সড়ক নিরাপদ করতে ৩৫৮ মিলিয়ন ডলার ঋণ দেবে বিশ্বব্যাংক

জেসমিন পাপড়ি
2022.03.29
ঢাকা
সড়ক নিরাপদ করতে ৩৫৮ মিলিয়ন ডলার ঋণ দেবে বিশ্বব্যাংক ঢাকার গুলিস্তানে সড়ক দুর্ঘটনায় নটরডেম কলেজের শিক্ষার্থী নাঈম হাসান নিহত হওয়ার পর রাস্তা অবরোধ করে কলেজের শিক্ষার্থীদের বিক্ষোভ। ২৪ নভেম্বর ২০২১।
[বেনারনিউজ]

উচ্চ ঝুঁকিপূর্ণ মহাসড়ক এবং জেলা পর্যায়ের সড়কগুলো নিরাপদ করতে বাংলাদেশকে ৩৫৮ মিলিয়ন ডলার ঋণ দিচ্ছে বিশ্বব্যাংক। সোমবার এক বিজ্ঞপ্তিতে বিশ্বব্যাংক জানায় ৩০ বছর মেয়াদি এই অর্থায়ন করা হচ্ছে বিশ্বব্যাংকের আন্তর্জাতিক উন্নয়ন সংস্থা (আইডিএ) থেকে।

দক্ষিণ এশিয়ায় এটি বিশ্বব্যাংকের প্রথম ডেডিকেটেড সড়ক নিরাপত্তা প্রকল্প উল্লেখ করে বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, এটি বাংলাদেশের সড়কে নিরাপত্তা বাড়াতে এবং মৃত্যু কমাতে সহায়তা করবে।

“বাংলাদেশের অর্থনৈতিক ও সামগ্রিক উন্নয়নের ক্ষেত্রে সড়কে নিরাপত্তা নিশ্চিত করা অগ্রাধিকারের বিষয় বলে বিবেচ্য। সড়ক নিরাপত্তা নিশ্চিত করার জন্য প্রাতিষ্ঠানিক কাঠামো শক্তিশালীকরণ এবং দীর্ঘমেয়াদি জাতীয় কর্মপরিকল্পনা বাস্তবায়নে প্রকল্পটি সাহায্য করবে,” এ প্রসঙ্গে বিবৃতিতে বলেন বাংলাদেশ ও ভুটানে বিশ্বব্যাংকের কান্ট্রি ডিরেক্টর মার্সি টেম্বন।

তিনি বলেন, “সড়ক দুর্ঘটনা অসামঞ্জস্যপূর্ণভাবে দরিদ্র পরিবারগুলোকে প্রভাবিত করে। এই প্রকল্প বাংলাদেশে সড়ক নিরাপত্তা ব্যবস্থাপনা উন্নত করতে এবং মানুষের জীবনের মর্মান্তিক ক্ষয়ক্ষতি কমানোর জন্য একটি ব্যাপক কর্মসূচি তৈরি করতে সহায়তা করবে।”

সমস্যা সমাধানে ‘সামান্যই কাজে আসবে’

এ ধরনের প্রকল্প দুর্ঘটনা সমস্যা সমাধানে খুব সামান্যই কাজে আসবে বলে মনে করেন সংশ্লিষ্টরা।

বিশ্বব্যাংকের এই ঋণ “নিঃসন্দেহে এটা বাংলাদেশের জন্য ইতিবাচক খবর,” মন্তব্য করে সড়ক ও জনপথ (সওজ) অধিদপ্তরের প্রধান প্রকৌশলী মো. আবদুস সবুর বেনারকে বলেন, “দুর্ঘটনা রোধকল্পে যতই প্রকল্প গ্রহণ করা হোক না কেন, সবচেয়ে বড়ো প্রয়োজন সচেতনতা।”

“শুধু সাধারণ মানুষ বা পথচারী নয়, গাড়ির চালকের দক্ষতা এবং কর্মঘণ্টা, গাড়ির ফিটনেস, রাস্তার অবস্থাসহ বিভিন্ন বিষয় দুর্ঘটনা সঙ্গে জড়িত। এই জায়গাগুলোতেও সংশোধন দরকার,” মন্তব্য করে তিনি বলেন, “এ ধরনের প্রকল্প নিলে দুর্ঘটনা নিরসনে সমাধান খুব সামান্যই আসবে।”

বিশেষজ্ঞরা বলছেন, ২০১৮ সালে সড়ক নিরাপত্তা আন্দোলনের পর সরকারের বিভিন্ন পদক্ষেপ নেওয়া সত্ত্বেও সড়ক দুর্ঘটনার প্রবণতা কমানো সম্ভব হয়নি। বাংলাদেশ যাত্রী কল্যাণ সমিতির তথ্য মতে, ২০২১ সালে পাঁচ হাজার ৬২৯টি সড়ক দুর্ঘটনায় অন্তত সাত হাজার ৮০৯ জন নিহত এবং নয় হাজার ৩৯ জন আহত হন।

“প্রকল্প নিলেই হবে না। এর আগে বড়ো বড়ো প্রকল্পে বড়ো ধরনের ভুল হয়েছে। তাই এ ধরনের সড়ক তৈরিতে সব ধরনের স্টেক হোল্ডার নিয়ে চুলচেরা বিশ্লেষণ করে সিদ্ধান্ত নিতে হবে,” বেনারকে বলেন বাংলাদেশ পরিবেশ আন্দোলনের (বাপা) যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মারুফ হাসান।

পাশাপাশি আমাদের কিছু নীতিমালা সংশোধন করা দরকার বলেও মনে করেন তিনি।

যা থাকছে প্রকল্পে

বিশ্বব্যাংক জানিয়েছে, পাইলট প্রজেক্ট হিসেবে গাজীপুর—এলেঙ্গা মহাসড়ক এবং নাটোর—নবাবগঞ্জ মহাসড়ককে বেছে নেওয়া হবে। এই দুই সড়কের নকশা, সড়কে নির্দেশনামূলক চিহ্ন, জরুরি সেবা, পথচারীদের সুবিধা, গতি নিয়ন্ত্রণ ও জরুরি সেবা সুবিধা নিয়ে কাজ করা হবে। সমস্যা চিহ্নিত করে সড়কের উন্নয়ন ঘটানো হলে এই দুই মহাসড়কে দুর্ঘটনায় মৃত্যুর হার ৩০ ভাগ কমে যাবে।

২০১৬ সালে সড়ক দুর্ঘটনার শিকার হওয়া তিন ভাগের দুই ভাগ মানুষ হাসপাতালে নেওয়ার পথে মারা গেছেন উল্লেখ করে বিশ্বব্যাংক জানায়, এই দুটি জাতীয় সড়কের পাশে টোল ফ্রি জরুরি নাম্বারে অ্যাম্বুলেন্স সার্ভিস চালু করা হবে। নির্বাচিত জেলা হাসপাতাল ও উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে জরুরি সেবা ব্যবস্থার উন্নয়ন ঘটানো হবে।

এ ছাড়া কোথাও দুর্ঘটনা ঘটলে সমন্বিত ট্রাফিক ব্যবস্থাপনার মাধ্যমে তা চিহ্নিত করা হবে এবং পথচারীদের সচেতনতা বাড়াতে ও আচরণগত পরিবর্তনের জন্য প্রচারণাও চালানো হবে।

বিশ্বব্যাংক জানায়, এই প্রকল্পের অধীনে জেলা পর্যায়ের সড়ক উন্নয়ন, ট্রাফিক পুলিশের আধুনিকায়ন ও সক্ষমতা বাড়ানো হবে। পাশাপাশি, সড়ক নিরাপত্তা সক্ষমতা বাড়াতে বাংলাদেশ পুলিশের জন্য একটি প্রশিক্ষণ কেন্দ্র গড়ে তোলা হবে, যেখানে পেশাদার চালকদেরও প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা থাকবে।

সড়ক দুর্ঘটনার কারণ

বাংলাদেশে সড়ক দুর্ঘটনা পঙ্গুত্ব বরণের প্রথম এবং শিশু মৃত্যুর চতুর্থ কারণ বলে জানানো হয় বিশ্বব্যাংকের বিজ্ঞপ্তিতে। সড়ক দুর্ঘটনার বড়ো কারণ হিসেবে অনিরাপদ ও কম টাকায় বানানো সড়ক ও রাস্তায় দুই চাকার গাড়িসহ অনুমোদনহীন বাহন অনেক দুর্ঘটনার জন্য দায়ী বলে এতে উল্লেখ করা হয়।

প্রকল্প কাজের দলনেতা ও বিশ্বব্যাংকের জ্যেষ্ঠ পরিবহন বিশেষজ্ঞ দীপন বোস সাংবাদিকদের বলেন, “প্রাতিষ্ঠানিক সেটআপ, আইনি কাঠামো ও মনিটরিং সিস্টেমের যথার্থ সমন্বয় হলে এই প্রকল্প ফলপ্রসূ হবে।”

বাংলাদেশের স্বাধীনতার পর থেকেই নানা অনুদান, সুদমুক্ত ও রেয়াতি ঋণ দিয়ে সহায়তা করে চলেছে বিশ্বব্যাংক। বর্তমানে বাংলাদেশে বিশ্বব্যাংকের অর্থায়নে ১৪.৫ বিলিয়ন ডলারেরও বেশি অর্থের প্রকল্প চলমান আছে বলে জানিয়েছে সড়ক ও জনপথ অধিদপ্তর।

সড়কে মৃত্যু থামছে না

মঙ্গলবার রাজধানীর মিরপুর ১৪ নম্বর এলাকায় সন্তানদের স্কুলে নিয়ে যাওয়ার পথে বাসের ধাক্কায় সাবিনা ইয়াসমীন (৩১) নামের এক নারী নিহত হয়েছেন। আহত হয়েছে তাঁর দুই শিশু মেয়ে। এ ছাড়াও পৃথক দুর্ঘটনায় আরো চারজনের মৃত্যু হয়েছে বলে জানিয়েছে পুলিশ।

নিহত সাবিনার ভাই মামুন বেনারকে জানান, দুই মেয়েকে নিয়ে ব্যাটারিচালিত রিকশায় করে যাওয়ার পথে মিরপুর ১৪ নম্বর ডেন্টাল হাসপাতালের সামনে ইউটার্ন নেওয়ার সময় একটি বাস ওই রিকশাকে ধাক্কা দেয়। সাবিনা রিকশা থেকে ছিটকে পড়লে পথচারীরা তাঁকে উদ্ধার করে হাসপাতালে নেয়। সেখানে চিকিৎসক তাঁকে মৃত ঘোষণা করেন। তার আহত দুই মেয়েকে প্রাথমিক চিকিৎসা দেয়া হয়েছে।

মন্তব্য করুন

নীচের ফর্মে আপনার মন্তব্য যোগ করে টেক্সট লিখুন। একজন মডারেটর মন্তব্য সমূহ এপ্রুভ করে থাকেন এবং সঠিক সংবাদর নীতিমালা অনুসারে এডিট করে থাকেন। সঙ্গে সঙ্গে মন্তব্য প্রকাশ হয় না, প্রকাশিত কোনো মতামতের জন্য সঠিক সংবাদ দায়ী নয়। অন্যের মতামতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল হোন এবং বিষয় বস্তুর প্রতি আবদ্ধ থাকুন।