এক সপ্তায় বিদেশি তরুণীসহ ৪ কারাবন্দির মৃত্যু
2022.03.18
ঢাকা

চলতি সপ্তাহে দেশের বিভিন্ন কারাগারে এক নাইজেরিয়ান তরুণীসহ কমপক্ষে চারজন বন্দির মৃত্যু হয়েছে, যাদের মধ্যে বৃহস্পতিবার দিবাগত রাতে সাত ঘণ্টার ব্যবধানে নাটোর জেলা কারাগারের মারা গেছেন দুইজন।
শুক্রবার বিকেল সাড়ে তিনটার দিকে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা যান গাজীপুরের কাশিমপুর মহিলা কেন্দ্রীয় কারাগারের বন্দি চিদিম্মা আবেলফ (২৬) নামের নাইজেরিয়ান তরুণী।
এই বিদেশী তরুণীর মৃত্যুর বিষয়টি নিশ্চিত করে কাশিমপুর মহিলা কেন্দ্রীয় কারাগারের সিনিয়র জেল সুপার হালিমা খাতুন বেনারকে বলেন, “ওই নাইজেরিয়ান তরুণীর বিরুদ্ধে ঢাকার দক্ষিণখান থানায় একটি মামলা রয়েছে যেটিতে ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনের ধারাও অন্তর্ভুক্ত আছে। ওই মামলায় কাশিমপুর মহিলা কেন্দ্রীয় কারাগারে তিনি বন্দি ছিলেন।
কবে থেকে তরুণী বন্দি আছেন তাৎক্ষণিকভাবে তা নিশ্চিত করতে না পারলেও হালিমা বলেন, “বুধবার কারাগারে অসুস্থ হয়ে পড়লে প্রাথমিকভাবে তাঁকে গাজীপুর শহীদ তাজউদ্দীন আহমদ মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে পাঠানো হয় এবং পরবর্তীতে বৃহস্পতিবার উন্নত চিকিৎসার জন্য ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে পাঠানো হয়।”
তিনি জানান, এই মৃত্যুর ঘটনাটি নিয়ে ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের সাথে আলোচনা করে পরবর্তী আইনি পদক্ষেপ গ্রহণ করা হবে।
নাটোরে সাত ঘণ্টার ব্যবধানে দুই বন্দির মৃত্যু
বৃহস্পতিবার দিবাগত রাতে মাত্র সাত ঘণ্টার ব্যবধানে নাটোর জেলা কারাগারে দুইজন কয়েদির মৃত্যু হয়েছে।
হাসপাতাল ও কারাগার সূত্র জানিয়েছে, বৃহস্পতিবার রাত ৮টার দিকে ওসমান শেখ (৩৩) ও শুক্রবার ভোরে আনছার শেখ (৪৬) নামে দুজন কয়েদির মৃত্যু হয়।
মৃতদের মধ্যে আনছার শেখ ছিলেন হত্যা মামলায় দণ্ডিত আসামি এবং ওসমান শেখ বন্দি হন একটি মাদক মামলায়।
নাটোর জেলা কারাগারের জেলার মো. আবু তালেব বেনারকে বলেন, “ওসমান শেখ রাত ৮টার দিকে অসুস্থ হয়ে পড়লে নাটোর আধুনিক সদর হাসপাতালে নেওয়ার পর তাঁর মৃত্যু হয়। চলতি মাসের ১৪ তারিখে মাদক গ্রহণের অভিযোগে ভ্রাম্যমাণ আদালতে তাঁর সাজা হয়েছিল।”
আনছার শেখ নামে যে বন্দি মারা গেছেন, তিনি একটি হত্যা মামলার আসামি হিসেবে জেলখানায় ছিলেন জানিয়ে এই জেল কর্মকর্তা বলেন, “রাতে তাঁর বুকে ব্যথা শুরু হলে প্রথমে জেলখানা হাসপাতালে ও পরে নাটোর সদর হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। সেখানে চিকিৎসাধীন অবস্থায় তাঁর মৃত্যু হয়।”
ওসমানের মৃত্যুর পর স্থানীয় গণমাধ্যমকর্মীদের সাথে আলাপকালে তাঁর ভগ্নীপতি মুকুল হোসেন কারাগারে ওসমানকে নির্যাতনের অভিযোগ তুলেছেন।
তিনি বলেন, “কয়েকদিন আগে আমাদের পরিচিত একজন তার আত্মীয়কে কারাগারে দেখতে গিয়ে জানতে পারেন, ওসমানকে কারাগারে মারধর করা হয়েছে। আমরা এটা শোনার পর তাকে দেখতে যেতে চেয়েছিলাম। তার আগেই পুলিশ আমাদের জানালো ওসমান মারা গেছে।”
নির্যাতনের অভিযোগ বিষয়ে জানতে চাইলে জেল সুপার আব্দুর রহিম বেনারকে বলেন, “এই ধরনের অভিযোগ পুরোপুরি অমূলক। নিশ্চয়ই ময়নাতদন্ত প্রতিবেদনে মৃত্যুর প্রকৃত কারণ জানা যাবে।”
প্রসঙ্গত, গত রোববার বরিশাল কেন্দ্রীয় কারাগারে জহিরুল ইসলাম (২৩) নামে এক বন্দির মৃত্যুর ঘটনায়ও তাঁর পরিবার নির্যাতনের অভিযোগ তোলেন।
শের-ই বাংলা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে জহিরুলের মৃত্যুর পর পরিবারের পক্ষ থেকে গণমাধ্যমে বলা হয়, নির্যাতনেই মারা গেছেন জহিরুল। এই ঘটনার প্রেক্ষিতে এক বিবৃতিতে মানবাধিকার সংস্কৃতি ফাউন্ডেশন (এমএসএফ) উদ্বেগ প্রকাশ করে এর সুষ্ঠু তদন্তের দাবি জানায়।
কারাগারে বন্দি মৃত্যু বাড়ছে
বেসরকারি মানবাধিকার সংস্থা আইন ও সালিশ কেন্দ্রের তথ্য অনুযায়ী, চলতি বছরের প্রথম দুই মাসে কারাগারে বন্দিমৃত্যুর ঘটনা ঘটেছে ১৬টি।
সংস্থাটি বলছে, ২০২১ সালে এই ধরনের মৃত্যুর সংখ্যা ছিল ৮১টি এবং ২০২০ সালে ৭৫ জন বন্দির মৃত্যু হয়।
আসকের হিসাব অনুযায়ী, গত ৫ বছরে জেলখানায় মারা গেছেন কমপক্ষে ৩৩৮ জন বন্দি।
বন্দি মৃত্যু বিষয়ে জানতে চাইলে মানবাধিকারকর্মী নূর খান লিটন বেনারকে বলেন, “নিরাপত্তা হেফাজতে থাকা প্রতিটি মৃত্যু উদ্বেগের। প্রত্যেকটি মৃত্যুর ঘটনায় সুষ্ঠু তদন্ত হওয়া প্রয়োজন, কিন্তু তা হচ্ছে না।”
তিনি বলেন, অভিযোগ আছে কারাগারে বন্দিরা প্রয়োজনীয় চিকিৎসা থেকেও বঞ্চিত।
নির্যাতনের অভিযোগ অসত্য: আইজি প্রিজন
বন্দি নির্যাতন প্রসঙ্গে জানতে চাইলে কারা মহাপরিদর্শক (আইজি প্রিজন) ব্রিগেডিয়ার জেনারেল এ এস এম আনিসুল হক বেনারকে বলেন, “এটা কোনো অবস্থাতেই বলার সুযোগ নেই যে, বন্দিরা নির্যাতনের শিকার হন। কারাগারগুলোতে নির্যাতন করার সুযোগ নেই।”
“আমরা সব সময় বন্দিদের সর্বোচ্চ নিরাপত্তা নিশ্চিতে মনযোগী। আমরা জেলকে সব ধরনের অনিয়মের বাইরে রাখার বিষয়ে আন্তরিক,” বলেন আনিসুল।
অপর্যাপ্ত চিকিৎসা সম্পর্কে তিনি বলেন, “প্রতিটি জেলে হাসপাতাল রয়েছে। পর্যাপ্ত চিকিৎসক ও নার্সও রয়েছে এসব হাসপাতালে। তবুও কোনো রোগীকে বাইরের হাসপাতালে নেয়ার প্রয়োজন হলে তাৎক্ষণিকভাবে তা করা হয়, সুতরাং চিকিৎসার অবহেলা নিয়েও প্রশ্ন তোলার সুযোগ নেই।”
তিনি জানান, প্রতিটি বন্দি মৃত্যুর ঘটনায় তদন্ত করা হয় এবং কোনো ধরনের অনিয়ম বা অস্বাভাবিক বিষয় থাকলে বিধি মোতাবেক ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়।