বাংলাদেশে নরেন্দ্র মোদির আগমন ঠেকাতে ঢাকায় বিক্ষোভ

জেসমিন পাপড়ি
2021.03.12
ঢাকা
বাংলাদেশে নরেন্দ্র মোদির আগমন ঠেকাতে ঢাকায় বিক্ষোভ স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তী উদযাপন উপলক্ষে ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির আসন্ন বাংলাদেশ সফরের প্রতিবাদে ঢাকায় বাংলাদেশ যুব অধিকার পরিষদের বিক্ষোভ সমাবেশ। ১২ মার্চ ২০২১।
[সৌজন্যে: ফারুক হাসান/ছাত্র অধিকার পরিষদ]

ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির আগমন ঠেকাতে তীব্র আন্দোলন গড়ে তোলার ঘোষণা দিয়েছে বাংলাদেশ যুব অধিকার পরিষদ নামের একটি সংগঠন।

স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তী ও বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের জন্মশতবার্ষিকী উদযাপন উপলক্ষে নরেন্দ্র মোদি ২৬ মার্চ বাংলাদেশে আসছেন, বিষয়টি দুই দেশের সরকার নিশ্চিত করেছে। তাঁর এই আগমনের প্রতিবাদে শুক্রবার ঢাকায় বিক্ষোভ সমাবেশ করেছে কয়েকশ ছাত্র, তরুণ ও যুবক। 

সমাবেশে মোদিকে “উগ্র হিন্দুত্ববাদী ও সাম্প্রদায়িক” আখ্যা দিয়ে তাঁকে বাংলাদেশে এনে মহান মুক্তিযুদ্ধের সঙ্গে “তামাশা” না করার আহ্বান জানান সংগঠনটির অন্যতম নেতা ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদের (ডাকসু) সাবেক ভিপি নুরুল হক নুর।

জাতীয় প্রেস ক্লাবের সামনে এই বিক্ষোভ সমাবেশে বক্তারা বলেন, ভারতের যে কেউ আসুক, তাঁকে স্বাগত জানানো হবে। কিন্তু মোদিকে এনে বাংলাদেশের অসাম্প্রদায়িক চেতনায় আঘাত করতে দেওয়া হবে না।

সমাবেশে গণস্বাস্থ্য কেন্দ্রের প্রতিষ্ঠাতা ও ট্রাস্টি ডা. জাফরুল্লাহ চৌধুরী বলেন, “মাননীয় প্রধানমন্ত্রী, সাম্প্রদায়িক মোদিকে বাংলাদেশে এনে জন্মশতবার্ষিকীতে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান এবং এ দেশের সব মানুষকে অপমান করবেন না। জাতীয় স্বার্থে এ সিদ্ধান্ত প্রত্যাহার করুন।

ডা. জাফরুল্লাহ আরও বলেন, মোদি বাংলাদেশের বন্ধু নন। ভারতে তিনি হিন্দুবাদের নামে মুসলমানদের ধ্বংস করছেন। তিনি নিজের ধর্মের মানুষকেও নানা প্রতিবন্ধকতায় ফেলছেন।

সংশোধিত নাগরিকত্ব আইনের বিরুদ্ধে দিল্লীসহ ভারতে লাগাতার আন্দোলন, সহিংসতা, সাম্প্রদায়িক দাঙ্গা, অর্ধশতাধিক মানুষের মৃত্যুসহ নানা ঘটনায় বাংলাদেশের অনেকেই মোদির ওপর ক্ষুব্ধ।

এই প্রেক্ষাপটে তাঁর আগমন ঠেকাতে ওই সমাবেশ আয়োজন করা হয়। সমাবেশের পর প্রেস ক্লাব থেকে শাহবাগ এলাকায় বিক্ষোভ মিছিল করেন সংগঠনের নেতা–কর্মীরা।

‘দুই দেশের সম্পর্কে প্রভাব পড়বে না’

মোদির বাংলাদেশ সফরের বিরোধিতায় বিক্ষোভ সম্পর্কে জানতে চাইলে পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. একে আবদুল মোমেন বেনারকে বলেন, “আমরা একটি স্বাধীন, গণতান্ত্রিক দেশ। সেখানে মতের ভিন্নতা থাকবে এটাই স্বাভাবিক। এখানে যে, যার মতামত প্রকাশ করবে, সেটা বড়ো কোনো সমস্যা নয়।”

“তবে যারা বিক্ষোভ করছেন তাঁদের খুশি হওয়া উচিত ছিল এ কারণে যে, বাংলাদেশের আমাদের স্বাধীনতা দিবসের সুবর্ণজয়ন্তী এবং বঙ্গবন্ধুর শতবার্ষিকী অনুষ্ঠান উদযাপনে আসছেন ভারতের প্রধানমন্ত্রী,” বলেন তিনি।

পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, “প্রধানমন্ত্রী মোদি ১৫ মাস পরে প্রথম কোনো সফরে যাচ্ছেন, সেটা বাংলাদেশে। শুধু ঢাকায় তাঁর সফর সীমাবদ্ধ নয়, দেশের কয়েকটি স্থানে তিনি যাবেন। ঐতিহাসিক সময়ে এটা একটা ঐতিহাসিক সফর।”

ড. মোমেন বলেন, “তিনি আসলে দুদেশের মধ্যকার বিভিন্ন রকম সমস্যাসহ দ্বিপাক্ষিক সব বিষয়ে আমরা আলোচনা করব।” 

পররাষ্ট্রমন্ত্রী জানান, নরেন্দ্র মোদির পাশাপাশি স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তী এবং বঙ্গবন্ধুর শতবার্ষিকী উদযাপনে শ্রীলঙ্কা, নেপাল, ভুটান, মালদ্বীপের রাষ্ট্রপ্রধান ও সরকারপ্রধানও আসছেন। 

তবে শুক্রবারের সমাবেশে কেবল মোদির আগমনের বিরোধিতা করে বক্তব্য রাখেন বক্তারা।

“মোদি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সরকারের বন্ধু হতে পারেন, বাংলাদেশের বন্ধু নন,” সমাবেশে দেওয়া বক্তৃতায় উল্লেখ করেন নুর।

“যুব সমাজের এই প্রতিবাদ নরেন্দ্র মোদির আগমনের বিরুদ্ধে, ভারতীয় আগ্রাসনের বিরুদ্ধে” জানিয়ে সমাবেশে বাংলাদেশ যুব অধিকার পরিষদের আহ্বায়ক আতাউল্লাহ আতা বলেন, “মোদিকে বাংলাদেশে আসতে দেওয়া হবে না। মোদি আসলে আমরা কঠোর কর্মসূচি দেবো।” 

এর আগে গত বছরের ১৭ মার্চ নরেন্দ্র মোদির ঢাকায় মুজিববর্ষের অনুষ্ঠানে যোগ দেওয়ার কথা ছিল। ওই বছরের ১২ মার্চ তাঁর আমন্ত্রণ প্রত্যাহার করার জন্য সরকারের প্রতি অনুরোধ জানিয়েছিলেন ওলামা মাশায়েখরা। যদিও করোনার কারণে তাঁর ওই সফর পরে বাতিল হয়।  

“পৃথিবীর অনেক দেশেই রাজনৈতিক উদ্দেশ্য পূরণে এ ধরনের বিক্ষোভ আয়োজন করা হয়ে থাকে,” বলে বেনারের কাছে মন্তব্য করেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিভাগের অধ্যাপক ড. দেলোয়ার হোসেন।

তিনি বলেন, “একটা দেশের প্রধানমন্ত্রী বা রাষ্ট্রপতি কোন রাজনৈতিক দল থেকে আসছেন দ্বিপাক্ষিক সম্পর্কের ক্ষেত্রে সেটা মূল বিষয় নয়। এখানে নরেন্দ্র মোদি ভারতের প্রধানমন্ত্রী হিসেবে বাংলাদেশে আসবেন, সেটাই গুরুত্বপূর্ণ বিষয়।”

মোদির সফরে দুই দেশের অমীমাংসিত বিষয়গুলোর অগ্রগতি হতে পারে জানিয়ে তিনি বলেন, সফরের বিরুদ্ধে এধরনের প্রতিবাদে “দুই দেশের সম্পর্কে বিশেষ কোনো প্রভাব পড়বে না।” 

উল্লেখ্য, স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তী উপলক্ষে এ মাসের ১৭ থেকে ২৬ মার্চ দশ দিন জাতীয় পর্যায়ে বেশ কিছু অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়েছে। তাতে যোগ দিতে ২৬ মার্চ ঢাকা আসার কথা রয়েছে ভারতীয় প্রধানমন্ত্রীর।

সফরসূচি অনুযায়ী, ওই দিন সন্ধ্যায় তিনি তেজগাঁওয়ের জাতীয় প্যারেড গ্রাউন্ডে বঙ্গবন্ধু স্মারক বক্তৃতা দেবেন।

পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের তথ্য অনুযায়ী, সফরের দ্বিতীয় দিনে সাতক্ষীরার যশোরেশ্বরী মন্দির, গোপালগঞ্জের টুঙ্গিপাড়ায় বঙ্গবন্ধুর সমাধিসৌধ এবং কাশিয়ানীর ওড়াকান্দিতে মতুয়া সম্প্রদায়ের একটি মন্দির পরিদর্শন করবেন প্রধানমন্ত্রী মোদি।

মন্তব্য করুন

নীচের ফর্মে আপনার মন্তব্য যোগ করে টেক্সট লিখুন। একজন মডারেটর মন্তব্য সমূহ এপ্রুভ করে থাকেন এবং সঠিক সংবাদর নীতিমালা অনুসারে এডিট করে থাকেন। সঙ্গে সঙ্গে মন্তব্য প্রকাশ হয় না, প্রকাশিত কোনো মতামতের জন্য সঠিক সংবাদ দায়ী নয়। অন্যের মতামতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল হোন এবং বিষয় বস্তুর প্রতি আবদ্ধ থাকুন।