আনুষ্ঠানিক নির্বাচনী প্রচারণায় দুই রাজনৈতিক জোট

জেসমিন পাপড়ি
2018.12.12
ঢাকা
181212_Election_Campaign1000.JPG সিলেটে হযরত শাহজালাল এর মাজার জিয়ারতের পর আনুষ্ঠানিকভাবে নির্বাচনী প্রচারণা শুরু করেন জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের আহবায়ক ড. কামাল হোসেন। ১২ ডিসেম্বর ২০১৮।
[বেনারনিউজ]

দেশের দুই প্রান্ত থেকে আনুষ্ঠানিকভাবে একাদশ জাতীয় সংসদের নির্বাচনী প্রচার শুরু করেছেন প্রধান রাজনৈতিক দুই জোটের নেতারা।

বুধবার গোপালগঞ্জের টুঙ্গিপাড়ায় বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের সমাধিসৌধে পুষ্পস্তবক অর্পণের মাধ্যমে আওয়ামী লীগের নির্বাচনী প্রচার শুরু করেন দলের সভাপতি শেখ হাসিনা। সেখানে জনসভায় আবারও তাঁর দলকে নির্বাচিত করার আহবান জানান তিনি।

আর সিলেটে হযরত শাহজালাল (রহঃ) মাজার জিয়ারতের মাধ্যমে প্রচারণা শুরু করেছেন জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের আহবায়ক ড. কামাল হোসেন। যত যা-ই হোক না কেন শেষ পর্যন্ত ভোটের লড়াইয়ে থেকে সুষ্ঠু নির্বাচন দিতে বাধ্য করতে নেতাকর্মীদের প্রতি আহ্বান জানান তিনি।

এদিকে বুধবার পাল্টাপাল্টি অভিযোগ নিয়ে পৃথকভাবে নির্বাচন কমিশনে (ইসি) যান ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ ও তাঁদের প্রতিদ্বন্দ্বি বিএনপির কেন্দ্রীয় নেতারা। আওয়ামী লীগ ইসিকে সতর্ক করেছে আর সিইসিকে অসহায় মনে করছে বিএনপি।

নির্বাচনে প্রচারণার দ্বিতীয় দিনে প্রাণহানি, হামলা, ও সংঘর্ষের ঘটনায় বিব্রত হয়েছেন প্রধান নির্বাচন কমিশনার (সিইসি) কে এম নূরুল হুদা। তবে পরিস্থিতি সামাল দিতে বৃহস্পতিবার পর্যন্ত পরিস্থিতি উন্নয়নে দৃশ্যমান কোনো ব্যবস্থা নেয়নি ইসি।

এরমধ্যে বুধবার বাংলাদেশ সময় রাত নয়টা পর্যন্ত ১৬ জেলায় শতাধিক ব্যক্তি আহত হওয়ার খবর পাওয়া গেছে।

নির্বাচনী উৎসবের পাশাপাশি এসব সংঘর্ষ আরো বাড়ার আশঙ্কা দেখছেন বিশ্লেষকেরা। এসব সহিংসতার জন্য রাজনৈতিক প্রতিপক্ষগুলো একে অপরকে দোষারোপ করলেও বিশ্লেষকেরা দুইয়ের অধিক পক্ষকে পর্যবেক্ষণ করার পক্ষে মত দিয়েছেন।

রাষ্ট্রবিজ্ঞানী অধ্যাপক দিলারা চৌধুরী বেনারকে বলেন, “নির্বাচনের কোনো সহায়ক পরিবেশ দেখছি না। ব্যাপক সহিংসতার আশঙ্কা আছে।”

বেনার প্রতিবেদকের সাথে কথা বলার সময় তিনি বগুড়ায় অবস্থান করছিলেন। মাঠপর্যায়ের অভিজ্ঞতা থেকেই তিনি বলেন, “বিরোধী দলে প্রচারণার ক্ষেত্রে অনেক বাধা আসছে। পুলিশের ভূমিকা সন্তোষজনক নয়। সাধারণ লোকের ভিতরেও একটা আতঙ্ক কাজ করছে।”

বিরোধীদের পক্ষ থেকে নানা অভিযোগ থাকলেও বাংলাদেশে আবার ‘ইনক্লুসিভ’ নির্বাচন হওয়াটা একটা ভালো দিক বলে মনে করেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক ড. শান্তনু মজুমদার।

তিনি বেনারকে বলেন, “নির্বাচন কমিশনের দায়িত্ব হলো লেভেল প্লেয়িং ফিল্ড তৈরি করে দেওয়া। কিন্তু সরকারি এবং বিরোধী দলকে শাসন করার ক্ষেত্রে এখনো মনে হয় কিছুটা হলেও ভারসাম্যহীনতা রয়ে গেছে। এটাকে সরকারি লোকেরা আস্কারা আর বিরোধীরা শক্তিমত্তা প্রমাণের উপায় হিসেবে দেখতে পারে।”

ড. শান্তনুর সন্দেহ, “সংশ্লিষ্ট দলগুলোর বাইরে অন্য কোনো পক্ষ নির্বাচনের বিশৃঙ্খলার মাধ্যমে স্বার্থ সিদ্ধির চেষ্টা করতে পারে।”

তাই এসব সংঘর্ষের পেছনে অন্য কোনো পক্ষ, যারা গণতন্ত্র পছন্দ করে না; তারা আছে কিনা সেদিকেও দৃষ্টি রাখার পরামর্শ দিয়েছেন এই রাজনীতি বিশ্লেষক।

মঙ্গলবারের নির্বাচনী সহিংসতায় দুই জন নিহত ও ১৮ জেলায় শতাধিক ব্যক্তি আহত হওয়ার প্রসঙ্গে সিইসি কে এম নূরুল হুদা বলেন, “গতকাল আনন্দের সঙ্গে বলেছিলাম, সারা দেশে নির্বাচনী কার্যক্রমে কোনো অঘটন ঘটেনি। কিন্তু তারপরেই দুটো ঘটনা ঘটেছে, যা আমাদের বিব্রত করেছে, মর্মাহত করেছে। নিহতের ঘটনায় আমরা বিব্রত-ব্যথিত।”

এই পরিস্থিতিতে গতকাল বিচারিক হাকিমদের ব্রিফিংয়ে বিএনপি মহাসচিবের গাড়িবহরে হামলাকে অনাকঙ্খিত ঘটনা উল্লেখ করে সিইসি বলেন, “এটা কখনও কাম্য হতে পারে না। নির্বাচন কমিশন এ ঘটনায় বিব্রত।”

গোপালগঞ্জ থেকে আনুষ্ঠানিকভাবে নির্বাচনী প্রচার শুরুর আগে টুঙ্গীপাড়ায় বঙ্গবন্ধুর সমাধিতে শ্রদ্ধা নিবেদন করছেন আওয়ামী লীগ সভানেত্রী প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। ১২ ডিসেম্বর ২০১৮।
গোপালগঞ্জ থেকে আনুষ্ঠানিকভাবে নির্বাচনী প্রচার শুরুর আগে টুঙ্গীপাড়ায় বঙ্গবন্ধুর সমাধিতে শ্রদ্ধা নিবেদন করছেন আওয়ামী লীগ সভানেত্রী প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। ১২ ডিসেম্বর ২০১৮।
[ফোকাস বাংলা]

নৌকায় ভোট চাইলেন হাসিনা

নির্বাচনী প্রচারণার প্রথম জনসভায় মুক্তিযুদ্ধের চেতনাবিরোধীদের প্রতিহত করতে দেশবাসীর কাছে নৌকায় ভোট চান প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।

গোপালগঞ্জের কোটালীপাড়ার এ জনসভায় তিনি বলেন, “বাংলাদেশ মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় এগিয়ে যাচ্ছে। যারা যুদ্ধাপরাধীদের সঙ্গে হাত মিলিয়ে নির্বাচনের মাঠে নেমেছে, তাদের উপযুক্ত জবাব দিতে হবে নৌকা মার্কায় ভোট দিয়ে।”

তাঁর সরকারের বিভিন্ন অবদান তুলে ধরে তিনি বলেন, “দেশবাসীকে এই আহ্বান জানাব, আমরা ২০২১ সালে স্বাধীনতার সুবর্ণ জয়ন্তী পালন করব, সেই সময় ওই যুদ্ধাপরাধী স্বাধীনতাবিরোধী খুনি, রাজাকার এবং যারা অগ্নিসন্ত্রাসকারীরা যেন ক্ষমতায় আসতে না পারে।”

শেষ পর্যন্ত মাঠে থাকেন: . কামাল

সিলেটে নির্বাচনী প্রচারণা শুরুর পরে কামাল হোসেন বলেন, ইসির আশ্বাস স্বত্বেও নির্বাচনী প্রচারনা শুরুর পরেও বিরোধী নেতাকর্মীদের হয়রানিমূলক গ্রেপ্তার করা হচ্ছে।

হযরত শাহজালালের মাজার জিয়ারতের পরে তিনি সাংবাদিকদের বলেন, দেশে এখনো সুষ্ঠু নির্বাচনের পরিবেশ তৈরি হয়নি। আমাদের নেতাকর্মীদের প্রতিদিন গ্রেপ্তার করা হচ্ছে। এটি সুষ্ঠু নির্বাচনের আলামত নয়।”

তিনি বলেন, “তবে যা-ই হোক না কেন আমরা শেষ মুহূর্ত পর্যন্ত মাঠে থাকব। সুষ্ঠু নির্বাচন আদায় করে নিতে হবে।”

ভোটারদের উদ্দেশে কামাল হোসেন বলেন, “৩০ তারিখ সকাল থেকে আপনারা ভোট প্রয়োগ করবেন। ভোটকেন্দ্র পাহারা দেবেন। দুই নম্বরি করতে দেবেন না।”

ইসিকে সতর্ক করল আওয়ামী লীগ

ইসির সঙ্গে বেঠক শেষে আওয়ামী লীগের নির্বাচন পরিচালনা কমিটির কো–চেয়ারম্যান এইচ টি ইমামের সাংবাদিকদের বলেন, “আওয়ামী লীগের ওপর হামলাগুলো বেশি হচ্ছে। আমাদের দলের দুইজন সদস্য নিহত হয়েছেন। এ ধরনের আক্রমণ গ্রহণযোগ্য নয়।”

এইচ টি ইমাম জানান, তাঁর দল ইসিকে বলেছেন, আইন শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী তাদের নিয়ন্ত্রণে, পরিস্থিতি স্বাভাবিক রাখতে তারা যেন আইন শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বহিনীকে ব্যবহার করে।

অন্যদিকে নির্বাচন কমিশন অসহায় বলে দাবি করেছে বিএনপি। ইসির সঙ্গে বৈঠক শেষে বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান সেলিমা রহমান সাংবাদিকদের বলেন, “আমরা মনে করি, সিইসি অসহায়। তিনি বিব্রত বোধ করছেন কারণ, তিনি কিছু করতে পারছেন না।”

শতাধিক আহত

নির্বাচনের প্রচারণাকে কেন্দ্র করে রাজধানীসহ দেশের ১৬ জেলায় হামলা, ভাংচুর ও সংঘর্ষের ঘটনায় শতাধিক নেতা–কর্মী আহত হওয়ার অভিযোগ পাওয়া গেছে। দুই জেলায় হামলা নিয়ে পাল্টাপাল্টি অভিযোগ আসলেও অধিকাংশ জেলায় আওয়ামী লীগের বিরুদ্ধে একতরফা হামলার অভিযোগ এনেছে বিএনপি।

রাজধানীতে বিএনপি প্রার্থী আফরোজা আব্বাসের প্রচারনায়ও হামলার ঘটনা ঘটে। রাজশাহী-৫ আসনের চারঘাট উপজেলায় মঙ্গলবার বিকেলে ও রাতে হামলা–পাল্টা হামলায় ৯ জন আহত হন। এদের মধ্যে ৫ জন আওয়ামী লীগ ও ৪ জন বিএনপির সমর্থক। বিএনপির তিন সমর্থককে আটকও করে পুলিশ।

বুধবার গণসংযোগকালে বাগেরহাট–৪ আসনের মোরেলগঞ্জ উপজেলায় ২০ দলীয় জোটের প্রার্থী জামায়াত নেতা অধ্যক্ষ মো. আব্দুল আলীমের উপর হামলার ঘটনায় ৩ কর্মী-সমর্থক আহত হন।

মঙ্গলবার দিবাগত রাতে ফরিদপুর-৩ (সদর) আসনে বিএনপি মনোনীত ধানের শীষের প্রার্থী চৌধুরী কামাল ইবনে ইউসুফের অন্তত ১৫টি নির্বাচনী কার্যালয় ভাংচুরের ঘটনা ঘটে।

এ ছাড়া নারায়নগঞ্জ, নাটোর, গাজীপুর, নওগাঁ, চট্টগ্রাম, চাঁদপুর, শেরপুর, সাতক্ষীরা, মাগুরা, কিশোরগঞ্জসহ অন্তত ১৬ জেলায় সহিংস ঘটনা ঘটে।

মন্তব্য করুন

নীচের ফর্মে আপনার মন্তব্য যোগ করে টেক্সট লিখুন। একজন মডারেটর মন্তব্য সমূহ এপ্রুভ করে থাকেন এবং সঠিক সংবাদর নীতিমালা অনুসারে এডিট করে থাকেন। সঙ্গে সঙ্গে মন্তব্য প্রকাশ হয় না, প্রকাশিত কোনো মতামতের জন্য সঠিক সংবাদ দায়ী নয়। অন্যের মতামতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল হোন এবং বিষয় বস্তুর প্রতি আবদ্ধ থাকুন।