অন্তর্বর্তী তালেবান সরকারকে এখনই স্বীকৃতি দেবে না বাংলাদেশ

শরীফ খিয়াম
2021.09.08
ঢাকা
অন্তর্বর্তী তালেবান সরকারকে এখনই স্বীকৃতি দেবে না বাংলাদেশ আফগানিস্তানের অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের প্রধান মোল্লা মোহাম্মদ হাসান আখুন্দ এর ছবির সামনে কয়েকজন তালেবান যোদ্ধা। ২৫ আগস্ট ২০২১।
[রয়টার্স]

আফগানিস্তানে অন্তর্বর্তীকালীন তালেবান সরকারকে এখনই বাংলাদেশ স্বীকৃতি দেবে না বলে বুধবার জানিয়েছেন পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী মো. শাহরিয়ার আলম। 

“আমরা এখনই আফগানিস্তানের নতুন সরকারকে স্বীকৃতি দেওয়ার কথা ভাবছি না,” ঢাকায় সাংবাদিকদের জানান তিনি। 

তিনি বলেন, “এ ধরনের সরকার গঠিত হওয়ার পরে যে প্রক্রিয়াগুলো হয়, অর্থাৎ অভিনন্দন জানানো অথবা না জানানো-এ ধরনের কোনো সিদ্ধান্তে আমরা যাচ্ছি না। আমরা একটি স্থায়ী সরকারের জন্য অপেক্ষা করছি।” 

নারীর অধিকারসহ মৌলিক কিছু বিষয়ে তালেবানদের নীতি গভীরভাবে পর্যবেক্ষণ করার কথা উল্লেখ করে প্রতিমন্ত্রী জানান, দেশটির উন্নয়নে জাতিসংঘ ও ইউরোপীয় ইউনিয়ন বহুপাক্ষিক উদ্যোগ নিলে ঢাকার সমর্থন থাকবে। 

এ ব্যাপারে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত সংসদীয় স্থায়ী কমিটির চেয়ারম্যান ফারুক খান বেনারকে বলেন, তালেবানদের অন্তর্বর্তীকালীন প্রশাসন “কতদিন গদিতে থাকবে তা দেখার জন্য আমাদের অপেক্ষা করা উচিত।” 

তিনি বলেন, “আমরা আশা করি যে তালেবান আফগানিস্তানের সকল জাতি, লিঙ্গ এবং জাতিগোষ্ঠীর প্রতিনিধিদের সাথে নিয়ে একটি পূর্ণাঙ্গ অন্তর্ভুক্তিমূলক সরকার গঠন করবে। আমাদের ইচ্ছা আফগানিস্তানে শান্তি, সমৃদ্ধি এবং প্রশান্তি দেখা। আমরা আফগানিস্তানে আর সহিংসতা দেখতে চাই না।” 

“তাছাড়া আফগানিস্তান অবশ্যই সন্ত্রাসী এবং জঙ্গিদের নিরাপদ আশ্রয়স্থল হতে পারে না,” বলেন বাংলাদেশের ক্ষমতাসীন দল আওয়ামী লীগের সভাপতি মণ্ডলীর সদস্য ও সাবেক বাণিজ্যমন্ত্রী ফারুক খান। 

তাঁর নেতৃত্বাধীন সংসদীয় কমিটি চলতি মাসে আফগানিস্তানের পরিস্থিতি নিয়ে একটি বিশেষ বৈঠকে বসে সরকারকে তালেবান সরকারের ব্যাপারে অবস্থান ঠিক করার পরামর্শ দেবে বলেও জানান তিনি। 

তবে দেওবন্দী মতাদর্শের অনুসারী বাংলাদেশের রাজনীতিবিদ মাওলানা আব্দুর রব ইউসুফী মনে করেন, তালিবানদের অস্থায়ী সরকারকে স্বীকৃতি দেওয়ার ব্যাপারে বাংলাদেশের কালক্ষেপণ করা ঠিক হবে না। 

তাঁর মতে, তালেবানরা মার্কিন নেতৃত্বাধীন সামরিক জোটের জবরদখল করা রাষ্ট্রে ২০ বছর অনেক ত্যাগের মধ্য দিয়ে স্বাধীনতা অর্জন করেছে। 

জমিয়তে উলামায়ে ইসলাম বাংলাদেশের সহ-সভাপতি রব বলেন, “মুক্তিযুদ্ধকারী একটি দেশ হিসেবে আমাদের আরো আগেই তালেবানদের সংগ্রামকে স্বীকৃতি দেওয়া উচিত ছিল। এখন আর বিলম্ব করা ঠিক হবে না।” 

কাবুল দখলের তিন সপ্তাহ পর তালেবানের প্রতিষ্ঠাতা প্রয়াত মোল্লা ওমরের সহযোগী হিসেবে জাতিসংঘের সন্ত্রাসী তালিকায় নাম থাকা মোল্লা মোহাম্মদ হাসান আখুন্দকে প্রধান করে মঙ্গলবার আফগানিস্তানে অস্থায়ী তত্ত্বাবধায়ক সরকার ঘোষণা করেছে তালেবান। 

নতুন সরকারের ঘোষণা দিয়ে তালেবান মুখপাত্র জাবিউল্লাহ মুজাহিদ সংবাদ সম্মেলনে বলেন, “আমরা আশা করছি, সব দেশই আমাদের এই সরকারকে স্বীকৃতি দেবে। যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে সুসম্পর্কও প্রত্যাশা করেন তিনি। 

তবে তালেবানদের এই সরকারে ভারপ্রাপ্ত স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর দায়িত্ব পেয়েছেন হাক্কানি নেটওয়ার্কের প্রধান সিরাজুদ্দিন হাক্কানি, যুক্তরাষ্ট্রে যার মাথার দাম ৫০ লাখ ডলার ধরা আছে। গোয়েন্দা সংস্থা এফবিআইর মোস্ট ওয়ান্টেড তালিকায় মঙ্গলবারও তার নাম দেখা গেছে। 

২০০৮ সালে কাবুলে হোটেলে বোমা হামলা চালিয়ে ছয়জন আমেরিকানকে হত্যার অভিযোগে তাঁকে খোঁজা হচ্ছে। 

তালেবানের নতুন সরকারের প্রধান মোল্লা মোহাম্মদ হাসান আখুন্দ তালেবানের ১৯৯৬ সালের সরকারেও মন্ত্রী ছিলেন। তালেবানের উৎপত্তিস্থল কান্দাহারে তার জন্ম। 

ওয়াশিংটনের সঙ্গে চুক্তির পর যুক্তরাষ্ট্রের সৈন্যরা আফগানিস্তান ছাড়লে দুই দশক পর ফের সরকার গঠন করেছে এই কট্টর ইসলামী গোষ্ঠী। জাতিসংঘ ও পশ্চিমা দেশগুলো অনুমোদন না দিলে আফগানিস্তানে তালেবানের এই সরকারকে বাংলাদেশও স্বীকৃতি দেবে না বলে ইতিমধ্যে গণমাধ্যমকে জানিয়েছেন পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী শাহরিয়ার আলম। 

পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী বলেন, দেশটিতে এখনো ১০ জন বাংলাদেশি আছেন। তিনজন উন্নয়ন কর্মকর্তা দেশে আসতে রাজি হলেও বাকিরা অজানা কারণে আপাতত ফিরছেন না। 

প্রতিবেদনে তথ্য দিয়ে সহায়তা করেছেন ঢাকা থেকে কামরান রেজা চৌধুরী।

মন্তব্য করুন

নীচের ফর্মে আপনার মন্তব্য যোগ করে টেক্সট লিখুন। একজন মডারেটর মন্তব্য সমূহ এপ্রুভ করে থাকেন এবং সঠিক সংবাদর নীতিমালা অনুসারে এডিট করে থাকেন। সঙ্গে সঙ্গে মন্তব্য প্রকাশ হয় না, প্রকাশিত কোনো মতামতের জন্য সঠিক সংবাদ দায়ী নয়। অন্যের মতামতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল হোন এবং বিষয় বস্তুর প্রতি আবদ্ধ থাকুন।