জঙ্গি মেজর জিয়া জীবিত না মৃত তা নিশ্চিত হওয়া যায়নি: মনিরুল
2019.10.11
ঢাকা
অভিজিৎ রায়সহ কয়েকজন ব্লগার ও প্রকাশক এবং দুজন সমকামী অধিকার কর্মীকে হত্যায় অভিযুক্ত আনসার-আল ইসলামের প্রধান মেজর (চাকুরিচ্যুত) মোহাম্মদ জিয়াউল হক সাংগঠনিক কর্মকাণ্ড থেকে দূরে সরে গেছে। এই তথ্য জানিয়েছেন পুলিশের কাউন্টার টেররিজম অ্যান্ড ট্রান্সন্যাশনাল ক্রাইম ইউনিট প্রধান মনিরুল ইসলাম।
শুক্রবার ঢাকা মহানগর পুলিশের মিডিয়া সেন্টারে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে আনসার আল ইসলামের চার সন্দেহভজন জঙ্গিকে গ্রেপ্তার উপলক্ষে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে এই তথ্য জানান মনিরুল।
আনসার আল ইসলামের মূল নেতা জিয়া কোথায় এবং তার কর্মকান্ড সম্পর্কে পুলিশের কাছে কি তথ্য আছে এমন প্রশ্নের জবাবে মনিরুল ইসলাম বেনারকে বলেন, “মেজর জিয়া এখন আর আনসার-আল ইসলামের সাংগঠনিক কাজে যুক্ত নেই। অনেকদিন ধরে সংগঠনে তার কোনও তৎপরতা নেই। ”
মেজর জিয়া বেঁচে আছে কি না—এমন প্রশ্নে জবাবে তিনি বলেন, “সে বিষয়ে আমরা নিশ্চিত নই।”
অবশ্য নিরাপত্তা বিশ্লেষক ব্রিগেডিয়ার (অব.) সাখাওয়াত হোসেন বেনারকে বলেন, “দেখুন, কোনও বড় মাপের জঙ্গি কখনো ইচ্ছাকৃতভাবে জঙ্গি কার্যক্রম থেকে দূরে থাকবে না, থাকতে পারে না।”
তিনি বলেন, “মেজর জিয়ার কোন তৎপরতা গত দুই এক বছরে চোখে পড়েনি। পুলিশ-র্যাব তাকে দৌড়ের মধ্যে রেখেছে। সংগঠন থেকে নিষ্ক্রিয়তা গ্রেপ্তার এড়ানোর কৌশল হতে পারে।”
ব্রিগেডিয়ার সাখাওয়াত বলেন, “আবার হয়তো, সে এমনভাবে কাজ করছে যা পুলিশ বা গোয়েন্দাদের নজরের বাইরে। আমাদের পুলিশ ও গোয়েন্দাদের আরও সক্রিয় হয়ে দেখতে হবে, সে পালিয়ে আছে কিনা। বড় কোন ঘটনা ঘটানোর চেষ্টাও তো সে করতে পারে।”
তিনি বলেন, “অনেক সময় নেতৃত্বের প্রতিযোগিতার কারণে জঙ্গি সংগঠনে কিছু নেতা সাইডলাইনে চলে যায়। আমাদের জানা দরকার তাদের মধ্যে নেতৃত্বের কোন পরিবর্তন এসেছে কি না।”
বাংলাদেশ সেনাবাহিনীতে চাকুরিরত অবস্থায় ২০১১ সালে শেখ হাসিনা সরকারের বিরুদ্ধে সামরিক অভ্যুত্থানের চেষ্টায় অভিযুক্ত হয় মেজর জিয়াউল হক। অভ্যুত্থান চেষ্টা ব্যর্থ হলে সে পালিয়ে যায়। এরপর সে বিভিন্ন জঙ্গি সংগঠনের সাথে হাত মেলায়। কিছু দিনের মধ্যে আনসার-আল ইসলামের সর্বোচ্চ নেতৃত্বে যাওয়ার বিষয়টি প্রকাশ পায়।
এ প্রসঙ্গে আইএসপিআর এর পরিচালক লেফটেনেন্ট কর্ণেল আবু ইবনে জায়েদ বেনারকে বলেন, বাংলাদেশ সেনাবাহিনীতে চাকুরিরত অবস্থায় ২০১১ সালে সরকারের বিরুদ্ধে সামরিক অভ্যুত্থানের চেষ্টায় অভিযুক্ত হয় জিয়াউল হক। তিনি আরও বলেন, ''অভ্যুত্থানের চেষ্টা ব্যর্থ হওয়ার পর তিনি আত্মগোপনে চলে যান। অভুত্থানের চেষ্টার অভিযোগে তাকে চাকরিচ্যুত করা হয়।''
মুক্তমনা ব্লগার, প্রকাশক, লেখক, সাংস্কৃতিক ব্যক্তি, সমকামী অধিকার কর্মীদের হত্যার উদ্দেশ্যে বিভিন্ন স্লিপার সেল গঠনের অভিযোগ রয়েছে জিয়ার বিরুদ্ধে। স্লিপার সেলগুলো আনসারুল্লাহ বাংলা টিম হিসাবে পরিচিত। সংগঠনে সে পরিচিত ‘বড় ভাই’ নামে।
চার সন্দেহভাজন গ্রেপ্তার
গ্রেপ্তারকৃত চারজনের মধ্যে শাহীন আলম ওমর (২১) নামে এক জঙ্গি রয়েছে, যে আনসার আল ইসলামকে সংগঠিত করার চেষ্টা করছিল। ২০১৭ সাল থেকে বৃত্তি নিয়ে দক্ষিণ কোরিয়ার একটি বিশ্ববিদ্যালয়ে অ্যাভিয়েশন ইঞ্জিনিয়ারিংয়ে পড়াশোনা করতে যায় শাহীন। কিন্তু পড়াশোনা শেষ না করেই এ বছর আগস্টে দেশে ফিরে আনসার আল ইসলামের ভেঙ্গে পড়া নেটওয়ার্ক পুনর্গঠনের চেষ্টা করছিল সে।
সংবাদ সম্মেলনে বলা হয়, দেশে ফিরে পরিবারের সাথে সম্পর্ক ছিন্ন করে শাহীন। দেশের বিভিন্নস্থানে গোপনে চাপাতি চালনাসহ বিভিন্ন ধ্বংসাত্নক কর্মকাণ্ডের প্রশিক্ষণ নেয় সে। তবে কোন ঘটনা ঘটানোর আগেই পুলিশ তাকে গ্রেপ্তার করে।
তার সঙ্গে ধরা পড়া আনসার-আল ইসলামের সন্দেহভাজন জঙ্গিরা হচ্ছে; সাইফুল ইসলাম (১৮), হামিদুজ্জামান বিপ্লব (১৮) ও আল মামুন (২০)। তাদের কাছ থেকে তিনটি চাপাতি উদ্ধার করেছে পুলিশ।
শুক্রবার আসামিদের আদালতে তোলা হয়। আদালত জিজ্ঞাসাবাদের জন্য প্রত্যেককে পাঁচ দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেন বলে বেনারকে জানান ঢাকা মহানগর পুলিশের মুখপাত্র মাসুদুর রহমান।
সংবাদ সম্মেলনে মনিরুল ইসলাম বলেন, ওই চার সন্দেহভাজন জঙ্গিকে বৃহস্পতিবার রাতে ঢাকার যাত্রাবাড়ী এলাকা থেকে গ্রেপ্তার করা হয়। প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে তারা আনসার-আল ইসলামে সক্রিয় থাকার কথা স্বীকার করেছে।
মনিরুল ইসলাম বলেন, “শাহীনসহ ওই চার জঙ্গি কথিত জিহাদি প্রশিক্ষণের জন্য দেশের বিভিন্ন জেলা থেকে সংগঠনের সদস্যদের নিয়ে সুন্দরবনের করমজলে গিয়েছিল। সেখানে এক সপ্তাহের প্রশিক্ষণ ক্যাম্প করে তারা। পরে বান্দরবান জেলার আলীকদমে গিয়ে প্রায় এক মাস তারা চাপাতি চালানোসহ বিভিন্ন বিষয়ে প্রশিক্ষণ নেয়।”
প্রশিক্ষণ শেষে ‘নাশকতার পরিকল্পনা বাস্তবায়নের জন্যই’ তারা ঢাকার যাত্রাবাড়ীতে মিলিত হয়েছিল বলে জানান মনিরুল।
এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, গ্রেপ্তার জঙ্গিরা বিভিন্ন অ্যাপ ব্যবহার করে নিজেদের মধ্যে যোগাযোগ করত। নাশকতা করার পরিকল্পনা ছিল তাদের।
আটক হওয়া শাহীন ও মামুনের বাড়ি চাঁপাইনবাবগঞ্জের শিবগঞ্জ উপজেলায়। সাইফুল ইসলামের বাড়ি কিশোরগঞ্জের নিকলী উপজেলায়। আর হানিফুজ্জামানের বাড়ি চুয়াডাঙ্গার আলমডাঙ্গায়।
কাউন্টার টেররিজম ইউনিটের অতিরিক্ত উপ-কমিশনার সাইফুল ইসলাম জানান, জঙ্গি শাহীন তার এলাকার স্কুল ও কলেজ থেকে এসএসসি এবং এইএসসি পাশ করে। আগে থেকেই সে জঙ্গিবাদে উদ্বুদ্ধ ছিল। দক্ষিণ কোরিয়া গিয়ে অনলাইনের মাধ্যমে সে জঙ্গি কার্যক্রমে ঢুকে পড়ে।”