উপজেলা ও সিটি নির্বাচনে ভোটারদের আগ্রহ নেই
2019.02.08
ঢাকা

বিএনপির নেতৃত্বাধীন সরকার বিরোধী জোট জাতীয় ঐক্যফ্রন্ট স্থানীয়সহ সব রকম নির্বাচন বর্জনের ঘোষণা দেওয়ায় এসব নির্বাচন ঘিরে সাধারণ ভোটারদের আগ্রহ কমে গেছে। জাতীয় নির্বাচনের মাধ্যমে সরকার আবার ক্ষমতায় ফিরে আসার প্রক্রিয়ায় ভোট কারচুপিসহ নানা অনিয়মের অভিযোগ তুলে আবার নির্বাচনের দাবি তুলছে সরকারবিরোধী জোট।
আগামী ১০ মার্চ থেকে শুরু হবে উপজেলা পরিষদ নির্বাচন, জাতীয় সংসদ নির্বাচনের পর এটাই দেশের সবচেয়ে বড় স্থানীয় নির্বাচন। তার আগে ২৮ ফেব্রুয়ারি ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনে মেয়র পদে নির্বাচন হবে।
নির্বাচনগুলো ‘একতরফা’ হওয়ায় প্রকৃত নির্বাচন হবে না বলে মত দিয়েছেন বিশ্লেষক, বিরোধী পক্ষ এবং সাধারণ ভোটারদের অনেকেই।
সাবেক নির্বাচন কমিশনার ও গবেষক ড. সাখাওয়াত হোসেন বেনারকে বলেন, “একটা দেশে যখন অনেকগুলো নির্বাচন হয়, অথচ প্রত্যেকটির গ্রহণযোগ্যতা নিয়ে প্রশ্ন থাকে; যখন মানুষ নির্বাচনে ভোট দিতে পারে না, তখন সেই নির্বাচন ব্যবস্থার প্রতি জনগণের আস্থা উঠে যাওয়াটাই স্বাভাবিক।”
“এমন অবস্থায় সাধারণ মানুষ ভোট দিতেও আগ্রহ হারায়। বাংলাদেশে এখন তাই হচ্ছে। এখানে নির্বাচন আয়োজক প্রতিষ্ঠানের প্রতি রাজনৈতিক দল ও মানুষের আস্থা উঠে গেছে,” বলেন এই সাবেক সামরিক কর্মকর্তা।
গত ৩০ ডিসেম্বরের জাতীয় নির্বাচনে আওয়ামী লীগ জয় পেয়ে টানা তৃতীয়বারের মতো সরকার গঠনের দুই-তিন মাসের মধ্যে অনুষ্ঠিতব্য স্থানীয় সরকারের এই নির্বাচনগুলো বিরোধী শক্তি বর্জনের ঘোষণা দিয়েছে। ফলে এসব নির্বাচন ঘিরে মানুষের মধ্যে আগ্রহ দেখা যাচ্ছে না।
বিএনপি'র সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী বেনারকে বলেন, “দেশে এখন ভোট হচ্ছে না, ভোটের নাটক হচ্ছে।”
“এমন ভোটে অংশ না নিলে বিএনপি জনবিচ্ছিন্ন হবে না। বরং নির্বাচনই জনগণ থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে যাবে। মানুষের ভোটাধিকার কেড়ে নিয়ে এবং একতরফা ভোট করে আওয়ামী লীগ বেশিদিন ক্ষমতায় থাকতে পারবে না,” বলেন তিনি।
একাদশ সংসদে যোগদান না করার সিদ্ধান্তে অটল বিএনপি থেকে নির্বাচিত সংসদ সদস্যরা এখনও শপথ নেননি। তাঁদের ছাড়াই জাতীয় সংসদের প্রথম অধিবেশন শুরু হয়েছে।
ড. সাখাওয়াত বলেন, “বিগত জাতীয় নির্বাচন নিয়ে বিরোধী দলগুলো সবাই অসংখ্য অনিয়মের অভিযোগ করেছে। এমনকি সরকার দলীয় জোটের শরিক জাসদের (জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দল) একটি অংশও অনিয়মের কথা বলেছে। অতএব এসব অভিযোগ হাওয়ায় উড়িয়ে দেওয়ার সুযোগ নেই।”
নির্বাচন ৪৮০ উপজেলায়
উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে মনোনয়ন লাভের জন্য সরকারি দল আওয়ামী লীগের ধানমন্ডি কার্যালয়ে গত মঙ্গলবার থেকে বৃহস্পতিবার পর্যন্ত তৃণমূল থেকে আসা হাজার হাজার নেতাকর্মীর ভীড় ছিল। যদিও মাঠ পর্যায়ে এই নির্বাচনের কোনও উত্তাপ নেই।
কোথাও দেখা মিলছে না প্রতিযোগিতামূলক দৃশ্যপট। এরই মধ্যে বুধবার ঢাকায় এক অনুষ্ঠানে প্রধান নির্বাচন কমিশনার কেএম নূরুল হুদা বলেন, “অনিয়ম হলে প্রয়োজনে উপজেলা পরিষদ নির্বাচন বন্ধ করে দেওয়া হবে। কিন্তু এর সঙ্গে কোনো আপস করা যাবে না।”
দেশের ৪৯২টি উপজেলার মধ্যে অন্তত ৪৮০টির চেয়ারম্যান, ভাইস চেয়ারম্যান ও নারী ভাইস চেয়ারম্যান পদে মার্চের দ্বিতীয় সপ্তাহ থেকে ভোট শুরু হবে । মোট পাঁচ ধাপে এসব উপজেলায় ভোট করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে নির্বাচন কমিশন।
এর মধ্যে প্রথম ধাপে ১০ মার্চ ৮৭ উপজেলা এবং ১৮ মার্চ ১২৯ উপজেলায় ভোট অনুষ্ঠিত হবে।
মনোনয়নেও অনিয়ম
আওয়ামী লীগের গঠনতন্ত্রে উপজেলা কমিটির বর্ধিত সভায় উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান পদে মনোনয়ন দেওয়ার নিয়ম থাকলেও অনেক জায়গায় সংসদ সদস্যরা প্রভাব খাটিয়ে একক নাম পাঠাচ্ছেন বলে অভিযোগ উঠেছে।
তবে দলের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের সাংবাদিকদের বলেন, “এ রকম অভিযোগ আসতে পারে। তবে কেউ কোনো অনিয়ম করল কিনা সেটা দেখার জন্য আমাদের মনোনয়ন বোর্ড রয়েছে।”
উল্লেখ্য, ২০১৪ সালে ছয় দফায় সর্বশেষ উপজেলা পরিষদ নির্বাচন হয়। উপজেলা পরিষদ আইন অনুযায়ী, পরিষদের মেয়াদ শেষ হওয়ার ১৮০ দিনের মধ্যে নতুন নির্বাচন অনুষ্ঠান করতে হবে।
ঢাকা উত্তরের চালচিত্র
বিগত ২০১৭ সালের নভেম্বরে মেয়র আনিসুল হকের মৃত্যুতে ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের মেয়র পূদ শূন্য হয়েছিল। মেয়র পদের সঙ্গে উত্তরের নতুন ১৮টি ওয়ার্ডে এবং ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের নতুন ১৮টি ওয়ার্ডে কাউন্সিলর পদে নির্বাচন অনুষ্ঠিত হচ্ছে।
বিভিন্ন শ্রেণি ও পেশার ভোটাদের সঙ্গে কথা বলে দেখা গেছে ২৮ ফেব্রুয়ারির সিটি নির্বাচন নিয়ে তাদের কোনো আগ্রহ নেই। ফার্মগেটে এলাকার বাসিন্দা মহিউদ্দিন আহমেদ বেনারকে বলেন, “এ নিয়ে মাথা ঘামিয়ে লাভ নেই।”
“আমরা ভোট দিলেও আওয়ামী লীগ জিতবে, না দিলেও আওয়ামী লীগ জিতবে। এখন তো আর কোনও দলই নাই,” যোগ করেন ফুটপাতের এই কাপড় বিক্রেতা।
উল্লেখ্য, ২০১৫ সালের ২৮ এপ্রিল ঢাকার দুই সিটি ভোটগ্রহণ অনুষ্ঠিত হয়েছিল। সে অনুযায়ী ২০১৯ সালের মে মাসেই নতুন নির্বাচিতদের মেয়াদ পূর্ণ হবে।
মেয়র প্রার্থী ব্যবসায়ীরা
ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের মেয়র পদের উপ-নির্বাচনে আওয়ামী লীগের প্রার্থী হয়েছেন দেশের পোশাক শিল্প মালিকদের সংগঠন বাংলাদেশ পোশাক প্রস্তুতকারক ও রপ্তানিকারক সমিতির (বিজিএমইএ) সাবেক সভাপতি এবং ধনাঢ্য ব্যবসায়ী মো. আতিকুল ইসলাম।
বিএনপি বা তার সহযোগী দলগুলো থেকে কেউ প্রার্থী না হলেও ধনকুবের মুসা বিন শমসেরের ছেলে, নবগঠিত দল জাতীয়তাবাদী গণতান্ত্রিক আন্দোলনের (এনডিএম) প্রতিষ্ঠাতা সভাপতি ববি হাজ্জাজ মেয়র পদে দাঁড়িয়েছেন।
এছাড়া স্বতন্ত্র হিসেবে মেয়র হতে লড়ছেন আরেক ধনাঢ্য ব্যবসায়ী নর্থ সাউথ প্রপার্টি ডেভেলমেন্ট লিমিটেডের চেয়ারম্যান মোহাম্মদ আব্দুর রহিম।
এ পদের অপর দুই প্রার্থী হলেন ন্যাশনাল পিপলস পার্টির (এনপিপি) আনিসুর রহমান দেওয়ান এবং প্রগতিশীল গণতান্ত্রিক দলের (পিডিপি) নেতা শাহীন খান।
মোট ছয়জন মনোনয়নপত্র জমা দিলেও বাছাইয়ে বাদ পড়েছেন জাতীয় পার্টির (জাপা) প্রার্থী শাফিন আহমেদ। তবে বিভাগীয় কমিশনারের কাছে আপিল করেছেন এই জনপ্রিয় সঙ্গীত শিল্পী।
উল্লেখ্য, ঢাকা উত্তরের সাবেক মেয়র আনিসুলও স্বনামধন্য ব্যবসায়ী ছিলেন।