ঢাকায় এক চীনা নাগরিকের মাটিচাপা দেওয়া লাশ উদ্ধার

জেসমিন পাপড়ি
2019.12.11
ঢাকা
191211_Chinese_citizen_killed_1000.jpg ঢাকায় নিজের বাসার পেছন থেকে চীনা নাগরিক গাউজিয়াং হুই এর লাশ উদ্ধারের পর ময়না তদন্তের জন্য নিয়ে যাচ্ছে পুলিশ। ১১ ডিসেম্বর ২০১৯।
[বেনারনিউজ]

রাজধানীর বনানী এলাকা থেকে একজন চীনের নাগরিকের মাটিচাপা দেওয়া লাশ উদ্ধার করেছে পুলিশ। গাউজিয়াং হুই (৪৭) নামের ওই ব্যক্তি পদ্মা সেতুতে পাথর সরবরাহের ব্যবসা করতেন।

নিহতের বাড়ি চীনের ফুজিয়ানে। এ হত্যার রহস্য উদ্‌ঘাটনে পুলিশের প্রতি আহ্বান জানিয়েছে ঢাকার চীন দূতাবাস।

বুধবার দুপুরে বনানীর এ ব্লকের ২৩ নম্বর রোডের ২৮ নম্বর বাড়ির সীমানা দেওয়ালের ভেতর থেকে গাউজিয়াং এর লাশ উদ্ধার করে পুলিশ। তাঁর গলায় আঘাতের চিহ্ন রয়েছে বলে জানান তাঁরা।

পুলিশের গুলশান বিভাগের উপকমিশনার সুদীপ চক্রবর্তী সাংবাদিকদের বলেন, “ধারণা করা হচ্ছে ব্যবসায়িক দ্বন্দ্ব বা ব্যক্তিগত বিরোধের জের ধরে গাউজিয়াংকে খুন হয়েছেন। প্রাথমিকভাবে মনে হচ্ছে তাঁকে শ্বাসরোধ করে হত্যা করা হয়েছে।”

তিনি বলেন, “গত মঙ্গলবার সন্ধ্যার পর থেকে গতকাল বুধবার ভোরের মধ্যে যে কোনো সময় গাউজিয়াংকে হত্যা করা হয়। লাশ লুকাতে ভবনের পেছনের সীমানা প্রাচীরের ভেতরে খালি জায়গায় মাটিচাপা দেওয়া হয়।”

বনানী থানার (ওসি) নূরে আযম মিয়া জানান, চীনের দূতাবাসের প্রতিনিধি এ ঘটনার রহস্য উদ্‌ঘাটন ও বিচার দাবি করেছেন। আমরা তদন্ত চালিয়ে যাচ্ছি। ইতিমধ্যে নিহতের গাড়িচালক, গৃহকর্মী ও নিরাপত্তা কর্মীসহ ছয়জনকে আটক করে জিজ্ঞাসাবাদ করছে পুলিশ।

যেভাবে খোঁজ মেলে

বনানীর এ ব্লকের ২৩ নম্বর সড়কের ৮২ নম্বর ১১ তলা বাড়ির ছয়তলায় (৬-বি নম্বর) ফ্ল্যাটে ভাড়া চীনের এই নাগরিক গাউজিয়াং। জানা যায়, দেশ থেকে তাঁর স্ত্রী-সন্তানেরা সেখানে বেড়াতেও আসতেন মাঝে মাঝে।

বাড়ির নিরাপত্তা কর্মী আবদুর রউফ বেনারকে বলেন, “মঙ্গলবার বিকেল চারটার দিকে গাউজিয়াং গাড়িতে করে বাসায় ফেরার পর তাঁর গাড়িচালক সুলতান আহমেদ ও গৃহকর্মী বেরিয়ে যান। সন্ধ্যার পর গাউজিয়াং বাসা থেকে বের হননি।”

তিনি জানান, পরদিন (বুধবার) সকালে গাড়িচালক ও গৃহকর্মী এসে গাউজিয়াংকে না পেয়ে খোঁজাখুঁজি করতে থাকেন। একপর্যায়ে গাড়িচালক সুলতান বাড়ির পেছনে মাটি চাপা দেওয়া একটি লাশের পা ও মাথার চুল দেখতে পান।

“গাড়িচালক সুলতান এসে নিরাপত্তা তত্ত্বাবধায়ক লাবলু আহমেদকে জানালে তিনি বনানী থানায় জানান। পরে পুলিশ এসে গাউজিয়াংয়ের লাশ উদ্ধার করে,” বলছিলেন তিনি।

গুলশান বিভাগের উপকমিশনার সুদীপ চক্রবর্তী জানান, বেলা ১২টার দিকে তাঁর নেতৃত্বে ঘটনাস্থলে যান এবং পুলিশের অপরাধ তদন্ত বিভাগের (সিআইডি) অপরাধ শনাক্তকরণ দল ও ঢাকা মহানগর পুলিশের (ডিএমপি) গোয়েন্দা বিভাগকে (ডিবি) ও চীনা দূতাবাসকে খবর দেওয়া হয়।

“সবার উপস্থিতিতে মাটি সরিয়ে লাশ উদ্ধার করা হয়। এ সময় গাউজিয়াংয়ের লাশ শনাক্ত করা হয়। তাঁর গলায় আঘাতের চিহ্ন রয়েছে। তাঁর নাক, মুখ ও কান দিয়ে রক্ত বের হচ্ছিল,” বলেন সুদীপ চক্রবর্তী।

বুধবার বিকেলে ঘটনাস্থলে গিয়ে দেখা যায়, “চারদিকে হলুদ ফিতা দিয়ে ঘিরে রাখা হয়েছে। পুলিশ কর্মকর্তারা গাউজিয়াংয়ের ফ্ল্যাটে অনুসন্ধান করছিলেন।

বাড়িটির নিচতলায় চীনা দূতাবাসের একজন ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা উপস্থিত থাকলেও তিনি সাংবাদিকদের সাথে কথা বলেননি। তবে পুলিশের কাছে এ ঘটনার রহস্য উদ্ঘাটন ও বিচার দাবি জানান।

বাসার ভেতরে ধস্তাধস্তির চিহ্ন

নিহতের বাসায় অনুসন্ধান শেষে পুলিশ কর্মকর্তারা জানান, বাসার ভেতরে দরজার কাছে ধস্তাধস্তি হয়েছে, এমন পায়ের ছাপের চিহ্ন রয়েছে। এ ছাড়া এক জোড়া স্যান্ডেলের ওপর কয়েক ফোঁটা জমাট বাঁধা রক্তও দেখা গেছে।

সুদীপ চক্রবর্তী বলেন, “তাঁকে বাসায় খুন করা হয়েছে। পরে লাশ লিফট বা সিঁড়ি দিয়ে নামিয়ে ভবনের পেছনে আনা হয়। তবে ক্লোজড সার্কিট ক্যামেরা (সিসি) নষ্ট থাকায় সেই দৃশ্য ধরা পড়েনি।”

তিনি বলছিলেন, “গাউজিয়াংয়ের লাশ সিঁড়ির পেছন দিয়ে নিয়ে গুম করা হয়। বিষয়টি কর্তব্যরত নিরাপত্তা কর্মীদের চোখ এড়িয়ে যাওয়ার কথা নয়।”

ডিবির উত্তর বিভাগের উপকমিশনার মশিউর রহমান বেনারকে বলেন, “সিসি ক্যামেরা চালু না থাকাটা দুঃখজনক। এটি চালু থাকলে হত্যাকারীদের শনাক্ত করা অনেক সহজ হতো।”

সিসি ক্যামেরা চালু না থাকার জন্য নির্মাণ প্রতিষ্ঠানকেই দায়ী করেন তিনি।

পুলিশ জানায়, সম্প্রতি স্ত্রী ও সন্তানেরা বাংলাদেশে আসেন। গত ২০ নভেম্বর চীনে পৌঁছে দিয়ে গত ৭ ডিসেম্বর আবার ঢাকায় ফেরেন গাউজিয়াং।

গাউজিয়াং দীর্ঘ দিন থেকে বাংলাদেশ বসবাস করছেন। তিনি পদ্মা সেতুসহ বাংলাদেশে চীনের বাস্তবায়িত বিভিন্ন প্রকল্পে পাথর সরবরাহের ব্যবসা করতেন বলে জানায় পুলিশ।

মন্তব্য করুন

নীচের ফর্মে আপনার মন্তব্য যোগ করে টেক্সট লিখুন। একজন মডারেটর মন্তব্য সমূহ এপ্রুভ করে থাকেন এবং সঠিক সংবাদর নীতিমালা অনুসারে এডিট করে থাকেন। সঙ্গে সঙ্গে মন্তব্য প্রকাশ হয় না, প্রকাশিত কোনো মতামতের জন্য সঠিক সংবাদ দায়ী নয়। অন্যের মতামতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল হোন এবং বিষয় বস্তুর প্রতি আবদ্ধ থাকুন।