।
তারা বলছে, ওই যাত্রীর কানে এয়ারফোন ছিল। তাই বাস থেকে নামার পর সে আর বাসের শব্দ শুনতে না পাওয়ায় তাদের বাসের নিচে চাপা পড়ে।
তিনি বলেন, অভিযুক্তরা বলেছে, তারাই নাকি মেয়েটিকে হাসপাতালে রেখে পালিয়ে যায়।
অতীতে বাংলাদেশে চলন্ত বাসে ধর্ষণের ঘটনা খুব বেশি শোনা যায়নি।
তবে, ভারতের রাজধানী দিল্লিতে ২০১২ সালে চলন্ত বাসে নির্ভয়াকে ধর্ষণ ও হত্যার পর বাংলাদেশে এ ধরনের ঘটনা ঘটতে থাকে বলে বেনারকে জানান মানবাধিকার কর্মী নূর খান।
তিনি বলেন, দেশে যখন আইনের শাসন থাকে না, অপরাধীরা অপরাধ করে পার পেয়ে যায় তখন এ ধরনের ঘটনা ঘটে।
নূর খান বলেন, গণপরিবহনে নারীদের নিরাপত্তা দিতে হবে।
তার মতে অতীতের ঘটনাগুলোতে দায়ী ব্যক্তিদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি দেওয়া গেলে এ ধরনের ঘটনার পুনরাবৃত্তি হতো না।
চলন্ত বাসে ধর্ষণের পর হত্যার নির্মম ঘটনা ঘটে ২০১৭ সালের ২৫ আগস্ট। টাঙ্গাইলে ময়মনসিংহগামী একটি বাসে ধর্ষণের পর প্রাণ হারান জাকিয়া সুলতানা নামের এক নারী।
২০১৭ সালের জানুয়ারি থেকে ২০১৮ সালের জানুয়ারি মাস পর্যন্ত কমপক্ষে ২১ নারী চলন্ত বাসে ধর্ষণের শিকার হয়েছেন বলে জানিয়েছে যাত্রী কল্যাণ সমিতি।