বঙ্গবন্ধু অবমাননা: দুই শিক্ষককে বঙ্গবন্ধুর লেখা বই পড়তে আদালতের নির্দেশ

জেসমিন পাপড়ি
2022.02.02
ঢাকা
বঙ্গবন্ধু অবমাননা: দুই শিক্ষককে বঙ্গবন্ধুর লেখা বই পড়তে আদালতের নির্দেশ ঢাকার হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের জন্ম শতবর্ষ উদযাপনের একটি ব্যানারের সামনে দিয়ে হেঁটে যাচ্ছেন এক ব্যক্তি। ৮ মার্চ ২০২০।
[এএফপি]

বাংলাদেশের প্রতিষ্ঠাতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের জন্মশতবার্ষিকীতে কেকের পরিবর্তে পাউরুটি কেটে ব্যঙ্গ করায় ‘অবমাননার’ অভিযোগে রাজশাহীর দুই মাদ্রাসা শিক্ষককে কারাদণ্ডের বদলে শাস্তি হিসেবে বঙ্গবন্ধুর লেখা তিনটি বই পড়ার আদেশ দিয়েছে আদালত।

ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনের এ মামলায় তাঁদের প্রবেশন মঞ্জুর করে মঙ্গলবার রাজশাহী সাইবার ট্রাইব্যুনালের বিচারক মো. জিয়াউর রহমান আলোচিত এই রায় দেন বলে বেনারকে জানান রাষ্ট্রপক্ষের আইনজীবী অ্যাডভোকেট ইসমত আরা।

ঘটনার সঙ্গে সংশ্লিষ্টতা প্রমাণিত না হওয়ায় মামলার ১১ আসামির মধ্যে নয়জনকে খালাস দিয়েছে আদালত।

দণ্ডিত দুজন হলেন- চাঁপাইনবাবগঞ্জ জেলার গোমস্তাপুর উপজেলার বৈরতলা দাখিল মাদ্রাসার সুপার মোহা. আব্দুস সালাম এবং একই মাদ্রাসার সহকারী শিক্ষক গোলাম কবির।

রাষ্ট্রপক্ষে আইনজীবী ইসমত আরা বেনারকে বলেন, “সাতজন সাক্ষীর সাক্ষ্যগ্রহণ শেষে দুই আসামির বিরুদ্ধে ২০১৮ সালের ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনের ২১/৩১ ধারার অপরাধ সন্দেহাতীতভাবে প্রমাণিত হয়। দণ্ডপ্রাপ্ত দুই আসামি ভুল স্বীকার করে ক্ষমাও চান।”

“তাঁদের সামাজিক ও পারিপার্শ্বিক অবস্থা বিবেচনায় এনে আদালত কারাদণ্ডের শাস্তির পরিবর্তে বঙ্গবন্ধুর লেখা তিনটি বইসহ পাঁচটি বই পড়ার শর্তে প্রবেশন মঞ্জুর করে মুক্তি দেন। মামলার অপর নয় আসামির দোষ প্রমাণ না হওয়ায় বেকসুর খালাস দেওয়া হয়েছে।”

এই মামলার রায়ের একটি কপি বেনারের হাতে এসেছে। রায়ে বলা হয়, দণ্ডিত দুই আসামি আগামী এক বছর আদালতের নিয়োগ করা একজন প্রবেশন অফিসারের তত্ত্বাবধানে থাকবেন। এই সময় তাঁদের জাতীর পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের লেখা ‘অসমাপ্ত আত্মজীবনী’, ‘কারাগারের রোজনামচা’ এবং ‘আমার দেখা নয়াচীন’ বই তিনটি পড়তে হবে।

পাশাপাশি ১৯৭১ সালের মহান মুক্তি সংগ্রাম সম্পর্কিত জাহানারা ইমামের লেখা ‘একাত্তরের দিনগুলি’ এবং রণাঙ্গনের মুক্তিযোদ্ধাদের লেখা ‘একাত্তরের চিঠি’সহ পাঁচটি বই পড়তে বলা হয়েছে। এসব বই পড়ে সহকর্মী শিক্ষক এবং নিজ শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থীদের বিষয়গুলো সম্পর্কে জানাতে বলা হয়েছে।

এছাড়া প্রবেশনের সময়ে পরিবেশের প্রতি দায়িত্বশীল হিসেবে দণ্ডিত দুই শিক্ষককে দশটি বনজ এবং দশটি ফলজ গাছ রোপণেরও নির্দেশ দিয়েছে সাইবার ট্রাইব্যুনালের রায়ে।

এ বিষয়ে দণ্ডিত শিক্ষক মোহা. আব্দুস সালাম বেনারকে বলেন, “আমি আদালতের রায় মেনে নিয়ে ইতিমধ্যে বই পড়া শুরু করেছি। সবগুলো বই এখনো হাতে পাইনি। দুএকদিনের মেধ্য পেয় যাব।”

“বঙ্গবন্ধুর লেখা অসমাপ্ত আত্মজীবনী বইটি পেয়েছি এবং পড়াও ‍শুরু করেছি। বইটি পড়ে দেশের জন্য বঙ্গবন্ধুর সংগ্রাম সম্পর্কে জানতে পারছি। এর আগে এ বিষয়গুলো আমার জানা ছিল না,” বলেন তিনি।

বই পড়ার পাশাপাশি গাছও লাগানো শুরু করেছেন জানিয়ে গোমস্তাপুর উপজেলার বৈরতলা দাখিল মাদ্রাসার এই সুপার বলেন, আমার বাড়িতে জায়গা না থাকায় মাদ্রাসায় ইতিমধ্যে আমি মেহগনি ও আম গাছের ১৫টি চারা রোপণ করেছি।”

রাজশাহীর আদালত প্রাঙ্গণে দণ্ডপ্রাপ্ত চাঁপাইনবাবগঞ্জের গোমস্তাপুর উপজেলার বৈরতলা দাখিল মাদ্রাসার সুপার মোহা. আব্দুস সালাম (বামে) ও সহকারী শিক্ষক গোলাম কবির। ০১ ফেব্রুয়ারি ২০২২। [বেনারনিউজ]
রাজশাহীর আদালত প্রাঙ্গণে দণ্ডপ্রাপ্ত চাঁপাইনবাবগঞ্জের গোমস্তাপুর উপজেলার বৈরতলা দাখিল মাদ্রাসার সুপার মোহা. আব্দুস সালাম (বামে) ও সহকারী শিক্ষক গোলাম কবির। ০১ ফেব্রুয়ারি ২০২২। [বেনারনিউজ]

এক বছর নজরদারিতে থাকবেন

সাইবার ট্রাইব্যুনালে আসা কোনো মামলায় এটিই প্রথম প্রবেশন বলে জানান আইনজীবী ইসমত আরা।

তিনি বলেন, আদালত কিন্তু আসামিদের কারাদণ্ড দিয়েছে। কিন্তু প্রবেশন পাওয়ায় বই পড়া ও গাছ লাগানোসহ বেশ কিছু শর্তে আসামিরা আপাতদৃষ্টিতে মুক্তি পেয়েছেন। তবে আগামী এক বছর তাঁরা আদালতের নজরদারিতে থাকবেন।

আদালতের রায়ে বলা হয়, আদালতের শর্ত ভঙ্গ করলে কিংবা আচরণ সন্তোষজনক না হলে তাঁদের প্রবেশন বাতিল হবে। এবং শাস্তি হিসেবে ২০১৮ সালের ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনের ২১/৩১ ধারার প্রত্যেক অপরাধের জন্য এক বছর সশ্রম কারাদণ্ড এবং ১ লাখ টাকা অর্থদণ্ড, অনাদায়ে ৩০ দিন বিনাশ্রম কারাদণ্ড ভোগ করতে হবে।

প্রবেশন কর্মকর্তা প্রতি তিনমাস পরপর দুই আসামির প্রবেশন শর্ত ও অগ্রগতি সম্পর্কে রিপোর্ট দাখিল করবেন বলেও রায়ে বলা হয়েছে।

মামলার নথি থেকে জানা যায়, গত বছরের ১৭ মার্চ চাঁপাইনবাবগঞ্জ জেলার গোমস্তাপুর উপজেলার বৈরতলা দাখিল মাদ্রাসায় দশ টাকা দামের পাউরুটি (বনরুটি) কেটে বঙ্গবন্ধুর জন্মদিন পালন করা হয়। ওই পাউরুটি কেটে শিক্ষক কর্মচারীদের মুখে দিচ্ছেন আর মাদ্রাসা সুপারকে বলছেন “ল্যাও খ্যুবড়্যা খাও।”

এর একটি ভিডিও ভাইরাল হলে আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির অবনতির আশঙ্কায় জনস্বার্থে স্থানীয় আওয়ামী লীগ কর্মী ইউনুস আলী বঙ্গবন্ধুকে অবমাননার অভিযোগে মাদ্রাসা সুপারসহ ১১ জনের বিরুদ্ধে মামলা করেন।

পুলিশ মামলার তদন্ত করে একই বছরের ১৬ সেপ্টেম্বর ১১ জনের বিরুদ্ধেই আদালতে অভিযোগপত্র দাখিল করে।

মন্তব্য করুন

নীচের ফর্মে আপনার মন্তব্য যোগ করে টেক্সট লিখুন। একজন মডারেটর মন্তব্য সমূহ এপ্রুভ করে থাকেন এবং সঠিক সংবাদর নীতিমালা অনুসারে এডিট করে থাকেন। সঙ্গে সঙ্গে মন্তব্য প্রকাশ হয় না, প্রকাশিত কোনো মতামতের জন্য সঠিক সংবাদ দায়ী নয়। অন্যের মতামতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল হোন এবং বিষয় বস্তুর প্রতি আবদ্ধ থাকুন।