কঠোর গোপনীয়তায় নোবেলজয়ী ড. ইউনূসের ব্যাংক হিসাব তলব

আহম্মদ ফয়েজ
2022.01.24
ঢাকা
কঠোর গোপনীয়তায় নোবেলজয়ী ড. ইউনূসের ব্যাংক হিসাব তলব লন্ডনে ট্রাস্ট উইমেন কনফারেন্সে বক্তব্য রাখছেন ড. মুহাম্মদ ইউনূস। ১৯ নভেম্বর ২০১৪।
[রয়টার্স]

বাংলাদেশের একমাত্র নোবেলজয়ী ও গ্রামীণ ব্যাংকের প্রতিষ্ঠাতা অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ ইউনূসের ব্যাংক হিসাব ও ক্রেডিট কার্ডে গত দুই বছরে যেসব লেনদেন হয়েছে তার তথ্য চেয়ে দেশের সবগুলো ব্যাংকে চিঠি পাঠিয়েছে বাংলাদেশ ফাইন্যান্সিয়াল ইন্টেলিজেন্স ইউনিট (বিএফআইইউ)।

গত ২০ জানুয়ারি পাঠানো এই চিঠিতে ব্যাংকগুলোকে অনতিবিলম্বে তথ্যগুলো পাঠাতে বলা হয়েছে।

বিএফআইইউ ও বাংলাদেশ ব্যাংক এই চিঠির বিষয়ে কঠোর গোপনীয়তা পালন করছে এবং চিঠিতেও ব্যাংকগুলোকে বলা হয়েছে শান্তিতে নোবেলজয়ী ইউনূসের ব্যাংক হিসাব সংক্রান্ত চিঠির বিষয়টি যেন গোপন রাখা হয়।

এ বিষয়ে জানতে চাইলে বাংলাদেশ ব্যাংকের মুখপাত্র সিরাজুল ইসলাম বেনারকে বলেন, “বিএফআইইউ এমন চিঠি পাঠিয়েছে বলে শুনেছি। তবে এ বিষয়ে আমার কাছে নিশ্চিত কোনো তথ্য নেই।”

চিঠি দেওয়ার কারণ জানতে চাইলে তিনি বলেন, “বিষয়টি নিয়ে বিস্তারিত কিছু বলা আমার পক্ষে সম্ভব নয়।”

বিএফআইইউ থেকে পাঠানো চিঠির একটি কপি বেনারের হাতে এসেছে।

চিঠিতে বলা হয়েছে, গত দুই বছরে ড. ইউনূসের ব্যাংক হিসাব থেকে বা ক্রেডিট কার্ডের মাধ্যমে যেসব লেনদেন হয়েছে তার ‘সফট কপি’ যেন বিএফআইইউ বরাবর প্রেরণ করা হয়। সংশ্লিষ্ট কোনো ব্যাংকে যদি তাঁর কোনো ব্যাংক হিসাব না থাকে, তাহলে যেন লিখে দেয়া হয় ‘আমরা কোনো অ্যাকাউন্ট পরিচালনা করছি না’।

তথ্যপ্রাপ্তির সুবিধার্থে চিঠিতে ড. ইউনূসের জাতীয় পরিচয়পত্রের নম্বরও উল্লেখ করা হয়েছে।

তবে কী কারণে ক্ষুদ্র ঋণের পথিকৃৎ ও গ্রামীণ ব্যাংকের প্রতিষ্ঠাতা ড. ইউনূসের ব্যাংক হিসাব চাওয়া হয়েছে তা চিঠিতে উল্লেখ করেনি বিএফআইইউ।

চাপে রাখার চেষ্টা

বিএফআইইউ’র এই উদ্যোগ সম্পর্কে জানতে চেয়ে বেনারের পক্ষ থেকে ইউনূস সেন্টারের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা লামিয়া মোর্শেদের সাথে যোগাযোগ করা হলে তাৎক্ষণিকভাবে তিনি কোনো প্রতিক্রিয়া জানাতে অপারগতা প্রকাশ করেন।

অপরদিকে বিভিন্ন সময়ে ড. ইউনূসের পক্ষে নিযুক্ত আইনজীবী ও সুপ্রিম কোর্ট আইনজীবী সমিতির সাধারণ সম্পাদক ব্যারিস্টার রুহুল কুদ্দুস কাজল বেনারকে বলেন, “মনে হচ্ছে এটি ড. ইউনূসকে হয়রানি করা বা নানাভাবে চাপে রাখার চেষ্টা।”

“সরকার নানা কারণেই ড. ইউনূসকে পছন্দ করে না। সাম্প্রতিক সময়ের নানা ঘটনা বিশ্লেষণ করলে দেখা যাবে ভিন্ন মতের লোকদের সরকার নানা কায়দায় হয়রানি করছে। এই ঘটনাটিও সেগুলোর মতোই মনে হচ্ছে,” যোগ করেন কাজল।

তিনি আরো বলেন, “বর্তমান সরকারের বহু নেতাকর্মীর বিরুদ্ধে অবৈধ অর্থ অর্জন ও অর্থ পাচারের অভিযোগ আছে, সেসব বিষয়ে মনযোগী না হয়ে ড. মুহাম্মদ ইউনূসের মতো বিশ্ব বরেণ্য ব্যক্তির বিরুদ্ধে এই ধরনের উদ্যোগ হতাশাজনক।”

তিনি বলেন, নানা ইস্যুতে বিভিন্ন সময় ড. ইউনূসকে হয়রানির শিকার হতে দেখা যায়, এটা দেশের জন্য ভালো কোনো দৃষ্টান্ত নয়।

এর আগে ২০১৬ সালে ড. ইউনূস, ইউনূস ফ্যামিলি ট্রাস্ট, তাঁর পরিবারের সদস্যদের একক বা যৌথ নামে পরিচালিত এবং তাঁর সঙ্গে লেনদেন সংশ্লিষ্ট ব্যাংক হিসাব তলব করে জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর)। একই বছর ড. ইউনূস ও তার স্ত্রী আফরোজী ইউনূসের ব্যাংক হিসাবের তথ্য চায় বাংলাদেশ ব্যাংক।

২০০৬ সালে ড. ইউনূস ও তাঁর প্রতিষ্ঠা করা গ্রামীণ ব্যাংক শান্তিতে নোবেল পুরস্কার পেয়েছিল। প্রথম বাংলাদেশি হিসেবে তিনি নোবেল পান।

২০০৭ সালে সেনা নিয়ন্ত্রিত তত্ত্বাবধায়ক সরকারের সময় ‘নাগরিক শক্তি’ নামে একটি রাজনৈতিক দল গঠনের উদ্যোগ নিয়ে ব্যাপকভাবে আলোচনায় আসেন ড. ইউনূস।

এর পর ২০০৯ সালে আওয়ামী লীগ সরকার গঠনের পর থেকে সরকারের উচ্চপদস্থ অনেক ব্যক্তি প্রকাশ্যে ড. ইউনূসের সমালোচনা করেন।

পদ্মা সেতুর বিনিয়োগ থেকে বিশ্বব্যাংক সরে যাওয়ার কারণ হিসেবে ড. ইউনূসের ভূমিকা ছিল বলে সরকারের পক্ষ থেকে বিভিন্ন সময় বলা হচ্ছে। আগামী ২৩ জুন সরকারের টাকায় তৈরি করা পদ্মা সেতু উদ্বোধন করা হবে।

সরকারের সঙ্গে টানাপড়েনের প্রেক্ষাপটে ২০১১ সালে গ্রামীণ ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালকের পদ থেকে সরে দাঁড়ান ড. ইউনূস।

সম্প্রতি জাতিসংঘ ফাউন্ডেশনের ২০২১ সালের ‘চ্যাম্পিয়ন অব গ্লোবাল চেঞ্জ’পুরস্কার পেয়েছেন তিনি। নিউইয়র্কে গত ৯ ডিসেম্বর অনুষ্ঠিত ‘উই দ্য পিপলস’ অনুষ্ঠানে জাতিসংঘের উপ-মহাসচিব আমিনা জে মোহামেদ আনুষ্ঠানিকভাবে এই পুরস্কার তুলে দেন।

ইউনূস সেন্টার সূত্রে জানা গেছে, ‘চ্যাম্পিয়ন অব গ্লোবাল চেঞ্জ’ ও শান্তিতে নোবেল পুরস্কারসহ অর্থনীতিবিদ ড. ইউনূসের ঝুলিতে রয়েছে ১৪৫টি পুরস্কার।

মন্তব্য করুন

নীচের ফর্মে আপনার মন্তব্য যোগ করে টেক্সট লিখুন। একজন মডারেটর মন্তব্য সমূহ এপ্রুভ করে থাকেন এবং সঠিক সংবাদর নীতিমালা অনুসারে এডিট করে থাকেন। সঙ্গে সঙ্গে মন্তব্য প্রকাশ হয় না, প্রকাশিত কোনো মতামতের জন্য সঠিক সংবাদ দায়ী নয়। অন্যের মতামতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল হোন এবং বিষয় বস্তুর প্রতি আবদ্ধ থাকুন।