বৈধ অস্ত্রের অবৈধ ব্যবহার বন্ধে সরকারের নির্দেশ

কামরান রেজা চৌধুরী
2019.10.14
ঢাকা
বৈধ অস্ত্রের অবৈধ ব্যবহার বন্ধে সরকারের নির্দেশ র‍্যাবের হাতে জব্দ হওয়া নগদ টাকা, স্বর্ণালংকার এবং অস্ত্র। ঢাকা সেপ্টেম্বর ২৪, ২০১৯।
ফটো: বেনার নিউজ

লাইসেন্সধারী অস্ত্রের বেআইনি ব্যবহার ঠেকাতে সোমবার প্রজ্ঞাপন জারি করেছে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়।

ক্যাসিনো কেলেঙ্কারিতে র‍্যাবের অভিযানে আটক যুবলীগ নেতা জি কে শামীমের দেহ রক্ষীদের কাছ থেকে অবৈধভাবে ব্যবহার হওয়া আটটি বৈধ পিস্তল উদ্ধার হওয়ার এক মাসের কম সময়ের মধ্যে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় এই আদেশ জারি করেছে​।

আদেশে বৈধ অস্ত্রধারীদের ১৮৭৮ সালের অস্ত্র আইন এবং ‘আগ্নেয়াস্ত্রের লাইসেন্স প্রদান, নবায়ন ও ব্যবহার নীতিমালা ২০১৬’ মানতে নির্দেশ দেয়া হয়।

প্রজ্ঞাপনে যা বলা আছে

স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় থেকে জারি করা ‘আগ্নেয়াস্ত্রের লাইসেন্স প্রদান, নবায়ন ও ব্যবহার নীতিমালা ২০১৬’-এর অনুচ্ছেদ ২৫ (গ) অনুযায়ী, আগ্নেয়াস্ত্রের লাইসেন্সধারী কোনও ব্যক্তি অন্যের নিরাপত্তায় বা সম্পত্তি রক্ষায় অস্ত্রধারী প্রহরী হিসেবে নিয়োজিত হতে পারবে না।

কিন্তু তা লঙ্ঘন করে কেউ কেউ নিজের আগ্নেয়াস্ত্রসহ বেসরকারি নিরাপত্তা সংস্থায় বা অন্য ব্যক্তির দেহরক্ষী হিসেবে নিয়োজিত রয়েছে।

এ ছাড়া অনুচ্ছেদ ২৫ (ক) অনুযায়ী কোনও ব্যক্তি তার লাইসেন্স করা অস্ত্র আত্মরক্ষার জন্য বহন বা ব্যবহার করতে পারবেন। তবে অন্যের ভীতি বা বিরক্তির কারণ হতে পারে, এমনভাবে তা প্রদর্শন করতে পারবে না। এটিও লঙ্ঘন করে কেউ কেউ জনমনে ভীতি ও আতঙ্ক সৃষ্টির চেষ্টা চালাচ্ছে।

এ অবস্থায় অস্ত্র আইন-১৮৭৮ কঠোরভাবে অনুসরণ এবং বৈধ অস্ত্রের অবৈধ ব্যবহার রোধে ‘আগ্নেয়াস্ত্রের লাইসেন্স প্রদান, নবায়ন ও ব্যবহার নীতিমালা ২০১৬’-এর অনুচ্ছেদ ২৫ (গ) ও ২৫ (ক) অনুসরণ করে অস্ত্র প্রদর্শন না করতে নির্দেশ দিয়েছে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়।

আদেশ অমান্যকারী ব্যক্তিদের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা নেওয়া হবে বলে বিবৃতিতে বলা হয়েছে।

স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান বেনারকে ওই আদেশ জারি করা প্রসঙ্গে সোমবার বেনারকে বলেন, “যার নামে অস্ত্রের লাইসেন্স তিনি ছাড়া অন্য কেউ সেই বৈধ অস্ত্র ব্যবহার করতে পারবেন না। এটি আমাদের আইনে আছে। কিন্তু দেখা যাচ্ছে এই অনেকেই তা মানছেন না। সরকার এ ধরণের আইন অমান্য করা সহ্য করবে না। আর সেকারণে বৈধ অস্ত্রধারীদের সতর্ক করতে আজ এই আদেশ জারি করা হয়েছে।”

তিনি বলেন, “লাইসেন্স করা অস্ত্রের আইনসিদ্ধ ব্যবহার না করলে তিনি যে দল করুন না কেন, তার বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।”

র‍্যাবের মিডিয়া শাখার উপ পরিচালক মিজানুর রহমান বেনারকে বলেন, “আমরা লাইসেন্স করা অস্ত্রের যথেচ্ছ ব্যবহার দেখেছি।”

তিনি বলেন, “সাম্প্রতিক সময়ে আমরা বিভিন্ন অভিযান পরিচালনা করতে গিয়ে দেখেছি লাইসেন্স করা বৈধ অস্ত্র অবৈধভাবে ব্যবহৃত হচ্ছে। যেমন, ক্যাসিনো বিরোধী অভিযানে যুবলীগ নেতা জি কে শামীম তার বৈধ অস্ত্র বডিগার্ডের কাছে রেখেছিলেন।”

মিজানুর রহমান বলেন, “জিকে শামীমের বিরুদ্ধে অভিযান পরিচালনা করতে গিয়ে আমরা তার লোকজনের কাছ থেকে আটটি পিস্তল উদ্ধার করেছি। ওই আটটি পিস্তলই বিভিন্ন ব্যক্তির নামে লাইসেন্স করা। এগুলো আইনানুযায়ী ব্যবহৃত হতো না।”

অস্ত্র আইন অনুযায়ী অবৈধ অস্ত্র ব্যবহারের সর্বোচ্চ শাস্তি যাবজ্জীবন কারাদণ্ড এবং সর্বনিম্ন শাস্তি সাত বছর কারাদণ্ড।

সাবেক পুলিশ মহাপরিদর্শক একেএম শহিদুল হক বেনারকে বলেন, “দেখুন, যে ব্যক্তির নামে অস্ত্রের লাইসেন্স করা তিনি ছাড়া অন্য কেউ সেই অস্ত্র ব্যবহার অথবা রাখতে পারবেন না। এটা আইনে আছে। এই আইন ভঙ্গকারীদের বিরুদ্ধে কঠোর শাস্তির বিধান আছে।”

তিনি বলেন, “কিন্তু দেখা যায় যাদের কাছে লাইসেন্স করা অস্ত্র আছে, তারা এই আইনকে বৃদ্ধাঙ্গুলি প্রদর্শন করে এর অপব্যবহার করেন।”

শহিদুল হক বলেন, “সাধারণত ক্ষমতাসীন দল ও তার অঙ্গ সংগঠনের বিরুদ্ধে বৈধ অস্ত্রের অবৈধ ব্যবহারের অভিযোগ আছে। আর অভিযোগগুলোর সব মিথ্যা নয়। তবে, শুধু যে রাজনৈতিক দলের নেতারা বৈধ অস্ত্রের অবৈধ ব্যবহার করেন তা নয়।”

তিনি বলেন, “বড় বড় কোম্পানির মালিকেরা অস্ত্রের লাইসেন্স নিয়ে সেগুলো তাদের বডি গার্ড অথবা অন্য কারো কাছে রাখেন, যেটি সম্পূর্ন অবৈধ। আবার দেখা যায়, সেনাবাহিনীর কর্মকর্তারা চাকুরি শেষে অস্ত্রের লাইসেন্স নেন। তাদের অধিকাংশই বেসরকারি নিরাপত্তা কোম্পানিতে তাদের লাইসেন্স করা অস্ত্র ব্যবহার করেন। এটাও সম্পূর্ন আইনি বিরোধী।”

শহিদুল হক বলেন, “বৈধ অস্ত্রের অবৈধ ব্যবহার অনেকদিন ধরে চলছে। সরকার সিরিয়াস না হলে কোনও পুলিশ একা কোন আইন প্রয়োগ করতে পারবে না। সেকারণে বৈধ অস্ত্রের অবৈধ ব্যবহার কঠোরভাবে বন্ধ করা যায়নি।”

তিনি বলেন, “তবে, এই আদেশ দেখে মনে হচ্ছে সরকার বেশ সিরিয়াস। আমার মনে হয় সরকার মনে করছেন, সমস্যা প্রকট আকার ধারণ করেছে এবং এই সমস্যা আর বাড়তে দেয়া যায় না। এখনই এর লাগাম টেনে ধরা দরকার।”

শহিদুল হক আরও বলেন, “সঠিকভাবে প্রয়োগ করা গেলে, এই আদেশের মাধ্যমে অস্ত্রের ব্যবহার অনেক কমে যাবে বলে আশা করা যায়।”

মন্তব্য করুন

নীচের ফর্মে আপনার মন্তব্য যোগ করে টেক্সট লিখুন। একজন মডারেটর মন্তব্য সমূহ এপ্রুভ করে থাকেন এবং সঠিক সংবাদর নীতিমালা অনুসারে এডিট করে থাকেন। সঙ্গে সঙ্গে মন্তব্য প্রকাশ হয় না, প্রকাশিত কোনো মতামতের জন্য সঠিক সংবাদ দায়ী নয়। অন্যের মতামতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল হোন এবং বিষয় বস্তুর প্রতি আবদ্ধ থাকুন।