খালেদার নির্বাচন প্রশ্নে আদালতের বিভক্ত রায়
2018.12.11
ঢাকা

দলের অন্যান্য প্রার্থীরা সোমবার থেকে আনুষ্ঠানিক নির্বাচনী প্রচারণা শুরু করলেও দুর্নীতির মামলায় সাজাপ্রাপ্ত ও কারারুদ্ধ বিএনপি প্রধান খালেদা জিয়া একাদশ সংসদ নির্বাচনে অংশগ্রহণ করতে পারবেন কি না তা এখনো নিশ্চিত নয়।
ফেনী-১, বগুড়া-৬ ও বগুড়া-৭ আসনের মনোনয়নপত্র বাতিল হয়ে যাওয়ার পর নির্বাচন কমিশনের সিদ্ধান্তের বিরুদ্ধে উচ্চ আদালতে আপিল করেন খালেদা জিয়া। তবে সোমবার শুনানি শেষে মঙ্গলবার হাইকোর্ট থেকে বিভক্ত রায় এলো।
দুই সদস্যের হাইকোর্ট বেঞ্চের বিচারক বিচারপতি সৈয়দ রেফাত আহমেদ খালেদা জিয়াকে নির্বাচনে যোগ্য ঘোষণা করে তাঁর মনোনয়নপত্র গ্রহণ করতে নির্বাচন কমিশনকে আদেশ দেয়ার পক্ষে মত দেন বলে বেনারকে জানান খালেদা জিয়ার আইনজীবী কাওসার কামাল।
“তবে ওই বেঞ্চের আরেক আইনজীবী বিচারপতি মো. ইকবাল কবির খালেদা জিয়াকে নির্বাচনে অযোগ্য ঘোষণা করেন,” বলেন তিনি।
এর ফলে ৩০ ডিসেম্বর সাধারণ নির্বাচনে অংশগ্রহণের পথ খুলল না খালেদা জিয়ার।
উচ্চ আদালতের আদেশ ব্যাখ্যা করতে গিয়ে অ্যাটর্নি জেনারেল মাহবুবে আলম সাংবাদিকদের বলেন, “যেহেতু দুইজন বিচারপতি ঐকমত্যে পৌঁছাতে পারেননি, সেজন্য এখন বিষয়টি প্রধান বিচারপতির কাছে যাবে। তিনি পরবর্তী বেঞ্চ নির্ধারণ করে দেবেন।”
আইন অনুযায়ী, খালেদা জিয়ার আপিল আবেদনটি সুরাহা করতে হাইকোর্টের আরেক বেঞ্চে পাঠাবেন প্রধান বিচারপতি।
কাওসার কামাল বলেন, “খালেদা জিয়ার মনোনয়ন অবৈধ ঘোষণা করার পর আমরা নির্বাচন কমিশনের সিদ্ধান্তের বিরুদ্ধে হাইকোর্টে আপিল করি। আজ বিভক্ত রায় এসেছে।”
“আমরা আশা করি তৃতীয় বেঞ্চে ন্যায়বিচার পাব; খালেদা জিয়া নির্বাচনে অংশগ্রহণ করতে পারবেন,” বলেন তিনি।
নতুন হাইকোর্ট বেঞ্চের রায় খালেদা জিয়ার পক্ষে গেলে সুপ্রিম কোর্টে আপিল করতে পারবে নির্বাচন কমিশন।
সুতরাং, খালেদা জিয়ার অংশগ্রহণের বিষয়টির সুরাহা সময় সাপেক্ষ হয়ে যেতে পারে বলে বেনারকে জানান আইনজীবী মিজানুর রহমান।
নিম্ন আদালতে জিয়া এতিমখানা ট্রাস্ট ও জিয়া দাতব্য ট্রাস্ট মামলায় মোট ১৭ বছরের কারাদণ্ডে দণ্ডিত হয়েছেন বিএনপি প্রধান খালেদা জিয়া। এ বছর ৮ ফেব্রুয়ারি থেকে কারাগারে রয়েছেন তিনি।
দুর্নীতির দায়ে দণ্ডিত হওয়ায় খালেদা জিয়ার মনোনয়নপত্র প্রথমে রিটার্নিং কর্মকর্তা ও পরে নির্বাচন কমিশন বাতিল করে।
কমিশন বলছে, সংবিধানের ৬৬ অনুচ্ছেদ অনুযায়ী নৈতিক স্খলন ও দুর্নীতির দায়ে দুই বছরের সাজাপ্রাপ্ত হলে কোনো ব্যক্তি নির্বাচনে অযোগ্য হবেন। সে কারণেই তাঁর প্রার্থিতা বাতিল হয়েছে।
সোমবার উচ্চ আদালতে খালেদা জিয়ার পক্ষে শুনানি করেন এজে মোহাম্মদ আলী ও রাষ্ট্রপক্ষের শুনানি করেন অ্যাটর্নি জেনারেল মাহবুবে আলম।
খালেদা জিয়ার আইনজীবী এজে মোহাম্মদ আলী আদালতে বলেন, খালেদা জিয়া তার দণ্ডের বিরুদ্ধে উচ্চ আদালতে আপিল করেছেন। আপিল বিভাগে দণ্ডিত না হওয়া পর্যন্ত তাঁকে সাজাপ্রাপ্ত বলা যাবে না।
তাই তিনি নির্বাচনে অংশগ্রহণ করতে পারবেন বলে মত দেন মোহাম্মদ আলী।
তবে অ্যাটর্নি জেনারেল মাহবুবে আলম সোমবার বেনারকে বলেন, “সংবিধানের বিধান মতে দুর্নীতি ও নৈতিক স্খলনের দায়ে দুই বছরের সাজাপ্রাপ্ত হলে কোনো ব্যক্তিই নির্বাচনে অংশ নিতে পারবেন না।”
“খালেদা জিয়ার ক্ষেত্রেও এই বিধান প্রযোজ্য। এটি একটি মীমাংসিত বিষয়। সংবিধানের বিধান। আইন সবার জন্য সমান,” বলেন তিনি।
এদিকে আদালতে বিভক্ত রায়ের প্রতিক্রিয়ায় বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী মঙ্গলবার দলীয় কার্যালয়ে এক সাংবাদিক সম্মেলনে বলেন, “উচ্চ আদালতের বিভক্ত রায়ের পেছনে সরকারের ‘হাত’ আছে।”
তিনি বলেন, “এটা সুস্পষ্টই যে, পেছনে সরকার কলকাঠি নাড়ছে। না হলে দ্বিধা-বিভক্ত রায় হবে কেন?”
খালেদা জিয়ার প্রার্থিতা নিশ্চিত করতে বিএনপি আইনি লড়াই চালিয়ে যাবে বলেও জানান রিজভী।
আবার আটকে গেলেন টুকু, দুলু
সোমবার হাই কোর্টের রায়ে প্রার্থিতা ফিরে পাওয়া বিএনপি নেতা ইকবাল হাসান মাহমুদ টুকু ও রুহুল কুদ্দুস তালুকদার দুলুর নির্বাচনে অংশগ্রহণ পুনরায় অনিশ্চয়তায় পড়ে গেলো।
টুকু ও দুলুর প্রার্থিতার পক্ষে সোমবার দেয়া উচ্চ আদালতের রায়ের বিরুদ্ধে মঙ্গলবার আপিল করেছে নির্বাচন কমিশন।
ফলে সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগে নিজেদের পক্ষে রায় না পেলে নির্বাচন করতে পারবেন না এই দুই বিএনপি নেতা।
নির্বাচন কমিশনে মার্কিন রাষ্ট্রদূত
নব-নিযুক্ত মার্কিন রাষ্ট্রদূত আর্ল আর. মিলার মঙ্গলবার নির্বাচন কমিশনে এসে প্রধান নির্বাচন কমিশনার কেএম নুরুল হুদার সাথে সাক্ষাত করেন।
সাক্ষাত শেষে তিনি সাংবাদিকদের বলেন, রাজনৈতিক পরিচয় নির্বিশেষে প্রত্যেকের উচিৎ শান্তিপূর্ণভাবে ও দায়িত্বের সাথে আচরণ করা। প্রত্যেকের উচিৎ সহিংসতা পরিহার করা।
তিনি বলেন, “বাংলাদেশের জনগণের প্রত্যাশা অনুযায়ী ৩০ ডিসেম্বর নির্বাচনে অংশগ্রহণ করতে সকলকে উদ্বুদ্ধ করে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র।”
নতুন মার্কিন রাষ্ট্রদূত বলেন, তার দেশ আশা করে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার প্রতিশ্রুতি অনুযায়ী আগামী নির্বাচন ‘অবাধ, সুষ্ঠু ও গ্রহণযোগ্যভাবে’ অনুষ্ঠিত হবে।